প্রথমবারের মতো ভেড়া-মানুষের হাইব্রিড ভ্রূণ তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা

  • বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো ভেড়া-মানুষের মিশ্রণে এক নতুন ধরনের হাইব্রিড ভ্রূণ তৈরি করেছেন।
  • এ ধরনের অস্বাভাবিক হাইব্রিডের দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ভবিষ্যতে অঙ্গ দানের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে।

অঙ্গ দানের কথা মাথায় রেখে বিজ্ঞানীরা ভেড়ার ভ্রূণের মাঝে মানুষের স্টেম সেল স্থাপন করেন। এর ফলে একধরনের হাইব্রিড জীব সৃষ্টি হয়, যা ৯৯ শতাংশের বেশি ভেড়ার মতো এবং খুব সামান্য অংশই মানুষের সদৃশ। গবেষণার অংশ হিসেবেই ভেড়ার ভ্রূণে মানুষের কোষ স্থাপন করা হয় এবং সেগুলো ২৮ দিনের মাথাতেই নষ্ট করে ফেলা হয়। কিন্তু এরপরেও এ ধরনের হাইব্রিড জীব তৈরির ব্যাপারটি বিতর্কের সৃষ্টি করে।

টেক্সাসে গবেষণাটি উপস্থাপন করার সময় স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেম সেল সংক্রান্ত জীব বিজ্ঞানী হিরো নাকাউচি বলেন,”এ পর্যন্ত মানব কোষের অবদান খুব কম এবং এটি মোটেও একটি মানুষের মুখমণ্ডল অথবা মগজওয়ালা শূকর ছানা জাতীয় কিছু নয়।” তিনি জানান, ভেড়ার সেই ভ্রূণে প্রায় প্রতি ১০ হাজার কোষের একটি হচ্ছে মানব কোষ।

পূর্বে তৈরি শূকর-মানুষের হাইব্রিড ভ্রূণ; Source: sciencealert.com

গবেষকরা ব্যাখ্যা করেন, অঙ্গ প্রতিস্থাপন প্রয়োজন এমন রোগীদের ক্ষেত্রে এ ধরনের গবেষণা ভবিষ্যতে সমাধান এনে দিতে পারে। কেননা এরকম অনেক রোগী অঙ্গ দানের অভাবে মৃত্যুবরণ করে থাকে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলো রস বলেন, “একইরকম জমজের নেওয়া অঙ্গ ব্যতীত সবচেয়ে ভালোভাবে মিলে যাওয়া অঙ্গটিও বেশিদিন টিকে থাকে না কারণ, দেহের রোগ প্রতিরোধকারী ব্যবস্থা ক্রমাগত এটিকে আক্রমণ করতে থাকে।”  

অঙ্গ প্রতিস্থাপন সফল করার জন্য এ ধরনের ভ্রূণে অন্তত এক শতাংশ মানব কোষ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন গবেষকরা। এর অর্থ দাঁড়ায় যে, ভেড়ার এই হাইব্রিড ভ্রূণ এখনও একদম প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। কিন্তু এতে মানব কোষ বাড়িয়ে যে জীব পাওয়া যাবে, তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই নৈতিক প্রশ্ন ওঠে। রস আরও বলেন, “সে ব্যাপারে আমারও উদ্বেগ রয়েছে। যদি আমাদের গবেষণার ফলাফল ইঙ্গিত দেয় যে, মানব কোষগুলো প্রাণীটির মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছায়, তাহলে তাহলে হয়তো আমরা আর কখনোই সামনে এগুবো না।”  

এ ধরনের গবেষণায় যে নৈতিক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, তার কোনো সহজ উত্তর নেই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ মিনিটে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের তালিকায় একজনের নাম ওঠার কারণে গবেষকরা বলছেন, এ ধরনের জীব ভবিষ্যতে আমাদের জন্য কী করতে পারে সেটি বোঝার ব্যাপারে ছাড় দেওয়া উচিত হবে না।

ফিচার ইমেজ: sciencealert.com

Related Articles

Exit mobile version