যারা সামরিক বিষয়াবলি নিয়ে আগ্রহী, তাদের অনেকের কাছেই রুশ স্পেশাল ফোর্স ‘স্পেৎসনাজ’ অতি পরিচিত একটি নাম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যেরকম রয়েছে ‘স্পেশাল ফোর্সেস’, ‘ডেল্টা ফোর্স’ বা ‘সিল টিম সিক্স’ কিংবা ব্রিটেনের যেরকম রয়েছে ‘স্পেশাল এয়ার সার্ভিস’, ঠিক তেমনি রুশ ফেডারেশনের রয়েছে ‘স্পেৎসনাজ’। অবশ্য ‘স্পেৎসনাজ’ বলতে কোনো একটি নির্দিষ্ট বাহিনীকে বোঝায় না, বরং যেকোনো স্পেশাল ফোর্সকেই রুশরা ‘স্পেৎসনাজ’ নামে অভিহিত করে থাকে। রুশ সশস্ত্রবাহিনীর প্রতিটি শাখা, পুলিশ, ন্যাশনাল গার্ড, প্রতিটি গোয়েন্দা সংস্থা, এমনকি বিচার ও জরুরি পরিস্থিতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়গুলোরও নিজ নিজ ‘স্পেৎসনাজ’ রয়েছে।
বিশ্ববিখ্যাত (বা বিশ্বকুখ্যাত) সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা ‘কেজিবি’রও এরকম বেশ কয়েকটি নিজস্ব স্পেৎসনাজ ইউনিট ছিল। এগুলোর মধ্যে ‘আলফা গ্রুপ’ ও ‘ভিমপেল’ নামক দুইটি ইউনিট পশ্চিমা বিশ্বে ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর কেজিবিকে দ্বিখণ্ডিত করে নতুন দুইটি গোয়েন্দা সংস্থার সৃষ্টি করা হয় – ‘এফএসবি’ এবং ‘এসভিআর’। ‘এফএসবি’র দায়িত্ব মূলত রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষা করা, আর ‘এসভিআর’–এর দায়িত্ব রাশিয়ার বাইরে গোয়েন্দা কার্যক্রম চালানো, যদিও সবসময় যে তাদের কার্যপরিধি এই নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তা নয়। ‘আলফা গ্রুপ’ এবং ‘ভিমপেল’ – এই দুইটি বিখ্যাত স্পেৎসনাজ ইউনিট এখন এফএসবির অন্তর্ভুক্ত।
কিন্তু ‘এসভিআর’–এর (রুশ: Слу́жба вне́шней разве́дки Росси́йской Федера́ции, ‘স্লুঝবা ভনেশ্নেই রাজভেদকি রোসিস্কোয় ফেদেরাৎসি’) এমন একটি নিজস্ব স্পেৎসনাজ রয়েছে, যাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে খুব কম তথ্যই জানা যায়। কম তথ্য বললেও ভুল হবে, বস্তুত এই ইউনিটটির সম্পর্কে প্রায় কোনো কিছুই জানা যায় না, এবং রুশ সরকার এই বাহিনীটির অস্তিত্বের কথা স্বীকারই করে না। এই অতি গোপনীয়, রহস্যময় এবং ধোঁয়াশাচ্ছন্ন বাহিনীটির নাম ‘জাসলন’ (রুশ: Заслон)। রুশ ভাষায় ‘জাসলন’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে ‘প্রতিবন্ধক’।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ রুশ রাষ্ট্রপতি বোরিস ইয়েলৎসিনের একটি গোপন অধ্যাদেশ অনুযায়ী ‘জাসলন’ স্পেৎসনাজ ইউনিটটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটিকে এসভিআরের ‘আত্মরক্ষা কেন্দ্রে’র ৭ম অধিদপ্তরের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। ১৯৯৮ সালের মধ্যে বাহিনীটি সম্পূর্ণভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু এখন পর্যন্ত রুশ সরকার জাসলনের অস্তিত্বের কথা স্বীকার করে না, এবং এসভিআরের ওয়েবসাইটে জাসলন সম্পর্কে কোনো তথ্যই নেই। রুশ সরকার তো বটেই, রুশ গণমাধ্যম এবং অ্যাকাডেমিয়াতেও জাসলন সম্পর্কে খুব কমই আলোচনা হয়।
জাসলনের প্রকৃত সদস্য সংখ্যা অজ্ঞাত। তাদেরকে কোন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়, তাদের কমান্ডার কে, তাদের কোথায় কোথায় মোতায়েন করা হয়েছে– এসবের কোনোকিছুই কেউ জানে না। জাসলনের সদস্যদের ছবি পাওয়া যায় না বললেই চলে, আর যদি বা পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে ছবিতে সদস্যদের চেহারা অস্পষ্ট করে দেয়া হয়। এমনকি ধারণা করা হয় যে, জাসলন সদস্যদের নিজস্ব কোনো উর্দিও নেই, বরং তারা অভিযান চালানোর সময় অন্য কোনো বাহিনীর উর্দি পরিধান করে থাকে। তাদের উর্দিতে কোনো ব্যাজ থাকে না, কেবল রুশ পতাকা অঙ্কিত থাকে।
রুশ সরকারের এই গোপনীয়তা সত্ত্বেও কিছু কিছু নিরাপত্তা বিশ্লেষক জাসলনের কার্যকলাপ নিয়ে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেছেন, এবং এর ফলে জাসলন সম্পর্কে কিছু কিছু তথ্য উঠে এসেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে পাঠকের সতর্ক থাকা উচিত, কারণ এই তথ্যগুলোর কোনোটিই বাস্তবিক অর্থে প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু এরপরও জাসলন সম্পর্কে যেসব তথ্য উঠে এসেছে, সেগুলো নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ। রাশিয়া বিশেষজ্ঞ মার্ক গালেওত্তির মতে, জাসলনের কার্যক্রম ও গোপনীয়তা জাপানের কিংবদন্তী গুপ্তচর ‘নিনজা’দেরকেও হার মানায়!
প্রাপ্ত তথ্যমতে, কেবল সেরাদের নয়, যারা ‘সেরাদের মধ্যে সেরা’ তারাই কেবল জাসলনে যোগদানের সুযোগ পায়। জাসলনের প্রকৃত সদস্য সংখ্যা অজ্ঞাত, কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, এটির সদস্য সংখ্যা কয়েক শত থেকে কয়েক হাজার পর্যন্ত হতে পারে। তাদেরকে প্রধানত রাশিয়ার বাইরে অভিযান চালানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। জিম্মি উদ্ধার, শত্রুপক্ষের গোপন তথ্য সংগ্রহ, গুপ্তহত্যা চালানো, যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুপক্ষের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের গভীরে অভিযান পরিচালনা, শত্রুরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অন্তর্ঘাত চালানো– এগুলো তাদের মূল কাজ। সাধারণত তাদের বিভিন্ন রাষ্ট্রে অবস্থিত রুশ দূতাবাসগুলোতে দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মীদের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য মোতায়েন করা হয়, কিন্তু এর বাইরে এরা নানা রকম অভিযান পরিচালনা করে থাকে।
জাসলনের যে অভিযানটি প্রথম বিশ্লেষকদের নজরে আসে সেটি ২০০৩ সালে ইরাকে পরিচালিত অভিযান। ২০০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া ও পোল্যান্ডের একটি জোট ইরাক আক্রমণ করে এবং ইরাকি রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করে। রাশিয়া ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ছিল, কিন্তু সেসময় যুক্তরাষ্ট্রকে বাধা দেয়ার ক্ষমতা রুশদের ছিল না। এদিকে সাদ্দাম হোসেনের সরকারের সঙ্গে রুশদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল, এবং এর মধ্যে অনেক কিছুই ছিল গোপন ও রুশদের জন্য স্পর্শকাতর। ইরাকে অবস্থিত রুশ দূতাবাসে রুশ–ইরাকি গোপন সম্পর্কের বিষয়ে প্রচুর নথিপত্র ছিল, এবং ইরাকি রুশদের গোয়েন্দা উপস্থিতিও ছিল।
এই নথিপত্র এবং গোয়েন্দাদের ব্যবহৃত উচ্চ প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম যাতে মার্কিন–নেতৃত্বাধীন জোটের হাতে না পড়ে, সেজন্য যুদ্ধের প্রাক্কালে জাসলনকে ইরাকে প্রেরণ করা হয়। জাসলন সদস্যরা ইরাকে অবস্থিত রুশ দূতাবাসের কর্মীদের সেখান থেকে সরিয়ে নেয় এবং গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ও সরঞ্জামগুলো উদ্ধার করে। পরবর্তীতে ইরাকে যখন রুশ দূতাবাসের কার্যক্রম আবার চালু হয়, তখন দূতাবাসের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য জাসলন সদস্যদের নিযুক্ত করা হয়।
২০০৬ সালের জুনে ‘মুজাহিদিন শুরা কাউন্সিল’ নামক আল–কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি ইরাকি মিলিট্যান্ট গ্রুপ বাগদাদে রুশ দূতাবাসের একজন কর্মীকে খুন করে এবং আরো চারজনকে অপহরণ করে। অপহৃতদের মধ্যে একজন ছিলেন ওলেগ ফেদোসিয়েভ, যিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দূতাবাসের একজন নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন, কিন্তু কার্যত জাসলনের একজন সদস্য ছিলেন বলে মনে করা হয়। মিলিট্যান্টরা চার জনকেই পরবর্তীতে খুন করে। এটি এখন পর্যন্ত জ্ঞাত জাসলনের একমাত্র ক্ষতি বলে মনে করা হয়। এই খুনের সঙ্গে জড়িত একজন মিলিট্যান্ট ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন বাহিনীর হাতে বন্দি হয় এবং আরেকজন ২০০৮ সালের অক্টোবরে মার্কিন সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হয়। ২০১০ সালের মে মাসে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আরেকজন মিলিট্যান্ট ইরাকি বাহিনীর হাতে বন্দি হয় এবং একটি ইরাকি আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে।
কিন্তু রুশ নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের কেউ কেউ এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট ছিলেন না। তাদের মতে, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মার্কিন–নেতৃত্বাধীন জোট জড়িত ছিল। ২০১৬ সালে একজন জাসলন কর্মকর্তা নিজের পরিচিতি গোপন রেখে রুশ প্রচারমাধ্যম ‘রোসবালত’কে একটি সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। এটি এ পর্যন্ত কোনো জাসলন সদস্যের একমাত্র প্রচারিত সাক্ষাৎকার। এই সাক্ষাৎকারে ঐ কর্মকর্তা দাবি করেন, ২০০৬ সালে ইরাকে রুশ কূটনীতিকদের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ব্রিটিশ ‘স্পেশাল এয়ার সার্ভিস’ জড়িত ছিল। এই ঘটনার জন্য ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে জাসলন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে কিনা, সেটির উত্তরে ঐ কর্মকর্তা স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।
ইরাকের পাশাপাশি আফগানিস্তান, লিবিয়া, ইয়েমেন, সিরিয়া, আলজেরিয়া, সুদান ও ভেনেজুয়েলায়ও জাসলন সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। এই রাষ্ট্রগুলোর প্রতিটিতেই হয় গৃহযুদ্ধ চলছে অথবা ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতা রয়েছে, এবং এই রাষ্ট্রগুলোতে অবস্থিত রুশ দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে জাসলন সদস্যরা নিয়োজিত। অবশ্য জাসলন যেরকম গোপনীয় এবং অতি প্রশিক্ষিত ইউনিট, সেই বিবেচনায় দূতাবাসের নিরাপত্তা রক্ষার বাইরেও তারা অন্যান্য গোপন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন।
২০১১ সালে লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলাকালে জাসলন সদস্যরা লিবিয়ায় ইরাকের অনুরূপ একটি অভিযান পরিচালনা করে। তারা লিবিয়া থেকে রুশ নথিপত্র ও স্পর্শকাতর সরঞ্জাম উদ্ধার করে এবং রুশ নাগরিকদের যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল থেকে অপসারণ করে। এসময় জাসলন সদস্যদের বহনকারী একটি গাড়ি মাইনের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বলে জানা যায়, যদিও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়নি।
২০১৫ সালে রাশিয়া গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়ায় বিপর্যস্ত সিরীয় সরকারের পক্ষে সামরিক অভিযান শুরু করে, এবং এই অভিযানের অংশ হিসেবে জাসলন সদস্যদেরও সিরিয়ায় প্রেরণ করা হয়। প্রায় তিন শত জাসলন সদস্য সিরিয়ায় কর্মরত আছে বলে ধারণা করা হয়। সিরিয়ায় অবস্থিত রুশ দূতাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সিরীয় সামরিক ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের পরামর্শ প্রদান করা এদের প্রধান দায়িত্ব। এর পাশাপাশি রুশদের স্পর্শকাতর নথিপত্র বা উচ্চ প্রযুক্তির সামরিক সরঞ্জাম যাতে সিরীয় মিলিট্যান্ট গ্রুপগুলো, মার্কিন–নেতৃত্বাধীন জোট বা ইরানিদের হাতে না পড়ে, সেটি নিশ্চিত করাও জাসলনের দায়িত্ব৷ রুশ ও ইরানিরা সিরিয়ায় একই পক্ষে লড়াই করছে এবং ইরান রাশিয়ার একটি ঘনিষ্ঠ মিত্র, কিন্তু সিরিয়ায় তাদের উভয়ের লক্ষ্য পুরোপুরি এক নয়, এবং তারা কেউই একে অপরকে পুরোপুরি বিশ্বাস করে না।
এসবের পাশাপাশি জাসলনকে আরেকটি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার পর থেকে প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলো থেকে প্রায় ১০ হাজার মিলিট্যান্ট সিরিয়ায় গিয়ে ‘ইসলামিক স্টেট’ (আইএস) ও অন্যান্য মিলিট্যান্ট গ্রুপে যোগ দিয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এদের প্রায় সকলেই রুশভাষী, এবং এদের মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার রুশ নাগরিক রয়েছে। সিরিয়া থেকে অভিজ্ঞ এই মিলিট্যান্টরা রাশিয়া বা অন্যান্য প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্রের ফিরে যেতে পারে, এই আশঙ্কা মস্কো এবং মস্কোর মধ্য এশীয় মিত্র রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে প্রবল৷ এজন্য জাসলনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, এই মিলিট্যান্টদের মধ্যে যত জনকে সম্ভব ততজনকে যেন সিরিয়ার মাটিতেই শেষ করে দেয়া হয়! অবশ্য জাসলনের এই কার্যক্রম কতদূর সফল হয়েছে সেটা এখনো অজ্ঞাত।
সিরিয়ায় রুশ অভিযান শুরুর পর রুশ উপপ্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি রোগোজিন সিরিয়া সফর করেছিলেন, এবং সেসময় জাসলন সদস্যদের সঙ্গে তোলা একটি ছবি তিনি তার টুইটার অ্যাকাউন্টে আপলোড করেছিলেন। কিন্তু ছবিটি প্রচার পাওয়ার আগেই তিনি সেটি টুইটার থেকে সরিয়ে ফেলেন। ধারণা করা হয়, এসভিআরের চাপে তাকে এই ছবিটি সরিয়ে ফেলতে হয়েছিল।
২০১৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর তুরস্কে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আন্দ্রেই কার্লভকে একজন তুর্কি পুলিশ কর্মকর্তা খুন করে। উক্ত পুলিশ কর্মকর্তা ছিল সিরীয় মিলিট্যান্ট গ্রুপ ‘জাবহাত ফাতেহ আল–শাম’–এর সদস্য। তুর্কি–সমর্থিত এবং আল–কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এই গ্রুপটির বিরুদ্ধে রুশরা সিরিয়ায় যুদ্ধ করছে। রুশ সরকার অভিযোগ করে যে, তুর্কি নিরাপত্তারক্ষীদের ‘অকর্মণ্যতা’র ফলেই রুশ রাষ্ট্রদূত নিহত হয়েছেন।
ইতোপূর্বে যে জাসলন কর্মকর্তার সাক্ষাৎকারের বিষয়ে বলা হয়েছে, সেই কর্মকর্তা সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তুরস্কে জাসলনের কোনো ইউনিট মোতায়েনকৃত ছিল না। যদি থাকত, সেক্ষেত্রে এরকম কোনো ঘটনা ঘটত না। কিন্তু জাসলন সদস্যরা প্রচুর অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র বহন করে এবং এটি মূলত একটি স্পেশাল ফোর্স ইউনিট, এজন্য তুর্কি সরকার তাদেরকে তুরস্কের মাটিতে মোতায়েনের অনুমতি দিতে চায়নি।
তুর্কিরা ভয় পাচ্ছিল, জাসলন হয়ত তুরস্কের অভ্যন্তরে গুপ্তহত্যা ও অন্তর্ঘাত চালাতে শুরু করবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তুরস্কে রাশিয়া থেকে আগত বেশকিছু চেচেন ও অন্যান্য জাতিভুক্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী অবস্থান করছে, এবং তুর্কি সরকারের ধারণা, জাসলন এদের খুন করতে পারে। এই কারণে তুর্কিরা তুরস্কে জাসলনকে মোতায়েনের অনুমতি দেয়নি। তবে অনেকের ধারণা, রুশ রাষ্ট্রদূতের হত্যাকাণ্ডের পর হয়ত জাসলন সদস্যদের তুরস্কে প্রেরণ করা হয়েছে, যদিও এই ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য জানা যায়নি।
বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধের কৌশল বহুলাংশেই পাল্টে গেছে। যুদ্ধক্ষেত্রে এবং শত্রুরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে স্পেশাল ফোর্সের ব্যবহার বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের অন্তত ৮টি রাষ্ট্রের রুশ ছোটবড় বিভিন্ন মাত্রার সামরিক অভিযানে লিপ্ত। এমতাবস্থায় মস্কোকে অনেক ক্ষেত্রেই জাসলনকে ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু যতদিন না মস্কো এই রুশ ‘নিনজা স্পেৎসনাজ’ ইউনিটটির অস্তিত্ব স্বীকার করে নিচ্ছে, ততদিন জাসলনের কার্যক্রম ধোঁয়াশাচ্ছন্নই থেকে যাবে।