Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

‘শান্তির সংবিধান’ থেকে সরে আসছে জাপান ?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে অস্ত্রের ভাষায় কথা বলা জাপান যুদ্ধের পর পুরোটা পরিবর্তন হয়ে যায়। হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা কাঁপিয়ে তুলে জাপানিদের। যুদ্ধের পর জাপান তার প্রথম সংবিধান গ্রহণ করে ১৯৪৭ সালে, যাকে বলা হয় ‘শান্তির সংবিধান’। শান্তির সংবিধানধারী যুদ্ধবিমুখ জাপান বাড়াচ্ছে তার সামরিক সক্ষমতা, হাঁটছে সংবিধান সংশোধনীর পথে। বিশ্বে একমাত্র জাপানের সংবিধানই দীর্ঘদিন সংশোধনী ছাড়া ঠিকে থাকা সংবিধান। ভূরাজনৈতিক সমীকরণ পরিবর্তন জাপানিদের মধ্যে তৈরি করছে সামরিকায়নের পক্ষে ও বিপক্ষে ভাগ। এক জরিপে দেখা যায়, ৫৩ শতাংশ জাপানি মনে করেন সংবিধানের আর্টিকেল ৯ সংশোধন করা উচিত।

জাপানের সংখ্যাগরিষ্ট মত আর্টিকেল ৯ সংশোধনের পক্ষে; Image source: Constitutional Net

আর্টিকেল-৯: যে কারণে ‘শান্তির সংবিধান’

জাপানের সংবিধানের ১০৩টি ধারার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আর্টিকেল ৯, যার জন্য জাপানের সংবিধানকে বলা হয় ‘শান্তির সংবিধান’। এখানে বলা আছে,

(১) আন্তরিকভাবে আকাঙ্ক্ষিত আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য ন্যায়বিচার ও শৃঙ্খলার উপর ভিত্তি করে জাপানি জনগণ চিরকালের জন্য জাতির সার্বভৌম অধিকার হিসেবে যুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তির উপায় হিসেবে হুমকি বা শক্তির ব্যবহার ত্যাগ করবে।

(২) পূর্ববর্তী অনুচ্ছেদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য স্থল, সমুদ্র এবং বিমান বাহিনী, এবং সেই সাথে অন্য যুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে সেসব বাহিনী কখনোই রাখা হবে না। রাষ্ট্রের যুদ্ধের অধিকার স্বীকৃত হবে না।

অর্থাৎ সাংবিধানিকভাবে জাপান যুদ্ধকে পরিত্যাগ করে। এমনকি যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দেবে এমন কোনো বাহিনী জাপান রাখবে না। আন্তর্জাতিক কোনো দ্বন্দ্বে জাপান কখনোই সামরিক শক্তি প্রয়োগ করবে না। হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরের ধ্বংসলীলা জাপানিদের মনে যে যুদ্ধবিমুখতা তৈরি করেছিল, তারই বহিঃপ্রকাশ আর্টিকেল ৯। যদিও জাপানে সেলফ ডিফেন্স ফোর্স (SDF) রয়েছে, কিন্তু তা কোনো সামরিক আগ্রাসন সমর্থন করে না। ১৯৫০ সালে কোরিয়ান যুদ্ধের সময় মার্কিন ২৪ পদাতিক ডিভিশন যখন জাপান ছেড়ে যুদ্ধে অংশ নেয়, তখন অরক্ষিত জাপানের নিরাপত্তার জন্যই তৈরি হয় এই বাহিনী।

আর্টিকেল ৯ এর জন্য জাপানের সংবিধানকে বলা হয় ‘শান্তির সংবিধান’; Image source: BBC

সামরিকায়নের বর্তমান চিত্র

২০১৪ সালে শিনজো আবে যখন জাপানের প্রধানমন্ত্রী, তিনি আর্টিকেল ৯ পুনঃব্যাখ্যার দাবী পালার্মেন্টে পাশ করেন, যার মাধ্যমে জাপান সম্মিলিত আত্মরক্ষার কৌশল গ্রহণ করে। ২০১৭ সালে এসে তিনি ২০২০ সালে আর্টিকেল ৯ এর উপর গণভোট আয়োজনের কথা বলেন। কিন্তু ২০২০ সালে এসে প্রেক্ষাপট বদলে যায়। তবুও থেমে নেই জাপানের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির গতি।

চলতি বছরে জাপানের সামরিক বাজেট বেড়েছে ২৬ শতাংশ। ২০২৩ সালে জাপানিজ সেলফ ডিফেন্স ফোর্সকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫২ বিলিয়ন ডলার, যা জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। জাপান ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্রাটেজির অধীনে ২০২৭ সাল নাগাদ জিডিপির ২ শতাংশ খরচ করবে বলে জানিয়েছে। অর্থাৎ ২০২৭ সালে জাপানের সামরিক ব্যয় হবে দ্বিগুণ। জাপান আন্তর্জাতিক অস্ত্রবাজার থেকে বিশাল অংকের অস্ত্র কিনছে। তাছাড়া তাদের পরিকল্পনায় রয়েছে হাইপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, দ্বীপ প্রতিরক্ষার জন্য উচ্চ-গতির গ্লাইড বোমার উন্নয়ন, লক্ষ্য পর্যবেক্ষণ যুদ্ধাস্ত্র, মনুষ্যবিহীন আন্ডারওয়াটার ভেহিকেল (UUV) নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি, উন্নত টাইপ ১২ অ্যান্টি-শিপ মিসাইল, উন্নত SH-60K অ্যান্টি-সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার হেলিকপ্টারের ব্যাপক উত্পাদন, সামুদ্রিক টহল বিমানের জন্য একটি নতুন অ্যান্টি-শিপ মিসাইল প্রভৃতি।

জাপানের সামরিক বাজেট বৃদ্ধির লেখচিত্র; Image: SIPRI

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে জাপান কিয়েভকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে। জাপান ইউক্রেনকে বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করেছে যার মধ্যে রয়েছে নজরদারীতে ব্যবহৃত ড্রোন। তাছাড়া রাশিয়া থেকে তেল ও কয়লা ক্রয় কমিয়ে আনার আশ্বাস দেয় দেশটি। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আরো বেশি সরব হয়ে উঠেছে জাপান। জাপানিদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে আর্টিকেল ৯ প্রশ্নে বিভেদ। যেখানে ২০১৭ সালে এনকেএইচ পরিচালিত জরিপে দেখা যায় মাত্র ২৫ শতাংশ জাপানি চান আর্টিকেল ৯ বাতিল করতে, সেখানে ২০২৩ সালে এসে ৫৩ শতাংশ জাপানি চান আর্টিকেল ৯ বাতিল করতে। স্পষ্টত যে, বর্তমানে আর্টিকেল ৯ এর উপর গণভোট আয়োজন করলে আর্টিকেল ৯ সহজেই বাতিল হয়ে যাবে।

কেন সামরিকায়নের দিকে জাপান?

জপানের সামরিক ব্যয় বাড়ার অন্যতম কারণ ভূ-রাজনৈতিক কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকি। নিকট প্রাচ্যের দেশ জাপানের ভয়ের অন্যতম কারণ চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি ও উত্তর কোরিয়া কর্তৃক হুমকি। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এই পালে আরও হাওয়া দেয়। জাপান মনে করে রাশিয়া এমন একটি নজির স্থাপন করেছে যা চীনকে তাইওয়ানে আক্রমণ করতে উৎসাহিত করবে, কাছাকাছি জাপানি দ্বীপপুঞ্জকে হুমকির মুখে ফেলে দেবে, উন্নত সেমিকন্ডাক্টরের সরবরাহ ব্যাহত করবে, এবং মধ্যপ্রাচ্যের তেল সরবরাহকারী সমুদ্রপথে সম্ভাব্য পথ বন্ধ করে দেবে।

Image source: Ju Peng/Xinhua via Getty Images

তাছাড়া জাপানের সমুদ্রসীমার ভেতর উত্তর কোরিয়ার মিসাইল উৎক্ষেপণ পূর্বের তুলনায় বেড়েছে, যা জাপানকে আরও শঙ্কায় ফেলেছে। সেনকাকু দ্বীপ নিয়ে চীনের সাথে দ্বন্দ্ব যেমন জাপানের শঙ্কা বাড়িয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের বৃদ্ধিও জাপানের ভয়ের অন্যতম কারণ। সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংঘাতে জাপান শান্তির পক্ষে ও শৃঙ্খলাভিত্তিক বৈশ্বিক ব্যবস্থায় পক্ষে লড়ার অভিপ্রায় রাখে।

জাপানি জনমতের পরিবর্তন, বর্তমান সরকারের সামরিক সক্ষমতার বৃদ্ধি, এবং নিরাপত্তা ঝুঁকির দরুন জাপান তার সংবিধানের আর্টিকেল ৯ এর প্রশ্নে সন্দিহান। যে হারে সামরিক ব্যয় ও সামরিকায়ন বাড়ছে, তা শান্তির সংবিধান থেকে জাপানের সরে আসার স্পষ্ট ইঙ্গিত।

This article is written in Bangla about disengagement of Japan from its 'Peace Constitution'.
References are hyperlinked inside the article.
Feature image: TIME

Related Articles