Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জলবায়ু পরিবর্তন: ফ্যাশন দুনিয়ার টেকসই হওয়া কতদূর?

বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়াতে কপিরাইটার হিসেবে একটি ফ্যাশন কোম্পানিতে কাজ করেন স্নেঝিনা পিসকোভা। এই তরুণী বছরের পর বছর ধরে জামাকাপড় কেনার প্রতি বেশ মোহাচ্ছন্ন ছিলেন। “আমি আমার পোশাকে আরও বৈচিত্র্য আনার জন্য ১০ জোড়া খুব সস্তা জিন্স কিনি, যদিও সেগুলোর মধ্যে মাত্র ২-৩টি পরেছিলাম।” বলছিলেন পিসকোভা।

যখন ফ্যাশনের লোভ সংবরণ করার কথা আসে, তখন পিসকোভা সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির একজন কর্মী হিসেবে তিনি ফ্যাশনবেষ্টিত পরিবেশেই থেকে এসেছেন। কিন্তু জলবায়ু সংকট ইস্যুতে পিসকোভাকে শিল্প এবং তার নিজস্ব কেনাকাটার অভ্যাসের প্রভাব বিবেচনা করতে বাধ্য করছে। জাতিসংঘের ইউরোপীয় অর্থনৈতিক কমিশন বলছে, ফ্যাশন ইন্ড্রাস্ট্রি পৃথিবীর মোট কার্বন নিঃসরণের ১০ শতাংশের জন্য দায়ী। 

ফ্যাশন ইন্ড্রাস্ট্রি ঠিক কত বড়? 

ফ্যাশন ইন্ড্রাস্ট্রি এই মুহূর্তে সারাবিশ্বের জন্যই এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক বাজার হয়ে উঠেছে। এই ইন্ড্রাস্ট্রি বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম উৎপাদন সেক্টর। তবে অতীতে এমন ছিল না। উনিশ শতাব্দীর মধ্যভাগে হাতে তৈরি কিংবা ঘরে বানানো পোশাকের আধিক্যই দেখা যেত বেশি। এরপর দর্জিদের বুননশৈলীতে আস্থা রাখতে দেখা গেছে আপামর পোশাকপ্রেমীকে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে উন্নত যন্ত্রাংশ ও প্রযুক্তি বাজারে সহজলভ্য হয়ে ওঠার সাথে সাথে পোশাকখাত কারখানাভিত্তিক হয়ে উঠতে শুরু করে। 

পোশাক কারখানায় বিশাল সংখ্যক নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে; Image Source : Solidarity Center (2015)

একুশ শতাব্দীর শুরুর দিকে এসে ফ্যাশন ইন্ড্রাস্ট্রির দ্রুতগতিতে উন্নতি দেখেছে বিশ্ব। পোশাকখাতকে তাল মিলিয়ে চলতে হয় হালের ট্রেন্ডের সাথে। তাই নিত্যনতুন ডিজাইন ও নির্মাণশৈলীর নিপুণতায় তৈরি পোশাকে হরহামেশাই চোখে পড়ে নতুনত্বের ছোঁয়া। ২০০০ সালে যেখানে নতুন গার্মেন্টসের সংখ্যা ছিল ৫০ বিলিয়ন, দুই দশক পর এসে সেই সংখ্যা ছাড়িয়েছে দ্বিগুণ। বলা হয়, প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যবসায়িক মূল্য রয়েছে এই ইন্ড্রাস্ট্রির। বিশ্বব্যাপী প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষের জীবিকা নির্বাহের পথ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ফ্যাশন ইন্ড্রাস্ট্রি। বৈশ্বিক জিডিপির ২ শতাংশই আসে এই ইন্ড্রাস্ট্রি থেকে। ২০০০ সালের সাথে পরবর্তী ১৪ বছরের ব্যবধানে পোশাক কারখানায় উৎপাদন হারও বেড়েছে দ্বিগুণ। 

পরিবেশগত প্রভাব কতটা ঘিরে রেখেছে পোশাকখাতকে? 

ফ্যাশন ইন্ড্রাস্ট্রির উন্নতির সাথে সাথে পরিবেশের উপর পড়া নেতিবাচক প্রভাব চিন্তার ভাঁজ ফেলছে পরিবেশবিদদের কপালে। গ্রীনহাউজ গ্যাস নিঃসরণে ফ্যাশন ইন্ড্রাস্ট্রির ভূমিকা সম্প্রতি বেশ আলোচিত হচ্ছে। বৈশ্বিক নিঃসরণের ২-৮ শতাংশের দায় ফ্যাশন ইন্ড্রাস্ট্রির। এই হার ২০৩০ সাল নাগাদ ৫০ শতাংশের বেশি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই নিঃসরণ হারের সাথে উৎপাদন ব্যবস্থায়ও পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।

প্রতিবছর পোশাকখাতের উৎপাদনে ৯৩ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি খরচ হয়। একই পরিমাণ পানি ৫০ লক্ষ মানুষের চাহিদা মেটাতে সক্ষম।

ফ্যাশন ইন্ড্রাস্ট্রিকে বেশ কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ডেনিম। ডেনিম কারখানায় একটি জিন্স কাপড় তৈরিতে ব্যবহৃত ১ কেজি কটন বা তুলা প্রস্তুত ও ব্যবহারে খরচ হয় ৭-১০ হাজার লিটার পানি। এই পরিমাণ পানি দিয়ে একজন লোকের ১০ বছরের চাহিদা মেটানো সম্ভব।  

একটি জিন্স কাপড় তৈরিতে ব্যবহৃত ১ কেজি কটন বা তুলা প্রস্তুত ও ব্যবহারে খরচ হয় ৭-১০ হাজার লিটার পানি; Image source: Levi Strauss

একটি সুতির টি-শার্ট বানাতে প্রায় ২,৭০০ লিটার পানি খরচ হয়। পোশাকখাতে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হয়। শুধু সুতা ও কাপড় ধোয়া ও রং করার পেছনে বাংলাদেশে প্রতি বছর পানি খরচ হয় ১ কোটি ৫০ লাখ লিটার! 

ডেনিম জিন্সের জন্য সারাবিশ্বেই পরিচিত নাম আমেরিকান কোম্পানি লেভি স্ট্রস এন্ড কো.। লেভির জনপ্রিয় জিন্স পণ্য ‘ফাইভ জিরো ওয়ান’ (501)। এই জিন্সের এক পিস তার জীবনকালে প্রায় ৩৩.৪ কেজি কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ করে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গাড়ি গড়ে ৬৯ মাইল পাড়ি দিতে এই পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ করে। এই জিন্স তৈরিতে পানি খরচের পরিমাণ প্রায় ৩,৮০০ লিটার। 

পোশাকখাতের টেকসই হওয়া কতদূর? 

২০১৭ সালে মার্কিন কনসাল্টিং ফার্ম বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ পোশাকখাত নিয়ে একটি বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাদের রিপোর্টে দেখা যায়, পোশাকখাত তার উৎপাদন ব্যবস্থায় টেকসই হওয়ার লক্ষ্যে বেশ ধীরগতিতে পথ পাড়ি দিচ্ছে। কিছু মাঝারি এবং বড় কোম্পানির টেকসই ব্যবস্থার উন্নতিতে অগ্রগতি থাকলেও বাজারের অর্ধেক উৎপাদনেই টেকসই হওয়ার লক্ষণ ছিল না। বোস্টনের সমীক্ষায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ ফ্যাশন এক্সিকিউটিভরা তাদের কর্পোরেট কৌশলগুলোর দিকনির্দেশনামূলক নীতিমালায় পরিবেশগত এবং সামাজিক প্রভাব বিষয়ে উদাসীন থাকার চেষ্টা করেছেন।

২০১৯ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে পথচলা শুরু হয় ‘ইউএন অ্যালায়েন্স ফর সাস্টেইনেবল ফ্যাশন’ নামের একটি জোটের। এই জোটের লক্ষ্য, ফ্যাশনের পরিবেশগত এবং সামাজিকভাবে ধ্বংসাত্মক অভ্যাস বন্ধ করা এবং এর পরিবর্তে বৈশ্বিক বাস্তুতন্ত্রের উন্নতির জন্য একটি চালক হিসেবে শিল্পকে কাজে লাগানো। এই জোটে বিশ্ব ব্যাংকের কানেক্ট ফর ক্লাইমেট প্রোগ্রাম ছাড়াও অন্যান্য সংগঠন যুক্ত হয়। এই জোট পোশাককে আরও টেকসই করার জন্য নতুন উপকরণের ব্যবহারে কাজ শুরু করে। এছাড়া পুনরায় পোশাক বিক্রি বা অন্য পণ্যগুলোতে পুনর্ব্যবহার করার মাধ্যমে দূষণ কমাতেও ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছে।

বেশ কিছু পোশাক কোম্পানি এই জোটের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ফাইবারের বিকল্প খোঁজার কাজে নেমেছে এবং উৎপাদন প্রক্রিয়াকে পরিবেশ সহায়ক করায় মনোযোগ দিচ্ছে।

টেকসই পোশাক খাতের বাস্তবায়ন আর কতদূর? Image Source: Getty Images/Alamy/Javier Hirschfeld

পোশাকখাতকে আরও টেকসই করার তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও গবেষণার মিশেল। এই জায়গায় ধীরগতি থাকলেও কাজ যে একেবারেই হচ্ছে না এমন অবশ্য বলা যাবে না। সাগরে ফেলা প্লাস্টিক থেকে আহরিত উপকরণ দিয়ে তৈরি হচ্ছে অ্যাথলেটিক জুতা ও পোশাক। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিকের পরিবর্তে মাছের চামড়া এবং প্রাকৃতিক রং ব্যবহার হচ্ছে। ফলের চামড়া পশুর পশমের পরিবর্তে ব্যবহারের প্রচলন বেড়েছে। বাতিল করা ক্যানভাস দিয়ে তৈরি হচ্ছে ব্যাকপ্যাক এবং পার্স। কিছু কোম্পানি চালু করেছে রিটার্ন পলিসি, যাতে তারা ভোক্তাদের পোশাক জীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরে তা পুনর্ব্যবহার করতে পারে।

এক দশক আগেও টেকসই ফ্যাশন নিয়ে খুব একটা আলোচনা ছিল না। অবস্থা ক্রমেই বদলাচ্ছে। যদিও এখনও অনেক কিছু করা দরকার, তবে এটি উৎসাহব্যঞ্জক যে কিছু কোম্পানি টেকসই ফ্যাশনে নিজেদের নাম লেখাচ্ছে। 

কী করতে পারেন ভোক্তারা?

ফ্যাশন দুনিয়াকে আরো টেকসই করে তুলতে এই ইন্ড্রাস্ট্রির সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংযুক্ত সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। ভোক্তার সহযোগিতা ছাড়া কখনোই কোনো উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত আশার আলো দেখে না। একজন ভোক্তা পোশাক কেনার আগে অবশ্যই কিছু ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে।

– কেনার আগে, নির্মাতারা পোশাক তৈরিতে টেকসই মানদণ্ড মেনেছেন কিনা তা যাচাই করুন। 

– বিভিন্ন সেক্টরের পোশাক যখন একসাথে ব্যবহার করবেন তখন যথাসম্ভব সৃজনশীল হোন।

– পোশাকের সর্বোচ্চ ব্যবহারের চেষ্টা করুন। পরিধানযোগ্যতা হারালে অন্য কাজে ব্যবহার করুন। 

বেশ কিছু দেশে ক্রয়কৃত পোশাকের ৪০ শতাংশই অব্যবহৃত থেকে যায়; Image source : MissMalini

– ব্যবহৃত পোশাকটি আর ব্যবহার করতে না চাইলে দান করে দিন। 

– কেনার আগে চিন্তা করুন, পোশাকটি আসলেই দরকার কিনা। বিশ্বব্যাংক বলছে, বেশ কিছু দেশে ক্রয়কৃত পোশাকের ৪০ শতাংশই অব্যবহৃত থেকে যায়। 

– পরিমাণে নজর না দিয়ে নজর দিন পোশাকের মানের দিকে। আপনি যদি একটি পোশাক অতিরিক্ত এক বছর ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে এক বছর কম দূষণে হওয়ায় ভূমিকা রাখলেন। সস্তা এবং নিম্নমানের পোশাক সাধারণত ধোয়া কিংবা ক’দিন ব্যবহারের পরই আর পরার অবস্থায় থাকে না। কিন্তু একটু বেশি দাম দিয়ে যদি ভালো মানের পোশাকটি কেনেন, তাহলে সেই পোশাক পরতে পারবেন বহুদিন, একইসাথে টেকসই ফ্যাশন ব্যবস্থায়ও আপনার থাকবে ভূমিকা।

Language: Bangla

Topic: This feature is written about how far the fashion world is going to be sustainable in tackling the climate change.

Feature Image: suedwesttextil.de

Related Articles