আমোও হাজি: ৬০ বছর ধরে গোসল করে না যে মানুষটি

এই শীতে কতদিন হল গোসল করেননি আপনি? কতদিন গোসল না করে থাকার রেকর্ড আছে আপনার? একদিন, চারদিন, দশদিন? আমোও হাজিও গোসল করেন না, নিজেকে পরিষ্কার করতে একেবারেই ইচ্ছে হয় না তার। তবে আপনার রেকর্ড তার কাছে কিছুই নয়। পাঁচ বা দশদিন নয়, টানা ৬০ বছর ধরে নিজেকে পরিষ্কার করেন না আমোও হাজি! বিশ্বাস হয়?

আমোও হাজি; Source: Huffington Post

আমোও হাজির বয়স ৮০ বছর। গোসল করা বা নিজেকে পরিষ্কার করা নিয়েই যে অনাগ্রহ তার এমনটা নয়, খাবারের ক্ষেত্রেও তার বাছবিচারটা চোখে পড়ার মত। আমোও হাজির সবচাইতে পছন্দের খাবার পচা শজারু। কেবল তা-ই নয়, নিজের বিশ্রামের সময়েও যে ধূমপান করতে ভালোবাসেন তিনি সেই পাইপেও ভরা থাকে পশুপাখীর মল। আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে, কেন আমোও হাজি গোসল করেন না বা নিজেকে পরিষ্কার করতে চান না? কারণ আছে। আর কারণটি হল এই যে, বৃদ্ধ এই মানুষটির ধারণা, গোসল করলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন। নিজের জীবনের প্রথমভাগের সময়গুলোর খুব বড় প্রভাব আছে আমোও হাজির বর্তমান জীবনে। কম বয়সে পাওয়া অভিজ্ঞতার কারণেই এমন এক জীবন বেছে নিয়েছেন তিনি, এমনটাই ভাবেন আমোও হাজি। শুধু এমন জীবন বেছে নেওয়াই নয়, অন্যসব মানুষের কাছ থেকেও নিজেকে আলাদা করে ফেলেছেন তিনি অনেক আগেই।

ইরানে ফার্সের দক্ষিণ প্রদেশের দেজগাহ গ্রামে আমোও হাজির জন্ম। গ্রামে থাকাকালীন সময়ে একবার কিছু তরুণ মিলে তাকে গোসল করিয়ে দিতে চায় জোর করে। সেবার কোনোরকমে পালিয়ে বেঁচেছিলেন আমোও হাজি। এমনকি রাতে ঘুমানোর সময়েও কোনো ঝুঁকি নিতে চান না এই মানুষটি। তাই ঘুম পেলে চলে যান মাটির একটি গর্তে, যেটা অনেকটাই কবরের মতো। আমোও হাজির কথা ভেবে স্থানীয়রা একটি ইটের ঘর বানিয়ে দিয়েছে তার পাশেই। সেখানেও মাঝেমাঝে সময় কাটান এই অদ্ভুত মানুষটি।

গাড়ির কাঁচ দিয়ে নিজেকে দেখেন আমোও; Source: Huffington Post

যেমনটা বলেছিলাম, শুধু পরিষ্কার হওয়ার ব্যাপারেই নয়, খাবারের ব্যাপারেও অনেকটাই অপরিষ্কার আমোও হাজি। সাধারণত পচা মাংস খান তিনি। দিনে পাঁচ লিটার পানি পান করেন। তবে সেটাও ময়লা একটি পাত্র থেকে। পরিষ্কার খাবার আর বিশুদ্ধ পানীয়তেও সমস্যাবোধ করেন হাজি। তবে তার অর্থ এই নয় যে, আমোও হাজি নিজেকে সুন্দর দেখাতে চান না। নিজেকে দেখতে ইচ্ছে হলেই গাড়ির ভাঙা কাঁচ তুলে নেন তিনি। প্রাণভরে দেখেন নিজেকে। আর চুলের কোনো স্টাইল করা কিংবা চুল কাটার দরকার পড়লে আগুন আর পাথর দিয়েই কাজ চালিয়ে নেন। ছেঁড়া আর বাতিল কাপড়েই বেশ চলে যায় আমোও হাজির বছরগুলো। তবে শীতকালে বাড়তি হিসেবে একটি হেলমেট ব্যবহার করেন তিনি। গোসল করার চিন্তা করলেও রাগ হয় বলে জানান তিনি।

ধূমপানের সময় পশুপাখীর মল ব্যবহার করেন আমোও হাজি; Source: Huffington Post

আমোও হাজির এমন অদ্ভূত জীবনের কথা শুনে হয়তো অবাক হচ্ছেন আপনি। তবে এমনটা কিন্তু নতুন কিছু নয়। এর আগেও ভারতের কৈলাস সিং নামক একজন ব্যাক্তি সর্বোচ্চ সময় গোসল না করে থাকার জন্য রেকর্ড করেন। টানা ৩৮ বছর ধরে গোসল না করেছিলেন কৈলাস। কৈলাসের সেই রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেছেন বলে দাবী করেন আমোও হাজি। আমোও হাজি কেবল অসুস্থ হয়ে যাওয়ার ভয়ে গোসল না করলেও কৈলাস সিং ৩৮ বছর ধরে গোসল না করে ছিলেন শুধু ধর্মগুরুর নির্দেশেই। ভারতীয় কৃষক কৈলাস সিং বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই, ১৯৭৪ সালে গোসল করা বন্ধ করে দেন। এমনটা করলে তার ঘরে ছেলেসন্তান জন্ম নেবে, আশা করেছিলেন তিনি। কিন্তু মোটেও তেমন কিছু হয়নি। বরং টানা ৭ জন মেয়ের বাবা হয়েছেন কৈলাস। আমোও হাজি চুল কাটলেও কৈলাস চুলও কাটেননি এই ৩৮ বছরে। ফলে তার চুল গোত্তা খেয়ে খেয়ে নীচের দিকেই জট পাকিয়ে বেড়েছে কেবল। প্রতিবেশীরা অনেক হাসি-ঠাট্টা করলেও গোসল করেননি কৈলাস সিং। কেবল প্রতিবেশীদের কাছ থেকেই নয়, হাসির পাত্র হয়েছেন তিনি পরিবারের মানুষের কাছেও। সঙ্গত কারণেই আপনি এমন কোনো মানুষের সাথে সংসার করতে চাইবেন না যে কিনা ৩৮ বছর ধরে গোসল করে না। কয়েকবার এ নিয়ে কথা শুনতে হলেও নিজের কাজে অটল থেকেছেন কৈলাস সিং। প্রায় ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস গরমে মাঠে গরু চড়িয়েছেন তিনি। নিজেকে দিয়েছেন ঘর্মাক্ত গোসল। এরপর মারিজুয়ানায় বুঁদ হয়ে শিবের জন্য পূজা করেছেন, আগুনের চারপাশে নেচেছেন পাগলের মত। সবকিছুই ছিল একটি পুত্রসন্তানের জন্য। স্ত্রী কলাবতী দেবী চেষ্টা করেছেন সবাইকে নিয়ে এক হয়ে কৈলাসকে গোসল করানোর। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। কোনো না কোনোভাবে সবার হাত থেকে পালিয়ে গিয়েছেন কৈলাস। এমন না যে তার কষ্ট হয়নি, তবে এখন অনেক বছর পর এসে কষ্টটা গা সওয়া হয়ে উঠেছে। আগে কেবল সন্তানের জন্য গোসল না করলেও এখন অভ্যাসের কারণেই আর গোসল করা হয় না কৈলাস সিংয়ের।

কৈলাস সিং; Source: The Week

তবে আমোও হাজির মতো ব্যাক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে একেবারে উদাসীন নন কৈলাস। আমোও হাজিকে কেবল নোংরা বললে সেটা কম হয়ে যাবে। তিনি একইসা​থে অনেক বেশি অলস। তাই, গোসল না করেও কৈলাস ‘অগ্নি গোসল’ এর মাধ্যমে নিজেকে পরিচ্ছন্ন করলেও আমোও হাজি সেটা করার কোনো দরকার বোধ করেননি। আমোও হাজি আর কখনো গোসল করবেন কিনা সেটা চিন্তার বিষয়। এ নিয়ে কোনো অনুমান করা বা কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে কৈলাসের এই কর্মকান্ডের শেষ আছে। তার গোসল করা নির্ভর করে পুত্রসন্তানের উপরে। তার মতে, এ জন্মে পুত্রসন্তান জন্ম না নিলে গোসল করার জন্য পরবর্তী জন্ম পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে তাকে। কারণ এই পুরোটাই সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা।

গোসল না করার এই প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছেন আমোও হাজিই; Source: Huffington Post

প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছেন আমোও হাজি এবং কৈলাস সিং। তবে গোসল না করার এই তালিকায় কেবল এরা একাই নন, তামারা ডাইবিনিয়ান, ডেভ হুইটলক এবং চু কিম গুয়ানসহ আরো অনেকেই আছেন। তবে এদের মধ্যে যে যতদিনই গোসল না করে থাকুক না কেন, আমোও হাজির কাছাকাছি আসাটা তাদের জন্য কষ্টকর হবে। আর সেটা কেবল গোসল করার ক্ষেত্রেই নয়, সেইসাথে আরো আছে নোংরা খাদ্যাভ্যাসও।

নিজের জীবন নিয়ে এভাবেই অবশ্য খুশি আছেন মিস্টার হাজি। তার শরীরের সাদা রঙ ময়লার আস্তরের কারণে অনেকটা মাটির রঙ নিয়ে নিয়েছে। অনেক সময় মাটির উপরেই পড়ে থাকতে দেখা যায় তাকে। অবশ্য এ কারণেই অনেকে আমোও হাজিকে সুখী মানুষ বলে মনে করেন। কারণ, তাদের মতে এই মানুষটির পাওয়ার কিছু নেই, হারানোর কিছু নেই, এমনকি ভয় পাওয়ারও কিছু নেই। পৃথিবীর সবচাইতে অপরিষ্কার বা নোংরা মানুষ হিসেবে বর্তমানে স্বীকার করা হয় আমোও হাজিকেই।

শীতে দুদিন গোসল না করলেই মনে হচ্ছে অনেক বিশাল কিছু করে ফেলেছেন? নিজেকে পৃথিবীর সবচাইতে নোংরা মানুষ মনে হচ্ছে? তা মনে হওয়াটা স্বাভাবিক। কয়েকদিন গোসল না করে থাকলে অস্বস্তি তো হবেই। তবে তাই বলে পৃথিবীর সবচাইতে নোংরা মানুষ হওয়ার রেকর্ড করাটা এত বেশি সহজ নয়! তাই বাদ দিন এসব চিন্তাভাবনা আর একটা শাওয়ার নিয়েই ফেলুন!

ফিচার ইমেজ: YouTube

Related Articles

Exit mobile version