(পর্ব ৩-এর পর থেকে)
বর্তমানে ইউক্রেন সরকার ডিপিআর বা এলপিআর কোনোটির অস্তিত্বই স্বীকার করে না। তারা এই অঞ্চলকে বলে থাকে ‘সাময়িকভাবে অধিকৃত এলাকা’। তাদের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য অনুযায়ী ইউক্রেন থেকে এই অঞ্চলকে যা আলাদা করেছে, তা কোনো সীমানা বা ফ্রন্টলাইন নয়। বরং এটা হচ্ছে ‘প্রশাসনিক সীমারেখা’।
পিসকির ইউরি আর মাশার মতো বেসামরিক জনগণরা ইউক্রেন অংশের ফ্রন্টের কাছে যে অঞ্চলগুলোতে থাকেন, সেগুলোকে বলা হয় রেড জোন। এই অঞ্চলগুলো ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর অধীনে। ফ্রন্টলাইনের কাছে থাকা অন্য শহরগুলোও পিসকির মতোই। সেখানকার বাড়িঘরও ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে কিছু শহর আংশিকভাবে বিভিন্ন স্থাপনা পুনর্নির্মাণ করেছে। এসব জিনিস বাদ দিলে সেখানকার ইউক্রেনীয়দের অবস্থান নিয়ে খুব গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। ট্রেঞ্চগুলো থাকে জঙ্গলের ভেতরে, পর্যবেক্ষণ করার পোস্টগুলো থাকে ক্যামোফ্ল্যাজ দিয়ে ঘেরা, অগ্নেয়াস্ত্রগুলো রাখা হয় পরিত্যাক্ত কারখানাগুলোতে। হেডকোয়ার্টারগুলো থাকে অ্যাপার্টমেন্ট ভবনগুলোর মধ্যে গোপন অবস্থানে।
আয়তনের দিক দিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়ার পর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ ইউক্রেন। কিন্তু যুদ্ধের সময় দোনেৎস্ক বিমানবন্দর ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় সেখানে পৌঁছার একমাত্র উপায় স্থলপথ। কিয়েভ থেকে সেখানে যেতে বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে প্রায় ৫০০ মাইল ভ্রমণ করতে হয়। গত আগস্টে আমি এভাবেই সেখানে যাই। সেখানে যাওয়ার পথে দেখতে পাবেন বিশাল বিশাল শস্যক্ষেত। সোভিয়েত আমলে এগুলো থেকেই সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়ার খাদ্যের যোগান আসত। এর প্রতি জোসেফ স্ট্যালিনের এতই লোভ ছিল যে, তিনি লক্ষ লক্ষ ইউক্রেনীয় মানুষদের দুর্ভিক্ষের মুখে ঠেলে দিয়ে হত্যা করেছেন। আপনি দেখতে পাবেন- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার কিছু জঘন্য নিদর্শনও। দোনবাসের কাছে পৌঁছার সময় শস্য ক্ষেতগুলোর জায়গায় দেখতে পাবেন সূর্যমুখী ফুলের ক্ষেত।
অবশেষে আপনি চলে আসবেন পাহাড়ী অঞ্চলে। পাহাড়ের চূড়াগুলোতে খনির চিমনি আর হেডফ্রেম রাখা। পাহাড়গুলো আশ্চর্যজনকভাবে পিরামিডের মতো দেখতে। এর কারণ হচ্ছে পাহাড়গুলো আসলে কয়েক দশকের পুরোনো কয়লার খনির চূড়া। কিছু কিছু পাহাড় কয়েকশ ফুট উঁচু। অনেক পাহাড়ই ঝোপঝাড় আর গাছ দিয়ে ঘেরা।
অনেক খনিই পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। দোনবাসকে দেখে মনে হয় ক্রুশ্চেভ আর ব্রেজনেভের সময়ের মাঝে আটকে আছে। বিদেশি পর্যটকদের যেন এর সোভিয়েত আমলের নিদর্শন দেখিয়ে বিদ্রুপ করছে। গ্রেট প্যাট্রিয়টিক ওয়ারের স্মৃতিস্তম্ভ দেখা যাচ্ছে সব জায়গায়। ফুটপাথ দিয়ে চলে গেছে মরিচা ধরা গ্যাসের পাইপলাইন। রাস্তায় দেখা যায় পুরোনো আমলের লাডা সেডান আর নেপার মোটরসাইকেল। এর সাথে আবার সাইডকারও দেখা যায়।
দোনবাসে থাকা অনেক ইউক্রেনীয়ই জাতিগতভাবে পুরোপুরি বা আংশিক রুশ। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ তারা সাংস্কৃতিক দিক দিয়েও রুশ ঘরানার। তারা রুশ ভাষায় কথা বলে। স্কুলে সোভিয়েত ইতিহাসের প্রোপাগান্ডা সংস্করণ পড়ানো হয়। তারা রুশ টেলিভিশন দেখে, রুশ বই পড়ে, এমনকি রুশ সোশ্যাল মিডিয়াও ব্যবহার করে। লুহানস্কের এক লোক আমাকে যুদ্ধ-পূর্ববর্তী সেখানকার জীবন নিয়ে বলেছিলেন, “এটা রাশিয়ার দ্বারা প্রভাবিত ছিল না। বরং, এটা রাশিয়ার অংশই ছিল।”
রাশিয়া যখন গত বছর সীমান্তের কাছে সেনা পাঠায়, তখন তাদের উদ্দেশ্য ছিল অস্পষ্ট। এটা কি আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়া বাইডেনকে দেওয়া কোনো সতর্কবার্তা ছিল? নাকি ইউক্রেনকে বার্তা দেওয়া রাশিয়া যেকোনো সময় ইউক্রেন দখল করে নিতে পারে? কিছু সেনা সরিয়ে নিলেও ডিপিআর ও এলপিআর বাহিনী পুরো গ্রীষ্মজুড়েই আক্রমণ চালিয়ে যেতে থাকে। তাদের উদ্দেশ্যও দুদিক দিয়েই অস্পষ্ট ছিল। সেনারাও মারা যাচ্ছিল, বেসামরিক নাগরিকরাও আক্রমণের শিকার হচ্ছিল।
আমি যে ইউক্রেনীয় সেনাদের সাথে কথা বলেছি, তারা এ ব্যাপারে একমত যে, এই আক্রমণটা সম্ভবত কৌশলগত দিকের চেয়ে প্রতীকী আক্রমণই বেশি ছিল। ২৪ আগস্ট ইউক্রেনের স্বাধীনতা দিবস। শত্রুপক্ষ প্রতি বছরই এই সময়ে আক্রমণের পাল্লা বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু গত বছর ছিল স্বাধীনতার ৩০ বছর পূর্তি। তারা হয়তো এ কারণে আরো বেশি মরিয়া ছিল।
পিসকিতে ইয়ারোস্লাভ সিমিনইয়াকা মারা যাওয়ার দুদিন পর আমি ছিলাম দক্ষিণ-পশ্চিমের কয়েক মাইল দূরের এক রেড জোন শহর ক্রাসনোহরিভকাতে, যা ইউক্রেনীয় বাহিনীর দখলে ছিল। ভোরবেলা আমার ঘুম ভাঙে কামানের আঘাতের ধাক্কা শুনে। ক্রাসনোহরিভকার এক অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে একটা রকেট আঘাত করেছিল। আমি যখন পরে সকালে ওই বিল্ডিংয়ের কাছে যাই, তখন দেখি সৈনিক আর স্থানীয় কর্মকর্তারা জড়ো হয়ে আছেন। স্থানীয় কিছু লোককে দেখলাম রাস্তায় জড়ো হয়ে তিনতলার দিকে তাকিয়ে আছে। একটা বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে সেখানে। আগে যেখানে ব্যালকনি ছিল, সেখান থেকে বাঁকানো রডগুলো বের হয়ে আছে।
সেখানকার অবস্থা বুঝে উঠতে আমার বেশ কিছুক্ষণ সময় লেগে যায়। বছরের পর বছর ধরে চলে আসা যুদ্ধ আর লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়া রকেটগুলোর আঘাতে পুরো ভবনটিই ক্ষতবিক্ষত হয়ে আছে। বোমার আঘাতের চিহ্ন সব জায়গায়। ভবনে থাকা ব্যালকনিগুলোর অর্ধেকই কোনো না কোনো জায়গায় ভাঙা। কিছু সংস্কার করা হয়েছে, আর কিছু ক্ষেত্রে পাতলা কাঠ কিংবা প্লাস্টিকের তারপলিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।
অন্ধকার সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় বিভিন্ন বিস্ফোরক আর পুরোনো জিনিসপত্রের গন্ধ পাওয়া গেল। ৮৩ নাম্বার অ্যাপার্টমেন্টের বাইরের মেঝেতে রক্তের দাগ দেখতে পেলাম। রক্তের ওপরে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন ঘরোয়া পোশাক পরা এক ভদ্রমহিলা, যেন অতিথিদের জন্যই অপেক্ষা করছিলেন।
তিনি যেন ব্যঙ্গর সুরে বললেন, “আপনারা আসুন। আমরা ঘর কিছুটা পরিষ্কার করে রেখেছি। তারপরও কিছু জঞ্জাল রয়ে গেছে।”
ছোট অ্যাপার্টমেন্টটি সাজানো হয়েছে সাদা-কালো পারিবারিক ছবি আর ওয়ালপেপার দিয়ে। এগুলো দেখে এত পুরনো মনে হচ্ছিল, যেন দেওয়ালের মধ্যে গেঁথে আছে। রান্নাঘরে ছিল একটা কয়লার চুলা, যার পাশে দাঁড়িয়ে এক ইউক্রেনীয় সেনার প্রেস কর্মকর্তা তার ফোন দিয়ে বিধ্বস্ত হওয়া জানালার ছবি তুলছিলেন।
ভদ্রমহিলার নাম লারিসা। তার সুন্দর করে আঁচড়ানো সাদা ছোট চুল আর স্পষ্টবাদিতা ও ভাবভঙ্গি যেন সেনাবাহিনীর সাথেই যায়। রকেট যখন আক্রমণ করে, তখন তিনি ও তার স্বামী কেবল ঘুম থেকে উঠেছেন।
তিনি বলেন,
যখন ছাদ ভেঙে আমার মাথায় পড়ে, আমি তখন ছিলাম টয়লেটে। আমার হাজবেন্ড ছিল বসার ঘরে। আমি তখন তাকে বলতে শুনি, ‘আমাকে সাহায্য করো! আমি আটকা পড়ে আছি!’
তিনি দরজায় থাকা স্প্লিন্টারগুলো সরিয়ে বসার ঘরের দিকে যান। গিয়ে দেখেন সেখানে শুধু ধুলা আর ধোঁয়া। তার স্বামীকে দেখতে পাচ্ছিলেন না। খুঁজতে খুঁজতে তার বাড়িয়ে দেওয়া হাত দেখতে পেলেন। তিনি তাকে বের করে আনেন ধ্বংসস্তুপ থেকে। নিচের দিকে তাকিয়ে দেখেন তার হাত লাল হয়ে আছে। মেঝেতেও লাল দিয়ে ভরা। “তার পুরো শরীরই রক্তে রাঙানো।”
তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তাররা দেখতে পান বোমার খোসা তার যকৃতেও বিদ্ধ হয়েছে। তার বাহু টুকরা টুকরা হয়ে গেছে। শ্রবণশক্তিও হারিয়ে গেছে। তিনি জ্ঞান হারাননি। কিন্তু লারিসা যখন ফোনে তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন, লারিসার কোনো কথাই তিনি শুনতে পাননি।
লারিসা আমাকে তাদের বসার ঘরে নিয়ে গেলেন। সেখানে দেখা গেল ছাদের টাইলসগুলো দোলায়মান অবস্থায় আছে। একটা মাছের অ্যাকুরিয়াম আর টেলিভিশন টুকরা টুকরা হয়ে আছে। সোফা সেটকে ঢেকে রাখা হয়েছিল প্লাস্টার আর ব্যালকনির কাঠের ভাঙা টুকরা দিয়ে। এগুলোই সম্ভবত তার স্বামীর প্রাণরক্ষায় সাহায্য করেছে। না হলে এই কক্ষে রকেট বিস্ফোরিত হয়ে যেত। ব্যালকনির জায়গায় এখন একটা বড় গর্ত। ঘরের মেঝেতে পোষা প্রাণীগুলোর জিনিসপত্র রাখা। সাধারণত তার মেয়ে ও নাতি-নাতনিরা এখানে ঘুমায়।
তিনি বলেন, “এটা পুরোটাই ভাগ্যের ব্যাপার যে, তারা তখন এখানে ছিল না।”
লারিসার পায়ের কাছে একটা ছোট পোষা কুকুর ঘুরঘুর করছিল। সে কেবলমাত্র সাহস করে অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে এসেছে। তিনি কাপড় রাখার আলমারি খুলে দেখালেন সেখানে দুটি বিড়াল কাপড়ের স্তুপের উপরে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে।
আমি তাকে প্রশ্ন করলাম এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতেও তিনি কীভাবে এতটা শান্ত আছেন। তিনি উত্তর দেন, “কারণ এই দুর্দশা অনেক দিন ধরেই চলে আসছে।”
নিচতলার এক পরিবার লারিসার ঘর পরিষ্কার করে দিচ্ছিল। বালতিতে করে ধ্বংসাবশেষগুলো সরিয়ে নিচ্ছিল। আরেক প্রতিবেশি মেঝের রক্ত পরিষ্কার করছিল। সরকারের স্থানীয় এক প্রতিনিধি এসে লারিসার সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রতিবেদন লিখে নিয়েছেন। লারিসাকে জানান, তিনি রেডক্রসের সাথে যোগাযোগ করেছেন ওষুধ নিয়ে আসার জন্য। তবে অ্যাপার্টমেন্ট সংস্কারের ব্যাপারটা একটু আলাদা। তিনি জানান, লারিসা যদি রাষ্ট্রীয় সহযোগিতার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হন, তবে সরকার তার অ্যাপার্টমেন্টের মালিকানা নিয়ে নেবে।
লারিসা তাকে জানান, তার অ্যাপার্টমেন্টের মালিক আসলে সরকারই। সোভিয়েত আমলে নাগরিকদের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অ্যাপার্টমেন্ট দেওয়া হতো। এই অ্যাপার্টমেন্টটা আসলে তার মায়ের পাওয়া। ইউক্রেন স্বাধীন হওয়ার পর নতুন সরকার জনগণকে উৎসাহ দেয় অ্যাপার্টমেন্টের মালিকানা নিজেরা নিয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু লারিসা সেটা কখনো নেননি।
তিনি আমার কাছে স্বাধীনতার পূর্ববর্তী দিনগুলো নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করলেন। তখনকার সময়ে জনগণকে মস্কো দেখভাল করত। তাদের অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম করতে হতো। তবে এর বিনিময়ে রাষ্ট্র থেকে বাসস্থান, খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষার ব্যবস্থা করা হতো। কিন্তু স্বাধীনতার পর ইউক্রেন যখন নিজের দায়িত্ব নিজে নিয়ে নিল, তখন থেকেই দুর্যোগ শুরু হয়। ক্রাসনোহরিভকাতে তার পরিচিত অন্যান্য সবার মতো লারিসাও ভিক্টর ইয়ানুকভিচের ভক্ত ছিলেন। দোনবাসের অন্যান্যদের মতো তিনিও ইউরোমাইদান আন্দোলনের বিপক্ষে ছিলেন।
২০০৪ সালে ইয়ানুকভিচ যখন প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ান, তখন শুরু হয় কমলা বিপ্লব। লারিসারা কমলা বিপ্লবেরও বিপক্ষে ছিলেন। কিন্তু ইয়ানুকভিচ নির্বাচনে পরাজিত হন। আমি তার কাছে জিজ্ঞেস করলাম কখন থেকে অবস্থার অবনতি হতে থাকল। তখন লারিসাকে সঙ্গ দেওয়া এক প্রতিবেশি বলে উঠলেন, “যখন থেকে গর্বাচেভ পেরেস্ত্রইকা নীতি চালু করেন।”
প্রতিবেশি ভদ্রমহিলা ইঙ্গিত দিলেন রকেটটা হয়তো ডিপিআর থেকে আসেইনি। বরং এটা ইউক্রেনীয়রাই করে থাকতে পারে। রুশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষজন এমনটাই বলছিল।
বাড়ির বাইরে লারিসার অন্য প্রতিবেশিদের কাছেও এমন মতামতই পাওয়া গেল। এক স্থানীয় সংবাদমাধ্যম কর্মী এখানে এসে এক ইউক্রেনীয় সৈনিকের ভিডিও ধারণ করছিলেন। ওই সৈনিক রকেটের একটা বাঁকানো অংশ উদ্ধার করে এনেছিলেন। রিপোর্টার তাকে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন, তিনি যেন ক্যামেরা থেকে দূরে হেঁটে গিয়ে নাটকীয়ভাবে আবার ক্যামেরার দিকে ফিরে আসেন। এ দৃশ্য দেখে প্রতিবেশিরা ক্ষুব্ধ হয়ে যায়।
এক মহিলা সৈনিকদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলছিলেন, “দোনেৎস্ক আমাদের দিকে কখনো গুলি ছোড়েনি! তারা দুই বছর ধরে কোনো আক্রমণ করেনি!”
এক বয়স্ক মহিলা বলে উঠলেন, “দেখ তারা নিজেদের ছবি তুলে বেড়াচ্ছে। কেউ বাঁচবে, কেউ হয়তো বাঁচবে না। এখানে ছবি তোলার কী আছে?”
প্রথম মহিলা তখন বলল,
“তাদের জন্য তো এগুলো ভালোই। কত মানুষ তারা মারতে পারে? শুয়োরের বাচ্চারা! যা তোদের বাপ-মাকে গুলি কর! এরা আমাদেরকে এসে মুক্তির গান শোনায়। আমরা কীসের থেকে মুক্তি পাবো? গ্যাস? বিদ্যুৎ? পানি? সবকিছু আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আমাদের স্বাভাবিক জীবন কেড়ে নিয়েছে এরা।”
আরেক লোক যোগ করলেন, “আমাদের সভ্য সমাজ থেকে বের করে দিচ্ছে এরা।”
ওই মহিলা তখন বলেন,
“আর তারা সবসময় বলবে ডিপিআর থেকে আক্রমণ করা হচ্ছে। আমরা সবই শুনি কোথা থেকে কে হামলা করছে। আমরা জানি তোরা কী পরিমাণ আক্রমণ করছিস!”
ওই মহিলা আরো বলেন, “এরা আমাদের নিয়ে মস্করা করে।” তিনি জোর গলায় জানালেন তার ভবনের পাশ থেকে এক ইউক্রেনীয় ট্যাঙ্ক থেকে রকেটটি নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তিনি সেখানে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার দেখেছেন একে। তিনি আরো জানালেন, তার দাদির সাথে লাগানো টমেটোর ক্ষেতের ওপর দিয়ে ট্যাঙ্ক চালানো হয়েছে। তিনি টমেটো নিয়ে অভিযোগ জানাতে চাচ্ছিলেন, কিন্তু এটা বলতে গেলে তার জেল হয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, “আমাদের শহর ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা কত সুন্দরভাবে থাকতাম এখানে। এখানে কত দোকান ছিল। সবকিছু ছিল।”
বয়স্ক মহিলা বলেন, “যখন আমরা স্বাধীন ইউক্রেন হলাম, তখন থেকেই সর্বনাশের শুরু।”
(পরবর্তী অংশ পর্ব ৫-এ)