গণহত্যাকে রুখে দেয়ার জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৮ সালে জেনেভা কনভেনশন স্থাপিত হয়। এই কনভেনশন অনুসারে গণহত্যার সংজ্ঞা স্থাপনের মাধ্যমে একে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অপরাধ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। এছাড়াও মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের জন্য নুরেমবার্গ ট্রায়ালে দোষীদের শাস্তি প্রদান করা হয়। এগুলোকে আন্তর্জাতিক ঘৃণ্য অপরাধ হিসেবে আখ্যা দিয়ে শাস্তি প্রদানের প্রথম নজির স্থাপন করা হয় সেই ট্রায়ালে। কিন্তু তার পরও পুরো বিংশ শতাব্দীজুড়ে এগুলোর মতো একের পর এক ঘৃণ্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। যার করুণ অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের মানুষেরও রয়েছে। এত আইন ও আন্তর্জাতিক নজরদারি থাকা সত্ত্বেও তাহলে কেন ঘটে এসব আন্তর্জাতিক অপরাধ?
বিংশ শতাব্দীর সেই করুণ অভিজ্ঞতা পার করে এসে মানুষ যখন একবিংশ শতাব্দীতে প্রবেশ করলো তখন আরো একটি দুঃসহ ইতিহাস তৈরি হলো সুদানে। কিন্তু সেটি গণহত্যা নাকি জাতিগত নির্মূল তা নিয়ে বহু পক্ষের ভিন্ন মতামত রয়েছে। সুদানের এই নির্মম ঘটনার আগে এবং পরে, এমনকি এখন অবধি নানা সমস্যা বজায় আছে, যেখানে এখনো প্রচুর মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে গত কয়েক দশকে খুবই হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি দেশটিতে বিরাজমান।
পটভূমি
দেশভাগের আগে সুদান ছিল আফ্রিকা মহাদেশের সর্ববৃহৎ দেশ, যেটির অর্ধেক সাহারা মরুভূমিতে পড়েছে আর বাকি অর্ধেক সবুজ সাভানায় পড়েছে। পুরো জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ হচ্ছে মুসলিম এবং ৩০০ এর মতো উপজাতি সেখানে বসবাস করে, যার মধ্যে বেশিরভাগ আরব সুদানের উত্তরভাগে বসবাস করে এবং দক্ষিণভাগে বসবাস করে আফ্রিকান উপজাতি। এরকম বিন্যাস শুরু থেকেই এই অঞ্চলে বিরাজমান। ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত দেশটি যুক্তরাজ্য ও মিশরের যুগ্ম শাসন ব্যবস্থার অধীনে ছিল। ১৯৫৬ সালে সেখান থেকে স্বাধীনতা লাভ করে একটি প্রজাতন্ত্র হিসেবে সুদানের আবির্ভাব ঘটে। কিন্তু এরপর থেকে সুদানের উত্তর অংশ ও দক্ষিণ অংশের মধ্যে একের পর এক সমস্যা, সংঘাত বেড়েই যাচ্ছিলো। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৬২ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত গৃহযুদ্ধ চলে যা সুদানের দক্ষিণ অংশকে আংশিক স্বশাসন প্রদানের মাধ্যমে শেষ হয়। কিন্তু তারপরও উপজাতি ও বিভিন্ন বর্ণের গোষ্ঠীর মধ্যে বিভিন্ন সময় সংঘাত হত।
১৯৭৮ সালে সুদানের দক্ষিণভাগে জমে থাকা তেল আবিষ্কৃত হওয়ার পর উত্তেজনা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। ধারণা করা হয়, সরকার এই তেল আহরণের জন্য অঞ্চলটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু তার থেকেও বেশি প্রভাব পড়ে যখন ১৯৮৩ সালে সুদানের সরকার সুদানকে ইসলামিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ইসলামিক শরিয়া আইন চালু করে। এজন্য ১৯৮৯ সালের পর থেকে বিভিন্ন ধর্মের ও বর্ণের গোষ্ঠীর উপর নানা রকম অসহনীয়তা প্রদর্শন বৃদ্ধি পায়। তবে দারফুরের ঘটনাটি ভিন্ন ধর্মীয় ভেদাভেদের কারণে হয়নি, যেখানে দারফুরের বেশিরভাগ মানুষই মুসলমান।
দারফুর হচ্ছে সুদানের সবচেয়ে পশ্চিমের একটি অঞ্চল, যা আয়তনে প্রায় ফ্রান্সের সমান। দারফুর ঐতিহাসিকভাবে সুদানের সবচেয়ে দূরবর্তী অঞ্চলগুলোর একটি। এমনকি স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও এই অঞ্চলে পৌঁছানো কঠিন, কারণ এটি রাজধানী খার্তুম থেকে অনেক দূরে। সেজন্য বেশ অবহেলিত অঞ্চলই বলা যায় দারফুরকে। দারফুর মানে হচ্ছে ফুরের ভূখণ্ড। সেখানে ফুর নামক এক মুসলিম আফ্রিকান উপজাতি রয়েছে। এছাড়াও আরো কিছু উপজাতির বসবাস সেখানে যাদের মধ্যে নানা বিষয়ে মিল ও অমিল দুটিই খুঁজে পাওয়া যায়।
উপজাতীয় ও জাতিগত দ্বন্দ্ব এই অঞ্চলের জন্য নতুন এবং অস্বাভাবিক নয়। সাধারণত চারণভূমি, পানি সংগ্রহের উৎস, গবাদি পশু চড়ানোর পথ ইত্যাদি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কে অগ্রাধিকার পাবে, কোন অংশটি ব্যবহার করা যাবে, কোনটি যাবে না- এসব বিষয়ে ছোট আকারের বিরোধ হতে দেখা যেত। উপজাতিগুলোর একে অপরের প্রতি আপোষহীন আচরণ, কোনো গোষ্ঠিতে ডাকাতির ঘটনা ঘটলে বা অন্য বড় কোনো ঘটনা সংঘটিত হলে তারা একজন আরেকজনের সাথে বড় ধরনের বিরোধে জড়িয়ে পড়তো। পাশাপাশি তাদের প্রতিবেশী দেশ চাদে যুদ্ধের কারণে সুদানে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্রের যোগান বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব ছোট-বড় বিরোধে প্রাণহানির পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে থাকে।
এছাড়া খরা, ফসলহানি, দুর্ভিক্ষ, কীটপতঙ্গের বিস্তার ও জনসংখ্যার অতিরিক্ত বিস্তারের কারণে তো আরো সমস্যা তৈরি হতোই। সংঘাতগুলো তাই সময়ের সাথে সাথে ছোট থেকে বড় আকার ধারণ করতে থাকলো। মূলত বিরোধটি দুটি দলের মধ্যে। একটি হচ্ছে আফ্রিকান উপজাতিদের দল, যারা কৃষি কাজ করে, এবং আরেকটি আরব উপজাতিদের দল, যারা গবাদিপশু চড়ায়। এসব সংঘাতের কারণে বহু মানুষ তাদের বাসস্থান ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্যও হয়েছে।
মূল সংঘাতের সূচনা
দারফুরের মানুষদেরকে বরাবরই খার্তুম সরকারের দ্বারা অবহেলার শিকার হতে হয়েছে। সেজন্য সময়ের সাথে সাথে কিছু বিদ্রোহী দল সংগঠিত হয়। তবে মূল সংঘাতটি শুরু হয় ২০০৩ সালে। তাদের অভিযোগ ছিল যে খার্তুম সরকার আরব উপজাতি গোষ্ঠীগুলোর প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করে। এরই প্রেক্ষিতে একটি ঘটনার রেষ ধরে সেই বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বিদ্রোহী দলগুলোর পূর্ণ উত্থান ঘটে। মূলত দারফুরের ফুর, যাঘাওয়া ও মাসালিত উপজাতি গোষ্ঠী অনুভব করতে থাকে যে তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এই তিনটি গোষ্ঠীর সদস্যরাই একত্রিত হয়ে বিদ্রোহ গড়ে তোলে এবং দারফুর লিবারেশন ফ্রন্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পরে তারা বৃহৎ পরিসরে সুদান লিবারেশন আর্মি হিসেবে পরিচিত লাভ করে।
২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তারা গুলু নামক একটি ছোট শহর দখলে নেয় এবং তাদের দাবিদাওয়া প্রকাশ করে। তাদের দাবির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল দারফুর অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধন, উপজাতিভিত্তিক সশস্ত্র সেনাদল নিষিদ্ধ করা এবং ক্ষমতা ভাগাভাগি করে সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
তারা এরপর সমগ্র দারফুর জুড়ে সরকারি স্থাপনার উপর আক্রমণ চালাতে থাকে এবং সেনাবাহিনীর সরঞ্জাম ধ্বংস করতে থাকে। এপ্রিলের দিকে তারা উত্তর দারফুরের রাজধানী ফাশেরের বিমানবন্দরে হামলা করে এবং ৭টি উড়োজাহাজ ধ্বংস করার পাশাপাশি বিমান বাহিনীর প্রধানকে বন্দি করে।
বিদ্রোহীদের পাল্টা জবাব দেয়ার জন্য ও তাদেরকে নির্মূল করার জন্য সুদানের সরকার তাদের সেনাবাহিনীর উপর নির্ভর করার পাশাপাশি জানজাউইদ নামক একটি আরবীয় সশস্ত্র দলের উপর দায়িত্ব দেয়। জানজাউইদ হচ্ছে সেই অঞ্চলের একটি ত্রাসের নাম যারা ঘোড়ায় চড়ে অস্ত্র হাতে আক্রমণ করে। স্থানীয় আফ্রিকান অসহায় উপজাতিদের কাছে তারা ‘অশুভ অশ্বারোহী’ হিসেবে বেশি পরিচিত।
জানজাউইদরা উট লালন-পালন করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং প্রায় ৪০ বছর আগে আশপাশের আফ্রিকান দেশ থেকে অভিবাসন করে দারফুরে এসে বসবাস শুরু করেছে। তারা এই অঞ্চলে আসার পর প্রায়ই ঘোড়া অথবা উটে চড়ে ডাকাতি করতো এবং ত্রাস সৃষ্টি করতো। জানজাউইদ, সুদানের সেনাবাহিনী ও উপসামরিক দল পপুলার ডিফেন্স ফোর্স একসাথে মিলে নৃশংসতা চালানো শুরু করে। তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল ফুর, যাঘাওয়া ও মাসালিত উপজাতি গোষ্ঠীর উপর আক্রমণ করা, যেহেতু বিদ্রোহীদের উত্থানও সেখান থেকে। কিন্তু জানজাউইদদের সাথে কোনো রকম সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করতো সুদান সরকার। এছাড়াও বিদ্রোহীদের সাথে সম্পৃক্ততা থাকতে পারে এমন সন্দেহে বহু ফুর, যাঘাওয়া ও মাসালিত গোষ্ঠীর শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী ও অন্যান্যদের দারফুর ও খার্তুম থেকে আটক করতো সরকারী বাহিনী।
মূল নৃশংসতা
সুদান সরকারের নির্দেশে বিমান বাহিনী নির্বিচারে দারফুরের বহু গ্রামে বোমা হামলা শুরু করলো। অন্যদিকে জানজাউইদরা ঘোড়ায় চড়ে একেকটি গ্রামে আক্রমণ করতো ও সব বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে দিত। অন্যদিকে ভূমিতে জানজাউইদ ও উপসামরিক ফোর্সের আক্রমণ তো চলছিলই। এরপর সেই বছরের সেপ্টেম্বরে বিদ্রোহী দল ও সরকারের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত হয়। তবুও জানজাউইদদের আক্রমণ থেমে থাকেনি।
কিন্তু ডিসেম্বরের দিকে যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যায়। বিদ্রোহীদের সাথে সংঘাত নতুন মাত্রায় আবার শুরু হয়। কিন্তু পাশাপাশি অকল্পনীয় হারে জানজাউইদরা আফ্রিকান উপজাতিদের গ্রাম পুড়িয়ে দেয়, পুরুষদের হত্যা ও পঙ্গু করে দেয়, খাবার সরবরাহ রোধ করে এবং আন্তর্জাতিক কোনো সহায়তা যাতে পৌঁছাতে না পেরে সেজন্য অবরোধ করে রাখে। জানজাউইদরা শরণার্থী শিবিরেও আক্রমণ চালায় এবং আরো একটি নিকৃষ্ট ব্যাপার হচ্ছে তারা নারীদের নির্বিচারে ধর্ষণ করে। এই পুরো নৃশংসতা তারা খুবই নিয়মানুগভাবে করেছে। সুদানের বিভিন্ন অধিকার বিষয়ক কর্মীরা একে সরকারের আদেশ অনুযায়ী একটি সুগঠিত ও পরিকল্পিত জাতিগত নির্মূল প্রক্রিয়া হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল। ২০০৪ সালের শুরুর দিকেই প্রায় এক লাখের বেশি মানুষ নিজেদের জায়গা ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশ চাদে শরণার্থী হিসেবে চলে যায়। ২০০৪ এর এপ্রিলে আবারো একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। তবে সরকার পক্ষের সশস্ত্র দলগুলোর অন্যায়-অত্যাচার ও নৃশংসতা বন্ধ হয়নি।
২০০৪ সালের মে মাসে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দারফুরে সংঘটিত ঘটনাগুলোর তথ্য সম্বলিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তারা যদিও একে গণহত্যা না বলে জাতিগত নির্মূল বলছে, তবে তাদের রিপোর্টে যে তথ্য উঠে এসেছে তা অকল্পনীয়। তারা সেই রিপোর্টে উল্লেখ করেছে যে, ফুর, যাঘাওয়া ও মাসালিত উপজাতি গোষ্ঠীর উপর তিনভাবে গণহারে হত্যাকান্ড চালানো হয়েছে। একটি হচ্ছে সেনাবাহিনী ও জানজাউইদ সেসব জায়গায় গিয়ে পুরুষদেরকে বিচার বহির্ভূত উপায়ে হত্যা করেছে, আরেকটি হচ্ছে কোনো আক্রমণে সেনাবাহিনী ও জানজাউইদ একসাথে পাশাপাশি অংশ নিয়েছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী ভারী অস্ত্র সাথে নিয়ে জানজাউইদদেরকে সুরক্ষা দেয়ার চেষ্টা করেছে যেহেতু জানজাউইদরা ভারী অস্ত্র ব্যবহার করতো না। সেনাবাহিনী জানজাউইদদেরকে থামানোর চেষ্টা করছে এমন কোনো নজির দেখতে পাওয়া যায়নি। বিদ্রোহীরা যেখানে অবস্থান করছে এমন জায়গায় তারা সাধারণত আক্রমণ না করে নিরপরাধ উপজাতিদের গ্রামে আক্রমণ করতো যেন তাদের উদ্দেশ্যই হচ্ছে সেসব মানুষদেরকে নির্মূল করার মাধ্যমে সেসব জায়গায় আরবীয় উপজাতিদের স্থান করে দেয়া। এমনও দেখা যেত তারা একই গ্রামে বারবার আক্রমণ চালাচ্ছে এবং আগুন লাগিয়ে সব বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে। পাশাপাশি ধর্ষণ ও লুটতরাজ তো ছিলই।
দারফুরে সংঘটিত ঘটনাগুলো ব্যাপক নৃশংসতার চিত্র তুলে ধরেছে, যার ফলে প্রায় ৪০০টির মতো গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যাপক হত্যাকান্ড, বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা, ধর্ষণ, অপহরণ সবকিছু মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ অনেক। অপরাধগুলোর ধরণ অনুসারে একে গণহত্যা বলা হয়েছে। এক বছরের মধ্যে প্রায় ১-৪ লাখের মতো মানুষ মারা যায় এবং ২০ লাখ মানুষ দারফুর ছেড়ে পালিয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়। একে সেই সময় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট আখ্যা দেয়া হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, সেই সংকট এখনো বিদ্যমান।
২০০৪ সালের ২২ মার্চ সুদানে জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয়কারী মুকেশ কাপিলা একটি কথা বলেছিলেন, “সুদান আর রুয়ান্ডার মধ্যে এখন একমাত্র পার্থক্য হচ্ছে সংখ্যার দিক থেকে।” অর্থাৎ তিনি রুয়ান্ডায় যা দেখেছিলেন তার একই চিত্র সুদানেও দেখছেন। পার্থক্যটা শুধু হতাহতের সংখ্যায়। তার মতে, সুদানে যা হয়েছে তা কেবল একটি সংঘাত নয়। একটি দল সুসংগঠিত উপায়ে আরেকটি দলকে সরিয়ে ফেলতে চাচ্ছে। রুয়ান্ডার মতো সুদানেও কাপিলা গণহত্যার আলামত দেখতে পেয়েছেন। ২০০৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট কলিন পাওয়েল সুদানে সংঘটিত নৃশংসতাকে গণহত্যা হিসেবে ঘোষণা করেন এবং এই গণহত্যার জন্য দায়ী হচ্ছে সুদানের সরকার ও জানজাউইদ।
২০০৯ সালের মার্চে সুদানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ওমর আল-বাশিরের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং পরবর্তীতে ২০১০ সালের জুলাইতে তার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়। তাকে এখনো গ্রেফতার করা যায়নি।
২০০৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সুদানের সামগ্রিক পরিস্থিতি অসহনীয় পর্যায়ে বিরাজ করছে। ২০১১ সালে দুটি আলাদা ভাগে ভাগ হওয়ার পরও সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। তবে একবিংশ শতাব্দীর প্রথম গণহত্যার শিকার দারফুরের মানুষদের কষ্ট ইতিহাস থেকে সহজে মুছে যাবে না।