করোনাভাইরাসের মহামারী সামলাতে সব দেশই কম-বেশি হিমশিম খাচ্ছে। কীভাবে এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় তা নিয়ে প্রথম থেকেই সকলের মাথা ব্যথা। কিন্তু কী কী করা যেতে পারে তা নিয়ে ভাবতে গিয়ে অনেক দেশই সময়মতো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়। এরকম পরিস্থিতিতে এশিয়ার কয়েকটি দেশ সঠিক সময়ে তাদের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর জন্য প্রশংসিত হয়। এসব দেশকে সম্পূর্ণরূপে সফল বলা না গেলেও করোনা পরিস্থিতি সামলানোর জন্য যতটুকু তারা করেছে তা অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। করোনা পরিস্থিতি সময়ের সাথে অবনতি হতে শুরু করলে তা গুছিয়ে নিতে অধিক সময় ব্যয় করেনি এশিয়ার এই দেশগুলো।
ভুটান
ভুটানের একপাশে চীন আর আরেকপাশে ভারত। দক্ষিণ এশিয়ায় করোনা ভাইরাসে ভারত সর্বোচ্চ আক্রান্ত। এই ভারতের সাথে আবার এই দেশের রয়েছে উন্মুক্ত সীমান্ত। কিন্তু তাও ভুটানে আজ অবধি মাত্র ৮০ জন আক্রান্ত হয় করোনাভাইরাসে এবং কেউ মারা যায়নি। দেশটিতে ৬ মার্চ প্রথমবারের মতো এক মার্কিন পর্যটক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তৎক্ষণাৎ তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় এবং তার সংস্পর্শে যারা এসেছিলো সকলকে খুঁজে বের করে কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়।
করোনাভাইরাসের চিকিৎসার জন্য ফেব্রুয়ারি মাসেই ১২০টি কোয়ারান্টাইন কক্ষের ব্যবস্থা করা হয়। আর যারা অন্য দেশ থেকে আসবে তাদের ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হয়। করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুটানের রাজা নিজে পর্যবেক্ষণ করেন। উল্লেখ্য তিনি নিজে একজন ডাক্তার।
সেখানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়লে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়। পরিচ্ছন্নতা ও অন্যান্য সতর্কতার ব্যাপারে রাজার দেওয়া বিধিনিষেধ খুব কঠোরভাবে পালন করে আমজনতা। তাই সুফলও পায় তারা। খাদ্যের সন্ধানে যেন গরীবদের বাইরে যাওয়া না লাগে তাই তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়। অধিক সম্পদ ও উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা না থাকলেও সঠিক ব্যবস্থাপনা যে একটি দেশকে মহামারী থেকেও বাঁচাতে পারে তা প্রমাণ করে ভুটান। উল্লেখ্য যে, দেশটিতে চিকিৎসক সংখ্যা মাত্র ৩০০ জন।
ভিয়েতনাম
চীনের সাথে ভিয়েতনামের দীর্ঘ স্থল সীমান্ত থাকার সুবাদে তাদের মধ্যে ভালো যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও করোনাভাইরাসের মতো মহামারীর প্রকোপ ভিয়েতনামে ছিলো নগণ্য। এ দেশের জনসংখ্যা প্রায় ৯ কোটি ৭০ লাখ। কিন্তু সাম্প্রতিক তথ্য মোতাবেক এখানে করোনা পজিটিভ মাত্র ৩৬৯ জন এবং আজ অবধি করোনাভাইরাসে কেউ মারা যায়নি (৮ জুলাই, ২০২০)।
প্রশ্ন চলে আসে যে এত জনবহুল দেশ চীনের এত কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও কীভাবে নিজেকে এর প্রকোপ থেকে রক্ষা করলো। দূরদর্শী ভিয়েতনামের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া বা আরেকটু নির্দিষ্ট করে বললে ‘তাৎক্ষণিক অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া’ ভিয়েতনামের জন্য ঢাল হয়ে দাঁড়ায়। ২৩ জানুয়ারি এক ব্যক্তি চীনের উহান থেকে হো চি মিন শহরে আসলে ভিয়েতনাম প্রথম করোনা ভাইরাসের ঘটনা নিশ্চিত করে। আর সাথে সাথেই শুরু হয় কঠোর নিয়মাবলি। পার্শ্ববর্তী দেশ চীনের সাথে বর্ডার বন্ধ করে দেওয়া, বর্ডারের চেকপয়েন্টগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কড়াকড়ি করা, অন্যান্য দেশের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সীমিত আকারে চালু রাখা, বিদেশফেরত ব্যক্তিদের কঠোরভাবে কোয়ারান্টাইনে থাকতে বাধ্য করা ইত্যাদি। আর এই ছোট ছোট পদক্ষেপগুলো নিতে অনেক দেশের গড়িমসি তাদের জন্যই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভিয়েতনামের স্বাস্থ্যখাত তেমন উন্নত নয়। তাদের হাসপাতালে রোগীদের জন্য সুযোগ-সুবিধাও সীমিত। হো চি মিনের মতো মহানগরীতেও রয়েছে মাত্র ৯০০টি আইসিইউ বেড। তবে সময় থাকতে কঠোর তদারকি শুরু করার ফলে হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার জন্য মানুষের ঢল সামলানোর ঝামেলা পোহাতে হয়নি ভিয়েতনামকে। হো চি মিন শহরের তথ্য অনুসারে, প্রতি ৩০০ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য ৮৪,০০০ ব্যক্তিকে কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়। অর্থাৎ একজন করোনা পজিটিভ ব্যক্তির জন্য ২৮০ জনকে হোম কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়। করোনার মতো মহামারীকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা তা ভিয়েতনাম প্রমাণসহ তুলে ধরেছে। জনগণকে সচেতন করার জন্য আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন এবং গানও তৈরি করে দেশটি। আর মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে নিয়মিত তথ্য সরবরাহ করার ব্যবস্থা তো রয়েছেই। সৌভাগ্যক্রমে, বেশিরভাগ জনগণও সরকারের কার্যক্রমে সাড়া দেয় এবং বিধিনিষেধ মেনে চলে। বিচারবুদ্ধি ও পারস্পরিক সমঝোতাও কাজ করে এক্ষেত্রে। সরকার ও জনগণের মধ্যে যেকোনো একপক্ষ হস্তক্ষেপ না করলে মহামারী থেকে বাঁচা সম্ভব নয়।
দক্ষিণ কোরিয়া
ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে চীনের বাইরে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা সবচাইতে বেশি ছিল দক্ষিণ কোরিয়ায়। প্রতিদিন এই সংখ্যা কমে যাওয়া তো দূরের কথা, উল্টো দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে যাচ্ছিল। এমন সময় তারা একে নিয়ন্ত্রণে আনার পরিকল্পনা করে। দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশলের মূলে রয়েছে বিনামূল্যে করোনা টেস্ট করানোর যথাযথ ব্যবস্থা করা এবং এই বিষয়ে কোনো গড়িমসি না করা। প্রায় দুই মাসে ৩,৫০,০০০ করোনা টেস্ট করানো হয়। কোনো রকম লক্ষণ দেখা গেলেই টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে করোনা আক্রান্ত সকলকে সময়মতো শনাক্ত করা সম্ভব হয় এবং কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়। এতে করে করোনা ভাইরাস ছড়ানো রোধ করা সম্ভব হয়।
দেশটির একটি উদ্ভাবনী ব্যবস্থা হলো ‘ড্রাইভ থ্রু টেস্টিং স্টেশন’। অর্থাৎ চালক বা গাড়িতে অবস্থানরত ব্যক্তি করোনা টেস্টিং স্টেশনে যায় এবং গাড়ি থেকে না নেমেই ১০ মিনিটের মধ্যে নমুনা সংগ্রহ করা হয়ে যায়। এতে করে যারা টেস্ট করাতে আসে তাদের সময় বাঁচে ও সঠিক সময়ে রিপোর্ট পাওয়া সম্ভবপর হয়, আর স্বাস্থ্যকর্মীরাও নিজেদেরকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হয়। বেশ কিছু হাসপাতালে ফোন বুথের মতো করোনা টেস্টের বুথ রয়েছে। এখানে ফ্রন্টলাইনের স্বাস্থ্যকর্মীরা স্বচ্ছ অ্যাক্রেলিক প্যানেলের একদিকে থেকে আরেক দিকে অবস্থানরত ব্যক্তি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে।
দেশটির ইনছন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ‘ওপেন এয়ার ওয়াক থ্রু’ টেস্টিং স্টেশনও নির্মাণ করা হয়েছে যা প্রাকৃতিক পরিবেশের বায়ুকে ভেন্টিলেশনের জন্য ব্যবহার করে। কোনো ব্যক্তির শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া গেলে কর্তৃপক্ষ সেই ব্যক্তির আশেপাশে অবস্থানরতদের এবং তার সাথে যারা কাজ করে তাদেরকে তৎক্ষণাৎ মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেন। এতে করে বাকিরাও সঠিক সময়ে নিজেদের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বিরত রাখতে পারে।
দক্ষিণ কোরিয়ার চার্চগুলোতে যাওয়ার উপর কিছু দিন নিষেধাজ্ঞা থাকার পর সেটা তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু সকলকে কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যেতে বলা হয়। দক্ষিণ কোরিয়া আসলে থেমে নেই। পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে, ক্লাস করছে, চাকরিজীবীরা অফিসে যাচ্ছে। তবে সামাজিক দূরত্ব কঠোরভাবে মেনে। খোলা মাঠে পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায় রেখে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেওয়ার দৃশ্য ইতোমধ্যে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। লকডাউন না দিয়েও যেভাবে দেশটি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে তা প্রশংসনীয়। তবে জুনের মাঝামাঝি ফের সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করে। আর ঝাপসা হতে শুরু করে নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি। রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে ও নাইট ক্লাবে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। আর সবকিছু খোলা থাকার কারণে সবসময় বিষয়টি নিশ্চিত করাও সম্ভব হয়। মে মাসে শুধুমাত্র একজন কোভিড-১৯ পজিটিভ অসতর্কতাবশত একটি নাইটক্লাবে যাওয়ার কারণে ৩৪ জন করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়। দক্ষিণ কোরিয়া ফের ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চেষ্টা করছে।
শ্রীলঙ্কা
দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলঙ্কা করোনা মোকাবেলায় প্রথম থেকে বেশ সতর্ক ছিল। লে: জেনারেল সভেদ্র সিলভা এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১১ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হলেও তার তত্ত্বাবধানে ২৬ জানুয়ারি থেকেই কোভিড টাস্ক ফোর্স গড়ে তোলা হয়। উহান থেকে ৩৪ জন ফেরত আনা হলে তাদের জন্য আর্মিরা বিশেষ কোয়ারান্টাইন সেন্টারও গড়ে তোলেন। শ্রীলঙ্কায় শিক্ষার হার যেমন বেশি, তেমন শিক্ষার মানও। আর এজন্যই আমজনতা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও অন্যান্য সতর্কতা অবলম্বন করার গুরুত্ব বুঝতে পারে এবং তা যথাযথভাবে মেনেও চলে। তাছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা না থাকায় একজন আক্রান্ত হলে বাকিদের সহজেই হোম কোয়ারান্টাইনে থাকতে ও এলাকা লকডাউন করতে সহজ হয়।
মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়াতে হঠাৎ করেই খুব বড় পরিসরে করোনা ভাইরাসের মহামারী ছড়িয়ে পড়ে যখন মার্চে একটি মসজিদে বড় ধরণের একটি ধর্মীয় মাহফিল হয়। শ্রী পেটালিং মসজিদে চারদিনের হওয়া এই মাহফিলে এক লাখের বেশি মানুষ জমায়েত হয়। ফলে দ্বিগুণের বেশি বেড়ে যায় আক্রান্তের সংখ্যা। অবস্থা বেগতিক দেখে খুব দ্রুতই কাজ শুরু করে মালয়েশিয়া। সব মাহফিল করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সব বয়সের মানুষকে এই সময়ে কী কী করা উচিত তা জানানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করে। গণমাধ্যমগুলো এক্ষেত্রে সহায়তা করে। কনটাক্ট ট্রেসিংয়ের সিস্টেমটিও ব্যবহার করা হয়। ভাইরাস হটস্পটগুলোতে লকডাউন বাড়ানো এবং মোবাইল টেস্টিংয়ের মাধ্যমে সকল বাসিন্দাদের (লক্ষণ থাকুক বা না থাকুক) করোনা টেস্ট করানোর মত পদক্ষেপও নেওয়া হয়। সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়, তবে সীমিত পরিসরে কিছু অফিস খোলা রাখা হয়। বিনা কারণে যারা বাইরে যায় তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হয়। লকডাউন অমান্য করে বের হওয়ার কারণে প্রায় ২০,০০০ জনকে গ্রেফতারও করা হয়। কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য ৪,০০০ বেডও বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নেওয়ায় সেগুলো ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়েনি। দেশটিতে আপাতত করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
হংকং
হংকং ধীরে ধীরে সবকিছু খুলে দিচ্ছে। আগের জীবনে ফিরতে শুরু করেছে হংকং, তবে সতর্কতা মেনে। কিন্তু দৃশ্যটি ভিন্নও হতে পারতো। প্রায় সাড়ে ৭৪ লাখ (২০১৮) মানুষের বসবাসরত হংকংয়ে আজ অবধি প্রায় ১৩৬৬ জন করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১১৭৬ জন ইতোমধ্যে সুস্থ এবং ৭ জন মারা যায় (৮ জুলাই, ২০২০)। জনবহুল হংকং সঠিক সময়ে পদক্ষেপ না নিলে এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হত না। জানুয়ারির শুরুতেই অর্থাৎ ভাইরাস ছড়ানো শুরু করা মাত্রই হংকং চীনের সাথে যে ১৪টি বর্ডার পয়েন্ট ছিল সেগুলোর ১০টা পয়েন্টই বন্ধ করে দেয়। যেই চারটি পয়েন্ট খোলা ছিল সেগুলো দিয়ে প্রবেশকারীদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের কোয়ারান্টাইনে থাকতে হয়। কোয়ারান্টাইনে থাকা নিয়ে হেরফের করার সুযোগ হংকং সরকার কাউকে দেয়নি। এটা শুধু সচেতন থাকার নিয়মই না, বরং আইন হিসেবেই ধরা হচ্ছে যা অযৌক্তিকভাবে অমান্য করার অধিকার কারো নেই। সরকারিভাবে কোয়ারান্টাইনের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি যারা হোম কোয়ারান্টাইনে আছে তাদের নিয়মিত খোঁজ-খবরও রাখা হয়। তাছাড়া অভ্যন্তরীণ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাবলিক জিমনেশিয়াম, লাইব্রেরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। অফিসগুলোর কাজ সীমিত পরিসরে চললেও বেশ নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয় সকলকে।
বিভিন্ন দেশে এই মহামারীর প্রকোপ দৃঢ় হওয়ার মূলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লকডাউন ও কোয়ারান্টাইন নিয়ে গড়িমসি করার বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে। আর হংকং সরকারের মহামারী ছড়ানো প্রতিরোধ করার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে এই দুটি পদক্ষেপ। হংকং করোনা পরবর্তী বিশ্বে জনগণকে সহায়তার উদ্দেশ্যে ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী প্রত্যেককে প্রণোদনা দেওয়ারও ব্যবস্থা করছে।
তাইওয়ান এবং সিঙ্গাপুর
হংকংয়ের মতো তাইওয়ানও যথাসময়ে এই মহামারী নিয়ন্ত্রণে কাজ করে এবং সফলও হয়। মাস্ক পরিধান এবং পরিচ্ছন্নতা ও অন্যান্য সতর্কতার ব্যাপারে বেশকিছু ক্যাম্পেইনও করে তাইওয়ান। আর সরকারিভাবে তদারকি করার ব্যাপার প্রথম থেকেই কঠোর ছিল। মাঝে বিদেশফেরত ব্যক্তিদের ধকল সামলাতে হিমশিম খেলেও পরবর্তীতে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় তাইওয়ান সরকার। করোনা ভাইরাসের মহামারী শুরু হলে সিঙ্গাপুর সকলের জন্য একটি আদর্শ হিসেবে প্রমাণিত হয়। সকলের সচেতনতা ও সরকারিভাবে গৃহীত পদক্ষেপগুলো প্রশংসিত হয়।
কিন্তু ঝামেলা বাধে যখন কর্তৃপক্ষ প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য বসবাসের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়। একটি রুমে ২০ জন বা তার বেশি শ্রমিক একসাথে বসবাস করার ফলে সংক্রমণ দ্রুত তাদের মধ্যে এবং পরবর্তীতে দেশে ছড়াতে শুরু করে। সিঙ্গাপুরে প্রায় দুই লাখ শ্রমিকদের জন্য মাত্র ৪৩টি ছাত্রাবাস রয়েছে। সতর্কতার ক্ষেত্রে আমজনতার একটি অংশ বাদ পড়ে যাওয়ায় সিঙ্গাপুরের করোনা জয়ের পরিস্থিতি ক্রমেই বদলাতে শুরু করে এবং তা নেতিবাচকভাবে। মে মাসে অবস্থার অধিক অবনতি হলেও আস্তে আস্তে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। আগের তুলনায় দিন প্রতি সংক্রমণের হারও কমেছে দেশটিতে।