Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

করোনা ক্রান্তিলগ্নে শরণার্থীদের ভবিষ্যৎ

বিংশ শতাব্দীতে আমরা সময়ের প্রতিকূলে নানা রকম সমস্যার জালে পতিত হচ্ছি। জলবায়ুর পরিবর্তন, দারিদ্র্য, সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদ সময়ের সাথে সাথে প্রকটাকারে বিরাজ করছে। এমতাবস্থায় সবচেয়ে জটিল যে সমস্যা দূরদর্শী সংকট তৈরি করে চলেছে, সেটা হলো শরণার্থী সমস্যা। বর্তমানে আমরা যে মহামারীর সংকটে আচ্ছন্ন, ঠিক এই অবস্থাটিতে কীরূপ পরিবর্তন ঘটছে এই শরণার্থী বিষয়ক ব্যাপারগুলোতে? বিশ্ব রাজনীতিতে কেমন প্রভাব ফেলছে শরণার্থী সমস্যা?

ইউরোপে শরণার্থীদের একাংশ; Image source: amnesty.org.uk

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানে মে মাসের ২৮ তারিখে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় যা একটি ভয়াবহ বার্তার আগাম সতর্ক দেয়। বলা হয়, শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই করোনা মহামারীর কারণে ১৯৩০ এর ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা (Great Depression) এর পর এই প্রথম এত বেকারত্বের হার দেখছে দেশটি। ১০ সপ্তাহের ভেতরেই প্রায় ৪০ মিলিয়ন মানুষ শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই তাদের চাকরি হারিয়ে ফেলেন। কেবল যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশেই যদি এই ক্রান্তিলগ্নে অবস্থা এমন হয়, তাহলে এটা সহজেই অনুমেয় যে, সমগ্র বিশ্বে এ সংখ্যাটি প্রায় কী আকার ধারণ করতে পারে। একটি দেশের শরণার্থীর উদ্ভবের পেছনে একটি অন্যতম কারণ বেকারত্বের ফলে তৈরি হতাশাগ্রস্থ মানুষের জীবিকার সন্ধানে নিজ দেশ ত্যাগ করে উন্নত দেশে গমন। 

১৯৩০ সালের বৃহৎ অর্থনৈতিক মন্দার দিকে একটু আলোকপাত করা যাক। পুরো বিশ্বেই তখন অর্থনীতির এক থমথমে অবস্থা। বেকারত্বের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। মানুষ তার জীবিকার তাগিদে অন্য দেশে পাড়ি দেয়ার ব্রত করছে। মেক্সিকোর মানুষেরা তখন আশার আলো দেখতে পেলো প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। মানুষ দলে দলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে লাগলো। কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দা যে কোনো পক্ষপাতিত্ব সহ্য করে না। সে আগ্রাসী মনোভাব নিয়েই ছুটে চলে অবিরাম। তাই সেই বৃহৎ মন্দার হাত থেকে রেহাই পায়নি স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতেও বেকারত্ব তখন চরমে। একদিকে নিজের দেশেই নেই চাকরি, অপরদিকে কি না হাড়ির ভাতে ভাগ বসাতে এসেছে আরেক নিকেতনের বাসিন্দা! ব্যাপারটাই বা তখন কেমন দেখাবে? সেই অবস্থাতেই যুক্তরাষ্ট্র বন্ধ করে দিলো তার সীমানা। ঘোষণা করলো, কোনো অভিবাসী এখন আর আমেরিকার মাটিতে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি দেশটির ভেতরেই বিদ্বেষ চরম আকার ধারণ করতে লাগলো। কাউকে মেক্সিকান নাগরিক হিসেবে সন্দেহ হলেই তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করার প্রয়াস আরম্ভ হতে লাগলো।

১৯৩০ সালের গ্রেট ডিপ্রেশনে শরণার্থীদের চিত্র; Image source: theguardian.com

যেকোনো দেশেই দুর্ভিক্ষ কিংবা কোনো মন্দা দেখা দিলে স্বাভাবিকভাবেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। ঠিক তেমনিই যে দেশ থেকে শরণার্থীর উদ্ভব ঘটে, সেই দেশটিতে তখন শ্রম ঘাটতি দেখা দেয়। যথাশীঘ্রই সেই ঘাটতি নিজেদের লোক দ্বারা পূরণ না করা গেলে দেশের শ্রমবাজার চলে যায় বিদেশীদের হাতে, তদুপরি দেশের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে এক অশুভ জান্তা। মেক্সিকোও যেন সেই দিকটি অনুভব করতে পারছিল। দেশ থেকে চলে যাওয়া শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনার জন্য তখন সেদেশের সরকার প্রাণপণে নেমে পড়েছিল। আমেরিকা থেকে মেক্সিকোতে শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনার জন্য বিনামূল্যে রেললাইনে সেবা দেয়ার পরিকল্পনা শুরু করলো দু’পক্ষের চুক্তির ভিত্তিতে। পুরো ইউরোপ জুড়েই তখন শরণার্থী সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে।

আমরা আরো আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসনের শরণার্থীদের তার দেশে প্রবেশের বিরুদ্ধে কঠোর পন্থা অবলম্বনের দৃষ্টান্ত দেখেছি। ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ দিব্যি নিয়ে ছুটে চলা ট্রাম্প প্রশাসন এ ব্যাপারে কতটুকু কঠোর তা খুব সহজেই ধারণা করা যায়, যখন আমরা দেখতে পারি ক্ষমতায় আসার পরেই বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন চুক্তি থেকে সরে আসার কার্যক্রম। প্রথম থেকেই ট্রাম্প প্রশাসন বিখ্যাত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নাফটার সংস্কার দাবী করে আসছিল, যার একটি মূল কারণ হিসেবে তারা দেখাচ্ছিল, মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থা উল্টো আমেরিকার শ্রমবাজারকে বিপন্ন করে দিচ্ছে। দেশের বিনিয়োগকে বাইরে আকৃষ্ট করছে, প্রকারান্তরে আমেরিকাতেই তৈরি হচ্ছে বেকারত্ব। বর্তমান যুক্তরাষ্ট্র সরকার তার দেশের বেকারত্ব সমস্যা নির্মূলে কতটা তৎপর তা তাদের এসব কার্যক্রম যাচাই করে দেখলে খুব সহজেই অনুমান করা যায়। 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প; Image source: hellomagazine.com

স্বাভাবিকভাবেই জনমনের এই ধারণাকে প্ররোচিত করে সেটাকেই কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এসব পর্যবেক্ষণ যে যুক্তরাষ্ট্রের তরুণদের তার মতো করেই ভাবতে শিখিয়েছিল তার সঠিক প্রমাণই নির্বাচনে ট্রাম্পের বিপুল ভোটে বিজয়। যে ধারণাকে পুজি করে ট্রাম্পের নির্বাচন, পরবর্তীতে যে সেই ধারণাকে পুজি করেই আবার তিনি সফল হবেন না, তারই বা নিশ্চয়তা কে দেবে? কিংবা এই গতানুগতিক চিন্তাটিই যে পুরো ইউরোপে ছড়িয়ে পড়বে না তারই বা নিশ্চয়তা কী? আর এরুপ হলে শরণার্থী সমস্যা কিরুপ প্রকট আকার ধারণ করতে পারে তা সহজেই অনুমেয় বৈকি!

এবার বাংলাদেশের রোহিঙ্গাদের দিকেই আলোকপাত করা যাক। বিগত এক বছর ধরেই আমাদের দেশ যে সমস্যা খুব বাজেভাবে অনুভব করছে তা এই শরণার্থী সমস্যাকেই কেন্দ্র করে। আমরা আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা দিয়ে চেষ্টা করেছি পুরো বিশ্বকেই এদিকে নজর দিতে। খানিকটা যে সফল হয়েছি তার প্রমাণ অনেকটাই আমরা পেয়েছি আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়ার আমাদের প্রতি পূর্ণ সমর্থনে। যেখানে শুধু গাম্বিয়াই নয়, জাতিসংঘের অনেক সদস্যই আমদের পাশে। কিন্তু তবুও আমরা আশাজনক ফল পাচ্ছি না।   

আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়ার অভিযোগ; Image source: lowyiinstitute.com

এই তো কিছুদিন আগেও মালয়েশিয়ায় কিছু রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঠেকানোর সময় মালয়েশিয়ার সরকার বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করে রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য। বিষয়টি খুবই আপত্তিকর এজন্য যে, দাবীটি করা হয় বাংলাদেশের কাছে, যা কি না মায়ানমারের কাছে করার কথা! পরে আমাদের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সংবাদ সম্মেলনে বলতে হয়, রোহিঙ্গাদের নিতে বাধ্য নয় বাংলাদেশ।

এ ব্যাপারগুলো রীতিমতো আমাদেরকে ভাবতে বাধ্য করছে যে, রোহিঙ্গা সমস্যা হয়তো পরবর্তীতে আরো দীর্ঘায়িত হতে পারে। করোনাকালে বর্তমান রোহিঙ্গাদের কীরুপ অবস্থা, তা পত্র-পত্রিকায় চোখ বোলালেই বুঝা যায়। কিন্তু এই মহামারীর কবলে পুরো পৃথিবীই যে মন্দা প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছে, মায়ানমারও যে সেটার ব্যতিক্রম নয় তা-ও সহজেই অনুমেয়। এমতাবস্থায় তারা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে অর্থ খরচ করবে কি না সেটাও প্রশ্নবিদ্ধ। তাছাড়া বাংলাদেশের বেকারত্বের যে হার বাড়ছে, সেই জায়গাটিতে শ্রমের বাজারে পুনরায় রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ সমাজের একটি বিপুল মানুষের চোখে যে নেতিবাচক রুপেই ধরা পড়বে সেই কথাটি বুঝতেও কষ্ট করতে হয় না। এমতাবস্থায় শরণার্থী সমস্যা আরো কতটা দীর্ঘায়িত হবে তা ভাবিয়ে তুলছে সুশীল সমাজকে।

তুরস্কের পরিকল্পিত বাফার জোন; Image source: economist.com

মধ্যপ্রাচ্যের শরণার্থী সমস্যা অনেক আগে থেকেই যুদ্ধ-বিগ্রহের ফল হিসেবেই দেখা হচ্ছে। সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গা থেকে আমেরিকার সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়া সেই জায়গায় তৈরি করে দিচ্ছে অন্য শক্তির হস্তক্ষেপ। এক্ষেত্রে সিরিয়ায় বাফার জোন (Buffer zone) তৈরিতে তুরস্কের সিরিয়ার কুর্দিদের উপর আক্রমণ আগের থেকে শরণার্থীর সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে। পক্ষান্তরে আবার আমেরিকার সৈন্যদের সেখান থেকে প্রত্যাহার এক শূন্য বলয় তৈরি করে দিয়েছে, যা বর্তমানে প্রায় অনেকটাই দখল করে নিয়েছে তুরস্ক এবং রাশিয়া। আর কুর্দি বাহিনী সিরিয়ার সরকারের সাথে জোট গ্রহণ করেছে। এ অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যে যে পরে আবারো প্রক্সি-ওয়ার শুরু হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফলশ্রুতিতে শরণার্থী সমস্যা আরো প্রকট হয়েই ধরা দেবে। 

বিশ্বায়নের এই যুগে মুক্ত বাণিজ্যের প্রসার নিয়ে কথা হলেও বর্তমান প্রেক্ষিতে কতিপয় রাষ্ট্রের নিজস্ব ভাবনাগুলো কতটা বিশ্বায়নকে সমর্থন করছে তা প্রশ্ন করার সময় এসেছে। তদুপরি, বৈশ্বিক মন্দায় উন্নত রাষ্ট্রগুলো তাদের ক্ষমতার বলয় টিকিয়ে রাখতে কী পদক্ষেপ নেয় সেটাও বিবেচনার বিষয়। কিন্তু বিশ্ব যে এক প্রকট শরণার্থী সমস্যা মোকাবেলা করতে চলছে সেই বিষয়ে মোটামুটি সবাই একমত পোষণ করছেন বটে!

This article is written in Bengali language and the topic is about the future refugee crises amid this corona pandemic. All additional and important informations are hyperlinked here.

Featured image: wnd.com

Related Articles