ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘে দেওয়া অনুদানের পরিমাণ প্রায় অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পূর্বে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বছরের প্রথম কিস্তিতে ১২.৫ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও, শেষপর্যন্ত মাত্র ৬ কোটি মার্কিন ডলার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গতকাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
জাতিসংঘের ত্রাণ এবং কর্ম সংস্থা, UNRWA (UN Relief and Works Agency) প্রধানত ফিলিস্তিনের দখলকৃত এলাকাগুলোতে এবং লেবানন, সিরিয়া ও জর্ডানে অবস্থিত ফিলিস্তিনি শরণার্থীদেরকে সাহায্য করে থাকে। গত ৭০ বছর ধরে সংস্থাটি ফিলিস্তিনের ৫০ লক্ষ নিবন্ধিত শরণার্থীদের জন্য খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তের ফলে লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর জীবনে বিপর্যয় নেমে আসবে বলে জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা মত প্রকাশ করেছেন।
…peace treaty with Israel. We have taken Jerusalem, the toughest part of the negotiation, off the table, but Israel, for that, would have had to pay more. But with the Palestinians no longer willing to talk peace, why should we make any of these massive future payments to them?
— Donald J. Trump (@realDonaldTrump) January 2, 2018
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে UNRWA এর তহবিলের অন্যতম প্রধান যোগানদাতা ছিল। সংস্থাটির বাজেটের প্রায় ৩০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্র দিয়ে থাকে। গত বছর তাদের দেওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল ৩৭ কোটি মার্কিন ডলার, যা দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে থাকা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সৌদি আরবের সমষ্টিগত সাহায্যের চেয়েও বেশি। পূর্বে গৃহীত পরিকল্পনা অনুযায়ী এ বছর প্রথম কিস্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ১২.৫ কোটি ডলার দেওয়ার কথা থাকলেও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তা অর্ধেকেরও বেশি হ্রাস করে দিয়েছেন।
জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি নিকি হ্যালি চেয়েছিলেন সম্পূর্ণ ত্রাণ সহযোগিতাই বাতিল করতে। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন এই বলে যে, তাতে ফিলিস্তিন ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো, যেমন জর্ডানেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ বছরের শুরুতেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তিনি ফিলিস্তিনের প্রতি সাহায্য দেওয়া বন্ধ করে দেবেন। গত বছরের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্ব জনমতের তোয়াক্কা না করেই জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পরে সারা বিশ্বের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও এর প্রতিবাদ জানান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতা হিসেবে মানতে অস্বীকার করেন।
মাহমুদ আব্বাসের ঐ বক্তব্যকে ইঙ্গিত করে গত ৩ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় বলেছিলেন যে, তারা ফিলিস্তিনকে শত শত মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেন, কিন্তু বিনিময়ে ফিলিস্তিন ‘শান্তি আলোচনায়’ও অংশ করতে চায় না। কাজেই কেন তারা ভবিষ্যতে এত বিপুল অংকের সাহায্য দেওয়া অব্যাহত রাখবেন?
গত রবিবার প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস পুনরায় ট্রাম্পের সমালোচনা করে জানিয়েছিলেন, জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর তার পক্ষে ট্রাম্পের উদ্যোগে কোনো শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়া সম্ভব না। তিনি ইসরায়েলকে ১৯৯৪ সালের অসলো শান্তিচুক্তি ভঙ্গ করার দায়ে অভিযুক্ত করে ঐ যুক্তি আর মান্য না করারও হুমকি দেন।
মাহমুদ আব্বাসের ঐ বক্তব্যের পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অনুদান হ্রাস করার সিদ্ধান্ত জানানো হলো। অবশ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র দাবি করেন, কাউকে শাস্তি দেওয়ার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এজন্য, যেন অন্যান্য ধনী রাষ্ট্রগুলো সংস্থাটির সাহায্যে এগিয়ে আসে এবং যুক্তরাষ্ট্র সংস্থাটির সংস্কারের যে উদ্যোগ গ্রহণ করবে, তার প্রতি সমর্থন জানায়।
The U.S. Administration seems to be following Netanyahu’s instructions to gradually dismantle the one agency that was established by the
international community to protect the rights of the Palestinian refugees and
provide them with essential services. #Palestine #UNRWA pic.twitter.com/feqKnKKL5Z— Palestine PLO-NAD (@nadplo) January 16, 2018
ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। ফিলিস্তিনি সংগঠন পিএলও এক টুইট বার্তায় উল্লেখ করে, যুক্তরাষ্ট্র নেতানিয়াহুর নির্দেশে বিশ্বের একমাত্র সংগঠনটিকেও অকার্যকর করে দিতে চাচ্ছে, যে সংগঠনটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের অধিকার এবং মৌলিক চাহিদা পূরণ করার জন্য।
অন্যদিকে ইসরায়েল তাৎক্ষণিকভাবে কিছু না জানালেও দীর্ঘদিন ধরেই জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থাটিরই বিলুপ্তির দাবি করে আসছে। তাদের দাবি, সংস্থাটি ত্রাণের আড়ালে মূলত ‘সন্ত্রাসীদেরকে’ সাহায্য করছে।
ফিচার ইমেজ: AFP