
মানুষের ইচ্ছের কোনো শেষ নেই! সেটা হোক তারুণ্যে কিংবা ভাটা পড়া বার্ধক্যে। তেমনই এক অপূর্ণ ইচ্ছেকে শেষ বয়সে এসেও পূর্ণতা দিয়েছেন ৭১ বছর বয়সী কানাডিয়ান নাগরিক আর্থার রস। ১৯৬৯ সালের কথা, স্কুলের গণ্ডি পার করে ৪ বছরের স্নাতক কোর্সে তিনি ভর্তি হন কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে অবস্থিত ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত এরই মধ্যে কেটে গেছে প্রায় ৫৪ বছর! অবশেষে সম্পন্ন হলো তার সুদীর্ঘ স্নাতক জীবন।
কীভাবে কেটেছে বয়োবৃদ্ধ এই মানুষটির পাঁচ যুগেরও অধিক স্নাতক জীবন? আর্থার জানান- ভর্তির পর আর্টসে পড়াশোনায় আনন্দ পাচ্ছিলেন না তিনি। ফলে ঝুঁকে পড়েন অভিনয়-বিনোদন জগতে। যুক্ত হন ক্যাম্পাসের থিয়েটার ক্লাবের সঙ্গেও। দু’বছর পর থিয়েটার ক্লাবের পরামর্শে পাড়ি জমান মন্ট্রিলের ন্যাশনাল স্কুল অব থিয়েটারে।
কিন্তু সেখানে যাবার কিছুদিন পর তার বিচিত্র মনে জেঁকে বসে আইনজীবী হওয়ার তীব্র বাসনা। ফলস্বরূপ, আবারও ফিরে আসেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ভর্তি হন টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছরের আইন কোর্সে। যথাসময়ে আইনের পাঠ চুকিয়ে নিযুক্ত হন আইন পেশায়। ৩৫ বছর পর ২০১৬ সালে অবসর নেন সেখান থেকেও।

অবসরের সেসময় তার মনে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধ-সমাপ্ত ব্যাচেলর অব আর্টস ডিগ্রির কথা। তখনই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। কর্তৃপক্ষও তাকে শোনায় আশার বাণী। তাদের ইতিবাচক সিদ্ধান্তে মানসিকভাবে প্রস্তুতি শুরু করেন আর্থার।
একদিন হুট করেই মনোযোগী ছাত্রের মতো বইখাতা বগলদাবা করে চলে যান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। যথাসময়ে বসে পড়েন ক্লাসেও। খাতায় টুকে নেন প্রফেসরদের লেকচার। ঠিকঠাকভাবে জমা দেন ক্লাস রিপোর্ট ও অ্যাসাইনমেন্ট। অংশ নেন কুইজ-প্রেজেন্টেশনেও। অবশেষে চলতি বছরের মে মাসে শেষ হয় তার সুদীর্ঘ ৫৪ বছরের স্নাতক জীবন।
এর আগে প্রায় ৫২ বছরে স্নাতক শেষ করে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে ওঠেছিল রবার্ট এফ পি ক্রনিনের নাম, যা আর্থারের স্নাতককাল থেকে দুই বছর কম! ক্রনিন ১৯৪৮ সালে জীববিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। নানা কারণে তার স্নাতক শেষ করতে সময় লেগেছিল ২০০০ সাল নাগাদ।
তবে গিনেস বুকে রেকর্ড গড়তে আর্থার রসের কোনো আগ্রহ ছিল না। নেই এখনো। কেবল জ্ঞানার্জন আর কোর্স সমাপ্তির প্রচণ্ড ইচ্ছা থেকেই আত্মবিশ্বাসী মানুষটির এমন অনন্য কাজ, যা অনুপ্রেরণা জোগাবে অসংখ্য বৃদ্ধকে, শেষ বয়সে শিক্ষার্জনে।