
যদি একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বিখ্যাত (বা কুখ্যাত) ‘ডিফেক্টর’দের একটি তালিকা তৈরি করতে নেয়া হয়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই উক্ত তালিকার একেবারে শুরুর দিকে নাম থাকবে এডওয়ার্ড স্নোডেনের। গোয়েন্দা কার্যক্রম সম্পর্কে আগ্রহ রয়েছে, কিন্তু স্নোডেনের নাম শোনেননি, বর্তমান পৃথিবীতে এরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। স্নোডেন একজন প্রাক্তন মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং ইতিপূর্বে তিনি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ও এনএসএতে কম্পিউটার ইন্টেলিজেন্স কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করেছেন।
স্নোডেন মূলত দুটি কারণে বিখ্যাত।
প্রথমত, তিনি ২০১৩ সালের জুনে বিশ্বব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত গোপন নজরদারি কার্যক্রম সম্পর্কিত বিপুল সংখ্যক অতি গোপনীয় নথি প্রচারমাধ্যমের কাছে ফাঁস করে দেন, এবং এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কার্যত একটি বড়সড় বিস্ফোরণ ঘটান।
দ্বিতীয়ত, তিনি ২০১৩ সালের ২৩ জুন রাশিয়ায় পৌঁছান, এবং তখন থেকে সেখানেই অবস্থান করছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি কার্যত জর্জ কোভাল, কিম ফিলবি এবং জর্জ ব্লেইকের সমগোত্রীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন।

২০১৩ সালের মে মাসে স্নোডেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনের হংকংয়ে যান এবং সেখান থেকে অতি গোপনীয় মার্কিন নথি ফাঁস করতে শুরু করেন। ২৩ জুন তিনি সেখান থেকে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় অবস্থিত ‘শেরেমেতিয়েভো এ. এস. পুশকিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে’ পৌঁছান। তার উদ্দেশ্য ছিল ল্যাটিন আমেরিকার কোনো রাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়া, কিন্তু তিনি শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দরে অবস্থানকালে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানতে পারে যে, মার্কিন সরকার স্নোডেনের নাগরিকত্ব বাতিল করেছে। মার্কিন সরকার স্নোডেনকে শাস্তি দিতে উদগ্রীব ছিল এবং এমতাবস্থায় কোনো ল্যাটিন আমেরিকান রাষ্ট্র স্নোডেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম ছিল না। ফলে স্নোডেন শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দরের ট্রানজিটে আটকা পড়ে যান এবং ৩৯ দিন তাকে সেখানেই অবস্থান করতে হয়।
১ আগস্ট রুশ সরকার স্নোডেনকে এক বছরের জন্য সাময়িক রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদান করে এবং অবশেষে তিনি শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দরের ট্রানজিট ত্যাগ করতে সক্ষম হন। ২০১৪ সালের আগস্টে স্নোডেনকে প্রদত্ত রুশ সরকারের সাময়িক রাজনৈতিক আশ্রয়ের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, কিন্তু রুশ সরকার তাকে তিন বছরের জন্য রাশিয়ায় অবস্থানের অনুমতি প্রদান করে। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায় যে, স্নোডেনের রাশিয়ায় অবস্থানের সময়সীমা ২০২২ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।

কোভিড–১৯ মহামারী চলাকালে ২০২০ সালের অক্টোবরে রুশ সরকার স্নোডেনকে স্থায়ীভাবে রাশিয়ায় বসবাসের অনুমতি প্রদান করে। ২০২০ সালের নভেম্বরে স্নোডেন ও তার স্ত্রী লিন্ডসে মিলস রুশ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন। অবশেষে ২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন স্নোডেনকে রুশ নাগরিকত্ব প্রদান করেন।
সম্প্রতি রুশ–ইউক্রেনীয় যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ায় আংশিক সৈন্য সমাবেশ শুরু হয়েছে। এমতাবস্থায় স্নোডেনকে নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টি নিয়ে রুশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। রুশ রাষ্ট্র–নিয়ন্ত্রিত প্রচারমাধ্যম ‘আরটি’র প্রধান সম্পাদক মার্গারিতা সিমোনিয়ান তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে জানতে চেয়েছেন, স্নোডেনকে কি রুশ সশস্ত্রবাহিনীতে যোগদানের জন্য ডাকা হবে? অবশ্য স্নোডেনের আইনজীবী আনাতোলি কুচেরেনা নেটিজেনদের এই মর্মে আশ্বস্ত করেছেন যে, স্নোডেন রুশ সশস্ত্রবাহিনীর রিজার্ভে ছিলেন না, এবং এজন্য আইনত তাকে রুশ সশস্ত্রবাহিনীতে যোগদানের জন্য ডাকা যাবে না!