রোহিঙ্গা শরণার্থী সঙ্কটের সমাধানে অং সান সুচির গঠিত আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা প্যানেল থেকে গত বুধবার পদত্যাগ করেছেন নিউ মেক্সিকোর সাবেক গভর্নর বিল রিচার্ডসন। এই প্যানেলকে তিনি ‘কেবলই লোকদেখানো’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
প্যানেলের অন্যতম সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এ রাজনীতিবিদ ও কূটনীতি বিশেষজ্ঞ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী পরিচালিত অভিযানের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের মহাসচিব রাখাইনে রোহিঙ্গা বিরোধী অভিযানকে জাতিগত নিধন বলে অভিহিত করেছিলেন।
রিচার্ডসন এই সঙ্কটের কারণে বহিরাগতদেরকে দোষারোপ করে নিজ দেশের সামরিক বাহিনীর কার্যকলাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করায় সুচির সমালোচনা করেন। ইয়াঙ্গুনের এক হোটেলে বসে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “তিনি (সু চি) মনে করেন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একটি সম্মিলিত আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা রয়েছে এবং আমি মনে করি, তিনি ভুল।” তিনি আরও জানান, সু চি মিয়ানমানের সকল সমস্যাকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, মানবাধিকার গোষ্ঠী ও অন্যান্য সরকারের উপর উপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। তার মতে, সুচির আশেপাশের ব্যক্তিত্বরা তাকে খোলাখুলিভাবে পরামর্শ না দেওয়ার কারণে এমন হচ্ছে।
দশ সদস্যের এ প্যানেলের কাজ ছিল সাবেক মহাসচিব কফি আনান পরিচালিত দলের রোহিঙ্গা সংক্রান্ত সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা। কিন্তু সুচি চাচ্ছিলেন তারা যেন রোহিঙ্গা সংক্রান্ত তার নীতিগুলো বলবত করে। তিনি আরও বলেন, “আমি এটির অংশ হতে চাই না, কেননা, সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন, নিরাপত্তা, নাগরিকত্ব, শান্তি ও স্থিতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা রয়েছে যেগুলোর সমাধান হওয়া প্রয়োজন। আমার শুধু মনে হয়েছে, আমার উপদেশ ও পরামর্শ মানা হবে না।”
মিয়ানমার সরকারের একজন মুখপাত্র জানান, রিচার্ডসনের পদত্যাগ দুঃখজনক। তিনি বলেন, “আমরা উপদেষ্টা কমিশনটি গঠন করেছিলাম, কেননা আমরা আশা করেছিলাম দলটি আমাদের গঠনমূলক সমর্থন ও উপদেশ দেবে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা দুঃখিত যে, রিচার্ডসন বিবৃতি প্রকাশ করে পদত্যাগ করছেন এবং সেটি অবশ্যই আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।”
রিচার্ডসনের পদত্যাগ ও সুচির সমালোচনার কারণ প্রধানত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী পরিচালিত রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নিধন অভিযান। এজন্য গত বছরের শেষদিকে প্রায় ছয় লাখ ৮৮ হাজার মানুষ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে।
ফিচার ইমেজ: News 1130