Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সেন্টোসা দ্বীপের হোটেল ক্যাপেলা: ট্রাম্প-কিমের সম্মেলনস্থান

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে বেশ ভালোভাবেই। সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে কিনা তা নিয়ে দুই সপ্তাহ আগেও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। তবে সেই আশঙ্কা কাটিয়ে এখন পুরোদমে চলছে এর প্রস্তুতি। আসন্ন ১২ জুন অনুষ্ঠিতব্য এই সম্মেলনটি কোথায় হবে সেটি নিশ্চিত করেছে হোয়াইট হাউজ। মনোরম সমুদ্র সৈকত, ক্যাসিনো ও এশিয়ার অন্যতম সুন্দর কিছু গলফ কোর্স সমৃদ্ধ সিঙ্গাপুরের সেন্টোসা দ্বীপে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এটি। হোয়াইট হাউজের প্রেস সচিব সারাহ স্যান্ডার্স এক টুইটের মাধ্যমে জানিয়েছেন সেন্টোসা দ্বীপের পাঁচ তারকা হোটেল ক্যাপেলায় আলোচনায় বসবেন দুই নেতা। তবে দুজন থাকবেন আলাদা দুটি স্থানে। ডোনাল্ড ট্রাম্প অবস্থান করবেন শাংগ্রিলা হোটেলে এবং কিম জং উন থাকবেন সেন্ট রেজিস সিঙ্গাপুরে। সম্মেলনটি শুরু হবে স্থানীয় সময় সকাল ৯টায়

এই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট উত্তর কোরিয়ার নেতার সাথে সম্মেলন করতে যাচ্ছেন বলে ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে এই দ্বীপ। তবে এই দ্বীপটির রয়েছে এক অন্ধকারাচ্ছন্ন অতীত। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেন্টোসা দ্বীপ, হোটেল চ্যাপেলা ও সম্মেলনকে কেন্দ্র করে এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে।

সেন্টোসা দ্বীপ; Source: YouTube

সেন্টোসা দ্বীপ

সিঙ্গাপুরের ৬৩টি দ্বীপের মধ্যে সেন্টোসা একটি। আয়তনে ৫০০ হেক্টরের এই দ্বীপটি সিঙ্গাপুরের প্রধান দ্বীপের নিকটেই অবস্থিত। দ্বীপটিতে বিলাসবহুল রিসোর্ট, ব্যক্তিগত প্রমোদতরী ও গলফ ক্লাব রয়েছে। এর বর্তমান নামের অর্থ শান্তি বা প্রশান্তি হলেও এটিকে একসময় ‘রিয়ার ডেথ আইল্যান্ড’ বা ‘পিছন থেকে মৃত্যুর দ্বীপ’ বলা হতো।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে সিঙ্গাপুরকে ব্রিটিশ বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। ভারত ও চীনের সমুদ্রপথের মাঝে অবস্থিত হওয়ায় এটিকে আদর্শ স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। তবে ব্রিটিশ শাসনের আগে থেকেই সেখানে বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী ও জলদস্যুদের আনাগোনা ছিল। ফলে এটি তখন থেকেই উদীয়মান বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। সেসময় জলদস্যুদের সহিংসতার কারণেই সেন্টোসা ‘রিয়ার ডেথ আইল্যান্ড’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। দ্বীপটির অধিবাসীরা প্রধানত মালয়, চীনা ও ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপ থেকে সমুদ্রপথে আগত জনগণ।

সেন্টোসা দ্বীপ; Source: Holidays Genius

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক বাহিনী আত্মসমর্পণ করার পরে ১৯৪২ সালে সিঙ্গাপুর জাপানীদের হাতে চলে যায়। এর পরের কিছু বছর ধরে দেশটিতে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী চীনা অধিবাসীদের গুলি করে হত্যা করে সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হতো। এরকম হত্যাকাণ্ড ঘটানোর স্থানগুলোর মাঝে সেন্টোসা দ্বীপের সমুদ্রসৈকতও রয়েছে।  

১৯৭০ সালে সিঙ্গাপুরের সরকার দ্বীপটির নাম রাখে সেন্টোসা। এরপর পর্যটনের স্থান হিসেবে এটিকে সম্প্রসারিত করতে থাকে। কিছু দুর্ঘটনা ঘটলেও বর্তমানে এটি পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। ইউনিভার্সাল স্টুডিওর থিম পার্ক, ওয়াটার পার্ক, রিসোর্ট ও ক্যাসিনোর কারণে প্রতি বছর পৃথিবীর নানা দেশ থেকে বহু ভ্রমণপিপাসু এখানে ভীড় জমায়।

হোটেল ক্যাপেলা

ঔপনিবেশিক ধাঁচের ক্যাপেলা হোটেলটি সেন্টোসা দ্বীপে অবস্থিত একটি পাঁচ তারকা হোটেল। এতে বেশ কিছু রিসোর্ট, গফ কোর্স, সুইমিং পুল ও থিম পার্ক রয়েছে। ৩০ একর জমি জুড়ে অবস্থিত এই হোটেলটির নকশা করেন ব্রিটিশ স্থপতি নরম্যান ফস্টার। বর্তমানে এটি পন্টিয়াক ল্যান্ড গ্রুপ নামে রিয়েল স্টেট কোম্পানির অংশ।

হোটেল ক্যাপেলা; Source: No Destinations

হোটেলটিতে ১১২টি কক্ষ, ভিলা, স্যুট ও ম্যানোর বা দালান রয়েছে। প্রিমিয়ার গার্ডেন কিং রুমের জন্য রাত প্রতি ৫০০ মার্কিন ডলার গুণতে হয়। ঔপনিবেশিক দালানগুলোতে রয়েছে তিনটি করে বেডরুম ও একটি পুল। রাত প্রতি এগুলোর মূল্য ৭,৫০০ মার্কিন ডলার। এছাড়াও হোটেলটিতে রয়েছে টেনিস কোর্ট ও স্পা এর সুবিধা।

হোটেলটির ঔপনিবেশিক যুগের বাংলো দুটিতে ব্রিটিশ আর্টিলারি অফিসারগণ বসবাস করতেন। সব মিলিয়ে এটিকে নতুন ও পুরাতনের এক জমকালো সংমিশ্রণ বলা হয়। তবে এই কয়েকদিনের মাঝে যারা সেখানে বেড়াতে যাওয়ার চিন্তা করছেন, তাদেরকে কিছুটা হতাশই হতে হবে। কেননা ১৫ জুন পর্যন্ত কোনো কক্ষের বুকিং নিচ্ছে না হোটেলটির কর্তৃপক্ষ।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বিশ্বের প্রায় সবচেয়ে নিরাপদ দেশগুলোর একটি হওয়া সত্ত্বেও আসন্ন সম্মেলনের কারণে নিরাপত্তাকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেবে সিঙ্গাপুর। দুই নেতাই তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মীদের নিয়ে আসলেও গুর্খা কন্টিনজেন্টসহ সিঙ্গাপুরের সর্বোচ্চ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা সম্মেলনের এই স্থানটির নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়াও দেশটির অন্যান্য হোটেল ও রাস্তাঘাটেও নিরাপত্তা জোরদার থাকবে এ সময়টিতে। সিঙ্গাপুরের এস রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের রিসার্চ ফিলো গ্রাহাম অং-অয়েব জানিয়েছেন, “সম্মেলনটির অনন্য বৈশিষ্ট্য ও স্পর্শকাতরতার কারণে অনিশ্চিত যেকোনো কিছুই এটিতে প্রভাব ফেলতে পারে।”  

অরচার্ড রোড, সিঙ্গাপুর;Source: REUTERS/Edgar Su

পুরো সেন্টোসা দ্বীপটিকেই সিঙ্গাপুর সরকার ‘বিশেষ ইভেন্ট এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। দ্বীপে প্রবেশের মুখে দেহ তল্লাশী ও নিরাপত্তা জোরদার করার কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও সরকারি গেজেট অনুযায়ী বিশেষ নিরাপত্তাজনিত এলাকা হওয়ায় ফ্লেয়ার, ব্যানার, লাউডস্পিকার ও ড্রোনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে দ্বীপটিতে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও কিম জং উনের অবস্থানের স্থান শাংগ্রিলা হোটেল ও সেন্ট রেজিস সিঙ্গাপুরসহ অরচার্ড রোড ও তার আশেপাশের এলাকাতেও ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে পুরো সময় জুড়ে।

সম্মেলনের জন্য কেন সেন্টোসাকেই বেছে নেওয়া হলো?

সিঙ্গাপুরে এর আগে অনেক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও এর কোনটিই সেন্টসায় আয়োজিত হয়নি। মার্কিন কূটনীতিবিদরা এই দ্বীপটি বেছে নেওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে এটি সিঙ্গাপুরের প্রধান দ্বীপের সাথে মাত্র একটি রাস্তার মাধ্যমেই সংযুক্ত। প্রধান দ্বীপ থেকে আলাদা হওয়ায় এটি একদিক থেকে নিরাপদ, তেমনি একটি মাত্র রাস্তার যানবাহন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দ্বীপে প্রবেশ সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। দ্বীপটিতে প্রবেশের জন্য মাত্র একটি ক্যাবলকার, একটিমাত্র লাইনের রেলপথ, একটি পায়ে হাঁটার পথ ও যানবাহনের জন্য একটি টানেল রয়েছে।  

বহু প্রতীক্ষিত এই সম্মেলনে দুই নেতা কী ধরনের সিদ্ধান্তে আসতে পারেন সেটি এখন কূটনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের ভাবনার বিষয়। বিশ্বশান্তির জন্য তারা পরিণত সিদ্ধান্তে উপনীত হবেন এটিই সকলের প্রত্যাশা।  

Featured Image Source: Reuters

Related Articles