- মিসরের বিরোধী দলগুলোর জোট আসন্ন নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছে।
- আটটি সমমনা বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং গণতন্ত্রপন্থী ১৫০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির পক্ষ থেকে নির্বাচনকে অযৌক্তি এবং পাগলামির কাছাকাছি উল্লেখ করে তা বর্জনের জন্য আহ্বান জানানো হয়।
- মঙ্গলবার মিসরের রাজধানী কায়োতে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ আহ্বান জানান উপস্থিত নেতারা।
- সাম্প্রতিক সময়ে আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক প্রার্থীদেরকে গ্রেপ্তার এবং হয়রানির প্রেক্ষিতে তারা এই ঘোষণা দেন।
Egypt opposition urges boycott of presidential election https://t.co/Nt13AIywKc pic.twitter.com/F5BQZZHXtL
— FRANCE 24 (@FRANCE24) January 30, 2018
মিসরে আগামী মার্চ মাসের ২৬ থেকে ২৮ তারিখের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে। কিন্তু এ নির্বাচন ইতোমধ্যেই সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেওয়া সব গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীকে হয় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, অথবা বিভিন্ন রকম চাপ সৃষ্টি করে তাদেরকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করা হয়েছে। ফলে নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাত্তাহ আল-সিসির পুনর্নিবাচিত হওয়ার পথে আর কোনো বাধাই থাকছে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বিরোধী প্রার্থীদের মধ্যে কয়েকজন জনগণকে ভোট প্রদান না করার আহ্বান জানান।
তাদের আহ্বানের পাঁচ দিন পর, গতকাল মঙ্গলবার প্রধান প্রধান ৮টি রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত জোট ‘সিভিলিয়ান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট’ এবং ১৫০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানান। তারা প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগ তোলেন। জোটের নেতাদের একজন, আব্দুল জালিল মুস্তাফা বলেন, “পাগলামির সীমায় উপনীত হওয়া এই অযৌক্তিক কর্মকান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করা আমাদের উচিৎ হবে না।”
The only candidate running against President Sisi in Egypt’s election is a Sisi supporter pic.twitter.com/gWiWLs2Jwj
— Middle East Eye (@MiddleEastEye) January 29, 2018
আরেকজন নেতা, হামদিন সাবাহি, যিনি ২০১৪ সালে সিসির বিরুদ্ধে নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন, তিনি “ঘরে অবস্থান করুন” শ্লোগানের মাধ্যমে নির্বাচন বিরোধী প্রচারণার উদ্বোধন করেন। অন্যান্য গণতন্ত্রমনা দলগুলোকে জোটে শরিক হবার আহ্বান জানিয়ে সাবাহি বলেন, “আপনারা আসুন এবং আমাদের সাথে একত্রে দাঁড়ান। এটা হচ্ছে সেই মুহূর্ত, যখন জনগণ তাদের বক্তব্য জানান দিবে, আল্লাহ্র ইচ্ছায় জনগণের চাওয়াই জয়ী হবে।” সাবাহি সিসির শাসনকে “প্রাচীন অসভ্য স্বৈরতন্ত্র” বলেও উল্লেখ করেন।
প্রেসিডেন্ট সিসি নির্বাচন বর্জনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। বুধবার একটি সামুদ্রিক গ্যাসক্ষেত্র উদ্বোধন করার সময় দেওয়া এক ভাষণে নির্বাচন বর্জনকারীদের নাম সরাসরি উল্লেখ না করে তিনি বলেন, যারাই মিসরের নিরাপত্তা বিঘ্ন করতে চাইবে, তাদের বিরুদ্ধ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, মিসরকে অস্থিতিশীল করতে হলে প্রথমে তাকে হত্যা করতে হবে। কারণ তিনি আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করেন না। ১০ কোটি মানুষকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনে তিনি নিজে মৃত্যুবরণ করবেন।
যে আটটি দল একত্রিত হয়ে জোট গঠন করেছে, তারা ২০১১ সালে হোসনে মোবারকের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলাকালীন সময়েই একত্রিত হয়েছিল। ২০১৩ সালে তারা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসীদের বিরুদ্ধেও আন্দোলন করেছিল, কিন্তু সে আন্দোলনের ফলেই মিসরে সেনা অভ্যুত্থানের সূচনা হয়। সে সময় আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসীকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করেছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল আব্দুল ফাত্তাহ আল-সিসি। এরপর ২০১৪ সালের মার্চে তিনি নির্বাচনের আয়োজন করেছিলেন। সে নির্বাচনে ৯৭ শতাংশ ভোট পেয়ে তার একক প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।
ফিচার ইমেজ- Associated Press