Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

চীন কেন তিব্বত নিয়ন্ত্রণে রাখতে মরিয়া?

তিব্বত; নাম শুনলেই হয়তো আপনার মাথায় প্রথমেই ‘নিষিদ্ধ’ শব্দটি আসে। হিমালয়ের উত্তরাঞ্চলে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৪ হাজার ফুটেরও বেশি উচ্চতায় অবস্থিত তিব্বতের দুর্গম প্রকৃতি শত শত বছর ধরে তাকে বাইরের পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। প্রাচীনকাল থেকেই তিব্বত ও এর রাজধানী লাসাকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য রহস্য। রহস্যেঘেরা তিব্বত নিষিদ্ধ দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও কৌশলগতভাবে এর রয়েছে ব্যাপক গুরুত্ব। তিব্বতের কৌশলগত ও ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব এবং এর বিশাল খনিজ সম্পদের জন্য চীন এই অঞ্চলের উপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে মরিয়া। 

১৯৫০ সালে চীনের কমিউনিস্টরা তিব্বত আক্রমণ করে এবং এক বছরের মধ্যে লাসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ১৯৫৯ সাল থেকে দালাই লামার নেতৃত্বে তিব্বতের প্রবাসী সরকার ভারতের আশ্রয়ে রয়েছে। বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে অঞ্চলটি চীনের অংশ হলেও অধিকাংশ তিব্বতি তা মানতে নারাজ। অন্যদিকে, চীন এই অঞ্চল নিয়ে কোনো ঢিলেঢালা করতে রাজি নয়। 

ধার্মিক তিব্বতিদের কাছে চীন চক্ষুশূল হলেও, চীন তিব্বতের মোহে পড়েছে; image source: Getty Images via The Mirror 

তিব্বতীয় মালভূমি হলো পৃথিবীর সর্বোচ্চ এবং বৃহত্তম মালভূমি। ভৌগোলিকভাবে তিব্বত ভারত, নেপাল, ভুটান এবং মিয়ানমারের উত্তরে এবং চীনের মূল ভূখন্ডের পশ্চিমে অবস্থিত। চীন এই অঞ্চলের উপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিব্বতের কৌশলগত ও ভূরাজনৈতিক তাৎপর্য এক্ষেত্রে বড় প্রভাবক। তিব্বতের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা, সমগ্র দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার সমার্থক। কেননা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেকগুলো দেশ অনেকাংশে তিব্বতের উপর নির্ভরশীল। 

প্রচুর হিমবাহ, বিশাল বিশাল হ্রদ এবং শক্তিশালী জলপ্রপাত তিব্বতীয় মালভূমিকে মিঠা পানির ভান্ডারে পরিণত করেছে। উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরুর পর, পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বিশুদ্ধ পানির মজুদ রয়েছে তিব্বতীয় মালভূমিতে। তিব্বতীয় মালভূমিতে ১,০০০ এর অধিক হ্রদ রয়েছে। হোয়াংহো, ইয়াংজি, মেকং, সিন্দু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রসহ এশিয়ার দীর্ঘতম নদীগুলোর উৎপত্তিস্থল হলো তিব্বত। ফলে, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেকগুলো দেশ তিব্বত থেকে আসা পানির উপর নির্ভরশীল। 

সার্বিকভাবে, বিশ্বের প্রায় তিন বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তিব্বতের পানির উপর নির্ভরশীল। আরো স্পষ্ট করে বললে, বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ তিব্বত থেকে উৎপন্ন হওয়া নদীগুলোর মুখাপেক্ষী। মোটকথা, এশিয়ার পানি প্রবাহের অধিকাংশই তিব্বতের নিয়ন্ত্রণাধীন। পানি প্রবাহে তিব্বতের এই গুরুত্বের জন্য তিব্বতকে অনেক সময় ‘এশিয়ার জল মিনার’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। 

এশিয়ার দীর্ঘতম নদীগুলোর উৎপত্তি তিব্বতিয় মালভূমিতে; image source: Great Tibet Tour 

পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামের মতো ঘনবসতিপূর্ণ ও কৃষিপ্রধান দেশগুলো সরাসরি তিব্বতের পানির উপর নির্ভর করে। ফলে, তিব্বতকে রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা উক্ত দেশগুলোর উপর চীনের প্রভাব বিস্তারকে সহজ করে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তিব্বত এই দেশগুলোর জন্য চীনের এক ট্রাম্পকার্ড। 

চীন তিব্বতের পানিকে ভূরাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে। তিব্বতের পানির উপর নিম্ন অববাহিকার দেশগুলোর নির্ভরশীলতাকে পুঁজি করে চীন ভাটির দেশগুলোর উপর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে স্বার্থ হাসিলের কৌশল অবলম্বন করে। এক্ষেত্রে চীন যে অস্ত্র ব্যবহার করছে তা হলো বাঁধ! চীন ছোট বাঁধের চেয়ে মেগাড্যাম তৈরির ক্ষেত্রে বেশি মনোযোগী। 

কৃষিপ্রধান দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষ কৃষিকাজের সকল ক্ষেত্রে এই নদীগুলোর উপর নির্ভর করে। কৃষিকাজ ছাড়াও মৎস্যশিল্প ও অন্যান্য শিল্প কারখানার উৎপাদন ও পরিবহন ব্যবস্থা এই নদীগুলোর উপর নির্ভরশীল। বিশাল বিশাল বাঁধের জন্য মাছের স্বাভাবিক স্থানান্তর বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মাছের বংশবিস্তার ও উৎপাদন কমে যায়, যা নিম্ন অববাহিকার দেশগুলোর মৎসশিল্পে বেশ খারাপ প্রভাব ফেলে। 

এছাড়া, বাঁধগুলোর ফলে পলিমাটির চলাচলও কমে যায়। পলি নিম্ন অববাহিকার দেশগুলোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি নিম্ন অববাহিকার দেশগুলোতে সমৃদ্ধ পুষ্টি বহন করে, যা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। পলি আসা বন্ধ হয়ে গেলে মাটির উর্বরতা কমে যায়। এককথায়, এই নদীগুলোর উপর বাঁধ নির্মাণের ফলে উক্ত অঞ্চলের মানুষের জীবিকা অর্জন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে, এই অঞ্চলের মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়বে। 

সম্প্রতি বাঁধ নির্মাণ যেন চীনের ধ্যান-জ্ঞানে পরিণত হয়েছে; image source: Yao Yilong/Imagine china/AP Images, taken from Britannica 

বাঁধ নির্মাণের ফলে অসময়ে খরা ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিতে পারে। সম্প্রতি চীন তিব্বতে উৎপন্ন হওয়া নদীগুলোর উপর শত শত বাঁধ নির্মাণ করছে। এই বাঁধ রাজনীতি বেশ কার্যকরও বটে। বাঁধ নির্মাণের ফলে একদিকে চীন বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে, অন্যদিকে পানি আটকে ভাটির দেশগুলোকে বেকায়দায় ফেলে ভূরাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে পারছে। 

খরা মৌসুমে যখন পানির অভাব দেখা দেয়, তখন চীন পানি আটকে রাখে, ফলে নিম্ন অববাহিকার দেশগুলোতেও খরা দেখা দেয়। আবার বর্ষাকালে যখন অতিরিক্ত পানি জমে যায়, তখন বাঁধের পানি ছেড়ে দেওয়া হয়, ফলে নিম্ন অববাহিকায় বন্যা শুরু হয়। এমতাবস্থায়, নিম্ন অববাহিকার দেশগুলো উভয় সংকটে পড়েছে। চীনের এই বাঁধ নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে দক্ষিণের দেশগুলোতে অসময়ে খরা ও আকস্মিক বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে। আসলে এগুলোকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলার চেয়ে, কৃত্রিম দুর্যোগ বা মানবসৃষ্ট দুর্যোগ বলা অধিক উপযুক্ত। 

চীনের বাঁধ নির্মাণের একগুঁয়েমি থেকেই ছয়টি দেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত এশিয়ার অন্যতম দীর্ঘতম নদী মেকং দিন দিন ধ্বংস হচ্ছে। মেকং নদী চীন ছাড়াও কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ চীন সাগরে পতিত হয়েছে। মেকং হলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর প্রাণশক্তি। উক্ত অঞ্চলের প্রায় ২০ কোটি মানুষ, যারা মূলত কৃষিকাজ ও মৎস্য উৎপাদন করে, জীবিকা নির্বাহের জন্য মেকংয়ের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু, চীন মেকং নদীর উপর এ পর্যন্ত ১১টি বাঁধ নির্মাণ করেছে এবং নদীটির উপর আরো বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে দেশটির। 

চীনের বাঁধ নির্মাণের জন্য মেকং এখন মৃতপ্রায়; image source: Paritta Wangkiat/AFP Forum, taken from Asia Times

তিব্বতের নিম্ন অববাহিকার দেশগুলোকে কাবু করার জন্য চীনের সামরিক অভিযানের প্রয়োজন হয় না, তিব্বতের পানিই যথেষ্ট। ফলে এই অঞ্চলের দেশগুলো চাইলেই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চীনের বিরোধীতা করতে পারে না, বরং অনেক সময় চীনের স্বার্থে কাজ করতে বাধ্য হয়।

তাছাড়া, তিব্বত চীনের মূল ভূখন্ড এবং ভারতের মূল ভূখন্ডের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। ভারত আবার চীনের অন্যতম বৃহৎ শত্রু। তিব্বতকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চীন ভারতের মূল ভূখন্ডের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে এবং ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে কয়েকশো কিলোমিটারের মধ্যে চীনা সৈন্য মোতায়েন করতে পারছে, যা ভারতের জন্য মোটেই সুখকর নয়। তিব্বতকে কেন্দ্র করে ভারত ও চীনের মধ্যে প্রায়ই সংঘাত তৈরি হয়। মোটকথা, তিব্বতকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভূরাজনৈতিকভাবে চীন অত্যন্ত লাভবান হচ্ছে। অন্যদিকে, তিব্বত চীনের নিয়ন্ত্রণে না থাকলে চীনের মূল ভূখন্ড নিরাপত্তাজনিত হুমকিতে পড়বে। 

শুধুমাত্র পানি কিংবা ভূরাজনৈতিক লাভের জন্য নয়, আরো অনেক কারণেই তিব্বত চীনের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীনাদের কাছে তিব্বত ‘ওয়েস্টার্ন স্টোরহাউজ’ এবং ‘ওয়েস্টার্ন ট্রেজার-হাউজ’ নামে পরিচিত। 

চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন খনিজ সম্পদ। আর এই প্রয়োজনীয় খনিজ সম্পদের জোগান দিতে পারে তিব্বত। তিব্বতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ সম্পদ রয়েছে। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, তিব্বতে প্রচুর পরিমাণে লোহা, সীসা, তামা, দস্তা, এবং ক্যাডমিয়ামের মজুদ রয়েছে। এছাড়াও অঞ্চলটিতে লিথিয়াম, সোনা এবং রূপার বিশাল মজুদ রয়েছে। তিব্বতে বিভিন্ন সময়ে জরিপ চালানো হয়েছে। সেসব অনুযায়ী তিব্বতে বোরাক্স, রেডিয়াম, টাইটানিয়াম, আর্সেনিক, ক্রোমাইট ও ম্যাঙ্গানিজেরও বিশাল মজুদ রয়েছে। 

তিব্বতীয় মালভূমির বিশাল খনিজ সম্পদের উপর চীনের নজর পড়েছে; image source: Free Tibet Organisation 

চীনের ভূতাত্ত্বিকরা তিব্বতীয় মালভূমিতে ব্যাপক জরিপ চালাচ্ছেন। কয়েক বছর আগে চীনা ভূতাত্ত্বিকরা তিব্বতে তামা, লোহা, সীসা এবং দস্তার আকরিকের ৬০০টিরও অধিক নতুন সাইট আবিষ্কার করেছেন। সেখানে আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০ মিলিয়ন টন তামা, ৪০ মিলিয়ন টন সীসা ও দস্তা এবং এক বিলিয়ন টন লোহা রয়েছে। বর্তমানে চীনের লোহা আকরিকের ৯০ শতাংশ নিম্নমানের, কিন্তু ভূতাত্ত্বিকরা তিব্বতীয় মালভূমিতে কয়েকটি উচ্চমানের লোহা আকরিকের সন্ধান পেয়েছেন। এছাড়া ভূতাত্ত্বিকদের মতে, তিব্বতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে। 

চীন বর্তমান বিশ্বের এনার্জির বৃহত্তম ভোক্তা, এবং তারা তাদের প্রয়োজনীয় এনার্জির অধিকাংশই কয়লা থেকে উৎপাদন করে। প্রচুর পরিমাণে কয়লা উৎপাদন এবং ব্যবহার করতে গিয়ে দেশটির পূর্বাঞ্চলের শহরগুলো মারাত্মকভাবে দূষণের শিকার হয়েছে। ফলে চীন তার অনেক খনির কাজ পশ্চিমাঞ্চলে বা তিব্বতে স্থানান্তরিত করেছে। ফলশ্রুতিতে তিব্বতের পরিবেশও ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। 

তিব্বতের খনিগুলো থেকে কয়লা উত্তোলন এবং পরিশোধন করতে গিয়ে উৎপন্ন বর্জ্যের ফলে তিব্বতও দূষণের কবলে পড়েছে। কারখানা তৈরির ফলে পানি দূষণের পাশাপাশি পানির গতিপথও পরিবর্তিত হচ্ছে। চীন তার খননকার্যের সুবিধার্থে তিব্বতের প্রচুর পরিমাণ তৃণভূমি ধ্বংস করছে। 

লাসার কাছে খনির জন্য কারখানা তৈরির চিত্র, এখানে খনির ফলে পানির গতিপথ পরিবর্তনকে নিয়ে তিব্বতি এবং খনির শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়; image source: Meltdown in Tibet

চীন বিশ্বের বৃহত্তম তামা উৎপাদনকারী দেশ। চীনে যে পরিমাণ তামার মজুদ রয়েছে তার প্রায় এক-ষষ্ঠাংশ রয়েছে তিব্বতে। দেশটির গাড়ি নির্মাণশিল্প অনেকাংশে তিব্বতের তামার উপর নির্ভর করে। এছাড়া তিব্বতে প্রচুর পরিমাণ লিথিয়ামেরও মজুদ রয়েছে। লিথিয়াম বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় খনিজ সম্পদের মধ্যে অন্যতম। স্মার্টফোন ও ল্যাপটপসহ বিভিন্ন ডিজিটাল পণ্যের ব্যাটারির জন্য লিথিয়ামের প্রয়োজন হয়। চীন আবার বিশ্বের বৃহত্তম স্মার্টফোন ও ল্যাপটপ উৎপাদনকারী দেশ। ফলে, চীনের অনেক কোম্পানি তিব্বত থেকে তাদের লিথিয়াম সংগ্রহ করে। 

তিব্বতের বিশাল খনিজ সম্পদের অধিকাংশ কখনোই স্পর্শ করা হয়নি। ধার্মিক তিব্বতীরা ভূমি খনন করে না, ভূমিকে বিরক্ত করা তাদের ধর্মীয় অনুশাসনের বিরুদ্ধে। কিন্তু চীন এই অঞ্চলে বিপুল পরিমাণে খননকার্য শুরু করেছে। তিব্বতের এই খনিজ সম্পদের আধার চীনের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে।

তিব্বতে খনিজ উত্তোলন ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে চীন; image source: Free Tibet Organisation

২০০৬ সালে, চিংহাই-তিব্বত রেলপথ নির্মাণের ফলে তিব্বতের সাথে চীনের মূল ভূখন্ডের সংযোগ স্থাপন হয়। এই রেলপথের ফলে পূর্ব চীনে তিব্বতের খনিজ সম্পদ পরিবহন অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। পুরো তিব্বতে চীন রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অবকাঠামোর বিশাল নির্মানযজ্ঞ শুরু করেছে। চীন তিব্বতের পূর্ব ও পশ্চিমে দুটি বিমানবন্দর তৈরি করেছে। এছাড়া চীন লাসা বিমানবন্দরের টার্মিনাল সুবিধা আপগ্রেড করেছে। 

চীনের এই নির্মাণযজ্ঞের মূল উদ্দেশ্য তিব্বতের খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও পরিবহন সহজ করা। চীনের এই বিশাল কর্মযজ্ঞের ফলে প্রচুর পরিমাণে হান চাইনিজ শ্রমিক তিব্বতে আসছে, যা তিব্বতের মূল বাসিন্দাদের বিচলিত করে তুলেছে। নিজেদের সম্পদ রক্ষার ক্ষমতা তিব্বতিদের নেই। তাদের এই সম্পদের অর্থনৈতিক সুবিধাও তারা পায় না। তিব্বতের সম্পদ তিব্বতীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিদেশে (চীন) পাচার হচ্ছে। অন্যদিকে, চীনারা তিব্বতের খনিজ সম্পদ থেকে অকল্পনীয় সুবিধা লাভ করছে। 

চীনাদের কাছে তিব্বত ব্যাবসার নতুন কেন্দ্রে পরিবর্তন হচ্ছে। শত শত চোখধাঁধানো হ্রদ, পাহাড়-পর্বত, সুন্দর সুন্দর বৌদ্ধ মন্দির ও বিভিন্ন নিদর্শন নিয়ে তিব্বত পর্যটকদের কাছে এক আকর্ষণীয় গন্তব্য। শত শত বছর তিব্বত বিশ্বের মানুষ থেকে আলাদা থাকলেও চীনা সরকার তিব্বতকে ভ্রমণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক, যাদের অধিকাংশই হান চাইনিজ, তিব্বত ভ্রমণে যায়। চীনা পর্যটকদের তিব্বতে ভ্রমণের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

লাসার পোটালা প্রাসাদের কাছে একটি চত্বরে চীনা পর্যটকরা তিব্বতি পোশাক পরে ছবির জন্য পোজ দিচ্ছেন; image source: Mark Schiefelbein/AP Photo, taken from Al Jazeera

তিব্বতে পর্যটন ব্যবসা প্রসারের জন্য চীনা সরকারও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নতুন নতুন বিমানবন্দর, দ্রুতগতির রেলপথ এবং বিশাল বিশাল হোটেল ও শপিংমল নির্মাণে চীনা সরকার প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। তিব্বতের এই পর্যটন ব্যবসার ফলে চীনা ব্যবসায়ীদের যেমন অর্থনৈতিক লাভ হচ্ছে, তেমনি তিব্বতের সঙ্গে চীনের সম্পর্কও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিব্বতে পর্যটন খাতে প্রচুর পরিমাণে চীনার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। সেই সঙ্গে তিব্বতি সংস্কৃতি ও চীনা সংস্কৃতির মধ্যে যোগাযোগ ও বোঝাপড়া বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

চীন তিব্বত থেকে এমন প্রচুর পরিমাণে কৌশলগত, ভূরাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। এত এত সুযোগ সুবিধা পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই চীন সোনার ডিম দেওয়া এই রাজহাঁসকে কখনোই হাতছাড়া করতে চাইবে না। চীন যেকোনো মূল্যে তিব্বতের উপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে মরিয়া। 

This Bangla article is about the Strategic, Economic and Geopolitical Importance of Tibet and China's Interest in it. 

Information Sources: 

1. Reuters: Why is remote Tibet of strategic significance?

  1. Tibet.net: Geopolitical importance of tibet. 
  1. Free Tibet Organisation: Raiding Tibet's Resources. 
  1. Indian Defence Review: Strategic importance of Tibet. 
  1. Washington Post: The strategic importance of occupied tibet. 
  1. Worldview: Chinese Geopolitics and significance tibet.
  1. Circle of Blue: China tibet and the strategic power of water. 
  1. Tibet Nature: Minerals Mining.  
  1. The World: China's Exploitation Tibet's natural resources. 
  1. China Daily: Huge mineral resources found on Qinghai-Tibet plateau. 

Featured Image Source: Xinhua

Related Articles