মিশরকে বলা হয় ‘নীল নদের দান’। মিশরের মতো বিশাল মরুভূমির বুকে গড়ে উঠেছে বহু ঐতিহাসিক সভ্যতা। বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা যেখানে খুবই ক্ষীণ এমন একটি বিরান ভূমির বুকে বসতি গড়ে ওঠা আশ্চর্য বটে। প্রাচীনকাল থেকে এখন পর্যন্ত মিশর টিকে আছে এই নীল নদের জন্য, বৃষ্টি বিরল মিশরে প্রতি গ্রীষ্মকালের প্রবল বন্যার সময় নীলনদের গতিপথের দু’পাশের ভূমি প্লাবিত হয়ে যায়। ফলে, নীল নদের অববাহিকায় প্রতি বছর নতুন পলিমাটি সঞ্চিত হয় এবং জমি হয়ে ওঠে অত্যন্ত উর্বর ও শস্য শ্যামলা । নীল নদের বন্যার কল্যাণে বহু প্রাচীন কাল থেকেই এই অঞ্চলে, যা মিশরে ডেলটা অব নাইল নামে পরিচিত, বেশিরভাগ লোক বাস করে ।
নীল নদ শুধু বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম নদী নয়, এটি সম্ভবত সবচেয়ে প্রভাবশালী নদীও বটে। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন, এশিয়ার ইয়েলো রিভার কিংবা ইউরোপের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ভল্গা নদের প্রভাব অনেক থাকলেও নীল নদের মতো এতটা প্রভাব হয়তো অন্য কোনো নদীর নেই।
Nile নামটির সেমিটিক মূল হচ্ছে ‘নাহল’, যার অর্থ হচ্ছে প্রবাহমান উপত্যকা। দক্ষিণ থেকে উত্তরে বয়ে চলা এই নদীটি বছরের সবচেয়ে উষ্ণতম সময়ে কিভাবে বন্যায় প্লাবিত হতো প্রাচীন মিশরীয় ও গ্রিকদের কাছে তা ছিল এক অজানা রহস্য। প্রাচীন মিশরীয়রা সদা প্রবাহমান এই নদীটিকে নাম দিয়েছিল ‘অরু’ বা ‘অর’ যার অর্থ হচ্ছে কালো। এই নামের পেছনে কারণ হচ্ছে প্রতি বছর নীল নদ যখন তার গর্ভে ধারণ করা কালো রঙের পলি দিয়ে মিশরকে সমৃদ্ধ করে, তখন মিশরকে মনে হয় যেন পুরো ভূমি অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। তার এই আঁধারে আচ্ছাদিত ভূমিতেই মিশরীয়রা মূল্যবান কৃষিজ ফসলের চাষ করত। গ্রিক কবি হোমার, তার লেখা মহাকাব্য ওডিসিতে নীল নদকে ইজিপ্টাস নামে অভিহিত করেছেন। নারীর সরূপ ধারণ করা মিশরের বুক চিড়ে বয়ে চলা পুংলিঙ্গের ইজিপ্টাস যেন নীল যে মিশরের জীবনীশক্তি এই কথাটিই বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়। মিশরে এবং সুদানের নাইল এখন আল-নিল, আল-বাহর এবং বাহর আল-নিল বা নাহার আল-নিল নামে পরিচিত।
যে নদের সাথে মানুষের শত শত বছরের পরিচয় সেই নদটি নাকি আজ শুকিয়ে যাচ্ছে। স্বচ্ছন্দ গতিতে বয়ে চলা নীল নদ আজ নাকি বইতে কুন্ঠা বোধ করছে। কালের পর কাল মানুষকে জীবিকার যোগান দিয়ে আজ সে নিঃস্ব। এই অবস্থায় বাইবেলের ভবিষ্যৎ বাণী বারবার সামনে এসে পড়ে।বাইবেলের তিনটি স্থানে বলা হয়েছিল যে নীল নদ শুকিয়ে যাবে। (Isaiah 19: 5, Ezekiel 30:12, এবং Zechariah 10:11)।
আমি তোমাদের প্রভু বলছি, এই নীল নদের জল আমি শুকিয়ে দিব এবং এমন একটি বিদেশী শক্তির কাছে এর নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে যেই হাতে আমি সেই জমি ও তার মধ্যেকার সব কিছু ধ্বংস করব। – Ezekiel 30:12
নীল নদের গতিপথ
হোয়াইট নীল নদী এবং ব্লু নীল নদীর মিলিত প্রবাহে নীল নদের সৃষ্টি হয়েছে।
হোয়াইট নীল নদীটি ট্যাঙ্গানাইকা হ্রদের নিকটবর্তী বুরুণ্ডির পার্বত্য মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে কিছু দূর উত্তরে গিয়ে ভিক্টোরিয়া হ্রদে পড়েছে এবং পরে ভিক্টোরিয়া হ্রদ থেকে নির্গত হয়ে নদীটি অ্যালবার্ট হ্রদের মধ্য দিয়ে খার্টুম শহরের দিকে প্রবাহিত হয়েছে। এই গতিপথে বাঁ দিক থেকে বার-এল-গজল এবং ডান দিক থেকে সোবাট নামে দুটি উপনদী হোয়াইট নীলের সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
ব্লু নীল নদীটি ইথিওপিয়ার টানা হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়ে খার্টুম শহরের কাছে হোয়াইট নীলের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এরপর এই দুই মিলিত নদী নীল নদ নামে উত্তর দিকে বহুদূর প্রবাহিত হয়ে ভূমধ্যসাগরে পতিত হয়েছে। খার্টুম শহরের কিছু উত্তরে আটবারা উপনদীটি নীলের সঙ্গে দক্ষিণ দিকে মিলিত হয়েছে।
নদীর গতিপথ তো জানা হলো, এবার জানা দরকার কেন শতাব্দীর পর শতাব্দীর ইতিহাস ধারণ করা নদীটি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে।
মিশরের দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি
আরব বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে মিশর ইতিমধ্যে সবচেয়ে জনবহুল দেশ এবং বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ৯.৩ কোটি। বর্তমানে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে, সেই হারে বাড়তে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটির জনসংখ্যা ১২ কোটিতে বৃদ্ধি পাবে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ৫০ বছরে দেশটিতে বসবাসরত মানুষের সংখ্যা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হতে পারে। দেশের পরিসংখ্যান সংস্থা CAMPUS এর মতে, শুধুমাত্র ২০১৬ সালেই দেশটিতে জন্মেছে প্রায় ২.৬ কোটি শিশু।
আন্তর্জাতিক নদী হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ নীল নদ শুধু মিশর নয়, বরং আরো এগারোটি দেশ যেমন তানজানিয়া, রুয়ান্ডা, উগান্ডা, বুরুন্ডি, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, সুদান, দক্ষিণ সুদান, কঙ্গো, ইরিত্রিয়া এবং জেইরে এর মধ্য দিয়ে বয়ে চলছে। সুদান এবং মিশরের জন্য এই নদটিই পানির প্রধান উৎস।
মাথাপিছু পানির প্রাপ্যতা অনুসারে, পৃথিবীর মধ্যে মিশর ইতিমধ্যেই দরিদ্রতম দেশগুলোর মধ্যে একটি; উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বাসিন্দার জন্য বছরে ৯,৮০০ ঘন মিটারের তুলনায় মিশরের বাসিন্দাদের জন্য বরাদ্দ মাত্র ৬৬০ ঘন মিটার।
এমন পরিস্থিতিতে, দেশটির জনসংখ্যা বর্তমান হারে বাড়তে থাকলে বাড়তি চাপ যে নীল নদের উপরেই পড়বে তা বোঝাই যাচ্ছে।
নীল নদের পানি চুক্তি ও অসন্তোষ
নীল নদের পানি ব্যবহারে কে প্রাধান্য পাবে তা নিয়ে মিশর ও সুদানের মাঝে ১৯৫৯ সালে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যেখানে নির্ধারণ করা হয়- বার্ষিক ৮৪ বিলিয়ন ঘন মিটার পানির মধ্যে মিশর পাবে ৫৫.৫ বিলিয়ন ঘন মিটার পানি এবং বাকি ১৫.৫ বিলিয়ন ঘন মিটার পানি পাবে সুদান। ১৯২৯ সালের অ্যাংলো- মিশরীয় সংবিধানের মতো ১৯৫৯ সালের চুক্তিটিও নদীর তীরবর্তী অন্যান্য দেশগুলোর জন্য, এমনকি ইথিওপিয়া যে কিনা মিশরের ৮০ শতাংশ পানির যোগান দেয়, পানির বাটোয়ারা কেমন হবে তার কোনো উল্লেখ নাই।
এই পানিচুক্তি নিয়ে চলছে অসন্তোষ আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে।আফ্রিকার প্রায় ৩০ কোটি মানুষ নীল নদের পানির উপর নির্ভর করে। এই অঞ্চলজুড়ে পানির চাহিদা দিন দিন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। একদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপ, অন্যদিকে উচ্চাভিলাষী উদ্যোগ বিশেষ করে মিশর ও ইথিওপিয়াতে জলবিদ্যুৎ শক্তি বিকাশের পরিকল্পনা পানির উপর চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক গুণ।
বহু দশক ধরে প্রচেষ্টার পরেও দেশগুলো কোনো সমঝোতায় আসতে পারেনি। বরং মিশর ও ইথিওপিয়ার মাঝে দ্বন্দ্ব-বিবাদ বেড়েই চলছে।
মিশর ও ইথিওপিয়া উভয়ই অন্য কোনো দেশের তুলনায় নীল নদ অববাহিকার উপর বেশি নির্ভরশীল। নীল নদটি কার্যকরীভাবেই মিশরের জন্য পানির প্রধান উৎস। মিশরের দ্রুত বর্ধমান জনসংখ্যার অধিকাংশ নাইল ভ্যালিতে বসবাস করে এবং প্রায় সব কৃষকই ফসল উৎপাদনের জন্য নির্ভর করে নীল নদ থেকে প্রাপ্ত পানির উপর।
এই তথাকথিত পানির উপর অর্জিত জন্মাধিকার রক্ষার জন্য মিশরের নেতারা যুদ্ধে যাওয়ার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে। অন্যদিকে কেনিয়া, তানজানিয়া, উগান্ডা ও ইথিওপিয়ার মতো তীরবর্তী দেশগুলো বলছে যে তারা এই চুক্তি দ্বারা আর আবদ্ধ নয়। এর প্রেক্ষিতে ১৯৬১ সালে তানজানিয়ার নেতা জুলিয়াস নাইরেরে যুক্তি দেন যে, নীল নদের এই পানিচুক্তি অন্যান্য দেশগুলোকে মিশরের করুণার পাত্রে পরিণত করেছে, তাদের জাতীয় উন্নয়নের পরিকল্পনাগুলোর ব্যাপারে তাদের মিশরের মুখাপেক্ষী থাকতে হচ্ছে যা তাদের মতো স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। দেশগুলো নীল নদের বেসিন শাসনের জন্য একটি নতুন এবং সমবায় আইন কাঠামোর পক্ষে তর্ক তুলেছে।
হোসনি মোবারকের উচ্চাভিলাষী তশকা প্রজেক্ট
মিশরের ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য মিশরের প্রায় অর্ধ মিলিয়ন একর পরিমাণ মরুভূমিকে চাষযোগ্য করে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক। কিন্তু স্বপ্ন আজো বাস্তবে রূপ নিতে পারেনি। নীল নদ থেকে দূরে অবস্থিত এই অঞ্চলগুলোতে নিকটবর্তী হ্রদ নাসের, নীল নদে আসওয়ান হাই বাঁধ নির্মাণের ফলে নির্মিত একটি বিশাল মানুষ তৈরি হ্রদ, থেকে পানি সরবরাহ ও সেচের ব্যবস্থা করতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে পাম্পিং স্টেশন ও খাল নির্মাণ করা হয়। তিনি আশা করেছিলেন হয়তো এই প্রজেক্টে আন্তর্জাতিক সাহায্য পাওয়া যেতে পারে, ব্যবসায়ীরা হয়তো বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে। কিন্তু তাকে ভুল প্রমাণিত করে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার জন্য প্রজেক্টটি মুখ থুবড়ে পড়ে।
গ্র্যান্ড ইথিওপীয় রেনেসাঁ বাঁধ
মিশরের পানি সংকট নিয়ে বর্তমানে নেতাগণ বেশ চিন্তিত এবং এই অস্বস্তির পেছনে রয়েছে আফ্রিকায় এখন পর্যন্ত বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প- ইথিওপিয়ার Grand Ethiopian Renaissance Dam। বাঁধটির নির্মাণকাজ প্রায় চূড়ান্ত এবং অতিশীঘ্রই বিশাল জলাধরটি পানিপূর্ণ করা হবে। বাঁধটির পেছনে ইথিওপিয়ান সরকার ইতিমধ্যে ৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেখানে এখনো তিন-চতুর্থাংশ মানুষ বিদ্যুৎ এর অভাবে অন্ধকারে বাস করছে। তাদের জন্য ৬,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্নকারী এই মেগা প্রজেক্টটিকে আশীর্বাদ হিসাবেই ধরা যায়।
ওদিকে ইথিওপিয়ান সরকারের পরিকল্পনা শুধু এদিকেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তাদের লক্ষ্য আশেপাশের অন্যান্য আফ্রিকান দেশগুলোতেও তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে এবং সেখান থেকে বছরে আয় হতে পারে প্রায় ১ বিলিয়ন ইউএস ডলার। বেশ বিশাল ও পরিপক্ব পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নেমেছে তারা। আফ্রিকার সবচেয়ে দ্রুত বর্ধমান অর্থনীতির দেশ বলা হচ্ছে ইথিওপিয়াকে।
GERD প্রজেক্টের ফলে জলাধারে সঞ্চিত এই পানি, যা সুদান হয়ে মিশরে প্রবেশ করত, দেশ দুটিতে পানির অভাব যে প্রবলভাবেই দেখা দিবে তা পরিবেশবিদগণ আশঙ্কা করছেন। উইকিলিকস এর ফাঁস হওয়া তথ্য থেকে জানা যায় যে, মিশরের উচ্চপদস্থ সরকারি কর্তারা GERD নিয়ে আলোচনার কোনো এক পর্যায়ে বিমান বা কমান্ডো হামলা মাধ্যমে বাঁধটি চিরতরে ধ্বংস করারও চিন্তা করেছিল। তবে আপাতত এই নিয়ে যুদ্ধে যাওয়া অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ইথিওপিয়া, মিশর বা সুদান কোনো দেশের পক্ষেই সম্ভব হচ্ছে না। তাই ২০১৫ সালে তিনটি দেশ মিলে No Harm Agreement নামক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং ব্লু নীল নদের অববাহিকায় নির্মিত এই বাঁধটির অশুভ প্রভাব খতিয়ে দেখবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
এই মুহুর্তে মিশরের উচিত সৌদি আরবের মতো পানিতে বেড়ে যাওয়া লবণাক্ততা দূরীকরণে কিংবা Dripping irrigation system এ বিনিয়োগ করা। তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন হচ্ছে জন্মবিরতিকরণ নিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে সচেতনতা গড়ে তোলা। যদিও সরকার এই ব্যাপারে কাজ শুরু করেছে, কিন্তু দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে মিশর তার বর্তমান অবস্থা পরিবর্তন করতে পারবে না। মিশরের বহুমুখী সমস্যার মধ্যে আরো আছে চরম মাত্রায় ধারণ করা বেকারত্ব ও রাজনৈতিক অস্থিরতা, যার ফলে পর্যটন খাত শুধু লোকসানের মুখ দেখছে।
তাছাড়া পানির অতিরিক্ত লবণাক্ততার সাথে পানিস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে ডেলটা অনেকাংশে পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় আছে। বহুমুখী সমস্যায় জর্জরিত মিশর সরকার এখন কী পদক্ষেপ নিবে সেদিকেই তাকিয়ে আছে জনগণ। কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে লক্ষ লক্ষ মিশরীয়দের সামনে উপায় থাকবে একটাই- হয় ধুঁকে ধুঁকে মরো কিংবা নতুন আবাস খুঁজে নাও।