মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অখণ্ড জেরুজালেমকে ইসরায়েলের দূতাবাস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। এ ঘটনায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে পরিষদের আট সদস্য রাষ্ট্র।
I have determined that it is time to officially recognize Jerusalem as the capital of Israel. I am also directing the State Department to begin preparation to move the American Embassy from Tel Aviv to Jerusalem… pic.twitter.com/YwgWmT0O8m
— Donald J. Trump (@realDonaldTrump) December 6, 2017
এই ঘোষণায় ট্রাম্প ইসরায়েলে মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করার প্রস্তুতি শুরু করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। বিশ্বনেতারা মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছেন। একমাত্র ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু ব্যতীত আর কোনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকেই এই পদক্ষেপের পক্ষে কথা বলতে দেখা যায়নি।
নেতানিয়াহু ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে ‘সাহসী’ এবং ‘ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ইহুদি জনগণ এবং ইহুদি রাষ্ট্র এর জন্য ট্রাম্পের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেছেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের সাথে একমত পোষণ করি না। আমরা বিশ্বাস করি, এটি এই অঞ্চলের শান্তির সম্ভাবনার প্রতি অসহযোগিতামূলক। ব্রিটেনের লেবার পার্টির প্রধান জেরেমি করবিনও এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, এটি শান্তির প্রতি বেপরোয়া হুমকি।
জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল বলেছেন, জার্মান সরকার যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান সমর্থন করে না। কারণ, এই সংকটের সমাধান হতে হবে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের উপর ভিত্তি করে তৈরি কাঠামোর মধ্য দিয়ে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো জানিয়েছেন, তিনি ট্রাম্পের এই একক সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন না। এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সকল সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতিয়েরেস বলেছেন, দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের কোনো বিকল্প ছিল না। তিনি বলেন, আমি ধারাবাহিকভাবে কোনো একক পদক্ষেপ নেওয়ার বিরুদ্ধে কথা বলে এসেছি, যা ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের শান্তির প্রত্যাশাকে বিপন্ন করবে।
এদিকে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে ট্রাম্প আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করেছেন। তিনি আরো বলেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের কারণে বাস্তবতা পরিবর্তিত হবে না। জেরুজালেম ফিলিস্তিনের রাজধানী।
মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন সংগঠন পিএলও বলেছে, এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথ ধ্বংস করে দিয়েছে। এর ফলে ফিলিস্তিনের শান্তি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করার আশা আর করতে পারে না।
President Mahmoud Abbas: Trump disregarded international law with his declaration on #Jerusalem https://t.co/hyBsFKFbxR
— Palestine PLO – NAD (@nadplo) December 6, 2017
ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস জানিয়েছে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থোদ্ধারের জন্য এ অঞ্চলে নরকের দরজা খুলে দেওয়ার মতোই হবে। ফিলিস্তিনের একাংশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি শুক্রবার থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নতুন ইন্তিফাদা তথা গণ-অভ্যুত্থানের ডাক দেন। লেবানন ভিত্তিক সংগঠন হিজবুল্লাহ’র প্রধান হাসান নাসরাল্লাহও এই ইন্তিফাদার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
“The American decision is a call for war against the Palestinian people, against all people” – Hamas leader Ismail Haniya responding to Trump’s Jerusalem move pic.twitter.com/vCLL83YK8N
— TRT World Now (@TRTWorldNow) December 7, 2017
তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইয়েলদিরিম বলেছেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিন-ইসরায়েল শান্তি প্রচেষ্টার জন্য মারণাঘাত। তিনি এই সংকট বিষয়ে আলোচনার জন্য আগামী ১৩ ডিসেম্বর ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর সংগঠন ওআইসির এক জরুরি সম্মেলন আহ্বান করেছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এটি হচ্ছে এই অঞ্চলকে আগুনের বলয়ে নিক্ষেপ করার সমান।
সৌদি আরব ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে ‘দায়িত্বহীন’ বলে আখ্যায়িত করেছে। সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ বলেন, আল-আকসা মসজিদ এবং জেরুজালেমের ধর্মীয় মর্যাদার কারণে এ রকম সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী মুসলমানদেরকে ক্ষিপ্ত করবে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত নতুন ইন্তিফাদার সূচনা করবে এবং চরমপন্থা ও সহিংসতাকে উৎসাহিত করবে, যার জন্য দায়ী থাকবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইহুদিবাদী রাষ্ট্র।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি ফেদেরিকা মোগেরিনি জানিয়েছেন, ফিলিস্তিন ইসরায়েল সংকটের সমাধানের ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান অত্যন্ত পরিস্কার। দ্বিরাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানই এর একমাত্র বাস্তসম্মত সমাধান। তিনি আরো বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ পদক্ষেপ এই অঞ্চলকে আরো পেছনের দিকে, এমনকি অন্ধকার যুগের দিকে নিয়ে যাবে।
EU diplomatic chief Federica Mogherini says US President Trump’s decision on Jerusalem could take the region “backwards to even darker times” https://t.co/0rSAB05Gfd pic.twitter.com/u708wR3Ma9
— TRT World Now (@TRTWorldNow) December 7, 2017
জর্ডান, আরব আমিরাত, ইরাক, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিরিয়া, কাতার সহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের আটটি সদস্য রাষ্ট্র এ ব্যাপারে আলোচনার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি অধিবেশন ডাকার জন্য মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতিয়েরেসকে আহ্বান জানিয়েছে। শুক্রবার এ অধিবেশন হওয়ার কথা আছে।
ফিচার ইমেজ: Business Insider