
- পাকিস্তানের বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী আসমা জাহাঙ্গীর ৬৬ বছর বয়সে মারা গেছেন।
- শনিবার রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর রোববার সকালে তার মৃত্যু হয়।
- আসমা জাহাঙ্গীর ছিলেন পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা।
- ২০০৭ সালে পাকিস্তানে আইনজীবীদের আন্দোলেন সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য তাকে গৃহবন্দী করা হয়।
- তার বাবা মালিক গোলাম জিলানীকে স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য ২০১৩ সালে সম্মাননা দেয় বাংলাদেশ।

আসমা জাহাঙ্গীর; Source: Right Livelihood Award Foundation
আসমা জাহাঙ্গীর ‘হিউম্যান রাইটস কমিশন অব পাকিস্তান’ এর সভাপতি ছিলেন। পাকিস্তানের মৌলবাদীদের বিপক্ষে প্রকাশ্যে কথা বলা এবং মানবাধিকারমূলক কর্মসূচির জন্য তিনি পরিচিত ছিলেন। এছাড়াও তিনি ‘সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন অব পাকিস্তান’ এর প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
তিনি আজীবন গণতন্ত্রকামী হিসেবে মানবাধিকার ও নারীদের অধিকারের জন্য কাজ করে গেছেন। ২০০৫ সালে তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। ১৯৮৩ সালে তাকে কারাগারে পাঠানো হয় এবং ২০০৭ সালে তাকে আবার গৃহবন্দি করা হয়। পাঁচ বছর আগে ফাঁস হওয়া কিছু দলিপত্রে জানা যায়, গোয়েন্দা বিভাগের কিছু কর্মকর্তা তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিল। এ সময় তিনি সরকারের কাছে এর তদন্ত দাবি করেন।
তার বাবা মালিক গোলাম জিলানি পশ্চিম পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। ২৫শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হলে তার মুক্তির দাবিতে জেনারেল ইয়াহিয়াকে খোলা চিঠি লেখার কারণে তাকে কারাবরণ করতে হয়।

পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে এক আন্দোলনে আসমা জাহাঙ্গীর; Source: Herald Magazine – Dawn
২০১৩ সালে দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আসমা জাহাঙ্গীর জানান, “সেসময় আমার বাবাকে দেশদ্রোহী এবং আমাদেরকে দেশদ্রোহীর সন্তান হিসেবে দেখা হতো। আমার বাবাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আমি খুব গর্ব করি কারণ তিনি সঠিক কাজটি করার কারণে কারাগারে গিয়েছিলেন।”
তার মৃত্যুতে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি শোক প্রকাশ করেছেন। পাঞ্জাব প্রদেশের প্রধান শেহবাজ শরিফ টুইট করে জানিয়েছেন, এ সংবাদে তিনি গভীরভাবে শোকাহত। নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী মালালা ইউসুফজাই তাকে ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের এর ত্রাণকর্তা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শহিদ খাকান আব্বাসি আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় তার অপরিমেয় অবদানের কথা উল্লেখ করে শোক প্রকাশ করেছেন।
তার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু, সহকর্মী ও সাংবাদিকরা শোক জানাতে লাহোরে তার বাড়িতে ভিড় জমান। হাসপাতাল থেকে তার মৃতদেহ নিয়ে আসা হলে তার বাড়ির সামনে উপস্থিত শুভানুধ্যায়ীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ফিচার ইমেজ: Toronto Star