Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রোমের ভেস্টাল ভার্জিন: সর্বোচ্চ স্বীকৃতি নাকি চরম অবমাননা?

রোম নিঃসন্দেহে ইতিহাসের একটি চমকপ্রদ খনি। এর পুরো ইতিহাস জুড়ে যেসব রহস্য আছে, তা নিয়ে বছরের পর বছর গবেষণা করা যাবে; কিন্তু তাও সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে না। প্রাচীন রোমের অসংখ্য ‘অদ্ভুত’ প্রথার একটি হল ভেস্টাল ভার্জিনদের অর্চনা।

রোমান পুরাণ অনুসারে ভেস্টা ছিলেন ঘর, পরিবার ও উনুনের দেবী। তিনি শনি এবং অপসের (উর্বরতার দেবী) কন্যা ছিলেন। যা-ই হোক, রোমে খ্রিস্ট ধর্ম চালু হওয়ার আগপর্যন্ত ভেস্টাই ছিলেন পৌত্তলিক ধর্মানুসারীদের (প্যাগানদের) অন্যতম দেবী। জুন মাসের ৭-১৫ তারিখ পর্যন্ত অনুসারী ও ভক্তরা পায়ে হেটে তার মন্দির রোমান ফোরামে যেতেন দেবীকে বিভিন্ন অঞ্জলি দেয়ার জন্য।

প্রথম রোমান সম্রাট অগাস্টাসের আত্মজীবনী ‘দ্য ডিডস অব দ্য ডিভাইন অগাস্টাস’ এ বলা হয় প্রাচীন রোমে ৪টি প্রভাবশালী যাজকসম্প্রদায় ছিল- পন্টিফিসিস, অগারস, কুইণ্ডেসিমিভরি ও সেপ্টেমিভ্রি। কিন্তু এছাড়াও আরেকটি জনপ্রিয় যাজক শ্রেণী ছিল, যারা ভেস্টাল ভার্জিন নামে পরিচিত ছিল।

এই যাজকশ্রেণীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল এর সদস্য কেবল নারীরাই হতে পারত। কিন্তু যে-সে নারী নয়, ছিল কিছু অত্যাবশ্যকীয় শর্তও। বাবা-মা দুজনকেই বেঁচে থাকতে হবে, মেয়েকে অবশ্যই পেট্রিসিয়ান পরিবারের হতে হবে (অর্থাৎ যারা নগরের রাজনৈতিক কাজের সাথে সরাসরি জড়িত)। ৬-১০ বছরের মেয়েদের মধ্য থেকেই পন্টিফিক্স মেক্সিমাস (যাজকদের প্রধান) ভেস্টাল ভার্জিনদের নির্বাচন করতেন।

কিন্তু এই ভার্জিনদের কাজ কী ছিল?

তেমন কিছুই না! কিন্তু আবার ধরতে গেলে অনেক বড় দায়িত্বই ছিল তাদের ঘারে। দেবী ভেস্টার কোনো আকার ছিল না; তিনি ছিলেন প্রতীকী। তার মন্দিরে জ্বলত এক আগুন। এই আগুনের পরিচর্যা ও একে আজীবন টিকিয়ে রাখাই ছিল ভেস্টালদের কাজ।

কী এমন আছে এই আগুনে?

রোমানদের কুসংস্কার। রোমের সাতজন রাজার মধ্যে দ্বিতীয় এবং অন্যতম প্রভাবশালী রাজা ছিলেন নুমা পম্পিলিয়াস। সাত রাজার মধ্যে একমাত্র তিনিই সবচেয়ে ধার্মিক ছিলেন। যুদ্ধপ্রবণ রোমানদের শান্তির পথে আনার প্রচেষ্টা হিসেবে তিনি বহু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও যাজক সম্প্রদায় গড়ে তোলেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ভেস্টালদের মন্দির।

ভেস্টাল মন্দির; Source: pinterest.com

দেবতাদের ক্ষমতায় বিশ্বাসী রাজা নুমার আদেশে রোমে যিশুর জন্মের সাতশ বছর আগে ভেস্টাল ভার্জিনদের এই কাল্ট প্রতিষ্ঠিত হয়। বারংবার যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত রোমের ‘সুরক্ষার প্রতীক’ ধরে নেয়া হয় এই ভেস্টাল/ভেস্টিলিয়াদের। মনে করা হত, যতদিন ভেস্টার মন্দিরের এই পবিত্র আগুন জ্বলবে, ততদিন রোম অক্ষয় থাকবে।

নুমা পম্পিলিয়াস; Source: pinterest.com

আমরা সকলেই জানি, সৃষ্টির শুরু থেকেই আগুনের গুরুত্ব কতটুকু। রোমানরা আগুনের সৃষ্টিশীল ক্ষমতাকে না দেখে শুধু এর ধ্বংসাত্মক দিকটির কথা ভাবত এবং দেবী ভেস্টাকে, যিনি কিনা নিজেই ‘আগুন’, তাকেও ভয় করত। তাদের মতে, আগুন থেকে যেহেতু কিছু সৃষ্টি হয় না, তাই এর পরিচর্যাকারীরা হবে সেসব নারী, যারা জন্মদানে অক্ষম (যেহেতু তারা সতী)। তাদের গঠন হবে আদর্শিক, নিখুঁত এবং তারা হবে সাধারণের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে, যা অনেকটাই আগুনের বৈশিষ্ট্য।

তাদের দায়িত্ব ও সুযোগ-সুবিধা

যেহেতু ভেস্টালদের স্বয়ং রোমের সুরক্ষার প্রতীক মনে করা হতো, রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে তাদের ক্ষমতা ছিল সে সময়ের অন্য সব রোমান নারীর চেয়ে অনেক বেশি। তাদের মুখ্য দায়িত্ব ছিল পবিত্র আগুন রক্ষা করা, তবে গ্রিক লেখক লুসিয়াস মেট্রিয়াস প্লুটার্ক (Plutarch) বলেন, এই ভার্জিনরা ছিল পবিত্র গোপন তথ্যের বিশ্বস্ত রক্ষক। সম্রাট জুলিয়াস সিজার, সম্রাট অগাস্টাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উইল সংরক্ষণের দায়িত্বও তাদের ছিল।

এছাড়াও মন্দিরের ভেতর পরিষ্কার রাখা, ধর্মীয় অর্চনা সম্পন্ন করা, মলা সালসা নামের একধরনের লবণাক্ত ময়দা তৈরি করা, যা ভক্তদের আনা অঞ্জলির উপর ছিটানো হতো- ইত্যাদি কাজ তারা করত।

আগুনের পরিচর্যারত ভেস্টেলরা Source: talesofrome.com

নুমা পম্পিলিয়াসের সময় শুধু দুজন নারীকে এই পদে নিয়োগ দেয়া হয়- গেগানিয়া ও ভেরেনিয়া। তাদের পর আসে কোনেলিয়া ও টারপিয়া নামে দুজন। রাজা সারভিয়াস টালিয়াসের সময় ভার্জিনদের সংখ্যা বেড়ে হয় ৪ জন, এরপর আরও কিছু সময় পরে সংখ্যা বেড়ে হয় ৬ জন। এই ৬ জনের কেউ মারা গেলে বা দণ্ডপ্রাপ্ত হলে পুনরায় ৬-১০ বছর বয়সী কোনো ভেস্টালকে নিয়োগ দেয়া হতো।

ভেস্টালরা রাজনৈতিক ক্ষমতা ভোগ করত, কিন্তু তারা ঠিক সেই অর্থে রাজনীতিবিদ ছিল না। তারা ঐ সময়ের পুরুষ পুরোহিতের থেকেও সম্পূর্ণ আলাদা থাকত। সুবিধা বলতে তারা পেত রাজ্যে প্রকাশ্যে চলাফেরার স্বাধীনতা, বিভিন্ন থিয়েটারে সংরক্ষিত প্রথম সারির আসন, আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে জবানবন্দী দেয়ার অধিকার। আজ থেকে ২,৫০০ বছর পূর্বে একজন নারী হিসেবে এর চেয়ে বেশি স্বাধীনতা কেউ কল্পনাও করতে পারত না।

ভেস্টালদের সময়সীমা

সতীত্ব ভেস্টাল নারীদের অন্যতম প্রধান শর্ত হলেও তারা আমরণ সতী থাকতে বাধ্য ছিল না। সাধারণত একজন ভেস্টালের কার্যকাল ৩০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী থাকত। ১০ বছর করে ৩০ বছরকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হতো- প্রথম দশ বছর তারা শিক্ষানবিশ হিসেবে উচ্চপদস্থ ভেস্টালের দায়িত্বে থাকে। পরের দশ বছর তারা পূর্ণাঙ্গ ভেস্টাল হিসেবে যাবতীয় কাজ করবে এবং শেষ দশ বছর সদ্য আসা অন্য ভেস্টালদের প্রশিক্ষণ দেবে।

মন্দির পরিষ্কার করছে ভেস্টালরা; Source: talesofrome.com

৩০ বছরের কার্যকাল শেষ হওয়ার পর তারা চাইলে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেন অথবা আজীবন কুমারীও থেকে যেতে পারে।

সে সময় বিবাহিত নারীদের জীবন ছিল বাধা বিপত্তিতে জর্জরিত, স্বামীর অধীনস্থ থাকার চেয়ে তখন ভেস্টালদের অংশ হওয়ার স্বপ্ন দেখত অনেকে। দীর্ঘ ৩০ বছর সাংসারিক দায়িত্বমুক্ত প্রাক্তন ভেস্টাল ভার্জিনরাও ঠিক ফিরে যেতে চাইত না কোনো বন্ধনে। অন্যদিকে, বিবাহের পাত্রী হিসেবে একজন প্রাক্তন ভেস্টালকে পাওয়া ছিল পুরুষদের জন্য সৌভাগ্য ও গর্বের বিষয়।

ভেস্টালরা সে সময় রোমান পাদ্রীদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল। কেন? কারণ তাদের পরিচর্যায় থাকা সে আগুনের উপরই রোমের ভাগ্য নির্ভরশীল ছিল। কোনো দাসকে যদি কোনো ভেস্টাল ছুঁয়ে দিত, তাহলে তাকে মুক্ত করে দেয়া হতো, এমনকি অপরাধী শাস্তি পাওয়ার আগে যদি এদের কারো মুখদর্শন করতে পারত তাহলে তাদের অপরাধও ক্ষমা করে দেয়া হতো।

আসলেই তারা কতটুকু ক্ষমতাশালী ছিল?

শুনে মনে হতে পারে যে ভেস্টালরা সেই কয়েক হাজার বছর আগেই ফেমিনিজম বা নারীবাদের পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে গেছেন। কিন্তু বাস্তবতা ঠিক সেরকম ছিল না। সমাজ ও রাষ্ট্রে তাদের অবস্থান যতটা না প্রশাসনিক ছিল, তার চেয়ে বেশি ছিল ধর্মীয় তথা বিমূর্ত। তাদের ক্ষমতা ততক্ষণ পর্যন্তই স্থায়ী ছিল যতক্ষণ পর্যন্ত মন্দিরে ভেস্টার আগুন প্রজ্বলিত থাকে। কোনো কারণে আগুন নিভে গেলে বিনিময়ে তাদেরকে সহ্য করতে হতো নির্মম সব শাস্তি।

কোনো ভেস্টাল ভার্জিন যদি তাদের দায়িত্ব পালনে অপরাগ হতো, তার সতীত্ব হারাতো অথবা দেবী ভেস্টার অসন্তুষ্টির কারণ হতো, তাহলে তাকে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত চাবুক মারা হতো। আইনানুযায়ী আবার কোনো ভেস্টালের গায়ের রক্ত বের করা যেত না। সমাধান হিসেবে তাই জীবন্ত পুঁতে ফেলার নিয়ম করা হয়েছিল। আইনে আরেক জায়গায় বলা ছিল, কাউকেই রাষ্ট্রীয় সীমানায় জ্যান্ত পুঁতে ফেলা যাবে না। কিন্তু পাদ্রীরা তার সমাধানও বের করলেন। শহর থেকে দূরে একটি গর্তে একটি বিছানা ও কয়েকদিনের খাবার সহ পুঁতে ফেলা হতো তাদের। এভাবেই না খেয়ে ধীরে ধীরে তারা মৃত্যুবরণ করত। ভেস্টাল থাকা অবস্থায় কারো সন্তান জন্ম হলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হতো আর বাচ্চাকে নদীতে ফেলে দেয়া হতো।

প্রায় এক হাজার বছর স্থায়ী এই কাল্টের ১০ জন নারী সতীত্ব হারানোর ‘অপরাধ’ করেন এবং এমন শাস্তি ভোগ করেন। বাকি সব ক্ষেত্রেই ভেস্টালরা সচেতনতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করে যান। অবশেষে ৩৯৪ খ্রিষ্টাব্দে ১ম থিওডোসিয়াস রোমে খ্রিস্টধর্ম প্রচলন করে এই ভেস্টাল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেন এবং রোমের সেই পবিত্র আগুনও নিভিয়ে দেন।

তথ্যসূত্র:

Kroppenberg, Inge Law, Religion and Constitution of the Vestal Virgins (pp. 418-422)

Retrieved on: 11/1/2017.

ফিচার ইমেজ- talesofrome.com

Related Articles