গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকেই মিসর প্রকাশ্যে তার প্রতিবাদ করে আসছিল। এমনকি, মিসরের অনুরোধেই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকা হয়েছিল এবং সেই বৈঠকে মিসরই ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে খসড়া সিদ্ধান্ত প্রস্তুত করেছিল। কিন্তু মার্কিন সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক টাইমস জানাচ্ছে, প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিলেও মিসর গোপনে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের হাতে ছেড়ে দিতেই ইচ্ছুক। নিউ ইয়র্ক টাইমসের দাবি, এমন কিছু গোপন ফোন কলের অডিও রেকর্ড তাদের হস্তগত হয়েছে, যা থেকে মিসরের এই দ্বৈত ভূমিকার প্রমাণ পাওয়া যায়।
Tapes Reveal Egyptian Leaders’ Tacit Acceptance of Jerusalem Move https://t.co/nxo2Sgy2HX
— David D. Kirkpatrick (@ddknyt) January 6, 2018
যা আছে এই অডিও রেকর্ডিংয়ে
- নিউ ইয়র্ক টাইমসের দাবি, ক্যাপ্টেন আশরাফ আল-খোলি নামে মিসরের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার চারটি ফোন কলের অডিও রেকর্ড তাদের হস্তগত হয়েছে। এই রেকর্ডগুলো থেকে জানা যায়, ক্যাপ্টেন খোলি জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে মেনে নেওয়ার পক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্য মিসরের একাধিক টিভি অনুষ্ঠানের উপস্থাপকদেরকে প্ররোচিত করেছেন।
- ক্যাপ্টেন খোলি উপস্থাপকদেরকে বলেছেন, মিসর প্রকাশ্যে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করবে, কিন্তু ইসরায়েলের সাথে সংঘর্ষে যাওয়া মিসরের জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। উপস্থাপকদের উচিৎ তাদের দর্শকদেরকে এটা মেনে নিতে রাজি করানো।
- ক্যাপ্টেন আশরাফ আল-খোলি বলেন, “আমরা, আমাদের আরব ভাইদের মতোই এই ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি, কিন্তু এই ঘটনার পরে এটা বাস্তবতায় রূপ নিবে। ফিলিস্তিনীরা প্রতিরোধ করতে পারবে না এবং আমরা যুদ্ধে জড়াতে চাই না। আমাদের নিজেদের পাতেই যথেষ্ট আছে।”
- ক্যাপ্টেন খোলি আরও বলেন, মিসরের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে ইন্তিফাদা। ইন্তিফাদা বা গণঅভ্যুত্থান শুরু হলে তা মিসরের জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে। কারণ ইন্তিফাদার মধ্য দিয়ে ইসলামপন্থীদের এবং হামাসের পুনর্জাগরণ ঘটবে। দিন শেষে জেরুজালেমের সাথে রামাল্লার কোনো পার্থক্য নেই, মূল ব্যাপার হচ্ছে ফিলিস্তিনীদের দুর্দশার অবসান হওয়া প্রয়োজন। তিনি মন্তব্য করেন, যদি রামাল্লাকে ফিলিস্তিনের রাজধানী বানানোর মধ্য দিয়ে রক্তপাত এড়ানো যায়, তাহলে মিসর সেটাই করবে।
উপস্থাপকদের বক্তব্য
- নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, আজমি মেগাহেদ নামে এক টিভি উপস্থাপক ক্যাপ্টেন খোলির সাথে কথপোকথনের ব্যাপারটি স্বীকার করেছেন। মেগাহেদ জানান, গোয়েন্দা কর্মকর্তার নির্দেশের কারণে না, তিনি তার নিজের বিবেচনা থেকেই ক্যাপ্টেন খোলির সাথে একমত হয়েছেন। তিনি নিজেও মনে করেন, ইসরায়েলের সাথে নতুন করে কোনো সংঘর্ষে জড়ানো উচিৎ না।
- মেগাহেদ আরও বলেন, যারা এর সাথে ভিন্নমত পোষণ করে, তাদেরকে বাসে করে জেরুজালেমে পাঠিয়ে দেওয়া উচিৎ। তিনি বলেন, “যদি তোমরা এতোই কঠোর হও, তাহলে তারা সেখানে গিয়েই যুদ্ধ কর। আমি শুধু আমার নিজের দেশের স্বার্থের কথাই চিন্তা করি।”
- নিউ ইয়র্ক টাইমের কাছে আসা অন্য রেকর্ডিংগুলোর মধ্যে একজন ছিল বিখ্যাত টকশো উপস্থাপক মফিদ ফৌজি। তার সাথে ফোন করা হলে তিনি সাথে সাথে এরকম কোনো কথপোকথনের কথা অস্বীকার করেন। আরেকটি ফোন কল ছিল ইউসরা নামে একজন মিসরী সঙ্গীতশিল্পীর সাথে। কিন্তু পত্রিকাটি তার সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়।
প্রতিক্রিয়া
- রেকর্ডিং এ আরেকজন উপস্থাপক ছিলেন সাঈদ হাসাসিন, যিনি নিজে একজন সংসদ সদস্য। তিনি প্রথমে একটি সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হলেও পরে তা বাতিল করেন এবং ফোন রিসিভ করা বন্ধ করে দেন।
- নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, প্রতিবেদনটি লেখার আগে মিসর সরকারের দুই মুখপাত্রের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। অন্যদিকে ক্যাপ্টেন আশরাফ আল-খোলিকে ফোন করে পাওয়া যায়নি।
- নিউ ইয়র্ক টাইমস দাবি করে, প্রতিটি ক্ষেত্রে রেকর্ডিং এর কন্ঠস্বরের সাথে বাস্তবের কন্ঠস্বরের হুবহু মিল পওয়া গেছে। প্রত্যেক উপস্থাপকই ফোনে ক্যাপ্টেন খোলির সাথে একমত পোষণ করেছিল এবং মেগাহেদ সহ কয়েকজন পরবর্তীতে টকশোতে সত্যি সত্যিই এ ধরনের কিছু যুক্তি প্রদর্শন করেছিল।
ফিচার ইমেজ- REUTERS