Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

২০১৮: সাংবাদিকতার ইতিহাসে ভয়াবহতম বছর

সাংবাদিকতা পেশার জন্য ২০১৮ ছিল স্মরণকালের ভয়াবহতম বছর। অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় এ বছর সাংবাদিকদের খুন, জেলবন্দি, জিম্মি ও গুম হওয়ার ঘটনা বেড়েছে, এমনটিই উঠে এসেছে সম্প্রতি রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়েছে, সাংবাদিকতার সাথে জড়িত ব্যক্তিরা এ বছর অভূতপূর্ব বৈরিতার শিকার হয়েছেন। আর এর পেছনে মূলত দায়ী করা হয়েছে রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালী বিখ্যাত ব্যক্তিদেরকে, যাদের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যেও সাংবাদিকদের ঘৃণা করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ঠিক কতটা নৃশংসতার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা?

পরিসংখ্যান ঘেঁটে জানা যাচ্ছে, এ বছর সর্বমোট ৮০ জন এমন ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে, যারা পেশাদার কিংবা অপেশাদার সাংবাদিক, অথবা অন্য কোনোভাবে গণমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত। এদের মধ্যে ৬১% সাংবাদিককেই খুন করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে, তাদের করা প্রতিবেদনের প্রতিহিংসাস্বরূপ। আর বাকি ৩৯% সাংবাদিক খুন হয়েছেন সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে। এছাড়া এ বছর আরও ৩৪৮ জন প্রতিবেদককে গ্রেফতারের মাধ্যমে জেলবন্দি করা হয়েছে এবং ৬০ জনকে জিম্মি করা হয়েছে।

Image Courtesy: CNN

আরএসএফ সেক্রেটারি জেনারেল ক্রিস্টোফি ডেলোয়ের বলেছেন,

সাংবাদিকদের উপর সহিংসতা এক অভূতপূর্ব মাত্রায় এসে পৌঁছেছে। আজকাল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঘৃণা একদম প্রকাশ্যে, জোরগলায় প্রচার করা হচ্ছে। আর তা করছেন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, ধর্মীয় নেতা এবং ব্যবসায়ীরা। এর পরিণাম হচ্ছে ভয়াবহ, যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে সাংবাদিকদের উপর সহিংসতা বৃদ্ধির মাধ্যমে।

আরএসএফ প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বহুল আলোচিত ওয়াশিংটন পোস্ট কলামিস্ট জামাল খাশোগি হত্যা ছাড়াও গুরুত্বের সাথে স্থান পেয়েছে স্লোভাকিয়ান সাংবাদিক জান কুসিয়াকের হত্যা এবং মিয়ানমারে রয়টার্স সাংবাদিক ওয়া লোন ও সোই ও’র গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি, যার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়ে গেছে কিছু মানুষ ‘পীড়াদায়ক’ সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করতে ঠিক কতদূর অবধি যেতে পারে।

Image Courtesy: VICE News

সব মিলিয়ে গত এক দশকে সাতশোরও বেশি পেশাদার সাংবাদিককে খুন করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮৭ জন সাংবাদিককে খুন করা হয়েছিল ২০১২ সালে। ২০১৫ সালে খুন করা হয়েছিল ৮২ জন সাংবাদিককে। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা বেশ খানিকটা হ্রাস পেয়েছিল, সেই বছর সাংবাদিক খুন হয়েছিলেন মাত্র ৫৫ জন। কিন্তু চলতি বছর আবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩-তে।

Image Courtesy: CNN

যুক্তরাষ্ট্র যোগ হয়েছে ব্ল্যাকলিস্টে

সাংবাদিকদের জন্য এ বছর সবচেয়ে ভয়ংকর জায়গা ছিল আফগানিস্তান, যেখানে সর্বমোট ১৫ জন সাংবাদিককে খুন করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ জনই মারা গিয়েছিলেন এপ্রিল মাসে কাবুলে সিরিজ বোমা হামলায়, যার দায় পরবর্তীতে আইএস স্বীকার করেছিল। পরের তিনটি স্থান দখল করেছে যথাক্রমে সিরিয়া, মেক্সিকো ও ইয়েমেন।

কিন্তু সবচেয়ে অবাক করা বিষয়টি হলো, বিশ্বের আধুনিকতম ও সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এ বছর পরিণত হয়েছে সাংবাদিকদের জন্য মৃত্যুকূপে। তালিকার পঞ্চম স্থানে রয়েছে তারা। জুন মাসে মেরিল্যান্ডের ক্যাপিটাল গ্যাজেট সংবাদপত্রের কার্যালয়ে পাঁচজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

Image Courtesy: CNN

এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে এ বছর আরও দুজন সাংবাদিক কর্তব্যরত অবস্থায় মারা গেছেন। যদিও তাদের মৃত্যু ছিল নিছকই দুর্ঘটনা। গত মে মাসে নর্থ ক্যারোলাইনায় ঘূর্ণিঝড়ের সংবাদ কভার করতে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে মারা যান এক টিভি উপস্থাপক ও তার সঙ্গী ক্যামেরাম্যান।

কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯২ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ১১ জন সাংবাদিক কর্তব্যরত অবস্থায় মারা যান। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র তিনজন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। বাকি আটজনকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হত্যা করা হয়।

পিছিয়ে নেই চীনও

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন হয়তো সাংবাদিকদের জন্য সরাসরি মৃত্যুকূপ নয় এখনও, তবু সুখে নেই সেখানকার সাংবাদিকরাও। এ বছর চীনে ৬০ জন সাংবাদিককে জেলবন্দি করা হয়েছে, যা গোটা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। আরও বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এই ৬০ জন বন্দির মধ্যে ৪৮ জনই পেশাদার সাংবাদিক নয়, বরং তারা নিছকই ব্লগার কিংবা অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট। স্রেফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কিছু পোস্টের কারণেই বর্তমানে তাদেরকে জেলে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৮ জন সাংবাদিক জেলবন্দি রয়েছেন মিশরে। আর যদি বিবেচ্য হয় কেবল পেশাদার সাংবাদিকদের জেলবন্দি করা, সেক্ষেত্রে এগিয়ে আছে তুরস্ক। সেখানকার ৩৩ জন পেশাদার সাংবাদিক এই মুহূর্তে জেলবন্দি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬৫, ৬৮ ও ৭৪ বছর বয়সী তিন সাংবাদিককে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদানের মাধ্যমে দেশটি দেখিয়ে দিয়েছে প্রয়োজনে তারা ঠিক কতটা বর্বর হতে পারে।

গত বছর যেখানে বিশ্বব্যাপী ৩২৬ জন সাংবাদিককে জেলবন্দি করা হয়েছিল, এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪৮-এ। তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি সাংবাদিকই বন্দি রয়েছেন কেবল পাঁচটি দেশে: চীন, মিশর, তুরস্ক, চীন ও সৌদি আরবে।

Image Courtesy: CNN

বেড়েছে ভুয়া সংবাদ প্রকাশের দায়ে জেলবন্দির সংখ্যা

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্রেফ রাজনৈতিক কারণে সাংবাদিকদের জেলবন্দি করা হলেও, ইদানিং সাংবাদিক গ্রেফতারের বিষয়টিকে বৈধতা প্রদানের লক্ষ্যে গ্রেফতারের কারণ হিসেবে ‘ভুয়া সংবাদ পরিবেশন’-কে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি দায়ী করা হচ্ছে। মাত্র বছর দুয়েক আগেও যেখানে ভুয়া সংবাদ প্রকাশের দায়ে বন্দির সংখ্যা ছিল মাত্র নয়জন, এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮-এ।

কেবল মিশরেই তথাকথিত মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের দায়ে বন্দি রয়েছেন ১৯ জন সাংবাদিক। এছাড়াও ক্যামেরুনে চারজন, রুয়ান্ডায় তিনজন, এবং চীন ও মরক্কোতে একজন করে সাংবাদিক এ কারণে বন্দি রয়েছেন।

চার দেশে জিম্মি ৬০

এ বছর জিম্মি রয়েছেন মোট ৬০ জন সাংবাদিক। গত বছরের তুলনায় এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১১%। ইউক্রেনে জিম্মি রয়েছেন সাংবাদিক স্তানিসলাভ আসেয়েভ। এছাড়া বাকি ৫৯ জন সাংবাদিকই জিম্মি রয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের তিন দেশ সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনে।

টাইম ম্যাগাজিনের সম্মাননা

চলতি বছরটি যে সাংবাদিকদের জন্য খুবই ভয়াবহ কেটেছে, সে ব্যাপারে একমত বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনও। তাই তো এ বছর তারা একঝাঁক সাংবাদিককে ‘দ্য গার্ডিয়ান্স’ বলে অভিহিত করে, তাদেরকে ‘পারসন অফ দ্য ইয়ার’ হিসেবে সম্মানিত করেছে। এই সাংবাদিকরা তাদের কাজের জন্য শত্রুপক্ষের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন।

ম্যাগাজিনটি চারটি সাদা-কালো কভারের একটি সিরিজ প্রকাশ করেছে, যার নামকরণ তারা করেছে ‘সত্যের জন্য যুদ্ধ’।

Image Courtesy: TIME

‘পারসন অফ দ্য ইয়ার’ খেতাবে ভূষিতদের মধ্যে রয়েছেন জামাল খাশোগি, অক্টোবরে ইস্তাম্বুলস্থ সৌদি কনস্যুলেটে যাকে হত্যা করা হয়। এই প্রথম টাইম ম্যাগাজিন মৃত কোনো ব্যক্তিকে এই সম্মাননা প্রদান করেছে।

এছাড়া অপর একটি কভারের বিষয়বস্তু হলেন ওয়া লোন ও সোই ও-ও। রয়টার্সের এই দুই সাংবাদিক মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর অত্যাচারের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে এক বছর আগে গ্রেফতার হন। এখনও তারা মিয়ানমারে বন্দি রয়েছেন। কভারে তাদের স্ত্রীদের ছবি স্থান পেয়েছে।

‘দ্য গার্ডিয়ান্স’-এর তৃতীয় কভারে রয়েছেন মেরিল্যান্ডের ক্যাপিটাল গ্যাজেটের সাংবাদিকরা, যারা গত জুনে অস্ত্রধারীদের হাতে খুন হন। এবং সর্বশেষ চতুর্থ কভারে রয়েছেন ফিলিপাইনের সংবাদ বিষয়ক ওয়েবসাইট র‍্যাপলারের প্রধান নির্বাহী মারিয়া রেসা। তাকে গত মাসে কর ফাঁকির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। কিন্তু দেশটির মুক্তচিন্তার অনুসারী, স্বাধীনতাকামী সুশীল সমাজের দাবি, দেশটির রাষ্ট্রপতি রদ্রিগো দুতার্তের প্রশাসনের বিরুদ্ধে সাংবাদিকতার কারণেই তাকে এমন হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে।

এছাড়া টাইম ম্যাগাজিনের এ সংখ্যায় আরও স্থান পেয়েছে ‘পারসন অফ দ্য ইয়ার’ হিসেবে সাতটি দেশের আরও ২৬ জন সাংবাদিকের ফটোগ্রাফ, যেখানে রয়েছেন বাংলাদেশের ফটো সাংবাদিক শহিদুল আলমও। স্প্যানিশ-আমেরিকান ফটো সাংবাদিক মোয়েজেস সামান, যিনি নিজেও দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কারাবাস করেছেন এবং বিভিন্ন দেশের সরকার দ্বারা ব্ল্যাকলিস্টেড হয়েছেন, ১৭ দিনে ৩০,০০০ মাইল পাড়ি দিয়ে এই ২৬ জনের ফটোগ্রাফ সংগ্রহ করেন।

চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/

This Bangla article shows how 2018 turned out to be the worst year on record for violence against journalists.

Featured Image © WTD News

Related Articles