Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দ্য ভিয়েতনাম সিনড্রোম: যুদ্ধে পরাজয়ে সৃষ্ট ভীতি ও মার্কিন রাজনৈতিক বিতর্ক

‘দ্য ভিয়েতনাম সিনড্রোম’ বুঝতে হলে ভিয়েতনাম যুদ্ধের ইতিহাস জানা জরুরি। ভিয়েতনাম হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ, যার সাথে চীন, কম্বোডিয়া ও লাওস এবং থাইল্যান্ডের সীমান্ত রয়েছে। প্রথমে ফরাসিরা একে তাদের উপনিবেশ ‘ফ্রেঞ্চ ইন্দোচীন’ এর অংশ হিসেবে ঘোষণা দিলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি সাম্রাজ্যের স্বপ্ন নিয়ে অগ্রসর হওয়া জাপানের একটি উপনিবেশে পরিণত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান পরাজিত হলে ফরাসিরা আবারও ভিয়েতনামে উপনিবেশ স্থাপনের চেষ্টা করে। কিন্তু ভিয়েতনামের সৈন্যরা যুদ্ধের মাধ্যমে হলেও নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর পরই ফরাসিদের সাথে ভিয়েতনামের মানুষের যুদ্ধ বেধে যায় এবং দ্বিতীয় ইতোমধ্যেই প্রচন্ড ক্ষয়ক্ষতির শিকার হওয়া ফরাসিরা যুদ্ধে পরাজিত হয়। ফরাসিদের পর ভিয়েতনাম একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

কিন্তু ভিয়েতনাম স্বাধীন হলেও এর কমিউনিস্টরা দেশটির পুঁজিবাদী মডেল নিয়ে সন্তুষ্ট ছিল না। তারা চেয়েছিল নতুন এই দেশে কমিউনিজম প্রতিষ্ঠান করতে হবে। চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপ্লব তাদেরকে কমিউনিস্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় দারুণভাবে উজ্জীবিত করে। তারা তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য হাতে অস্ত্র তুলে নেয়। দক্ষিণ ভিয়েতনামের পুঁজিবাদী সরকার কমিউনিস্টদের দমন করতে ব্যর্থ হলে শুরু হয়ে যায় গৃহযুদ্ধ। একে গৃহযুদ্ধ বললেও সঠিক চিত্রটি বোঝা যাবে না।

তৎকালীন স্নায়ুযুদ্ধের রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ভিয়েতনাম। উত্তর ভিয়েতনামের কমিউনিস্টদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিল চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। অপরদিকে, দক্ষিণ ভিয়েতনামের পুঁজিবাদী সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিল আমেরিকা। আমেরিকা এই যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। প্রায় বিশ বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে শেষপর্যন্ত আমেরিকার পূর্ণ সমর্থনপ্রাপ্ত দক্ষিণ ভিয়েতনাম পরাজিত হয়। পুরো ভিয়েতনামের একত্রীকরণ সম্পন্ন করে কমিউনিজম প্রতিষ্ঠা করা হয়।

Image Source: The Past

ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার পরাজয়কে বিংশ শতকে মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়গুলোর একটি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দুই দশক ধরে চলা এই যুদ্ধে আমেরিকা বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করলেও শেষপর্যন্ত যুদ্ধে পরাজয় বরণ করে। শুধু অর্থই নয়, এই যুদ্ধে অসংখ্য মার্কিন সেনা ও সামরিক কর্মকর্তা প্রাণ হারায়। যারা যুদ্ধের ময়দান থেকে ফেরত গিয়েছিল, তাদের অনেকেই পরবর্তীতে আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি। যুদ্ধের ভয়াবহ মানসিক ধকলকে সঙ্গী করেই বাঁচতে হয়েছিল তাদেরকে। এছাড়াও গবেষণায় দেখা গিয়েছে- যুদ্ধফেরত সৈন্যদের মাঝে মাদকাসক্তি এবং বিবাহবিচ্ছেদের হার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। একসময় মার্কিন গণমাধ্যম ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী মনোভাব এত বেশি পরিমাণে মাথাচাড়া দেয় যে, আমেরিকা সরকার ভিয়েতনাম থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।

ভিয়েতনাম যুদ্ধে পরাজয়ের মানসিক ফলাফল ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ। গণমাধ্যমের অব্যাহত প্রচারণায় মার্কিন জনগণের মধ্যে প্রবল যুদ্ধবিরোধী মনোভাব গড়ে ওঠে। তারা মনে করতে থাকে- হয়তো এই যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবে ভবিষ্যতের কোনো যুদ্ধে হয়তো আমেরিকা আর জয়লাভ করতে পারবে না। মার্কিন সেনাবাহিনীর সামর্থ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল এই যুদ্ধের পর। আমেরিকার নীতিনির্ধারকরা মার্কিন জনগণের মাঝে এমন মনোভাব গড়ে ওঠার ফলে ভয় পেয়ে যান। তারা আশঙ্কা করতে থাকেন, এত বেশি যুদ্ধবিরোধী মনোভাব অব্যাহত থাকলে হয়তো একসময় আমেরিকা কোনো যুদ্ধে জড়াতে পারবে না। আমেরিকার অনেক নামকরা রাজনীতিবিদও যুদ্ধবিরোধী মনোভাব দ্বারা প্রভাবিত হন। এই অবস্থাকে ‘দ্য ভিয়েতনাম সিনড্রোম’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। স্নায়ুযুদ্ধের সেই সময়ে সোভিয়েত সমর্থনপুষ্ট কমিউনিজম ঠেকাতে আমেরিকার স্বার্থে সামরিক হস্তক্ষেপ করার প্রয়োজনীয়তা ছিল। কিন্তু মার্কিন সমাজের এহেন মনোভাবে তারা বেকায়দায় পড়ে যায়।

ভিয়েতনাম যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে সৃষ্ট ভীতি ও আশঙ্কাকে কাটিয়ে ওঠার জন্য তৎপরতা শুরু হয়। আমেরিকার নীতিনির্ধারকেরা এই ভীতি ও আশঙ্কাকে একটি ‘সিনড্রোম’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন, যেটি কাটিয়ে ওঠা আমেরিকার জাতীয় স্বার্থের জন্য অপরিহার্য ছিল। তৎকালীন মার্কিন রাজনীতিবিদ রোনাল্ড রিগ্যান এটি নিয়ে সোচ্চার হন। তিনি বলেন, “আমেরিকা ভিয়েতনাম সিনড্রোম কাটিয়ে উঠতে পারবে, যদি আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী ও আশাবাদী নীতি গ্রহণ করা হয়।” এছাড়া তিনি আরও বলেন, যদি আমেরিকার জনগণ ও গণমাধ্যম নীতিনির্ধারকদের উপর চাপ সৃষ্টি না করতো, তাহলে আমেরিকা এই যুদ্ধে জয়লাভ করতো। স্নায়ুযুদ্ধের সেই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন সামরিক দিক থেকে আমেরিকাকে প্রায় টপকে গিয়েছিল। এমন একটি পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং প্রবল যুদ্ধবিরোধী মনোভাব দূর করার চ্যালেঞ্জ তৈরি হয় মার্কিন নীতিনির্ধারকদের সামনে।

Image Source: U.S. Department of Defense

আমেরিকা এই সিনড্রোম দূর করার জন্য গ্রানাডায় সামরিক অভিযান প্রেরণ করে। গ্রানাডা হচ্ছে লাতিন আমেরিকার একটি দেশ। এখানে বামপন্থী দলের মধ্যে পুরোনো তিক্ততা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে দেশটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগায় আমেরিকা। গ্রানাডায় আক্রমণের পেছনে মার্কিন জনমত তৈরির জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ সামনে নিয়ে আসা হয়।

আমেরিকা ও লাতিন আমেরিকার আরও ছয়টি দেশের সম্মিলিত সামরিক জোট অবশেষে গ্রানাডায় হামলা চালায় এবং জয়লাভ করে। এই আক্রমণের ফলে মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা কিছুটা ফিরে আসে। পরবর্তীতে আমেরিকার টুইন টাওয়ারে হামলা হলে মার্কিনিরাই আমেরিকার সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের কথা জোরেসোরে বলতে শুরু করে। ‘ওয়ার অন টেরর’ এর সময়ও মার্কিন নীতিনির্ধারকদের জনসমর্থন নিয়ে কোনো ঝামেলায় পড়তে হয়নি। স্নায়ুযুদ্ধের সময় আমেরিকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। চলছিল তুমুল অস্ত্রের প্রতিযোগিতা। এরকম একসময়ে আমেরিকার জনগণ যদি যুদ্ধবিরোধী মনোভাব অব্যাহত রাখতো, তাহলে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে নিজেদের আধিপত্য হারানোর সম্ভাবনা ছিল বেশ বড় রকমের। তাই মার্কিন নীতিনির্ধারকরা এই সিনড্রোম কাটিয়ে ওঠার জন্য কৌশলের আশ্রয় নেন। তবে আফগানিস্তানে আমেরিকার কৌশলগত পরাজয়ের ফলে আবারও এই সিনড্রোম হানা দেয় মার্কিন রাজনীতিতে।

Language: Bangla
Topic: The Vietnam Syndrome
Reference:
1. THE 'VIETNAM SYNDROME' AND AMERICAN FOREIGN POLICY - GEORGE C. HERRING
2. Has America’s ‘Vietnam syndrome’ ever gone away? - Responsible Statecraft
3. The Vietnam syndrome: How we lost it and why we need it - Chicago Tribune
Feature Image: The Atlantic

Related Articles