বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য টেক জায়ান্ট কোম্পানি। আছে বেশ কিছু স্বনামধন্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানও। প্রয়োজনের তাগিদে এসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তন এনেছে নিজেদের ব্যবসায়িক অবকাঠামোয়। হাতে নিয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী সব পরিকল্পনা।
সম্প্রতি তেমনই এক পরিকল্পনা তুলে ধরে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে অন্যতম টেক জায়ান্ট ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবা গ্রুপ অব হোল্ডিংস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠার সুদীর্ঘ চব্বিশ বছর পর এমন বৃহৎ পরিসরে নিজেদের ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কোম্পানিটি। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতা হ্রাস করে ব্যবসায়ের পরিধি বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত ২৮ মার্চ এক বিবৃতিতে আসে এমন ঘোষণা। ছয়টি অনন্য গ্রুপে বিভক্ত হওয়ার এ বার্তা প্রদান করেন প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান সিইও ডেনিয়েল শ্যাঙ। যদিও বিভক্তির পরও তিনিই থাকবেন এর প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে।
১৯৯৯ সালের এপ্রিলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বল্প পরিসরে যাত্রা শুরু করা আলিবাবা বর্তমানে প্রদান করছে ক্লাউড ইন্টেলিজেন্স পরিষেবা, স্মার্ট লজিস্টিক সাপোর্ট ও চিত্তবিনোদনের মতো আরও নানাবিধ সুবিধা। তবে, বিভক্তির পর প্রতিষ্ঠানটির এসব ইউনিট আর একত্রে থাকবে না।
ক্লাউড ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ, কাইনিয়াও স্মার্ট লজিস্টিকস গ্রুপ, তাওবাও টিমল গ্রুপ, লোকাল সার্ভিসেস গ্রুপ, গ্লোবাল ডিজিটাল কমার্স গ্রুপ এবং ডিজিটাল মিডিয়া এন্ড এন্টারটেইনমেন্ট গ্রুপ- এই ছয়টি ইউনিটে পুনর্গঠনের মাধ্যমে নবরূপে পরিচালিত হবে কোম্পানিটি। এসব ইউনিটের প্রত্যেকটির পরিচালনায় থাকবেন কোম্পানিটির নিজস্ব সিইও ও পরিচালনা পর্ষদবৃন্দ। এর ফলে গ্রুপগুলো আলাদাভাবেই করতে পারবে কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন। আইপিও অনুমোদনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের নিকট থেকেও সংগ্রহ করতে পারবে পর্যাপ্ত মূলধন।
২০২০ সালের শেষের দিকে চীনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বেইজিংয়ের কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও বিধি-নিষেধ আরোপের আলোচনা-সমালোচনার পর বেশ কিছুদিন আড়ালে ছিলেন আলিবাবার আইকনিক প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা। দেশ ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন ভিনদেশেও। তবে, এক বছরেরও অধিক সময় সেখানে অবস্থান করে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন তিনি। ফেরার পর পরই আসে এমন ভিন্নধর্মী ঘোষণার। সাড়াজাগানো এ ঘোষণার পর আমেরিকার শেয়ার মার্কেটে থর থর করে বৃদ্ধি পায় আলিবাবার শেয়ারের মূল্য। যেখানে প্রযুক্তি খাতে বেইজিংয়ের নিষেধাজ্ঞার ফলশ্রুতিতে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছিল আলিবাবার শেয়ার মূল্য, যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ পর্যন্ত!
গত কয়েক বছর যাবৎ আয়ের ধারাবাহিক পতনের ফলে ৬০০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ব্যয়ও কমিয়েছিল আলিবাবা। তবে, নতুন এ সিদ্ধান্তের পর বিশ্লেষকদের অভিমত- চীনা ই-কমার্সের ইতিহাসে আলিবাবার বর্তমান এই পরিকল্পনা একটি যুগান্তকারী ঘটনা। কোম্পানিটি নতুন বিনিয়োগকারীদের নিয়ে ইতোমধ্যে পাবলিক মার্কেটে কাজ করতেও প্রস্তুত, দিয়েছে এমন পূর্বাভাসও। আর তাই নতুন এ পরিকল্পনা আলিবাবাকে কোথায় নিয়ে যায়- সেটিই এখন দেখার অপেক্ষা।