Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ব্রিটেনের সাংস্কৃতিক গৃহযুদ্ধ: টেডি বয় বনাম পাঙ্ক

পরনে লম্বা ড্রেপ জ্যাকেটের সাথে ড্রেইনপাইপ ট্রাউজার, গলায় ঝুলানো বোলো টাই আর পায়ে গলানো ব্রোথেল-ক্রিপার্সের জুতো। মস্তিষ্কে, হৃৎপিণ্ড আর ধমনীতে কেবলই রক এন্ড রোল। বলছি লন্ডনের টেডি বয়দের কথা। ফ্যাশন, আর সঙ্গীতকে যারা উপজীব্য করেছিল ব্রিটেনের প্রথম সাংস্কৃতিক বিদ্রোহের। মর্ডানিস্টদের আবির্ভাব ও মড বনাম রকারের ঐতিহাসিক দ্বন্দ্বে ষাটের দশক শুরু হতে না হতেই মিইয়ে যেতে থাকেন তারা। টেডদের উত্থান নিয়ে এই সিরিজের প্রথম লেখাটি লেখা হয়েছিল।

আজকের দ্বিতীয় কিস্তিটি মূলত টেডদের দ্বিতীয় জন্মের ওপর। সত্তরের দশকের শুরুতে পুনর্জন্ম ঘটলো তাদের। এ জন্মের শুরুতেই তারা পেয়ে গেলেন এক অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিদ্বন্দ্বী, পাঙ্ক। মজার ব্যাপার হলো, বেশভূষা আর রকপ্রীতির দিক থেকে ভালোরকম সাদৃশ্য ছিলো তাদের। তবু নানা কারণে এ দুয়ের মাঝে তৈরি হয়েছিলো সীমাহীন বৈরিতা।

অন্যদিকে পুনরাবির্ভাবের কৃতিত্ব যে রক্যাবিলি নামক রক সঙ্গীতের উপধারার, সেই রক্যাবিলির সাথেও দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যান টেডরা। কীভাবে পুনর্জন্ম হলো টেডদের, পাঙ্করা এলেন কোত্থেকে, পাঙ্ক বনাম টেড দ্বৈরথের কারণ কী, রক্যাবিলির সাথেই বা বিষয়টি কী- এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আজকের লেখা।

প্রথম প্রজন্মের টেডি বয়েজ; Image Source: Yandex

১৯৫৮ সালের দিকে টেডদের জৌলুশ যখন আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে থাকে, তখন তারা নিজেরাই সরে যেতে থাকেন কাল্ট থেকে। কেউ বিয়ে করে বনে যান সংসারী ভদ্রলোক। কেউ আবার যোগ দেন ‘রকার’দের দলে। রকারদের গায়ে থাকতো লেদার জ্যাকেট, লেভিস জিন্স, সাদা স্কার্ফ, ধাতব চেইন-ব্যাজ ইত্যাদি। রকপাগল এই তরুণেরা দলবেঁধে বাইক নিয়ে বেপরোয়া মহড়া দিত লন্ডনের রাস্তায়। এদের ব্যাপারে এবং মড বনাম রকারদের কিংবদন্তিতুল্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে লেখা হবে পরের কিস্তিতে।

টেডি বয়দের দুঃসময়ে হাল ধরেছিলেন ড্যান কোফির মতো কিছু অন্তঃপ্রাণ টেড। তাই ধুঁকে ধুঁকে টিকে থেকে হলেও ষাটের দশকের কঠিন সময় পার করে দিয়েছিলেন তারা। রাতের পর দিন আসার মতো করে আবার এলো টেডি বয়দের সুদিন। স্পষ্ট করে বলতে গেলে, রক গানের সুদিন। ‘৭৩ এর দিকে আমেরিকার দক্ষিণে শ্রমজীবীদের মুখে তৈরি হওয়া রক্যাবিলি জনরার গান জনপ্রিয় হয় ব্রিটেনে। এটি মূলত রকেরই উপধারা। রক্যাবিলির কল্যাণে ‘ব্রেক-থ্রু’ পেয়ে গেলো রক এন্ড রোল।

মূলত প্যারিসভিত্তিক এই রক্যাবিলি শিল্পীদের দাপটেই লন্ডনে জনপ্রিয় হয় জনরাটি; Image Source: Subculture Safari Magazine

সত্তরের দশকটা তারপর শুধুই অর্জনের। জন্ম নিলো ওয়াইল্ড অ্যাঞ্জেলস, রক আইল্যান্ড লাইন, দ্য রায়োট রকার্সের মতো কালজয়ী ব্যান্ড। বিখ্যাত হলেন কার্ল পার্কিন্স, চার্লি ফেদার্স, ওয়ারেন স্মিথ, সনি বার্গেসদের মতো তরুণ গায়কেরা। রক এন্ড রোলের সুসময়ে টেডি বয়রা আবারও সংগঠিত হতে লাগলেন, আবার গায়ে চাপালেন পুরনো ফ্যাশন।

তবে এবারে আর বুড়িয়ে যাওয়া পুরনোরা নয়, এলেন টেডি বয়দের নতুন একটি প্রজন্ম। আগের প্রজন্মের তুলনায় ফ্যাশনেও এবারে এলো কিছু পরিবর্তন। রঙ-বেরঙের মখমল স্যুটের সাথে হাফ-মুন পকেট আর মোড়ানো কলার হলো বেশ জনপ্রিয়। তবে ক্লিফড চুলের ধারা ঠিকই থাকলো।

নয়া প্রজন্মের টেড; Image Source: The Great British Teddy Boy

নতুন জন্ম টেডদের ‘উপহার’ দিলো নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী, পাঙ্ক। ১৭-১৮ শতকের দিকে ‘পাঙ্ক’ শব্দটি পতিতা বা সমকামীর সমার্থক ছিলো। বিংশ শতকে কখনো বাচ্চাদের বোঝাতে, কখনো কিশোর-অপরাধী বোঝাতে ব্যবহৃত হত পাঙ্ক শব্দটি। ১৯৭১ সালে ক্রিম ম্যাগাজিনে সর্বপ্রথম ‘পাঙ্ক রক’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। পাঙ্ক রক মূলধারার রক এন্ড রোলের চেয়ে ছিলো একটু আলাদা। আরো বেশি উগ্র ভাবধারার, সমাজের প্রচলিত সামাজিক-রাজনৈতিক কাঠামোর অধিকতর বিরোধিতাকারী। পাঙ্ক ম্যাগাজিনের সম্পাদক জন হমস্ট্রমের মতে,

এ হলো দুর্বল মানুষগুলোর গাওয়া রক এন্ড রোল। যাদের গানে তেমন দখল না থাকলেও নিজেদের ভাবগুলো প্রকাশ করবার তীব্র তাগাদা অনুভব করেন।

সত্তরের দশকের শুরুর দিকে আমেরিকার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে পাঙ্ক রক জনপ্রিয় হতে থাকে। এ সূত্রে ব্রিটেনে তৈরি হয়ে যায় নয়া সাবকালচার-পাঙ্ক। কাল্টই বলা চলে একে। প্রচলিত রাজনীতির বিরুদ্ধে নিম্নবিত্ত পাঙ্কদের অবস্থানকে উগ্র বামপন্থী আচরণের সাথে মেলানো যেতে পারে। তাদের নাইলিস্ট (Nihilist) বা ধ্বংসবাদী ভাবভঙ্গীর রোমাঞ্চই পাগলের মতো টানছিলো তরুণদের। নিকোটিন কিংবা অ্যালকোহলের সঙ্গে পাঙ্ক রকের নেশায় বুঁদ হয়ে পাঙ্করা “কোনো লাভ নেই”, “কিচ্ছু হবে না”, “ভবিষ্যৎ অন্ধকার”, “চুলোয় যাক সব”- এসবই আউড়াতো।

অল্প সময়েই পাঙ্ক সাবকালচার বেশ বড় আকার ধারণ করে; Image Source: Fire Cracker 500

এরা গ্যারাজ মেকানিকদের মতো বেশ ধরতে পছন্দ করতেন। দুমড়ানো টিশার্টের ওপর টেডদের মতো চাপাতেন বাইক-উপযোগী লেদার জ্যাকেট। হাতে থাকতো কাঁটাযুক্ত ব্যান্ড, গলায় মোটা চেইন। পায়ে থাকতো চাক টেইলর্স ব্র্যান্ডের স্নিকার। ফ্যাশনের দিক থেকে তারা গুরু মানতেন র‍্যামোনেস ব্যান্ডকে।

নির্ঝঞ্ঝাট হিপি আদর্শের বিপরীত আচরণে যেন আরাম পেত পাঙ্করা। হিপি, গ্ল্যাম-রকাররা রাখতো বড় সিল্কি চুল। তাই পাঙ্করা আলুথালু চুলের কাটিংকেই বেছে নিলো- কখনো বা সজারুর কাঁটার মতো, কখনো বর্তমান মোহকের মতো, কখনো অসমান যেমন খুশি তেমনভাবেই।

বড় চুল ব্যতীত র‍্যামোনেস ব্যান্ডের মাথা থেকে পা অবধি ফ্যাশনকেই গ্রহণ করেছিলো পাঙ্করা; Image Source: New York Times

‘সেক্স পিস্টলস’ নামে ১৯৭৫ সালে লন্ডনে জন্ম নেয়া পাঙ্ক রক ব্যান্ডটি সাড়া ফেলে দেয় সবখানে। এমন একটি স্লোগান ছিলো, “Only anarchist are pretty” বা “কেবল নৈরাজ্যবাদীরাই সুন্দর”। এই স্লোগানটি ধার করা হয়েছিলো সেক্স পিস্টলসের গান থেকেই।

পাঙ্কদের মধ্যে প্রভাববিস্তারকারী সেই ব্যান্ড; Image Source: Best Classic Bands

ব্রিটেনে ম্যালকম ম্যাকল্যারেন, ভিভিয়ান ওয়েস্টউড পাঙ্ক সাবকালচারের অগ্রপথিক হওয়ায় তাদেরকেই ভীষণরকম অনুসরণ করতো বাকিরা। এই দুই ব্যক্তি একটা সময় অশ্লীল টিশার্ট পরে লন্ডনের প্রকাশ্যে বের হতে লাগলেন। কোনো টিশার্টে আঁকা সিরিয়াল রেপিস্টের মুখ, কোনোটায় রানী এলিজাবেথের ঠোঁট আটকানো সেফটি পিন দিয়ে, কোনোটায় সঙ্গম করছে মিকি আর মিনি মাউজ ইত্যাদি। এই বেপরোয়াপনা দ্রুতই ছড়িয়ে গেলো পাঙ্কদের মাঝে।

গালিগালাজ, অশ্লীল ছবিওয়ালা টিশার্ট পরে মধ্যাঙ্গুল উঁচিয়েই যেন সবসময় চলতে হবে তাদের। তারা মাঝেমধ্যে স্লোগান বানাতেন নিজেদের জন্য, তারপর টিশার্টে ছেপে সকলে মিলে পরে ঘুরতেন। অনেক পাঙ্ক নাৎসিদের স্বস্তিকা চিহ্নও ধারণ করতেন। অনেকটা গায়ের জোরে সকলের চেয়ে আলাদা হতেই যে এসব করতেন, তা বোঝা যেত এসব করার পক্ষে তাদের যুক্তি দেখলে। তারা বলতেন, “We do it because its anti-mum & anti-dad thing”;  হ্যাঁ, ডার্ক হিউমারও ভালোই জানতেন তারা।

স্লোগানওয়ালা শার্ট, ফ্যাশন না প্রতিবাদ? Image Source: Ornot Magazine

নিউ ইয়র্কের পাঙ্ক আর লন্ডনের পাঙ্কদের মধ্যে পার্থক্য ছিলো বেশ। নিউ ইয়র্কের পাঙ্করা একটু শৈল্পিকভাবে প্রতিবাদ করতেন, রয়েসয়ে আর কী। অন্যদিকে লন্ডনের পাঙ্করা সরাসরি শ্রেণী বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন, আওয়াজ তুলেছিলেন। সমস্যা হলো এই পাঙ্করা যখন হুট করে এলেন, আর এসেই কোপ লাগালেন সামাজিক ব্যবস্থার অনিয়মে, মিডিয়া লুফে নিলো এদের। পোশাকে ও মননে এদের ভয়াবহ বিদ্রোহের রোমান্টিসিজমে মাতছিলো সবাই।

টেডদের প্রথম প্রজন্ম মিডিয়ায় কাটতি পেলেও দ্বিতীয় প্রজন্ম পুরো পাদপ্রদীপের আলোই হারিয়েছিলো পাঙ্কদের কাছে। তবে টেডদের প্রথম প্রজন্ম যে কাটতি পেয়েছিলো মিডিয়ায়, সেটিও অবশ্য সুখকর নয়। পঞ্চাশের দশকে চুলে একটু বাহারি কাটিংওয়ালা অপরাধী হলেই নাকি তাকে ‘টেড’ তকমা লাগিয়ে দিত মিডিয়া! তাই স্বাভাবিকভাবেই পাঙ্কদের নিয়ে মিডিয়ার আদিখ্যেতা সহ্য হচ্ছিলো না টেডদের। এমনকি এসব ক্ষোভ-অভিমান নিয়ে বিবিসি কার্যালয় অভিমুখে বাজনামুখর মিছিলও (১৯৭৬) করেছিলেন টেডরা। আত্মসম্মানের দ্বন্দ্বে টেডদের প্রতিপক্ষ বনে যায় পাঙ্করা।

মিছিল যখন বিবিসির সামনে; Image Source: The Edwardian Teddy Boy

ওপরে পাঙ্ক রকের সংজ্ঞায়নে নিশ্চয়ই বুঝেছেন, পাঙ্ক রক ছিলো ‘আনাড়ির রক এন্ড রোল’। মানে, তা ছিলো মূলধারার আভিজাত্য বিবর্জিত। অর্থাৎ রকের দুনিয়াতেও চলে এলো শ্রেণী-সংঘাত, অভিজাত বনাম সাধারণ, টেড বনাম পাঙ্ক। সেই সঙ্গে জ্যাকেট, বাইক, প্যান্ট ইত্যাদি পোশাকে ব্যাপারে টেডদের সাথে সাদৃশ্য ছিলো পাঙ্কের। এই সাদৃশ্যই হয়েছে কাল। কেননা বৈসাদৃশ্য তৈরি করতে পাঙ্করাও খাটিয়েছে গায়ের জোর, ওদিকে নিজেদের ‘বিকৃতি’ হজম করা টেডদের পক্ষেও ছিলো কঠিন

বিখ্যাত টেড বয় জর্জ বলেছেন,

তারা সেফটি পিন লাগিয়ে ড্রেপ জ্যাকেটের জাত মেরেছে। আর ব্রোথেল-ক্রিপার্স জুতোয় রঙও করেছে টেডদের ক্ষ্যাপাতে।  

স্টোরিজ উই কুড টেল বইতে টেড টনি পারসন্স বলেন,

তারা এমনভাবে সাজে, যেন তারা পুরুষই না। খুবই আজব। উদ্ভট। বেখাপ্পা। তারা আমাদের গান, রক এন্ড রোলটাও কপি করেছে, কিন্তু সেটাও তো ঠিকভাবে গায় না।

দ্বৈরথ এমন পর্যায়েই গিয়েছিলো যে, ইন্টারসাবকালচার যুগলদের (টেড ও পাঙ্ক) মধ্যে সম্পর্ক থাকাও হয়ে যায় ট্যাবু। যাদের তবুও সম্পর্ক ছিলো, তারাও একে অপরকে সামাজিকভাবে গ্রহণে করতে সঙ্কোচ বোধ করতেন। টেড তার সঙ্গীকে বলতেন পাঙ্ক-পোশাক ছাড়তে, পাঙ্ক বলতেন টেড-পোশাক ছাড়তে।

পত্রিকাতেও এ দ্বৈরথ নিয়ে এসেছে প্রতিবেদন; Image Source: Punk77

পাঙ্করা ছিলো নিম্নবিত্ত, শেকড়ের ছাপ গর্ব ভরেই তারা রেখেছিলেন নিজেদের ফ্যাশনে। আত্মপরিচয়কে আরো শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে পাঙ্করা শ্রেণী-বৈষম্যের প্রতি প্রবল ঘৃণাভরে দেখিয়েছে বেপরোয়া মধ্যাঙ্গুল। টেডি বয়রাও ছিলো নিম্নবিত্ত। বাবুয়ানা ও আভিজাত্যকে নিজের মতো গ্রহণ করে তারাও ভাঙতে চেয়েছিলেন শ্রেণী বৈষম্যের শিকল, প্রচণ্ড আঘাত করতে চেয়েছিলো উচ্চবিত্তের দম্ভে। কিন্তু এক অভিজাততন্ত্র বা শ্রেণী বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গিয়ে টেডি বয় নিজেই হয়ে পড়েছিলো নয়া রক্ষণশীল-অভিজাত।

যেদিন অভিজাত-মধ্যবিত্তদের এডওয়ার্ডিয়ান পোশাক অনুকরণ করতে গিয়েছিলেন টেডরা, সেদিন উচ্চশ্রেণীস্থরাও আভিজাত্যের ‘জাত মারা’র অভিযোগ করেছিলো টেডদের বিরুদ্ধে। পাঙ্কদের বিরুদ্ধে এবার একই সুর প্রতিধ্বনিত হলো টেডদের কণ্ঠে। মনে করিয়ে দিলো দার্শনিক জেরেমি বেন্থামের কথা। তিনি বলেছিলেন, আজ যে শোষিত, কাল ক্ষমতায় গিয়ে সেই হয় শোষক। এভাবেই টিকে থাকে শোষণের পরম্পরা।

পাঙ্ক; Image Source: Daviant Art

টেডদের রক্ষণশীল উন্ন্যাসিকতার প্রতিপক্ষ যে কেবল পাঙ্করাই হয়েছিলেন, তা নয়। বরং পুনর্জন্মের জন্য যাদের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত ছিলো, সেই রক্যাবিলিকেই অবজ্ঞা করতেন টেডরা। গিটার ব্লুজের আদি-আমেরিকান যোগসূত্র থাকায় রক্যাবিলিকে তারা ‘অবিশুদ্ধ রক’ মানতেন। তাদের আভিজাত্যের মানদণ্ডে পাসমার্ক পেতো না সেটি।

অন্যদিকে ব্রিটেনে অনেক কৃষ্ণাঙ্গ এ ধারাকে জনপ্রিয় করছিলেন। সত্তরের দশকের শেষভাগ তখন। পঞ্চাশের দশকের টেড-প্রজন্ম নটিং হিলের আফ্রো-ক্যারিবিয় অভিবাসীদের নিপীড়ন করলো, পরে সত্তরের নয়া প্রজন্ম কৃষাঙ্গ-যোগ থাকায় রক্যাবিলিকে হেয় করলো; টেডদের উত্তরাধিকার বলিহারি! টেড আর রক্যাবিলিজরা হয়ে যায় ধীরে ধীরে পরস্পরের প্রতিপক্ষ। টেড ডিস্ক জকিরা রক্যাবিলিজ বর্জন করে। বার-পাবগুলোতে প্রায়ই লেগে যেত লড়াই। এর ফলে রক এন্ড রোলের ভেন্যুগুলো একে একে বন্ধ হতে থাকে। ততদিনে পাঙ্ক-টেড লড়াইও ফিকে হয়ে গেছে দুই পক্ষের দুর্বল হয়ে যাওয়ায়।

ব্রিটেনে এখনো অল্পবিস্তর দেখা মেলে শৌখিন টেডদের; Image Source: Vice

মার্গারেট থ্যাচারের আমল এলো তারপর। আয়রন লেডির শাসনকালে সবধরনের সৃজনশীলতাই স্থবির ছিলো প্রায়। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে এসেই চিত্রপট বদলে গেলো। মারমুখো টেডরা ততদিন বুড়িয়ে গেছেন, ওদিকে নতুন প্রজন্ম মোটেও আগ্রহী নয় গানের জগতকে নোংরা লড়াই দিয়ে কলুষিত করতে। জন্ম হলো ‘নিরাপদ’ রক এন্ড রোলের।

ডিস্ক জকিরা ‘৫০ এর ধ্রুপদী পিয়ানো বুগি, ‘৯০ এর জার্মান রক্যাবিলি আর এলভিস প্রিসলির গানই বাজিয়ে গেলো একের পর এক। দ্য ফ্লাইং সসার্স, ক্রেজি ক্যাভান এন্ড দ্য রিদম রকার্সদের মতো ব্যান্ডের সুদিন ফেরায় মধুরেন সমাপয়েৎ হলো সঙ্গীতের একটি কুশ্রী দ্বৈরথের।

অধুনা পাঙ্ক; Image Source: YouTube

এখনো অল্প-বিস্তর পাঙ্কদের দেখা মিলবে লন্ডনে। ওয়েবসাইট খুলে বেশ সংগঠিতভাবে এখনো টেডি বয়রা তাদের গোষ্ঠী সংরক্ষণ করছেন। রক্যাবিলি, রক এন্ড রোলও সুস্থ সহাবস্থান করছে। কেবল হারিয়ে গেছে অসুস্থ দ্বৈরথের ঝাঁঝটুকু। শুধু একটু সেকেলেদের চায়ের আড্ডায় এখনো ঝড় তোলে এসব বৈরিতা। যা হোক, আবারও মনে করিয়ে দেওয়া যাক, কিস্তির পরবর্তী লেখাটি থাকছে ষাটের দশকের বিখ্যাত/কুখ্যাত রকার বনাম মডের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে।

ফিচার ইমেজ: Pinterest

Related Articles