
প্রায় দীর্ঘ দুই বছরের অধিক সময় পরে এই প্রথম উত্তর কোরিয়া তার প্রতিবেশী রাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছে সিউল কর্তৃপক্ষ। দুই কোরিয়ার সীমান্তবর্তী গ্রাম পানমুঞ্জমে আগামী ৯ জানুয়ারিতে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিগত শুক্রবার জানায়, উত্তর কোরিয়ার সরকার উচ্চপর্যায়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় তাদের প্রতিনিধি পাঠানোর কথা অবহিত করেছে। বৈঠকটি দুই দেশের মাঝে সম্পর্কের উন্নয়নের উপর জোর দেবে।

২০১৫ সালের এক বৈঠকে দুই কোরিয়ার কর্মকর্তারা; Source: AFP
এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদ সংস্থা ইয়নহাপ মন্ত্রনালয়ের মুখপাত্র বাইক তাইহিউনের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, দক্ষিণ কোরিয়ার পিয়ংচ্যাং এ আসন্ন শীতকালীন অলিম্পিকে উত্তর কোরিয়ার অংশগ্রহণ সম্পর্কেও আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। বাইক জানান, দুই পক্ষই দলিলপত্র বিনিময়ের মাধ্যমে কার্যকরী বিষয়ে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ডিসেম্বর ২০১৫ এর পর প্রথম এই আলোচনায় কোন কোন কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করবেন তা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়-ইন আসন্ন শীতকালীন অলিম্পিক চলাকালে সামরিক অনুশীলন স্থগিত রাখতে সম্মত হন। এই সিদ্ধান্তের কয়েক ঘণ্টা পরই এই কূটনৈতিক আলোচনার কথা ঘোষণা করা হয়। কিন্ত নতুন কথোপকথনের পরেও জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইতসুনোরি ওনোদেরা পিয়ংচ্যাং এর বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।

জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইতসুনোরি ওনোদেরা; Source: The Apricity
উত্তর কোরিয়ার বারংবার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে কোরিয়ার উপদ্বীপে ২০১৭ সাল জুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করেছে। দুই দেশের মাঝের সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও পুরনো। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মাঝে ‘কোল্ড ওয়ার’ শুরু হলে দুই কোরিয়ার একত্রীকরণের পরিকল্পনা ভেঙে যায়। ১৯৫০ সালে দুই দেশের মাঝে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধ পরবর্তী সময় থেকে আজ পর্যন্ত দুই কোরিয়ার মাঝে নানা সংকট বিরাজমান রয়েছে।
তবে বর্তমান অগ্রগতি দুই দেশের মধ্যকার বৈরীভাব কমিয়ে সিউল ও পিয়ংইয়ং এর মাঝে সম্পর্কের উন্নতিকে নির্দেশ করছে। সম্প্রতি জানুয়ারির ৩ তারিখে দুই কোরিয়া তাদের মাঝের এক টেলিফোন হটলাইন পুনরায় উন্মুক্ত করে, যা ২০১৬ সাল থেকে বন্ধ ছিল। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন জানুয়ারির ১ তারিখে নতুন বছরের ভাষণে উল্লেখ করেন, তার রাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে আলোচনার জন্য উন্মুক্ত। তিনি আরও জানান, দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতিসাধন একটি জরুরী বিষয় এবং এজন্য সমগ্র কোরিয়া জাতিকে এই সঙ্কট নিরসনে সচেষ্ট হতে হবে।

দুই কোরিয়ার সীমান্ত; Source: Earth Nutshell
তবে দুই কোরিয়া উচ্চ পর্যায়ে আলোচনায় বসতে সম্মত হওয়া সত্ত্বেও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়-ইন জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে তিনি তার প্রগতিশীল পূর্ববর্তী নেতাদের চেয়ে অনমনীয় অবস্থানে থাকবেন।
ফিচার ইমেজ: Global Research