Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নোবেল জিতেছেন যে দম্পতিরা

প্রতি বছরই পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা শাস্ত্র, অর্থনীতি, সাহিত্য এবং শান্তি- এই ছয়টি বিভাগে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। এসব বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ব্যক্তিত্বরা পান পরম আরাধ্য স্বীকৃতি।

কিন্তু বাঙালি বা বাংলাদেশীদের জন্য নোবেল পুরস্কার ঘোষণা খুব কম সময়ই আনন্দের বার্তা বয়ে আনে। কেননা এখন অবধি নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন মাত্র একজন বাংলাদেশী। আর সব মিলিয়েও এই বছরের আগ পর্যন্ত নোবেল পুরস্কারজয়ী বাঙালির সংখ্যা ছিল সাকুল্যে তিন।

তবে এবারের নোবেল পুরস্কারের ঘোষণা ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে বাঙালিদের মনে। কারণ চতুর্থ বাঙালি হিসেবে নোবেল পুরস্কার জয়ের গৌরব অর্জন করেছেন অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি। অর্থনীতি বিভাগে অমর্ত্য সেনের পর দ্বিতীয় বাঙালি হিসেবে নোবেলের মালিক হয়েছেন তিনি।

তবে শুধু এ কারণেই নয়, অভিজিতের নোবেলজয় তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে অন্য আরো একটি কারণেও। তাঁর পাশাপাশি এবার অর্থনীতিতে নোবেল জিতেছেন আরো দুজন: এসথার ডুফলো ও মাইকেল ক্রেমার। মজার ব্যাপার হলো, ডুফলো সম্পর্কে অভিজিতের স্ত্রীও বটে!

দ্য বিগ ব্যাং থিওরিতে নোবেল জিতেছিলেন শেলডন-এমি দম্পতি; Image Source: The Big Bang Theory/Warner Bros. Television

যারা আমেরিকান বিখ্যাত সিটকম ‘দ্য বিগ ব্যাং থিওরি’ দেখেছেন, তাদের কাছে এ বিষয়টি খুব একটা উল্লেখযোগ্য না-ও মনে হতে পারে। কারণ পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার তো জিতেছে তাদের প্রিয় দম্পতি শেলডন কুপার এবং এমি ফারাহ ফাওলারও!

তাছাড়া যারা ‘দ্য বিগ ব্যাং থিওরি’ দেখেননি, তাদেরও অভিজিৎ-ডুফলো দম্পতির নোবেল জয়ে চমৎকৃত না হওয়ার যথেষ্ট কারণ থাকতে পারে। কেননা অভিজিৎ-ডুফলোই প্রথম দম্পতি নন। তাদের আগেও পাঁচটি ‘পাওয়ার কাপল’ গড়েছেন নোবেল পুরস্কার জয়ের অভাবনীয় রেকর্ড।

চলুন পাঠক, আপনাদেরকে পরিচিত করিয়ে দেয়া যাক সেই নোবেলজয়ী দম্পতিদের সাথে।

গার্টি কোরি ও কার্ল কোরি

কোরি দম্পতি; Image Source: History of Medicine Collection

গার্টি ও কার্লের জীবনের পথচলাটা হয়েছে একদম হাত ধরাধরি করে। একসাথেই তারা পড়াশোনা করেছেন মেডিকেল স্কুলে। গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্নও করেছেন একই সময়ে। এরপর তারা আবদ্ধ হয়েছেন বিবাহবন্ধনে। ভিয়েনায় অবস্থানকালে যখন খেয়াল করেন দেশে ইহুদি-বিদ্বেষ ক্রমশ বেড়ে চলেছে, তখন তাঁরা একত্রে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের বাফানো শহরে।

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালেই তাঁরা হরমোন ও এনজাইম নিয়ে গবেষণা করতে থাকেন। প্রায় ৩০ বছরের দীর্ঘ সাধনার মাধ্যমে তাঁরা আবিষ্কার করেন গ্লাইকোজেন ও মেটাবলিজম, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে অন্যতম স্মরণীয় উদ্ভাবন হয়ে আছে। তাঁদের এই অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৪৭ সালে তাঁদেরকে দেয়া হয় চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার।

মেরি কুরি ও পিয়েরে কুরি

মেরি কুরি ও পিয়েরে কুরি; Image Source: mariecurie.org.uk

মেরি ও পিয়েরে কুরি বিয়ে করেন ১৮৯৫ সালে। ওই একই বছরই অঁরি বেকেরেল ইউরেনিয়ামের লবণের দ্যুতির উপর গবেষণা করতে গিয়ে ঘটনাচক্রে তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করে বসেন।

তাঁর আবিষ্কারের কথা জানতে পেরে মেরিও প্রচণ্ড আগ্রহী হয়ে পড়েন ‘ইউরেনিয়াম রশ্মি’র ব্যাপারে। তিনি এটি নিয়ে নিজের মতো করে গবেষণা শুরু করেন, যার মাধ্যমে উদ্ভূত হয় একেবারে নতুন ধরনের একটি উপাদানের ধারণা।

পিয়েরে তখন অন্য একটি বিষয়ে গবেষণা করছিলেন। কিন্তু একপর্যায়ে নিজের গবেষণা বাদ দিয়ে তিনিও গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েন স্ত্রীর প্রকল্পে। এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ১৮৯৮ সালে তারা দুজন আবিষ্কার করেন নতুন দুটি মৌল– পোলোনিয়াম ও রেডিয়াম। ১৯০৩ সালে তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ অঁরি বেকেরেলের সাথে যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার জিতে নেন কুরি দম্পতি।

তবে মেরির নোবেলজয় খুব সহজে আসেনি। প্রাথমিকভাবে নোবেল কমিটি অঁরি বেকেরেলের সাথে নোবেলজয়ী হিসেবে ঘোষণা করেছিল কেবল পিয়েরে কুরির নাম। পরবর্তীতে পিয়েরে কুরির আপত্তির ফলে সিদ্ধান্ত পুনঃপর্যালোচনা করে মেরি কুরির নামও যুক্ত করা হয় নোবেলজয়ীর তালিকায়।

তবে নিজের নোবেলজয় নিয়ে যে বিতর্ক ছিল, ১৯১১ সালে সেটির অবসান ঘটান মেরি কুরি। সেবার তিনি নোবেল জেতেন রসায়নেও। এভাবেই ইতিহাসের প্রথম বিজ্ঞানী হিসেবে দুইটি ভিন্ন শাখায় নোবেল জেতার কৃতিত্ব দেখান তিনি।

আইরিন কুরি ও ফ্রেডেরিক জোলিও-কুরি

আইরিন ও ফ্রেডেরিক; Image Source: Hulton Archive/Getty Images

আইরিন ছিলেন নোবেলজয়ী দম্পতি মেরি ও পিয়েরে কুরিরই জ্যেষ্ঠ কন্যা। তিনি অনুসরণ করেছিলেন বাবা-মায়েরই পদচিহ্ন। ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি তাঁর গড়ে উঠেছিল অসামান্য আগ্রহ, যার সূত্র ধরে তিনি কাজ করতে শুরু করেন রেডিয়াম ইনস্টিটিউটে।

১৯২৪ সালে ঐ ইনস্টিটিউটে মেরি কুরির সহযোগী হিসেবে কাজ করতে আসেন ফ্রেডেরিক জোলিও। মেরির কাছে তেজস্ক্রিয়তা গবেষণার উপর বিস্তারিত দীক্ষা লাভ করেন ফ্রেডেরিক। ১৯২৬ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। এরপর একক ও যৌথ দুভাবেই তাঁরা তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে কাজ অব্যাহত রাখেন। এরই ধারাবাহিকতায় তাঁরা একপর্যায়ে আবিষ্কার করে ফেলেন কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা, যা তাঁদেরকে এনে দেয় ১৯৩৫ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার।

আলভা মিরডাল ও গানার মিরডাল

মিরডাল দম্পতি; Image Source: KW Gullers / Nordiska museet. Public domain

এই তালিকায় আলভা ও গানার খানিকটা ব্যতিক্রম। কেননা তাঁরাই হলেন এখন পর্যন্ত ইতিহাসের একমাত্র দম্পতি, যারা দুটি ভিন্ন শাখায় দুটি ভিন্ন সালে নোবেল পুরস্কার জয় করেছেন।

১৯৩০-এর দশকে এই দম্পতি ছিলেন খুবই প্রভাবশালী সমাজবিজ্ঞানী। তাঁরা কাজ করতেন পারিবারিক রাজনীতি ও সমাজকল্যাণ বিষয়ে। এরই ফলস্বরূপ ১৯৭৪ সালে প্রথমে নোবেল জেতেন গানার। তিনি নোবেল পান অর্থনীতি শাখায়। আর আট বছর পর, ১৯৮২ সালে নোবেল জেতেন আলভাও। তবে তিনি অর্থনীতিতে নয়, শান্তিতে নোবেল জেতেন।

মে ব্রিট মোজার ও এডভার্ড মোজার

মোজার দম্পতি; Image Source: Getty Images

মাঝে মিরডাল দম্পতিরা নোবেল জিতেছিলেন বটে, কিন্তু গার্টি-কার্ল দম্পতির পর দীর্ঘদিন একই বছরে একই বিষয়ে নোবেল জেতেননি আর কোনো দম্পতি। তাই এমনটিও যে সম্ভব তা ভুলতে বসেছিলেন অনেকেই।

অবশেষে ২০১৪ সালে, ১৯৪৭ সালের পর দীর্ঘ ৬৭ বছর বাদে, ফের ঘটে এমন ঘটনা। মস্তিষ্কের পজিশন সিস্টেম বা ‘ইনার জিপিএস’-এর গঠনকারী কোষ আবিষ্কার করেছিলেন মোজাররা, যা তাদেরকে এনে দেয় চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার। এ পুরস্কার তাঁরা ভাগ করে নেন মার্কিন-ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন ও’কিফের সাথে

এসথার ডুফলো ও অভিজিৎ ব্যানার্জি

অভিজিৎ ও ডুফলো; Image Source: Reuters

বাঙালিদের কাছে অভিজিতের নোবেল জেতাকেই বেশি উল্লেখযোগ্য মনে হতে পারে, তবে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে কিন্তু তার ফরাসি স্ত্রী ডুফলোর নোবেলজয়ও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ, সেই ১৯৬৮ সাল থেকে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হলেও, ৫০ বছরের ইতিহাসে ডুফলোই সর্বকনিষ্ঠ নারী হিসেবে জয়ী হলেন এ শাখায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) সহকর্মী হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করার পর ২০১৫ সালে বিয়ে করেন অভিজিৎ ও ডুফলো। ক্রেমারের পাশাপাশি এ দম্পতিকে নোবেলজয়ের উপযুক্ত হিসেবে বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে, তা হলো- বৈশ্বিক দারিদ্র বিমোচনে তাঁদের পরীক্ষানির্ভর গবেষণা পদ্ধতি।

গত দুই দশকে বিশ্বজুড়ে গবেষকরা নানা দৃষ্টিকোণ থেকে এ বিষয়ে কাজ করে গেছেন। অভিজিৎ-ডুফলো-ক্রেমারদের গবেষণাও স্পর্শ করেছে ইতিপূর্বের সেসব গবেষণাকে, এবং তাদের গবেষণাটিকে অতীতের গবেষণাগুলোর তুলনায় অপেক্ষাকৃত বাস্তবসম্মত ও প্রভাবশালী বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

শেষ কথা

অর্থনীতিতে অভিজিৎ-ডুফলো দম্পতির এমন অসামান্য অর্জন দেখে অনেকেই মজার ছলে স্মরণ করছে জর্জ বার্নার্ড শ’র সেই অমর উক্তি, “দুনিয়ার সব অর্থনীতিবিদকে এক সারিতে বসিয়ে দিলেও তাঁরা একটি একক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারবেন না।”

এই রেফারেন্সের সারকথা হলো, এক ছাদের নিচে বাস করা দুজন মানুষের পক্ষে অর্থনীতির মতো জটিল বিষয় নিয়ে দিনের পর দিন নির্বিবাদে কাজ করে যাওয়া এবং চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করা নাকি আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব একটি বিষয়।

চাইলে প্রশ্ন করতে পারেন, এ কথা শুধু অর্থনীতির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নাকি জীবনের সকল ক্ষেত্রেই। সে প্রশ্নের প্রমাণও মিলবে এখন পর্যন্ত একই সাথে এক বিষয়ে মাত্র পাঁচটি দম্পতির নোবেলজয়ের দৃষ্টান্ত থেকে। আসলেই তো, যতই স্বামী-স্ত্রী হন না কেন, ব্যক্তিগত আত্মাভিমানকে পিছনে ফেলে অভিন্ন উদ্দেশ্যে কাজ করে যাওয়া এবং কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করা চাট্টিখানি কথা নয়। যারা তা করতে পেরেছেন, তাঁদের প্রতি সম্মানের মাত্রাটাও তাই অনেক বেশিই থাকবে।

নোবেলজয়ীদের নোবেলপ্রাপ্তির পর বক্তৃতা সম্পর্কে জানতে পড়তে পারেন এই বইগুলো:

১) নোবেল ভাষণ : লাগের্লোফ্ থেকে য়োসা

২) নোবেল ভাষণ, এলিয়ট থেকে গুন্টার গ্রাস

বিশ্বের চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কেঃ roar.media/contribute/

This article is in Bengali language. It is about the power couple who won the Nobel Prize together. Necessary references have been hyperlinked inside.

Featured Image © CNBC

Related Articles