Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

প্যাট্রিশিয়া  হার্স্ট: অপহরণের শিকার থেকে ব্যাংক ডাকাত

১৫ এপ্রিল, ১৯৭৪। দুপুরের প্রচণ্ড রোদে পুড়ছে সান ফ্রান্সিস্কোর রাস্তাঘাট।

হাইবারনিয়া ব্যাংকের সানসেট ডিস্ট্রিক্ট ব্রাঞ্চে হঠাৎ করেই বন্দুক উঁচিয়ে ঢুকে পড়েছে একদল লোক, নিজেদের দাবী করছে সিম্বায়োনিজ লিবারেশন আর্মি  (Symbionese Liberation Army) বা এসএলএ’র সদস্য হিসেবে। উগ্র বামপন্থী এই মিলিশিয়া বাহিনী  মাসখানেক আগেই খবরের শিরোনাম হয়েছে প্যাট্রিশিয়া হার্স্ট নামে এক তরুণীকে কিডন্যাপ করে।

জান বাঁচানো ফরজ। সুতরাং ব্যাঙ্কের সমস্ত মানুষ ডাকাতদের নির্দেশমতো মেঝেতে শুয়ে পড়ল। নির্বিঘ্নে ডাকাতি সেরে চলে গেলো তারা, যাবার আগে সিসি ক্যামেরায় নিজেদের চেহারা দেখিয়ে যেতেও ভুল করল না। তাদের কাছে প্রচারেই প্রসার, এই ডাকাতি সেই প্রচারেরই একটা অংশ।

ভিডিও ফুটেজ দেখে অপরাধীদের শনাক্ত করতে গিয়ে চমকে উঠল সান ফ্রান্সিস্কো পুলিশ। এসএলএ’-র হাতে অপহৃত প্যাট্রিশিয়া হার্স্টকে দিব্যি দেখা যাচ্ছে অস্ত্র তাক করে সবাইকে হুমকি-ধমকি দিতে, তা-ও আবার তার ঘোষিত অপহরণকারীদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে! ব্যাপারটা কী?

প্যাট্রিশিয়া হার্স্টের অপহরণ

ডাকাতির দেড় মাস আগের কথা। ফেব্রুয়ারির চার তারিখে ক্যালিফোর্নিয়ার বহুতল এক অ্যাপার্টমেন্টে প্রবেশ করল সশস্ত্র এক এসএলে গ্রুপ।  রাত তখন নয়টা প্রায়, প্রায় সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। এর মধ্যেই এক অ্যাপার্টমেন্টের দরজা ভেঙে ভেতর থেকে প্যাট্রিশিয়া হার্স্ট (Patricia Hearst) নামে উনিশ বছরের এক তরুণীকে টেনে-হিচড়ে বের করে আনল তারা, তার ভাবি স্বামী স্টিভেন উডের কপালে জুটল মারধোর। প্রতিবেশীরা পিছু ধাওয়া করতে গেলে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়, হার্স্টকে গাড়িতে তুলে এরপর সটকে পড়ল তারা।  

অবিলম্বে অকুস্থলে হাজির হলো পুলিশ। হার্স্ট যে সে কেউ নন, তার বাবা সান ফ্রান্সিস্কো এক্সামিনার পত্রিকার প্রধান সম্পাদক, র‍্যান্ডলফ হার্স্ট। তার দাদা উইলিয়াম র‍্যান্ডলফ হার্স্ট মার্কিন মুলুকের সবচেয়ে বড় মিডিয়া কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। ক্ষমতাশালী সেই পরিবারেরই অন্যতম উত্তরাধিকারী এই তরুণী।

তরুণী প্যাট্রিশিয়া হার্স্ট © Penguin Random House

সিম্বায়োনিজ লিবারেশন আর্মি

উনিশশো সত্তরের দশকে আমেরিকাতে বেশ কিছু উগ্রপন্থী সশস্ত্র বিপ্লবীদল গড়ে উঠেছিল, তাদের একটি ক্যালিফোর্নিয়া কেন্দ্রিক এসএলএ। তাদের লক্ষ্য নাকি পুঁজিবাদী সরকার হটিয়ে সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা। নামে বিপ্লবী হলেও কাজে পুরোই সন্ত্রাসী এরা। ডোনাল্ড ডিফ্রিজ (Donald DeFreeze) নামে জেলপালানো এক দাগি অপরাধী তাদের প্রতিষ্ঠাতা, নিজের গাল্ভরা নামও দিয়েছে সে- জেনারেল ফিল্ড মার্শাল সিঙ্ক মিটুম (Cinque Mtume)। তাদের নামডাকের বেশিরভাগই পরবর্তীতে প্যাট্রিশিয়া হার্স্টের কিডন্যাপিংয়ের অবদান। 

ডিফ্রিজ ছাড়া আর আটজনের মতো সদস্য ছিল এই দলে। তাদের প্রথম কাজ ছিল ১৯৭৩ সাকের নভেম্বরে মার্কাস ফস্টার নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ স্কুল কর্মকর্তাকে হত্যা করা, কারণ তিনি ছাত্রছাত্রীদের পরিচয়পত্র দিতে নিয়ম করেছিলেন। এসএলএ-র দাবী এটা ফ্যাসিজম! খুনের দায়ে ১৯৭৪ সালের শুরুতে তাদের দুই সদস্যকে ধরে জেলে ভরে পুলিশ। এসএলএ তখন নতুন করে বড় কিছু ঘটানোর প্ল্যান করতে থাকে, এই সূত্রেই মিডিয়া মুগল হার্স্ট পরিবারের তরুণী কন্যাকে অপহরণ করে তারা।

অস্ত্র হাতে এসএলএ’র কয়েকজন সদস্য; Image Source:therongolianstar.com

মুক্তিপণ নিয়ে দরকষাকষি  

হার্স্টকে নিয়ে যাবার তিনদিন পর স্থানীয় রেডিও স্টেশনে চিঠি পাঠায় এসএলএ, অপহৃতকে উল্লেখ করে যুদ্ধবন্দী হিসেবে। বারো ফেব্রুয়ারি তাদের থেকে পাওয়া একটি অডিওটেপ প্রচার করে স্টেশন। সেখানে এসএলএ প্রধান দাবী করেন ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা রোজা থেকে লস অ্যাঞ্জেলস পর্যন্ত যত দরিদ্র মানুষ আছে সবাইকে ৭০ ডলারের খাদ্যদ্রব্য দিতে হবে, এরপর মেয়েকে ফিরে পাবার আলোচনা করতে পারবেন হার্স্টরা। প্যাট্রিশিয়া হার্স্টের কথাও শোনানো হয় টেপে, যেখানে বাবা-মাকে দ্রুত এসএলএ-র দাবী মেনে নিতে অনুনয় করে সে।

দশ দিনের মধ্যে হার্স্ট পরিবার একটি পিপল ইন নিড  প্রোগ্রামের মাধ্যমে এসএলএ’র দাবী পূরণ করেন, খরচা পড়ে দুই মিলিয়ন ডলার। তবে কিডন্যাপাররা আরো ছয় মিলিয়ন দাবী করে। তাদের জানানো হয় মেয়েকে অক্ষত অবস্থায় ফিরে পেলে টাকা দেয়া হবে। এরপর আরেকটা অডিওটেপ পাঠায় তারা, সেখানে হার্স্টকে বলতে শোনা যায় সে স্বেচ্ছায় এসএলএ-র দলে যোগ দিয়ে বিপ্লবের অংশ হবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চে গুয়েভারার এক সহযোদ্ধার নাম নিয়ে নিজেকে তানিয়া  নামে অভিহিত করে সে।

এসএলএ-র পতন

হাইবারনিয়া ব্যাংকে ডাকাতি হয় এর কিছুকাল পরেই। এসএলএ-র ছোড়া গুলিয়ে একজন পথচারী আহত আর একজন নিহত হয়। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল সিসি ক্যামেরায় হার্স্টকে দেখানো, যাতে মিডিয়া কভারেজ পায় তারা। হার্স্ট কি নিজ উদ্যোগে এসব করছে নাকি তার মগজধোলাই করা হয়েছে সেটা নিয়ে দেখা দেয় তুমুল বিতর্ক। এসএলএ-র প্রচারিত অডিওটেপে হার্স্ট দাবী করে- স্বেচ্ছায় গ্রুপের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে, তাকে মগজধোলাই করার মতবাদ ভুল।

সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে সশস্ত্র হার্স্ট ডাকাতদলের সাথেই ছিলেন ©Getty Images

এক মাস পর গ্রুপের দুই সদস্য এমিলি আর বিল হ্যারিসের সাথে মিলে দোকান লুট করতে যায় সে, তবে সেটা সফল হয়নি। এরপর এফবিআই আর পুলিশ মিলে সাঁড়াশী অভিযানে নামে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ১৭ মে ঘিরে ফেলা হয় একটি বাড়ি। বন্দুকযুদ্ধে মারা পড়ে ডিফ্রিজসহ সাতজন, পুরো ঘটনা সরাসরি সম্প্রচারিত হয় টেলিভিশনে।

তবে হার্স্ট আর হ্যারিসদের দেখা পাওয়া যায়নি সেখানে। আরো এক বছর পর এসএলএ-র প্রাক্তন সদস্য ক্যাথেলিন সোলিয়াহকে (Kathleen Soliah) অনুসরণ করে হার্স্ট আর হ্যারিসদের খোঁজ পায় পুলিশ। সান ফ্রান্সিস্কোর এক অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করা হয় তাকে।

হার্স্ট আর হ্যারিসদের খুঁজতে থাকে পুলিশ; Image Source:landsendthebook.com

বিচার ও রায়

১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিচারক অলিভার জেসে কার্টারের (Oliver Jesse Carter) আদালতে আরম্ভ হয় হার্স্টের বিচার। অভিযোগ ব্যাঙ্ক ডাকাতি। সরকারি উকিল জিম ব্রাউনিং, আর আসামীর প্রধান পরামর্শদাতা লি বেইলি। প্রথম থেকেই বেইলির দাবি ছিল হার্স্টের  মগজধোলাই করা হয়েছে। আসামী স্টকহোম সিনড্রোমে ভুগছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। মানসিক এই অসুখে অপহরণকারীর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন অপহৃত ব্যক্তি।

পুলিশ কিন্তু প্রমাণ পেয়েছিল অপহরণের পর দীর্ঘসময় হার্স্টের চোখ বেঁধে রেখেছিল কিডন্যাপাররা। তাকে আটকে রাখা হয়েছিল ছোট্ট একটি ঘরে, করা হয়েছিল শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। কিন্তু সেই বিষয়ে জোর না দিয়ে মগজধোলাইয়ের উপর ফোকাস করে ভুল করে বসেন বেইলি, কারণ এমনকি ট্রায়ালের আগপর্যন্ত এসএলএ-র প্রতি নিজের অনুরাগ জানিয়ে আসছিলেন আসামী। কেবল কাঠগড়ায় সেই মনোভাবের পরিবর্তন হয় তার। জুরিদের সামনে এসএলএ-র হাতে নির্যাতিত হওয়ার বিবরণ দেন তিনি, জানান কেবল প্রাণের ভয়েই যোগ দিয়েছিলেন তাদের সাথে। কিন্তু তার কথাবার্তা বিশ্বাস করেনি জুরি।

রায় ঘোষণার পর হার্স্টকে নিয়ে যাওয়া হয় কারাগারে © Associated Press

২০ মার্চ দোষী সাব্যস্ত করা হয় হার্স্টকে, দেয়া হয় সাত বছরের কারাদণ্ড। তবে তিন বছরের মাথায় প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার তার সাজা মওকুফ করে দেন। মুক্তি পেয়ে অভিনেত্রী হিসেবে ছোটখাট ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন হার্স্ট। তার বাবা মেয়ের নিরাপত্তার জন্য ভাড়া করেছিলেন বেশ কয়েকজন দেহরক্ষী। তাদের একজন, বার্নার্ড শ’কে বিয়ে করে পরে সংসার শুরু করেন তিনি। ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি, দ্বিতীয় মেয়াদের প্রেসিডেন্সির শেষ দিনে বিল ক্লিনটন তাকে একেবারে ক্ষমা করে দেন। ফলে হার্স্টের অফিসিয়াল রেকর্ড থেকে মুছে দেয়া হয় এই ঘটনা।

বার্নার্ড শ’র সাথে হার্স্ট © Rick Meyer / Los Angeles Times

হার্স্টের ঘটনা যদি বর্তমানে ঘটতো তাহলে তার উকিলেরা মক্কেলকে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য শক্ত কেস দাঁড় করাতে পারতেন। কারণ স্টকহোম সিনড্রোম এখন চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত, মগজধোলাই বা ব্রেইনওয়াশের আইনেও পরিবর্তন এসেছে। কাজেই বেনিফিট অব ডাউট সম্ভবত তার পক্ষেই যেত।

This is a Bengali language article about the infamous kidnapping case of Patricia Hearst. Necessary references have been mentioned below.
References
• Toobin, J. (2017). American Heiress: The Wild Saga of the Kidnapping, Crimes and Trial of Patty Hearst.‎ Anchor; Reprint edition.
• Linder, D. (2017).Patty Hearst Trial (1976).University of Missouri at Kansas City - School of Law.
• Symbionese Liberation Army. Encyclopedia Britannica.

Feature Image © Penguin Random House

Related Articles