Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

‘এক চীন নীতি’র প্রভাব কতটুকু?

‘এক চীন নীতি’ অনুযায়ী বিশ্বে কেবল একটি চীন আছে, তাইওয়ান চীনের ভূখণ্ডের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকার সমগ্র চীনের প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র আইনী সরকার। এটি চীনের অবস্থানগত কূটনৈতিক স্বীকৃতি, যার ফলে অন্যান্য দেশ এটা মেনে নেবে যে চীনে শুধুমাত্র একটি চীনা সরকার রয়েছে। চীনের জোর দাবি- তাইওয়ান চীনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা একদিন পুনরায় একত্রিত হবে।

এই নীতি আমাদেরক্ব ১৯৪৯ সালের চীনের গৃহযুদ্ধের সময়ের ইতিহাসে নিয়ে যায়। চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টি (People’s Republic of China – PRC) ও জাতীয়তাবাদী দল কুওমিনতাং (Republic of China – ROC) এর মধ্যে চলা এই গৃহযুদ্ধে কুওমিনতাং পরাজিত হয় এবং তাইওয়ান দ্বীপে পালিয়ে যায়। বিজয়ী কমিউনিস্টরা ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চীন’ হিসাবে চীনের মূল ভূখণ্ড শাসন শুরু করে এবং সেখানে তাদের সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলে। যদিও কুওমিনতাং তাদের নিজেদের ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চীন’ হিসেবে দাবি করে, তবে সমস্ত চীনের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে কমিউনিস্টরাই রাজত্ব করছে।

Image Source: economist.com

এই নীতি ১৯৭১ সালের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের রেজল্যুশন ২৭৫৮ দ্বারা স্পষ্টভাবে স্বীকৃত হয়েছে। ১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৮১টি দেশ ‘এক চীন নীতি’র ভিত্তিতে চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। ‘এক চীন নীতি’ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সার্বজনীন ঐকমত্য এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি মৌলিক আদর্শ হিসেবে কাজ করছে

মূলত এই নীতি চীন-মার্কিন সম্পর্কের মূল ভিত্তি। এর অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের পরিবর্তে চীনের সাথে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ককে স্বীকৃতি দেয়। শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশই তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, কারণ তারা চীনের কমিউনিস্ট সরকারকে মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু ১৯৭০ এর দশক থেকে শুরু করে কূটনৈতিক সম্পর্ক পাল্টে যায় যখন চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। ফলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ বেইজিংয়ের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে আর তাইপেইয়ের সাথে নিজেদের সম্পর্ক শিথিল করে। যদিও অনেক দেশই এখনও নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য বা সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাইওয়ানের সাথে অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে।

Image Source: worldgrain.com

কিন্তু মার্কিন নীতি অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র বেইজিংয়ের এই অবস্থান সমর্থন করে না। প্রকৃতপক্ষে, এ নীতির অংশ হিসেবে ওয়াশিংটন তাইওয়ানের সাথে একটি অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক বজায় রাখে। এছাড়া, তাইওয়ান যাতে নিজেদের রক্ষা করতে পারে সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র দ্বীপে অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের নিরাপত্তার জন্য নিজেদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রেখেছে

তবে স্বাধীন দেশ হিসেবে তাইওয়ানকে কোনো দেশই স্বীকৃতি দেয়নি, এমনকি জাতিসংঘও নয়। অলিম্পিক গেমস এবং ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের মতো ইভেন্ট এবং প্রতিষ্ঠানগুলোতেও অংশ নেওয়ার জন্য এটি সাধারণ নামকরণের মধ্য দিয়ে যায়। কিন্তু এত প্রতিকূলতার মধ্যেও তাইওয়ান একেবারেই সবকিছু হারিয়ে ফেলেছে তা কিন্তু নয়। এটি প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে তার অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে, এবং বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক বজায় রাখবে বলে আশা রাখে।

Image Source: taiwannews.com.tw

১৯৭৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের সাথে সম্পর্ক নিয়ে এক সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দেয়। এই কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের উপর যৌথ বিবৃতি ছিল এরকম-

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকারকে চীনের একমাত্র আইনী সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই প্রেক্ষাপটে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ তাইওয়ানের জনগণের সাথে সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক বজায় রাখবে।

প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের ব্যক্তিগত নোটগুলো তাইওয়ানের মর্যাদা নিয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং চীনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন মার্কিন নথি এবং বিবরণগুলো থেকে দেখা যায় যে তাইওয়ানের সার্বভৌমত্ব নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তেমন কোনো অবস্থান নেই। আবার জিমি কার্টার প্রশাসন PRC-কে স্বীকৃতি দেওয়ার পর তাইওয়ানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা এবং বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষার জন্য কংগ্রেস ১৯৭৯ সালে তাইওয়ান সম্পর্ক আইন (Taiwan Relations Act – TRA) পাস করে। এই আইন মতে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্কের অনুপস্থিতিতে নিজেদের সম্পর্ক অব্যাহত রাখার জন্য তারা একটি প্রস্তাব রেখেছে। এটি তাইওয়ানের নিরাপত্তা সংক্রান্ত মার্কিন প্রতিশ্রুতিরও একটি অংশ, এবং মার্কিন-তাইওয়ান নীতির বিভিন্ন দিক তদারকির জন্য কংগ্রেসকে ক্ষমতা দিয়েছে। এছাড়া, এই আইন অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসকে তাইওয়ানের যেকোনো প্রত্যাশিত বিপদ সম্পর্কে অবিলম্বে অবহিত করবেন, এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে কংগ্রেসের সাথে পরামর্শ করবেন।

Image Source: globaltimes.cn

এই আইন (TRA) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ এবং তাইওয়ানের জনগণের মধ্যে বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক এবং অন্যান্য সম্পর্ক অব্যাহত রাখার অনুমোদন দিয়েছে। কংগ্রেসের পরবর্তী প্রতিটি কূটনৈতিক সম্পর্কের অনুপস্থিতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাইওয়ানের মধ্যে চলা অব্যাহত শক্তিশালী ও বাস্তব সম্পর্ককে যেন নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত না করে, তা TRA আইন নিশ্চিত করেছে। তাইওয়ানের প্রতি মার্কিন নীতি সংক্রান্ত ছয়টি আশ্বাস রাষ্ট্রপতির নামে মৌখিকভাবে প্রদানের পদক্ষেপও নিয়েছিলেন রিগান। সেই আশ্বাসগুলো হলো:

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-

  1. চীন প্রজাতন্ত্রের (তাইওয়ান-ROC) কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার তারিখ নির্ধারণ করতে রাজি না হওয়া;
  2. চীন প্রজাতন্ত্রের কাছে অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের (PRC) সাথে পূর্বে আলোচনা করতে রাজি না হওয়া;
  3. গণপ্রজাতন্ত্রী চীন (PRC) এবং চীন প্রজাতন্ত্রের (ROC) মধ্যে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন না করা;
  4. তাইওয়ান সম্পর্ক আইন সংশোধন করবে না;
  5. তাইওয়ানের সার্বভৌমত্বের বিষয়ে তার অবস্থান পরিবর্তন করবে না; এবং
  6. গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের (PRC) সাথে আলোচনায় বসার জন্য চীন প্রজাতন্ত্রের উপর চাপ প্রয়োগ করবে না।
Image Source: economist.com

তাইওয়ান ১৯৮৭ সালে সামরিক আইনের অবসান ঘটায় এবং ১৯৯৬ সালে তার প্রথম সরাসরি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আজ তাইওয়ান একটি সম্পূর্ণ কার্যকর গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনকে সম্মান করে এবং একটি উন্মুক্ত অর্থনীতি রয়েছে যা ২০১৫ সালে একে পরিণত করে। নবম বৃহত্তম মার্কিন বাণিজ্য অংশীদার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাইওয়ানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৬৬.৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। যেমন- তাইওয়ান এশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার, একটি শক্তিশালী, সমৃদ্ধ, মুক্ত এবং সুশৃঙ্খল সমাজ যেখানে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা এই অঞ্চলের জন্য একটি মডেল হিসেবে দাঁড়িয়েছে

২০১২ সালে দুটি দেশ যৌথভাবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ নেতৃত্ব অংশীদারিত্ব চালু করে এবং ২০১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ান-সূচিত আন্তর্জাতিক পরিবেশগত অংশীদারিত্ব কর্মসূচির প্রতিষ্ঠাতা অংশীদার হিসেবে যোগদান করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন প্রজাতন্ত্রের মধ্যে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি (TRA) বলেছে যে- বয়কট বা নিষেধাজ্ঞাসহ শান্তিপূর্ণ উপায় ব্যতীত অন্য কোনো উপায়ে তাইওয়ানের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের যেকোনো প্রচেষ্টা পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তা গভীর উদ্বেগের বিষয় বলে বিবেচিত। এটি আরও প্রতিষ্ঠিত করে যে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের মার্কিন সিদ্ধান্ত এই প্রত্যাশার উপর নির্ভর করে যে তাইওয়ানের ভবিষ্যত শান্তিপূর্ণ উপায়ে নির্ধারিত হবে।

Language: Bangla

Topic: This article is about the impact of the one china policy.

Necessary links are hyperlinked and listed.

Reference:

1. What is the 'One China' policy? - BBC News

​2. Statement by the Ministry of Foreign Affairs of the People’s Republic of China - fmprc.gov.cn

3. What Is the U.S. “One China” Policy, and Why Does it Matter? | Center for Strategic and International Studies - csis.org

Feature Image Source: Stephen Case

Related Articles