১৯৬৭ সালের ৮ জুন। তৃতীয় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ তথা ছয় দিনের যুদ্ধের চতুর্থ দিন। এই তিন দিনেই ইসরায়েলের আচমকা আক্রমণে ধ্বংস হয়ে গেছে মিসরীয় বিমান বাহিনীর প্রায় সবগুলো যুদ্ধবিমান, নিহত হয়েছে মিসরীয় সেনাবাহিনীর প্রায় ১০-১৫ হাজার সৈন্য এবং হাতছাড়া হয়ে গেছে গাজা উপত্যকা ও সিনাই উপদ্বীপ। যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে জর্ডানও। তাদেরকে পরাজিত করে ইসরায়েল দখল করে নিয়েছে জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর। বাকি আছে শুধু সিরিয়ার গোলান উপত্যকা।
যুদ্ধের এ চরম মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি জাহাজ, ইউএসএস লিবার্টি অবস্থান করছিল ভূমধ্যসাগরে। সিনাই উপদ্বীপের আল-আরিশ শহর থেকে ২৫.৫ নটিকাল মাইল (৪৭.২ কিলোমিটার) উত্তরে, আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায়। ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ছিল ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র, আর অন্য দিকে মিসরসহ অন্যান্য আরব রাষ্ট্রগুলো ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের কৌশলগত মিত্র। ইউএসএস লিবার্টি ছিল গোয়েন্দা কার্যক্রমে নিয়োজিত একটি জাহাজ, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে মিসরের যোগাযোগের উপর আড়ি পাতা এবং যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি বুঝতে চেষ্টা করা।
ছয়দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি কোনো পক্ষে অংশগ্রহণ করেনি। লিবার্টি জাহাজটিও কোনো সামরিক জাহাজ ছিল না। এর অবস্থানও ছিল ইসরায়েল বা আরব দেশগুলোর সমুদ্রসীমার বাইরে। তাই এর ক্রুরা এবং মার্কিন কর্মকর্তারা মোটামুটি নিশ্চিতই ছিলেন যে, কোনো পক্ষই তাদের উপর আক্রমণ করবে না। তাছাড়া জাহাজটির উপরে তিনটি মাস্তুল থেকে তিনটি বিশাল মার্কিন পতাকা উড্ডীয়মান ছিল। তাই ভুল করেও কেউ জাহাজটির উপর আক্রমণ করার কথা ছিল না।
কিন্তু সবার আত্মবিশ্বাসকে চূর্ণ করে দিয়ে ৮ জুন দুপুর দুইটার সময় সম্পূর্ণ বিনা উস্কানিতে, বিনা সতর্কবার্তায় ইউএসএস লিবার্টির উপর আক্রমণ করে বসে দুটি মাইরেজ থ্রি ফাইটার জেট। জাহাজটি যেন কারো কাছে সাহায্য চাইতে না পারে, সেজন্য এর যোগাযোগ ব্যবস্থা জ্যাম করে দেওয়া হয়, রকেট এবং নাপাম বোমা নিক্ষেপ করে জাহাজটিকে অকার্যকর করে দেওয়া হয় এবং মোটর বোট থেকে টর্পেডো নিক্ষেপ করে জাহাজটিকে সম্পূর্ণ ডুবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
৪০ মিনিটব্যাপী পরিচালিত এ আক্রমণে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় ৩৪ জন ক্রু, যাদের মধ্যে ছিল নৌবাহিনীর কর্মকর্তা, নাবিক, দুইজন মেরিন সেনা এবং একজন বেসামরিক ব্যক্তি। আহত হয় আরো অন্তত ১৭১ জন। কোনো যুদ্ধ জাহাজের বাইরে এটি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো জাহাজের উপর আক্রমণের সবচেয়ে বড় ঘটনা। আর সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হলো, আক্রমণটি আমেরিকার শত্রু সোভিয়েত ইউনিয়ন কিংবা মিসর করেনি, করেছিল আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েল!
ঘটনার পরপরই ইসরায়েল নিজে থেকে আমেরিকার সাথে যোগাযোগ করে এবং তাদেরকে জানায়, তারা ভুলক্রমে মিসরীয় যুদ্ধ জাহাজ মনে করে মার্কিন জাহাজের উপরে আক্রমণ করে ফেলেছে। তারা আক্রমণে নিহত এবং আহতদের পরিবারকে এবং জাহাজটি মেরামতের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদানের অঙ্গীকার করে। ঘটনার পরপরই উভয় রাষ্ট্র পৃথক পৃথকভাবে তদন্ত পরিচালনা করে এবং তদন্তে প্রমাণিত হয়, আক্রমণটি আসলেই অনিচ্ছাকৃত ছিল। কিন্তু বেঁচে আসা কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার, সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এবং পরবর্তীতে অবমুক্ত হওয়া বিভিন্ন গোপন প্রতিবেদন থেকে প্রতীয়মান হয়, আক্রমণটি মোটেও অনিচ্ছাকৃত ছিল না, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবেই আক্রমণ করেছিল মার্কিন জাহাজের উপর।
ইউএসএস লিবার্টি ছিল মূলত “ভিক্টরি শিপ” মডেলের একটি বেসামরিক কার্গো জাহাজ, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যাপকভাবে নির্মিত হতো। ১৯৬৫ সালে মার্কিন নৌবাহিনী জাহাজটি ক্রয় করে এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এনএসএ’র (ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি) অধীনে ন্যস্ত করে। এনএসএ জাহাজটিকে অক্সিলিয়ারি টেকনিকাল রিসার্চ শিপ (এটিজিআর) হিসেবে রূপান্তরিত করে, যা ছিল মূলত গোয়েন্দাগিরির উদ্দেশ্যে নিয়োজিত জাহাজগুলোর সাধারণ ছদ্মনাম। প্রথম দুই বছর ইউএসএস লিবার্টির অবস্থান ছিল আফ্রিকার পশ্চিম তীরে। কিন্তু ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলের সাথে আরব রাষ্ট্রগুলোর সংঘর্ষের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেতে থাকলে একে ভূমধ্যসাগরে মিসরের কাছাকাছি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়।
৮ জুন ভোর পাঁচটা থেকে শুরু করে একাধিকবার লিবার্টি জাহাজের উপর দিয়ে ইসরায়েলি এয়ারফোর্সের একাধিক বিমান উড়ে গিয়েছিল। ইসরায়েলি সেন্ট্রাল কোস্টাল কমান্ড (সিসিসি) প্রথমে একে যুদ্ধজাহাজ হিসেবে চিহ্নিত করে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই জাহাজটির উপরে মাস্তুলে অবস্থিত বিশাল মার্কিন পতাকা এবং জাহাজটির গায়ে বিশাল অক্ষরে খোদাই করা এর নাম “GTR-5” দেখে তারা নিশ্চিত হয়, এটি আসলে একটি মার্কিন নৌবাহিনীর কার্গো জাহাজ।
শুধু এই একবার না, এরপরেও দিনের বিভিন্ন সময় ইসরায়েল অন্তত আরো সাতবার নিশ্চিত করে যে, সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি জাহাজের উপস্থিতি আছে। সকাল নয়টার দিকে জাহাজটির উপর দিয়ে আবারও উড়ে যায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর দুটি ফাইটার জেট। প্লেনগুলো এত নিচ দিয়ে যাচ্ছিল যে, এর পাইলটরা এবং জাহাজটির ক্রুরা পরস্পরকে দেখতে পাচ্ছিল এবং হাত নেড়ে একে অন্যকে অভিবাদন জানাচ্ছিল।
সেদিনটি ছিল ভূমধ্যসাগরে একটি সংঘাতময় দিন। মিসরের একটি যুদ্ধজাহাজ সকাল থেকেই ভূমধ্যসাগর থেকে আল-আরিশের উপর মর্টার শেল নিক্ষেপ করছিল। জাহাজটিকে ধ্বংস করতে ইসরায়েল দুটি মাইরেজ থ্রি যুদ্ধবিমান প্রেরণ করে। যদিও লিবার্টির অবস্থান, গঠন এবং গতিবেগ যুদ্ধজাহাজের তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল, তারপরেও মাইরেজ থ্রি প্লেন দুটো আক্রমণ করে বসে ইউএসএস লিবার্টির উপর।
দুপুর ১টা ৫৭ মিনিটে প্লেন দুটি থেকে কামানের গোলা এবং রকেট নিক্ষেপ করা হয়। একটি রকেট ডেকের একপাশে রাখা গ্যাসোলিন ট্যাংকে আঘাত করলে ট্যাংকটি বিস্ফোরিত হয়। তাৎক্ষণিকভাবেই মারা যায় লিবার্টির অন্তত ৮ জন এবং আহত হয় আরো ৭৫ জন। প্রাথমিক আক্রমণের পরপরই মাইরেজ প্লেন দুটি প্রস্থান করে এবং তাদের স্থলাভিষিক্ত হয় ড্যাসল্ট মিসটেরিস (Dassault Mysteres) নামের দুটি যুদ্ধবিমান। এগুলো থেকে লিবার্টির উপর নিক্ষেপ করা হয় অত্যন্ত বিধ্বংসী নাপাম বোমা, যার ফলে জাহাজের উপরিভাগের অধিকাংশ স্থানে আগুন ধরে যায়।
মিস্টেরিস বিমান দুটি ফিরে যাওয়ার পর দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে শুরু হয় নৌপথে আক্রমণ। লিবার্টির দিকে এগিয়ে আসতে থাকে ইসরায়েলের তিনটি টর্পেডোবাহী গানবোট। সেগুলো থেকে প্রথমে জাহাজটিকে উদ্দেশ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। এরপর জাহাজটিকে সম্পূর্ণ ডুবিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে পরপর পাঁচটি টর্পেডো নিক্ষেপ করা হয়। জাহাজটি চারটি টর্পেডো থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হলেও পঞ্চমটি এতে আঘাত করে। ফলে জাহাজের গায়ে সৃষ্টি হয় ১২ মিটার ব্যাসের বিশাল গর্ত, সাথে সাথেই নিহত হয় অন্তত ২৫ জন মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
টর্পেডো বোটগুলো এরপরেও বেশ কিছুক্ষণ জাহাজের নিকটে অবস্থান করে। জাহাজটি থেকে ভেলাতে করে পালাতে চেষ্টা করা ক্রুদেরকে উদ্দেশ্য করেও তারা মেশিনগানের গুলি এবং কামানের গোলা নিক্ষেপ করতে থাকে। আক্রমণের পুরো সময়টা জুড়ে লিবার্টির অধিকাংশ যোগাযোগ ব্যবস্থা অকার্যকর করে রেখেছিল ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। তারপরেও শেষ মুহূর্তে লিবার্টি ৫০০ মাইল দূরে থাকা মার্কিন ষষ্ঠ নৌবহরের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়। নৌবহর থেকে আটটি ফাইটার জেট পাঠানো হয় লিবার্টির দিকে উদ্দেশ্য করে।
মার্কিন ফাইটার জেটগুলো যাত্রা শুরু করার সাথে সাথেই ইসরায়েল তেল আবিবে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের ন্যাভাল অ্যাটাশের সাথে যোগাযোগ করে। তারা জানায়, তাদের বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনী ভুলক্রমে মিসরীয় যুদ্ধ জাহাজ আল-কুসাইর মনে করে একটি মার্কিন জাহাজের উপর আক্রমণ করে ফেলেছিল, কিন্তু ভুল বোঝামাত্রই তারা আক্রমণ বন্ধ করে দিয়েছে। ইসরায়েল দূতাবাসের কর্মকর্তাদেরকে একটি হেলিকপ্টারে করে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়ারও প্রস্তাব দেয়। ইসরায়েলের এই ভুল স্বীকারোক্তি পাওয়ার পরপরই ষষ্ঠ নৌবহর তাদের পাঠানো যুদ্ধ বিমানগুলোকে ফিরিয়ে নেয়।
সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন লিন্ডন জনসন। লিবার্টির উপর আক্রমণের প্রাথমিক সংবাদ শুনেই তিনি ধারণা করেছিলেন এটা সোভিয়েত ইউনিয়নের কাজ। সাথে সাথেই তিনি মস্কোর সাথে হটলাইনে যোগাযোগ করেছিলেন এবং ষষ্ঠ নৌবহর থেকে পাল্টা আক্রমণের হুমকি দিয়েছিলেন। কিন্তু এর পরপরই ইসরায়েলের চার্জ-দ্য-অ্যাফেয়ার্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে একের পর এক দুঃখ প্রকাশ করে বার্তা আসতে থাকে। মাত্র ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই নিহত এবং আহতদেরকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও প্রদান করে ইসরায়েল।
লিবার্টি জাহাজের উপর আক্রমণ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ইতিহাসে যুদ্ধজাহাজ ব্যতীত অন্য কোনো জাহাজের উপর আক্রমণের সবচেয়ে বড় ঘটনা। একই রকম আক্রমণ যদি অন্য কোনো রাষ্ট্র দ্বারা সংঘটিত হতো, তাহলে তার প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থাও হতে পারত ভয়াবহ মাত্রার। কিন্তু প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ইসরায়েলপন্থী প্রেসিডেন্টদের মধ্যে একজন। বিপুল সংখ্যক মার্কিন নৌ-কর্মকর্তার মৃত্যুর চেয়ে তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় ইসরায়েলের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অটুট রাখার বিষয়টি।
লিবার্টির উপর আক্রমণের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের চেয়ে কিভাবে গণমাধ্যমে ইসরায়েলের প্রতি সৃষ্ট ক্ষোভ নিবারণ করা হবে, সে ব্যাপারেই লিন্ডন প্রশাসন বেশি গুরুত্ব দিতে থাকে। এমনকি সাংবাদিকরা যেন লিবার্টির প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানতে না পারে, সেজন্য জাহাজটিকে ডুবিয়ে দেওয়ারও প্রস্তাব করা হয়। শেষপর্যন্ত অবশ্য ঐ প্রস্তাবটি কার্যকর হয়নি, কিন্তু লিবার্টির আশেপাশে যাওয়া এবং উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের কিংবা দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার ব্যাপারে সাংবাদিকদের উপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল পৃথক পৃথকভাবে লিবার্টির উপর আক্রমণের ঘটনার তদন্ত শুরু করে। কিন্তু ইসরায়েল তো বটেই, যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত কার্যক্রম নিয়েও ধোঁয়াশা সৃষ্টি হতে থাকে। কোনো ইসরায়েলি নাগরিককে জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই এবং উদ্ধার হওয়া কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা সত্ত্বেও সোগুলো বাদ দিয়েই তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। রিপোর্টে ঘটনাটিকে নিছকই একটা দুর্ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। জানানো হয়, লিবার্টির উপর আক্রমণটি ইসরায়েল সম্পূর্ণ ভুলবশত করেছে। তারা বুঝতে পারেনি ওটা মার্কিন জাহাজ ছিল।
ইসরায়েল তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিহত এবং আহতদেরকে ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল। ১৯৬৮ সালে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে নিহতদের জন্য ৩.৩২ মিলিয়ন (বর্তমান হিসেবে ২৩.৪ মিলিয়ন) এবং ১৯৬৯ সালে আহতদের জন্য আরো ৩.৫৭ মিলিয়ন (বর্তমান হিসেবে ২৩.৮ মিলিয়ন) মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ প্রদান করে। কিন্তু সেদিনের সেই আক্রমণ থেকে বেঁচে ফিরে আসা কর্তমর্তাদের অধিকাংশই কখনোই বিশ্বাস করেননি, আক্রমণটি নিছক দুর্ঘটনা ছিল। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস, ইসরায়েল তাদের জ্ঞাতসারে, সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবেই আক্রমণ করেছিল মার্কিন জাহাজের উপর।
মার্কিন এবং ইসরায়েলি সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য সব সময়ই এ ধরনের অভিযোগকে “ষড়যন্ত্র তত্ত্ব” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তবে শুধু বেঁচে আসা কর্মকর্তারা না, অধিকাংশ লেখক, সাংবাদিক এবং গবেষকই মনে করেন ইসরায়েলের আক্রমণটি ছিল ইচ্ছাকৃত, কিন্তু মার্কিন প্রশাসন নিজেদের স্বার্থে তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছে। বিভিন্ন সময় মার্কিন এবং ইসরায়েলি গোপন নথি উদ্ধৃত করে তারা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি-প্রমাণ উত্থাপন করেছেন।
সবচেয়ে জোরালো প্রমাণটি উপস্থাপন করেন সাংবাদিক রিচার্ড বেলফিল্ড, ২০১৪ সালে। তিনি আক্রমণ চলাকালীন সময়ে ইসরায়েলি মাইরেজ থ্রির পাইলট এবং কমান্ড সেন্টারের কর্মকর্তাদের মধ্যকার কথোপথনের ধারণকৃত একটি অডিও বার্তা উদ্ধার করেন, যা থেকে পরিষ্কার প্রমাণ পাওয়া যায়, হামলার আগেই পাইলটরা বুঝতে পেরেছিল জাহাজটি আমেরিকান। তারা সে কথা কমান্ড সেন্টারকে জানানোর পরেও তাদেরকে আক্রমণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু কেন? যে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থনপ্রাপ্ত আরব বিশ্বের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ চলছিল, সে সময় তাদের প্রধান মিত্রের বিরুদ্ধে তারা কেন আক্রমণ করেছিল? কী লাভ হয়েছিল তাদের? লিন্ডন প্রশাসনই কেন এতো ঝুঁকি নিয়ে সত্য গোপন করেছিল? তাদের লাভই বা কী ছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর আমরা খুঁজব আগামী পর্বে।
ফিচার ইমেজ- smoloko.com