Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিযোগিতা: পুরো বিশ্ব কি বড় কোনো বাণিজ্যিক যুদ্ধের সাক্ষী হতে যাচ্ছে?

প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন; এই দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যিক লড়াই এখন বিশ্ববাসীর কাছে কৌতূহলের একটি বিষয়। অর্থনীতিতে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাল্লা দেওয়ার জন্য অনেক দিন ধরেই চীন প্রযুক্তিখাতে তাদের বিনিয়োগ বাড়িয়ে দিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে যেভাবে এই লড়াইয়ের সূচনা হয়েছে তাতে একটি বড়সড় বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হতে বেশি দেরি নেই। আর এই দুই দেশের মধ্যে যদি কোনো রকম বাণিজ্য যুদ্ধ হয় তাহলে এর ফল কি হবে সেটা ভেবে বের করতেই এখন পৃথিবীর বড় বড় অর্থনীতিবিদ এবং নীতিনির্ধারকেরা তৎপর হয়ে উঠেছেন।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে আসা চীনা পণ্যগুলোর উপর ট্যারিফ আরোপ করেছেন, যার বাজার মূল্য ৫০ বিলিয়ন ডলার। অপরদিকে চীনও তাদের দেশে আসা আমেরিকান পণ্যগুলোর উপরও ট্যারিফ আরোপ করেছে যার মূল্য ৩ বিলিয়ন ডলার। ট্যারিফ (Tariff) হচ্ছে একধরণের কর, যা আমদানিকৃত পণ্যের উপর আরোপ করা হয়। এরকম করার অনেকগুলো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তবে এর গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ হচ্ছে বাইরে থেকে আসা পণ্যের থেকে দেশীয় পণ্যগুলোর দিকে জনগণের চাহিদা বাড়ানো। বেশী ট্যারিফ আরোপ করলে বাইরের পণ্যগুলোর দাম বেড়ে যাবে আর এতে ক্রেতার কাছে সেই পণ্যের চাহিদা কম হবে। এর ফলে রপ্তানিকারক দেশের বড় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

দুই দেশের মধ্যে যেভাবে এই লড়াইয়ের সূচনা হয়েছে তাতে একটি বড়সড় বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হতে বেশি দেরি নেই; Source: Dreamstime.com

দুই দেশের এমন আগ্রাসী মনোভাব ধাপে ধাপে বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ট্রাম্পের বক্তব্য অনুযায়ী, তারা এই আরোপ শুধু চীনের জন্য করেনি, আরও অনেক দেশের রপ্তানি পণ্যের উপর এই ট্যারিফ আরোপ করা হয়েছে। চীনকে দিয়েই ব্যাপারটির সূচনা হলো। অন্যদিকে বেইজিং থেকেও এক বক্তব্য দেয়া হয়েছে যে, প্রতিদান না দেওয়াটা অভদ্রতা এবং ব্যাপারটি যেন খুব জলদি মিটে যায় এই ব্যপারে তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। এরকম বক্তব্যকে হালকাভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

মার্কেট বিশ্লেষণকারীদের চিন্তায় মাথায় হাত। কারণ চীন এখন প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এলুমিনিয়াম এবং স্টিল এর উপরও ট্যারিফ বসাতে পারে বলে ধারণা করছে তারা, যেটা এর আগে ট্রাম্পের কাছ থেকে মার্চের প্রথম দিকে ঘোষণা এসেছিলো। এর মানে আরেকটি বাণিজ্য যুদ্ধ লেগে যেতে বেশী সময় পার করতে হবে না।

বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য শক্তির পরীক্ষা হয়ে যেতে পারে; Source: The Daily Blog

চীনের এরকম জবাব দেওয়ার কারণে যদি ট্রাম্প এবার আরও বড় কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় তাহলে বেইজিং থেকেও কড়াভাবে এর জবাব দেয়া হবে। আর এমনটি হলে এই পাল্টা জবাব দেওয়ার রীতি চলতেই থাকবে। এই ধরনের প্রতিশোধমূলক কার্যকলাপকেই অর্থনীতির ভাষায় বলা হয়ে থাকে Trade War বা বাণিজ্য যুদ্ধ। এই ধরনের যুদ্ধের প্রধান সমস্যা হচ্ছে এটা অনেক দিন ধরে চলতে থাকে এবং বাণিজ্য যুদ্ধের কোন পর্যায়ে কী হবে, কে কখন কি পদক্ষেপ নিবে সেটা আগে থেকে নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।

তবে আগে থেকে বেশী কিছু বলা না গেলেও কিছু কিছু কথার যোগসূত্রকে কেন্দ্র করে একটা কিছু আন্দাজ করা যায়। ট্রাম্পের নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের সময় তিনি বার বার বলেছেন যে, তার সময়ে তিনি চীনের সাথে বাণিজ্যের ব্যাপারে কড়া কিছু সিদ্ধান্ত নিবেন। এরকম বলার পেছনে তার যুক্তি ছিল এই যে, বিভিন্ন দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সেটা আর হতে দিবেন না তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি (Trade Deficit) পূরণ করতে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন। এখানে বলে রাখা ভালো যে, একটি দেশের বাণিজ্য ঘাটতি বা ট্রেড ডেফিসিট তখনই হয় যখন সেই দেশে আমদানি রপ্তানি থেকে বেড়ে যায়। ব্যাপারটিকে যতটা সহজ মনে হচ্ছে ততটা সহজ নয়। কারণ এর সাথে আরও অনেকগুলো প্রভাবকযুক্ত থাকে। কিন্তু সহজ ভাষায় বোঝানোর জন্য এটুকু বলাই যথেষ্ট।

চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি-রপ্তানি চিত্র; Source: The Economist

অ্যালুমিনিয়াম এবং স্টিল- এই দুটি পণ্য ছাড়াও আমেরিকা ওয়াশিং মেশিন এবং সোলার প্যানেল আমদানির দিকে ঝুঁকেছে এবং এগুলো যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করতে চীনকে অনেক বেশী পরিমাণে ট্যাক্স গুনতে হচ্ছে, যেটা তাদের ব্যবসায় বিরুপ প্রভাব ফেলছে। কারণ সেখানেও চড়া মূল্যে ট্যারিফ আরোপ করা হয়েছে। Center for Strategic & International Studies এর চীন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ স্কট কেনেডি এই ব্যাপারে বলেছেন,

“যখন চীনের ব্যাপার আসে তখন যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশী পরিমাণে লেনদেনের দিকে ঝুঁকে যায়। এর কারণ হচ্ছে চীনের বাণিজ্য ক্ষেত্রে উদারতা অর্থাৎ তাদের Open market ব্যবস্থা। আরেকটি কারণ হচ্ছে বাণিজ্যক্ষেত্রে অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে একই কাতারে দাঁড়ানোর তীব্র প্রতিযোগী মনোভাব। চীন কখনোই তাদের বাণিজ্য করার প্রক্রিয়া এবং তাদের মনোভাব পরিবর্তন করবে না।”

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখন যেটা সেটা হচ্ছে আমেরিকার মানুষ ট্রাম্পের এই রকম পদক্ষেপকে কীভাবে নিবে; Source: The Eagle Tribune

এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপকে কীভাবে নিবে। কারণ ট্যারিফ বাড়ানোর কারণে আমেরিকান পণ্যগুলোর সাথে চীনের পণ্য তাল মিলিয়ে চলতে পারবে না। এখানে সবচেয়ে বড় অনিশ্চিয়তা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র কতদিন পর্যন্ত বাণিজ্য ক্ষেত্রে তাদের এই সিদ্ধান্ত বহাল রাখবে। খুব বড় একটি সম্ভাবনা হচ্ছে এই যুদ্ধ হয়তো চলতেই থাকবে। এক দেশ যদি কোনো একটি পদক্ষেপ নেয় অন্য দেশও চুপ করে বসে থাকবে না। বিশেষ করে চীন এখন প্রযুক্তি খাতে তাদের বিনিয়োগ বাড়িয়ে দিয়ে আমেরিকার সাথে পাল্লা দিচ্ছে। এমন অবস্থায় ট্রাম্পের শাসন ব্যবস্থা থেকে চীনের পণ্যের উপর ট্যারিফ আরোপের ঘোষণা বাণিজ্য যুদ্ধকে আরও জোরে নাড়িয়ে দেওয়ার মতোই লাগছে বিশেষজ্ঞদের কাছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপের পর চীন থেকে কী ধরনের ঘোষণা আসে সেটা দেখার জন্য এখন বাণিজ্য বিশ্লেষকরা চীনের দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে। কারণ পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য চীনের হাতেও বেশ কিছু অস্ত্র আছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাদের শস্য-ফসলের সবচেয়ে বড় খরিদ্দার হচ্ছে চীন। চীন সেখান থেকে সয়াবিন এবং ভুট্টা জাতীয় খাদ্য কিনে থাকে। এখন চীনও যুক্তরাষ্ট্রের মতো এসবের উপর অতিরিক্ত ট্যাক্স চাপিয়ে দিতেই পারে এবং তাদের নিজেদের জন্য এসব খাদ্যশস্য ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনা থেকে আমদানি করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যেকার বাণিজ্য প্রতিযোগিতার চিত্র। কাছাকছি অবস্থানে আছে ধাতব দ্রব্যাদি, কল-কারখানার মেশিন, গাড়ি শিল্প এবং কেমিক্যাল শিল্প; Source: MarketWatch

যুক্তরাষ্ট্রের বিমান কোম্পানিগুলোর বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে চীন। বিশেষ করে বোয়িং কোম্পানির বিমানগুলোর চীনে অবতরণের উপর টারিফ প্রয়োগ করতে পারে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনেকগুলো এয়ারবাস কেনার কথা চীনের। ইচ্ছা করলে তারা তাদের লেনদেন থেকে বিরত থাকতে পারে।

কিন্তু চীনের প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাব একটু কম। এর মানে এই নয় যে, তাদের প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাব নেই। সেটা আছে, কিন্তু সেটা কয়েকটি নির্দিষ্ট বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এখনও পর্যন্ত চীন যুক্তরাষ্ট্রের জবাবে কী করবে সে ব্যাপারে কোনো আগ্রাসী মনোভাব প্রকাশ করেনি। চীনের পক্ষে এরকম চিন্তা করা স্বাভাবিক যে, এধরণের বাণিজ্য যুদ্ধে নামলে পুরো বিশ্বের বাণিজ্য জগতে সুস্থিতি বজায় থাকবে না। এরকম হলে একটি অর্থনৈতিক ধ্বস নামতে বাধ্য। তাই হয়তো চীন তাদের দিক থেকে কোনো শক্ত অবস্থানে না-ও যেতে পারে।

Source: The Economist

কিন্তু এমন বিষয়ে আগেভাগে কিছুই বলা যায় না। ব্যাপারটি খুবই জটিল এবং অনিশ্চিত। তবে আমেরিকা-চীনের এই বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে যে বড় প্রভাব পড়বে সেটা একটু হলেও বোঝা যাচ্ছে। তবে দুই দেশের মধ্যে এ নিয়ে একটি আলোচনা হলে এরকম অনিশ্চিত ব্যাপার থেকে খুব সহজেই বেরিয়ে আসা যেতে পারে। তবে ফলাফল কী হবে সেটা সময়ই বলে দিবে।

ফিচার ইমেজ: Asia Financial Publishing

Related Articles