১৮৫০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ৩১তম রাজ্য হিসেবে ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা তথা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যোগ দেয় ক্যানিফোর্নিয়া। প্রশান্ত মহাসাগরের তীরবর্তী এই রাজ্যটির আয়তন ৪ লাখ ২৩ হাজার ৯৬৭ বর্গ কিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যের মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার অবস্থান তৃতীয়। তবে জনসংখ্যার দিক থেকে অন্য সকল রাজ্যকে পেছনে ফেলেছে ক্যালিফোর্নিয়া। রাজ্যটিতে বর্তমানে ৩৯ মিলিয়নের অধিক মানুষের বসবাস।
আমরা এই আর্টিকেলে দুটি বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্যালিফোর্নিয়া কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ, এবং দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্যালিফোর্নিয়া বের হয়ে গেলে কী ঘটবে। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্যালিফোর্নিয়ার গুরুত্বের বিষয়টি তুলে ধরা যাক।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি হলো ক্যালিফোর্নিয়া। এই রাজ্যে রয়েছে হলিউড এবং সিলিকন ভ্যালির মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এই দুটি স্থান থেকেই প্রতি বছর শত বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করছে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি কৃষি ও নির্মাণ শিল্পেও এগিয়ে রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া। তবে এই হিসাব থেকে এ রাজ্যের অর্থনীতির আকার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব নয়। সেজন্য একটি ভিন্ন উদাহরণ প্রয়োজন।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মোট অর্থনীতির ১৪ শতাংশের যোগানদাতা ক্যালিফোর্নিয়া। যদি এই রাজ্যটি একক কোনো রাষ্ট্র হয়, তাহলে তার অর্থনীতি আকারে হবে বিশ্বে পঞ্চম, যার জিডিপির আকার ২.৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। তখন ক্যালিফোর্নিয়ার পেছনে চলে যাবে যুক্তরাজ্য। এমনকি এই রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল সান ফ্রান্সিসকোর বে এরিয়াই হবে বিশ্বের ১৯তম অর্থনৈতিক অঞ্চল, যার মোট জিডিপি ৫৩৫ বিলিয়ন ডলার। এখানে মোট ১০১টি শহরে ৭ মিলিয়ন মানুষের বসবাস। যাদের মাথাপিছু জিডিপির পরিমাণ ৭৪,৮১৫ ডলার, যা লন্ডন কিংবা সিঙ্গাপুরের চেয়েও বড়।
কৃষিতে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি ঘর বলা হয় ক্যালিফোর্নিয়াকে। সেখানে প্রায় ৪০০ প্রজাতির শাকসবজি, ফলমূল ও শস্যের চাষ হয়। প্রায় ২৫ মিলিয়ন একর কৃষিজমি রয়েছে এ রাজ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের সিংহভাগ কাজুবাদাম, অ্যাপ্রিকট, খেজুর, ডুমুর, কিউই ফল, পেস্তাবাদাম, আলুবোখারা, জলপাই ও আখরোটের উৎপাদন হয় ক্যালিফোর্নিয়াতে।
এই রাজ্যে প্রতি বছর প্রায় ৪৫ বিলিয়ন ডলারের শস্য উৎপাদন হয়। পাশাপাশি পশুপালনে আয় হয় ১৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। যার ফলে কৃষি ও পশুপালনে যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষে রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া।
ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে রাজ্যটি রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মোট ওয়াইনের ৮১ শতাংশ উৎপাদন হয় ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন শহরে।
ক্যালিফোর্নিয়াতে প্রায় চার মিলিয়ন ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা রাজ্যের ৯৯ ভাগ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাজ্যটির ৫০% জনশক্তি নিয়োজিত রয়েছে। ২০১৮ সালের মে থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়াতে মোট ২ লাখ ৮০ হাজার কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে, যা অন্য যেকোনো রাজ্যের চেয়ে বেশি।
বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ ১০ কোম্পানির ২টি ক্যালিফোর্নিয়ার। কোম্পানি দুটি হলো অ্যাপল ও গুগল। এছাড়া আরেক টেক জায়ান্ট ফেসবুকও ক্যালিফোর্নিয়ার কোম্পানি। এছাড়া বিশ্বের শীর্ষ ৫০০ কোম্পানির তালিকায় এ রাজ্য থেকেই রয়েছে প্রায় ৪০টি। আর যদি তালিকা হয় ৩,০০০ কোম্পানির, তাহলে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০০-তে।
ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দর যে কত গুরুত্বপূর্ণ- তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ দুটি সমুদ্রবন্দর হলো লং বিচ ও লস এঞ্জেলেস সমুদ্র বন্দর। দুটি বন্দরই ক্যালিফোর্নিয়াতে অবস্থিত। এই বন্দর দুটির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সমুদ্র বন্দরে ভেড়া বাণিজ্যিক জাহাজের মোট কন্টেইনারের ৪০ শতাংশ ওঠানামা করে।
এছাড়া কার্গো বিমানের সেবা প্রদানে লস এঞ্জেলেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অবস্থান তৃতীয়। এই বিমানবন্দরের মাধ্যমের যাত্রীবাহী বিমান মাত্র ৪১টি দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ৯১টি অভ্যন্তরীণ শহরে যাতায়াত করে। তবে কার্গো বিমান যাতায়াত করে এর চেয়ে অধিক শহর ও দেশে। ক্যালিফোর্নিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দুই সমুদ্র বন্দর ও বিমানবন্দরের মাধ্যমে বছরে প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা বাণিজ্য হয়।
কর আদায়ের দিক থেকেও যুক্তরাষ্ট্রে সবার ওপরে রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া। এই রাজ্যে বসবাসরত নাগরিকদের উচ্চ হারে আয়কর প্রদান করতে হয়। কিন্তু এরপরও ক্যালিফোর্নিয়ামুখী জনস্রোত কমছে না। এর কারণ এই রাজ্যের কর্মসংস্থানের সুযোগ।
তবে অধিক জনসংখ্যা ক্যালিফোর্নিয়ায় দারিদ্র্য ও বেকারত্বের হার বৃদ্ধি করছে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলেও জাতীয় বেকারত্ব হারের চেয়ে এ রাজ্যে বেকারের হার বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয়ভাবে বেকারের হার ৩.৬ শতাংশ। সেখানে ক্যালিফোর্নিয়াতে বেকারের হার ৪.৩ শতাংশ। তবে আশার বাণী হচ্ছে এই হার আগের চেয়ে কমেছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে হলিউড ও সেখানকার বিভিন্ন স্পোর্টস ক্লাব। এই রাজ্যে মোট ১৯টি ক্লাব রয়েছে যাদের সম্মিলিত বাজারমূল্য ৩৩.৫ বিলিয়ন ডলার। এই দলগুলো যুক্তরাষ্ট্রের এনএফএলসহ উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন লিগে অংশগ্রহণ করে থাকে, যা ক্যালিফোর্নিয়ার প্রচার মাধ্যমগুলোতেও বড় প্রভাব ফেলছে। এর পাশাপাশি পৃথিবী-বিখ্যাত হলিউডও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ২০১৮ সালে হলিউডের মুভিগুলোর মোট আয় ছিল ৪১.৭ বিলিয়ন ডলার, যেখানে সারাবিশ্বে সিনেমা থেকে মোট আয়ই ছিল ১৩৬ বিলিয়ন ডলার।
ক্যালিফোর্নিয়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের হয়ে গেলে কী ঘটবে?
ক্যালিফোর্নিয়া অদূর ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের হয়ে যাবে- এমন কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে ফেডারেল রাষ্ট্র যে সব সময় ঐক্যবদ্ধ থাকবে কিংবা তাদের কোনো ভাঙন হবে না- এমন চিন্তাও করা যায় না। কয়েক বছর আগেই ক্যালিফোর্নিয়া ভেঙে আরেকটি রাজ্য গঠনের দাবি উঠেছিল। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার বের হওয়ার দাবি যে উঠবে না- তেমন আশা করা ভুল নয়।
এছাড়া ক্যালিফোর্নিয়ার সিংহভাগ মানুষ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের হয়ে যাওয়ার পক্ষে। কিন্তু পারস্পরিক শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে এই দাবি এখনো জোরালো হচ্ছে না। যদিও বিগত বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে নিজেদের আদর্শের প্রতি যে আকর্ষণ বেড়েছে, তা খুবই চিন্তার বিষয়। শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের বাড়বাড়ন্তের কথাই বিবেচনা করুন।
সেই হিসেবে যদি ক্যালিফোর্নিয়ার নাগরিকরাও নিজেদের একক রাষ্ট্র গঠনের কথা ভাবেন তাহলে পরিস্থিতি কেমন হতে পারে? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
গৃহযুদ্ধ?
আজ থেকে ১৫৮ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ অঞ্চলের ১১টি রাজ্য যখন ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করেছিল, তখন তা গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। ১৮৬১-১৮৬৫ সাল পর্যন্ত চার বছরের গৃহযুদ্ধে প্রাণ হারান মোট ৬ লাখ ২০ হাজার মানুষ। এছাড়া নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল রাষ্ট্রের ভিত। এখন ক্যালিফোর্নিয়া যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে তা শান্তিপূর্ণভাবে হবে সেটা বলা যায় না। তবে গৃহযুদ্ধের বিভীষিকা আরো একবার ফিরে আসুক- তা কোনো আমেরিকান চাইবেন না।
এদিকে ফেডারেল রাষ্ট্রে একক কোনো রাজ্যের বের হয়ে যাওয়াও ভালোভাবে দেখা হয় না, যার প্রমাণ স্বয়ং আমরা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যখন পাকিস্তান থেকে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন গণহত্যা, ধর্ষণসহ এমন কোনো নির্যাতন ছিল না- যা করা হয়নি। আবার ইথিওপিয়া থেকে ইরিত্রিয়ার স্বাধীনতা পেতে টানা ৩০ বছর লড়াই করতে হয়েছে।
তবে স্বাধীনতার ইতিহাস যে সবসময় রক্তাক্ত হয়, তেমনও নয়! ১৯৯৩ সালে বিনা রক্তপাতে স্লোভাকিয়া থেকে স্বাধীনতা লাভ করে চেক প্রজাতন্ত্র।
ক্যালিফোর্নিয়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের হয়ে যেতে চাইলে তার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, সেটি নির্ভর করছে কে অথবা কোন দল দেশের শাসন ক্ষমতায় রয়েছে তার ওপর। এ সম্পর্কে কানাডার অটোয়ার কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক স্টিফেন সেইডমেন বলেন,
রিপাবলিকানরা হয়তো একে ভালো সিদ্ধান্ত বলতে পারে। বিপরীতে ডেমোক্রেটরা বলবে, আমরা যেকোনো মূল্যে ক্যালিফোর্নিয়াকে ধরে রাখবো অথবা একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেবো।
ক্যালিফোর্নিয়ার অন্য রাজ্যের সাথে বর্তমানে যে বিরোধ নেই- তা বলা যায় না। বিশেষ করে অর্থনীতিতে অবদানের জন্য এ রাজ্যের মানুষ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিচ্ছেদ চান। কিন্তু তারা যদি সত্যিকার অর্থে বের হয়ে যেতে চান, তাহলে তাদের প্রতিরোধ করা সহজ হবে না। কারণ ক্যালিফোর্নিয়ানরা ইরাকের কুর্দি কিংবা স্পেনের কাতালান নন। চাইলেই পেন্টাগন জেনারেল পাঠাবে আর তারা ক্যালিফোর্নিয়া দখল করবে- এমন চিন্তা একবিংশ শতকে অন্তত যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে করা যায় না। সেদেশের জনগণ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক অনুশীলনের গরিমা থেকেই ব্যাপারটি দুষ্কর।
ডেমোক্রেটদের মহাপতন
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ ৫৫টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়াতে। এই ভোট যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমেরিকার রাজনীতিতে এই রাজ্যের গুরুত্ব সর্বাধিক।
কিন্তু এখানে বরাবরের মতোই ডেমোক্রেটদের আধিপত্য। ‘৯০ এর দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটদের জয়ের পেছনে বড় অবদান রেখে যাচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়া।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে যদি সেই ক্যালিফোর্নিয়ারই শান্তিপূর্ণ বিচ্ছেদ হয়, তাহলে রাজনীতিতে ডেমোক্রেটদের ভবিষ্যত অন্ধকার। কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ তখন পুরোপুরি রিপাবলিকানের হাতে চলে যাবে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটদের জয়ের সম্ভাবনাই হয়ে যাবে ক্ষীণ। কেননা ক্যালিফোর্নিয়ার বাইরে যে সকল ডেমোক্রেট প্রতিনিধি থাকবেন, তারাও রাজনৈতিক ভবিষ্যতের কথা ভেবে দল পরিবর্তন করতে পারেন।
অর্থনীতিতে ধ্বস
ক্যালিফোর্নিয়ার বিচ্ছেদ যদি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করবে কি না, তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তবে অর্থনীতিতে যে ধ্বস সৃষ্টি করবে- সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ, সে বিষয়ে ইতোমধ্যে একবার আলোচনা করা হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া যদি বের হয়ে যায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির যে পতন ঘটবে, তা বিশ্ব রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলবে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র যে কথায় কথায় ইরান কিংবা অন্য শত্রু রাষ্ট্রের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রদান করছে, তা আর সম্ভব হবে না। বিশ্ব অর্থনীতিতে ডলারের যে দাপট, সেটিও মিইয়ে যাবে। ডলারের স্থান দখল করবে ইউরো অথবা চীনের ইউয়ান। যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও সামরিক জোটে তাদের প্রভাব কমে যাবে। বরং তাদের অন্যান্য মিত্রের ওপর নির্ভর করতে হবে।
বিপরীতে বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন তুরুপের তাস হবে ক্যালিফোর্নিয়া। তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বিভিন্ন দেশ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে। বিভিন্ন রাষ্ট্র তাদের সাথে জোট গঠনে এগিয়ে আসবে।
অভিবাসন স্বর্গ
রাষ্ট্র হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়ার আত্মপ্রকাশ হলে সেখানে অভিবাসী-প্রত্যাশী মানুষের লাইন হবে লম্বা। নতুন রাষ্ট্র হিসেবে দেশটিও সেখানকার সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তি খাত ও মহাকাশ কোম্পানিতে নতুন উদ্ভাবকদের আমন্ত্রণ জানাবে। পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিনিয়োগকারীদের সেখানে অর্থ বিনিয়োগ করার সুযোগ দেওয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ অর্থনীতি হওয়ার কারণে সেখানকার অন্যান্য রাজ্য থেকেও অনেক মানুষ ক্যালিফোর্নিয়াতে ভীড় করবে। তবে অভিবাসন হবে ভৌগোলিকভাবে। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় অভিবাসীদের স্বাগত জানানো হলেও উত্তরে তাদের বাধার মুখে পড়তে হবে। অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের সুযোগই অভিবাসীদের ক্যালিফোর্নিয়ামুখী করবে।
ক্যালিফোর্নিয়া যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের হয়ে যায় তাহলে অন্যান্য রাজ্যেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। বিশেষ করে যেসব রাজ্যে ডেমোক্রেটদের প্রভাব রয়েছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির জয়ের সম্ভাবনা কমে যাওয়ায় তারা চেষ্টা করবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের হয়ে নিজেরা রাষ্ট্র গঠনের।
বর্তমানে অনেক রাজ্যের নতুন রাষ্ট্র গঠনের জন্য অর্থনীতি ও জনশক্তি রয়েছে। ফ্লোরিডা ও টেক্সাস চাইলে ক্যালিফোর্নিয়ার মতো রাষ্ট্র গঠন করতে পারবে। সে হিসেবে বলা যায়, ক্যালিফোর্নিয়া যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের হয়ে যায় তাহলে মার্কিন ফেডারেলের পতন ঘটবে; ঠিক সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো!