যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের উত্তরে চেরিং ক্রস রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরে মিডলসেক্সের অন্তর্গত একটি ছোট গ্রাম পিনার। ১৯৪৭ সালের ২৫ মার্চ, এই গ্রামের এক দম্পতি স্ট্যানলি ডোয়াইট ও শিলা ইলিনের কোল জুড়ে এলো এক ফুটফুটে পুত্র সন্তান। নাম রাখা হলো রেজিনাল্ড কেনেথ ডোয়াইট।
ডোয়াইটের বয়স তখন ৩। একদিন সকালবেলা ডোয়াইটের পিতামাতা লক্ষ্য করলেন কে যেন ঘরের পিয়ানোটিতে বিখ্যাত ‘দ্য স্কেটারস ওয়াল্টজে’র সুর অনুকরণ করে বাজাচ্ছে। কাছে গিয়ে দেখতে পেলেন শিশু ডোয়াইট, যার কিনা তখনো পিয়ানোর হাতেখড়িও হয়নি, অদ্ভুত সুন্দর সুরে বাজিয়ে চলেছে। তাদের ধারণা, জন্মগতভাবেই সংগীতের আশীর্বাদপুষ্ট হয়েই জন্মেছিলেন ডোয়াইট। আর এই ধারণাকে সম্পূর্ণ সত্য প্রমাণিত করে পৃথিবীর বুকে অসাধারণ সব গান উপহার দিয়ে হয়ে উঠলেন অসম্ভব প্রতিভাবান গায়ক, সুরকার, গীতিকার ও পিয়ানো বাদক স্যার এলটন হারকিউলিস জন বা সংক্ষেপে এলটন জন।
প্রথম অ্যালবাম মুক্তি পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এলটন সকলের কাছে ‘রেজি’ নামেই পরিচিত ছিলেন। প্রথম অ্যালবাম মুক্তির পূর্বে সংগীত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের পরামর্শে রেজি তার নাম পরিবর্তন করে রাখলেন এলটন জন। মূলত সেক্সোফোন বাদক এলটন ডিন এবং জন বাল্ড্রির নাম একত্র করে নাম রাখা হয় এলটন জন।
তবে এলটনের শৈশব মোটেই সুখকর ছিল না। বাড়িতে পারিবারিক অশান্তির কারণে নিজেকে সবসময় একাকী মনে করতেন। এই একাকীত্বে একমাত্র বন্ধু ছিল তার পিয়ানো। পিয়ানোর কাছে এলেই তিনি হারিয়ে যেতেন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক জগতে। যেকোনো গান বা সুর শুনলেই খুব সহজে তুলে ফেলতে পারতেন পিয়ানোতে। পিয়ানোর প্রতি ভালোবাসা দেখে ৭ বছর বয়সে এলটনের জন্যে পিয়ানো শিক্ষিকা নিয়োগ করা হয়।
এগারো বছর বয়সে রয়্যাল একাডেমি অফ মিউজিক হতে এলটন জুনিয়র বৃত্তি লাভ করেন। এলটনের পিয়ানো বাজানোর প্রতিভা দেখে একাডেমির শিক্ষক-শিক্ষিকারা মুগ্ধ হয়ে যেতেন। পরবর্তী চার বছর ধরে এলটন এই প্রতিষ্ঠান হতে সংগীতের উপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণ করেন। এই সময়টিতে তিনি বিভিন্ন ধরনের কর্ড, নোট ও স্কেল বাজানোর জ্ঞানার্জন করেন যা পরবর্তীতে তার সংগীত জীবনকে আরো বর্ণময় করে তোলে।
পঞ্চাশের দশকে যুক্তরাজ্যের সংগীতজগতে রক এন্ড রোলের আবির্ভাবের ফলে যুবসমাজে সংগীত নিয়ে ধারণা অনেকটাই পাল্টে যায়। এলটন জনকেও সংগীতের এই ধরন বেশ মোহিত করে।
১৯৬৪ সালে এলটন ও তার বন্ধুরা মিলে নিজেদের ব্যান্ড ‘ব্লুসোলজি’ গঠন করলেন। তারা লন্ডনের উত্তর-পশ্চিমের বিভিন্ন পাব বা বারে নিয়মিত বাজাতে লাগলেন। রক এন্ড রোল থেকে শুরু করে বুগি-উগি, জ্যাজ, ব্লুস খুব সহজেই বাজিয়ে ফেলতে পারতেন এলটন।
এলটনের বয়স যখন ১৭, তখন সঙ্গীতকেই নিজের ধ্যান-জ্ঞান মনে করে পড়ালেখার পাট চুকিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলেন। সংগীতের প্রতি এলটনের আসক্তির কথা বিদ্যালয়ের সকলের জানা ছিল। এলটনের বিদ্যালয় ত্যাগ করার ব্যাপারটি জানার পর বিদ্যালয়ের প্রধান তাকে আশীর্বাদ করলেন এবং খুব মনোযোগের সাথে কাজ করার উপদেশ দিলেন।
১৯৬৫ সালে ব্লুসোজির প্রথম গান ‘কাম বেক বেবি’ মুক্তি পায়, যাতে কন্ঠ দেন ডোয়াইট বা এলটন জন। ১৯৬৬ সালে ব্যান্ডটি সঙ্গীত পরিচালক লং জন বলদ্রির পরিচালনায় দ্য মার্কু ক্লাবে অনেকবার সঙ্গীত পরিবেশন করে।
কিন্তু শুধুমাত্র ব্যান্ডের অন্য সদস্যদের সাথে পিয়ানো বাজিয়ে যেন মন ভরছিল না এলটনের। নিজের মধ্যে আরো বড় কিছু করার তাগিদ অনুভব করছিলেন সবসময়। নিজেকে আর ব্যান্ডের সাথে আটকে রাখলেন না তিনি। নেমে পড়লেন সংগীতে এক নতুন যুদ্ধ জয়ের পথে।
এই সময় একটি বিজ্ঞাপনের কাজ করতে গিয়ে পরিচয় ঘটে বার্নি তাওপিন নামে ১৭ বছর বয়সী এক যুবকের সাথে। যুক্তরাজ্যের উত্তরে ল্যাঙ্কাশায়ার হতে গীতিকার হওয়ার স্বপ্নে লন্ডনে আসেন বার্নি। অসম্ভব সাহিত্যপ্রেমী এবং বব ডিলানের ভক্ত এই বন্ধুটিকে পেয়ে এলটন যেন তার সংগীতের সহযোদ্ধাকে খুঁজে পেলেন। দুজনেই খুব লাজুক প্রকৃতির হওয়াতে অল্প সময়ের মধ্যেই ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো।
১৯৬৭ সাল থেকে এলটনের জন্যে বার্নির গান লেখা শুরু। এই পর্যন্ত এলটনের অসংখ্য গানের কথা লিখেছেন তিনি। প্রায় ৩০টির উপর অ্যালবামে একসাথে কাজ করেছেন এই বন্ধু যুগল। তবে মজার ব্যাপার হলো কখনো এলটনের সাথে একই কক্ষে বসে কোনো গান লেখা হয়নি বার্নির। বার্নি তার মনের কথা, আবেগ, অনুভূতি ফুটিয়ে তুলতেন তার লেখায়। অন্যদিকে এলটন সেই কথাগুলোকে নিজের জীবনের রসদ হিসেবে সুর করতেন হরিহর আত্মার বন্ধনে।
১৯৬৯ সালে স্কটিশ গায়িকা লুলুর জন্যে দুজনে মিলে লিখলেন ‘আই কান্ট গো অন লিভিং উইথআউট ইউ’। এরপর আরো কিছু প্রতিষ্ঠিত গায়কের জন্যে দুজনে গান লিখেন। কিন্তু কোনোটিই তেমনভাবে সাড়া ফেলতে পারেনি সেসময়।
তবে দুজনের নিজেদের ক্ষমতার উপর অনেক দৃঢ় বিশ্বাস ছিল। অপেক্ষায় ছিলেন একটি সুবর্ণ সুযোগের। অতঃপর যুক্তরাজ্যের অন্যতম সংগীত প্রযোজনা সংস্থা ডিক জেমস মিউজিকের প্রযোজনায় ১৯৬৯ সালের জুন মাসে মুক্তি পেল এলটনের প্রথম একক অ্যালবাম ‘এম্পটি স্কাই’।
কিন্তু অডিও বাজারে অ্যালবামটি মোটেও ব্যবসাসফল হতে পারেনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও এলটন থেমে থাকেননি। পরবর্তীতে বার্নির আরো সুগঠিত লেখা এবং এলটনের পরিণত সুর নিয়ে বিশাল বাজেটের কাজে নামলেন এলটন। ডি.জি.এম এর স্টুডিওতে গানগুলো রেকর্ড করা হয়। ১৯৭০ সালে ‘এলটন জন’ নামে অ্যালবামটি প্রকাশ করা হয়। সেই একই বছর যুক্তরাষ্ট্রের সংগীত প্রযোজনা সংস্থা ইউনি রেকর্ডস হতে অ্যালবামটি এলটনের প্রথম অ্যালবাম হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পায়।
যুক্তরাষ্ট্রে অ্যালবামটির ‘ইওর সং’ গানটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এলটনকে আমন্ত্রণ জানানো হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এলটন তখন নিজের ব্যান্ড ‘এলটন জন ব্যান্ড’ তৈরি করলেন। যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলসে পদার্পণ করার পর থেকে যেন এলটন নিজের খ্যাতিকে প্রথম স্পর্শ করলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রদেশে এলটন জন নিজের ব্যান্ডের সাথে সংগীত পরিবেশন করতে থাকেন। এ সময় এলটন তার তৃতীয় অ্যালবাম ‘টাম্বালউড কানেকশন’ এর কাজে হাত দেন। যুক্তরাষ্ট্রের জীবন প্রণালী এবং সমসাময়িক চিন্তাধারা উঠে আসে এই অ্যালবামটিতে।
১৯৭১ সালে এলটন ও বার্নি যুগলের চতুর্থ অ্যালবাম ‘মেডম্যান অ্যাক্রস দ্য ওয়াটার’ মুক্তি পায়। অ্যালবামটির ‘টাইনি ডান্সার’, ‘লেভন’ এবং ‘মেডম্যান অ্যাক্রস দ্য ওয়াটার’ গানগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
এরপর শুরু হয় এলটন জনের সংগীত জগতে লাগামহীন যাত্রা। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সালের মধ্যে মোট ৭টি অ্যালবামের কাজ করেন এলটন। অ্যালবামগুলোর বেশ কিছু গান, যেমন- হনকি কেট, রকেট ম্যান, মোনালিসাস এন্ড ম্যাড হেটারস, ক্রোকোডাইল রক, ডেনিয়েল, কেন্ডেল ইন দি উইন্ড, দি বিচ ইস বেক, গ্রিমসবাই, ডোন্ট লেট দি সান গো ডাউন অন মি, ক্যাপ্টেন ফেন্টাসটিক, সামওয়ান সেভড মাই লাইফ, ফিলাডলফিয়া ফ্রিডম, আই ফিল লাইক এ বুলেট, ডোন্ট গো ব্রেকিং মাই হার্ট (কিকি ডি’র সাথে দ্বৈত), বর্ডার সং ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
খুব অল্প সময়ের মধ্যে পপ তারকার খ্যাতি পান এলটন জন। খ্যাতির সাথে সাথে তার অনুষ্ঠানের পরিবেশনায় আসে লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন। নিজের খোলস থেকে বের হয়ে যেন মঞ্চে নিজেকে উজাড় করে দেন তিনি। অদ্ভুত সব পোশাক গায়ে জড়িয়ে মঞ্চে উপনীত হতেন এলটন জন। তার অতিরিক্ত সাজপোশাকের জন্যে সকলের কাছে ‘ফ্লেমবয়েন্ট পারফরমার’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেন।
এ যেন তার নিজের চরিত্র থেকে দূরে সরে গিয়ে অন্য কোনো ব্যক্তি। ধীরে ধীরে কাছের মানুষের সাথে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে তার। বন্ধু হয়ে ওঠে কোকেন, গাজা, নানা মাদকদ্রব্য আর অ্যালকোহল। এই সময় অনেকটাই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন এলটন। বিষণ্নতা বাসা বাঁধে তার মনে। সবকিছু পেয়েও যেন না পাওয়ার গ্লানি ভিড় করেছিল এলটনের জীবনে। তাই হয়তো অতিরিক্ত মাত্রার ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন এই গুণী শিল্পী।
কিন্তু প্রকৃতি তার ইচ্ছাশক্তিকে হার মানিয়ে বাঁচিয়ে রাখল সংগীতের জগতে তার অবদানকে আরো বিস্তৃত করার উদ্দেশ্যে। এরপর শুরু হলো এলটনের নতুন করে পথচলা। ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর প্রায় একটি করে অ্যালবাম উপহার দিয়েছেন তার অগণিত শ্রোতাদের। এর মধ্যে ‘ব্রেকিং হার্ট’ (১৯৮০), ‘টু লো ফর জিরো’ (১৯৮৩), ‘আইস অন ফায়ার’ (১৯৮৫), এবং ‘স্লিপিং উইথ দ্য পাস্ট’ (১৯৮৯) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে স্লো ডাউন জর্জিয়া, নিকিতা, ব্লু আইস, আই এম স্টিল স্ট্যান্ডিং, ব্লু এভিনিউ, সং ফর গাই, দি ওয়ান, আই ওয়ান্ট লাভ, মেড ইন ইংল্যান্ড, বিলিভ, সার্কেল অফ লাইফ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তবে ভালোবাসার সম্পর্ক ও বিচ্ছেদ নিয়ে লেখা বার্নির ‘স্যাক্রিফাইস’ গানটি যেন পুরো বিশ্বকে আরেকবার জানান দিয়ে গেল এলটন জনের উপস্থিতি। বিংশ শতাব্দীর অধিকাংশ তরুণ সমাজের কাছে এখনো এলটন জন বহুল পরিচিত তার এ গানটির জন্যে। গানটি ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত ‘স্লিপিং উইথ দ্য পাস্ট’ অ্যালবামের গান।
তবে এলটনের ব্যক্তিগত জীবন ছিল অনেক উত্থান-পতনে পরিপূর্ণ। ১৯৮৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির ভ্যালেন্টাইন’স ডে-তে এলটন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার রেনেট ব্লাউয়েলকে বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ের চার বছর পরেই তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পরবর্তীতে তিনি প্রকাশ্যে নিজেকে সমকামী হিসেবে দাবি করেন।
১৯৯৩ সালে কানাডিয়ান চিত্রপরিচালক ডেভিড ফার্নিশের সাথে ঘনিষ্ঠ হন। ২০০৫ সাল থেকে তারা একত্রে বসবাস করতে থাকেন। ২০১৪ সালের মার্চ মাসে ইংল্যান্ডে সমকামী বিবাহ বৈধ করার পর সেবছরের ২১ ডিসেম্বর তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেন। ২০১০ সালের ২৫ ডিসেম্বরে সারোগেসি (অন্য কোনো মাতৃগর্ভে জন্মদান) পদ্ধতিতে পুত্র জ্যাকারির জন্ম দেন। এছাড়াও তাদের আরো একটি ছেলে রয়েছে।
সংগীতে শিল্পীর পাশাপাশি এলটন জন দানবীর নামেও খ্যাত। ১৯৮৬ সালে থেকে এলটন জন তার গান পরিবেশনের প্রাপ্ত অর্থের কিছু অংশ এইডস রোগের জনসচেতনতার অংশ হিসেবে দাতব্য তহবিলে জমা করছেন। ১৯৯২ সালে তিনি ‘এলটন জন এইডস ফাউন্ডেশন’ গঠন করেন। এছাড়াও তিনি ২৪টির উপর দাতব্য সংস্থার সাথে সরাসরি জড়িত আছেন। পাশাপাশি তার খেলাধুলার প্রতি অসম্ভব আকর্ষণ রয়েছে। তিনি রকেট ক্লাবেরও প্রতিষ্ঠাতা, যার বিভিন্ন ভাগে রয়েছে রকেট মিউজিক, রকেট স্পোর্টস ও রকেট স্টেজ।
এলটন জন তার এই বর্ণাঢ্য সংগীত জীবনে অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তিনি মোট ১১ বার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের জন্যে মনোনীত হয়েছিলেন, যার মধ্যে ছয়বার বিজয়ী হন। ১৯৯৫ সালে তিনি সংগীতে অস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি ১২ বার আইভর নোভেলো অ্যাওয়ার্ড এবং একবার টনি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন।
এলটন জনের সংগীত জীবন নানা রঙে বর্ণিল। রক, গ্ল্যাম রক, সফট রক, পপ রক এবং রিদম এন্ড ব্লুজ গানের ধরনের প্রতি তার ঝোঁক ছিল বেশি। তার পুরো সংগীত জীবনে ২৫০ মিলিয়নের অধিক গানের রেকর্ড বিক্রয় হয়। তাই এলটনকে বিশ্বের সফলতম ব্যবসাসফল সংগীত শিল্পীদের মধ্যে একজন হিসেবে ধরা হয়। ১৯৯৭ সালে প্রিন্সেস ডায়ানার শোকসভায় শ্রদ্ধাঞ্জলী দিতে পিয়ানোর সাথে নতুন করে গাইলেন ‘ক্যান্ডেল ইন দ্য উইন্ড’। গানটি সেবছর ৩৩ মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি হয়। ১৯৭৩ সালে গানটি মেরিলিন মনরোর স্মরণে রচনা করা হয়েছিল, যা ‘গুড বাই ইয়েলো ব্রিক রোড’ অ্যালবামে ছিল।
এছাড়াও সংগীতে ও দাতব্যে তার অসামান্য কীর্তির জন্যে ১৯৯৮ সালে দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছ থেকে নাইট উপাধি অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি সিবিই বা ‘কমান্ডার অব দ্য অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার’ পদকে ভূষিত হয়েছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে চড়াই-উতড়াই থাকলেও তা তার সংগীত জীবনকে কোনোভাবেই ছুঁতে পারেনি। সংগীতের ব্যাপারে তিনি কখনো নিজের সাথে আপোষ করেননি। পুরো সংগীত জীবনে তার পাশে পেয়েছেন প্রিয় বন্ধু বার্নি তাওপিনকে। দর্শকদের জন্যে তিনি নিয়মিত গান করে গেছেন। ২০১৬ সালে এলটনের ত্রিশতম অ্যালবাম ‘ওয়ান্ডারফুল ক্রেজি নাইট’ প্রকাশিত হয়।
তার এই দীর্ঘ সংগীত জীবনে কখনো খ্যাতিশূন্য হতে হয়নি এলটনকে। পৃথিবীতে খুব অল্প সংখ্যক সঙ্গীতশিল্পী রয়েছেন যারা তাদের সাফল্য এবং জনপ্রিয়তা সর্বদা লালন করতে পেরেছেন। তার অসংখ্য জনপ্রিয় গানের খুব অল্প সংখ্যক গান নিয়েই এই স্বল্প পরিসরে আলোচনা করা সম্ভব হয়েছে। গানের জগতে তাই একজন অসামান্য স্রষ্টা হিসেবে তিনি বিরাজ করে যাবেন তার অসংখ্য ভক্তের হৃদয়ে।
ফিচার ইমেজ- time.com