গাড়ির জগতে ফেরারি নামটি এতটাই উজ্জ্বল যে, প্রতিটি গাড়িপ্রেমী মানুষের হৃদয়ে এর স্থান। রুচিশীলতা আর উৎকর্ষের দিক দিয়ে এই ব্র্যান্ড নিজেদের নিয়ে গেছে অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক স্থানে। ভোক্তা সন্তুষ্টির ক্ষেত্রেও তাদের সাফল্য ঈর্ষণীয়। একেকটি ফেরারি যেন গতি, ডিজাইন এবং বিশুদ্ধতার অপরূপ মিশেলে তৈরি। রেসিং ট্র্যাকেও কোনো তুলনা নেই তার। গাড়িপ্রেমীদের মধ্যে ফেরারিকে নিয়ে যে বিশাল মাতামাতি, তা-ই তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে যথেষ্ট।
সব সফল উদ্যোগের পেছনে থাকেন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। মাইক্রোসফটের বিল গেটস, অ্যাপলের স্টিভ জবস, আমাজনের জেফ বেজোস তার জ্বলন্ত উদাহরণ। তেমনি ফেরারি কোম্পানির সাথেও জড়িয়ে আছে এমনই একজন স্বপ্নদ্রষ্টার নাম। তিনি এনজো ফেরারি।
এনজো ফেরারির জন্ম ১৮৯৮ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি, ইতালির মোদেনা শহরে। আর দশটা সাধারণ শিশুর মতোই ছিল তার জীবন। পরিবারের সান্নিধ্যে বেশ কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো। তার বয়স যখন দশ বছর তখন তিনি প্রথমবারের মতো কার রেসিং দেখেন। সময়টা ছিল ১৯০৮ সাল। তিনি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন, অনেকগুলো গাড়ি পরস্পরকে ছাড়িয়ে যাবার অদ্ভুত এক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে গেলেন অসাধারণ এই খেলার। এরপর থেকে তার প্রতিটি দিন কাটতে থাকে কার রেসিংয়ের স্বপ্ন বুকে নিয়ে।
এরই মধ্যে শুরু হয়ে যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। তরুণ এনজো যুদ্ধে যোগদান করেন। ইতালীয় আর্মির একজন সৈনিক হিসেবে যুদ্ধ করেন তিনি। যুদ্ধ শেষে ফিরে আসেন নিজ শহরে। তার তখন একটি কাজ দরকার। কাজের জন্য তিনি আবেদন করেন তৎকালীন গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি ফিয়াটে। কিন্তু ফিয়াট তাকে ফিরিয়ে দেয়। হতাশ এনজো পরবর্তীতে ছোটোখাট একটি মোটরগাড়ি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে কাজ জুটিয়ে নেন।
১৯২০ সালের শুরুর দিকে এনজোর স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়। তৎকালীন বিখ্যাত কোম্পানি আলফা রোমিওতে রেসিং ড্রাইভার হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। সহকর্মী হিসেবে পান তখনকার নামকরা রেসিং ড্রাইভার তাজিও নুভোলারিকে।
১৯২৯ সালে এনজো ফেরারি আলফা রোমিওতে চাকরিরত অবস্থায় ‘স্কুদেরিয়া ফেরারি’ বা ‘টিম ফেরারি (Team Ferrari)’ প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ছিল একটি কার রেসিং গ্রুপ। আলফা রোমিওর নিজস্ব একটি রেসিং ডিপার্টমেন্ট থাকার পরও তারা স্কুদেরিয়াকে অনুমোদন দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্কুদেরিয়ার ড্রাইভারেরা আলফা রোমিওর গাড়ি ব্যবহার করতো। স্বল্প সময়ের মধ্যে টিম ফেরারি আলফা রোমিওর অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়। ফলে ১৯৩৩ সালে আলফা রোমিও তাদের নিজস্ব রেসিং ডিভিশন বন্ধ করে দেয় এবং স্কুদেরিয়া ফেরারিকেই কোম্পানির প্রধান রেসিং বিভাগে উন্নীত করে।
এমন অবস্থা চলে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত। সেই বছর আলফা রোমিও ‘আলফা কর্স’ নামে তাদের নিজস্ব রেসিং ডিপার্টমেন্ট পুনরুজ্জীবিত করে এবং স্কুদেরিয়া ফেরারি বন্ধ করে দেয়। এনজো আলফা কর্সের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। তবে সেখানে তিনি বেশিদিন স্থায়ী হতে পারেননি। কারণ, নিজের রেসিং গ্রুপ ভেঙে যাওয়ার দুঃখ তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল।
দুই বছর পর ১৯৩৯ সালে এনজো আলফা রোমিও থেকে এই শর্তে পদত্যাগ করেন যে, পরবর্তী চার বছরে তিনি কোনো ধরনের রেস বা রেসিং কারে ফেরারি নাম ব্যবহার করতে পারবেন না। আলফা রোমিও থেকে বের হবার এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি ‘অটো এভিও কস্ত্রুজিওনি’ নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন, যার উদ্দেশ্য ছিল রেসিং কার তৈরি করা এবং বিভিন্ন কার রেসে অংশ নেয়া। ‘AAC 815’ ছিল এনজো তথা ফেরারি কোম্পানির প্রথম তৈরি গাড়ি। তবে চার বছরের নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে সেই গাড়িতে ফেরারি নামটি ব্যবহার করা যায়নি।
১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে এনজোকে তার কোম্পানির যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়। যুদ্ধের মধ্যেই আলফা রোমিওর সাথে চার বছরের চুক্তি শেষ হয়। ফলে কোম্পানির নাম এবং নির্মিত গাড়ির নাম ফেরারি রাখার ক্ষেত্রে সকল বাঁধা দূর হয়ে যায়। ১৯৪৪ সালের দিকে মিত্র বাহিনীর বোমা হামলার শিকার হয় মারানেল্লোতে অবস্থিত ফেরারির কারখানা। তবে দ্রুতই তা পুনর্নির্মাণ করা হয়। ১৯৪৫ সালে ফেরারি তাদের নির্মিত V12 ইঞ্জিনের সাথে বিশ্ববাসীকে পরিচয় করিয়ে দেয়, যা পরবর্তীতে তাদের নির্মিত গাড়িগুলোর সিগনেচার ইঞ্জিনে পরিণত হয়।
১৯৪৭ সালে ফেরারি ‘Ferrari 125S’ নামের একটি গাড়ি তৈরি করে। এটি ছিল ফেরারি নাম ব্যবহার করা প্রথম গাড়ি এবং এতে V12 ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছিল। ঐ বছরের ১১ মে তারিখে পিয়াসেনজা রেসিং সার্কিটে ‘F125S’ অংশগ্রহণ করে। এটাই ছিল কোনো ফেরারি গাড়ির প্রথমবারের মতো রেসিংয়ে অংশ নেয়া।
লুইজি সিনেত্তি ছিলেন একজন সফল ইতালিয়ান কার রেসার। ইতালিয়ান বংশোদ্ভূত হলেও ১৯৪৬ সালে তিনি আমেরিকার নাগরিকত্ব লাভ করেন। ১৯৪৯ সালে অনুষ্ঠিত ২৪ ঘন্টার ‘Le Mans’ এবং ‘Spa 24 Hours’ রেসে তিনি Ferrari 166MM মডেলের গাড়ি নিয়ে জয়লাভ করেন। এটি ছিল কোনো ফেরারি গাড়ির প্রথমবারের মতো ‘Le Mans’ এবং ‘Spa 24 Hours’ রেস জয় করার কীর্তি। ‘কারেরা প্যানামেরিকান’ রেস ছিল তার সর্বশেষ বড় ধরনের রেস জয়।
তখন পর্যন্ত ফেরারি শুধুমাত্র রেসিং কার তৈরি করতো। পরবর্তীতে সিনেত্তি এনজো ফেরারিকে সর্বসাধারণের জন্য স্পোর্টস্ কার তৈরি করার প্রস্তাব দেন। শুরুতে এনজো কিছুটা দ্বিধান্বিত ছিলেন। কারণ তার কোম্পানির সকল পরিকল্পনাই ছিল কার রেসকে ঘিরে এবং যেসব গাড়ি তারা বিক্রি করতো তা-ও ব্যক্তিগতভাবে অর্ডার করতে হত। তবে একসময় এনজো সিনেত্তির প্রস্তাবে রাজি হন এবং ফেরারি কোম্পানি বাণিজ্যিকভাবে স্পোর্টস্ কার তৈরি করা শুরু করে।
পঞ্চাশের দশকের শুরুর দিকে ফেরারি কোম্পানি আমেরিকায় তাদের বাণিজ্য বিস্তারে মনস্থির করে। এ লক্ষ্যে আমেরিকান নাগরিক সিনেত্তিকে আমেরিকায় ফেরারির রপ্তানিকারক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। সিনেত্তিই আমেরিকার ম্যানহাটনে প্রথমবারের মতো ফেরারির শো-রুম উদ্বোধন করেন।
আমেরিকাতে ফেরারি গাড়ি খুব দ্রুতই জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ধীরে ধীরে আমেরিকা হয়ে ওঠে ফেরারির প্রধান বাজার, যা কি না আজ পর্যন্ত বজায় আছে। আমেরিকাতে রপ্তানি শুরুর পর থেকেই ফেরারির আয় বিদ্যুৎ গতিতে বাড়তে থাকে। একইসাথে বাড়তে থাকে কোম্পানির ব্র্যান্ড ভ্যালু। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে থেকে ফেরারির নাম।
ফেরারিকে নিয়ে এ সময় সবার মধ্যে যে বিপুল আগ্রহের সৃষ্টি হয় তা কখনোই কোম্পানির জন্য চাপ হয়ে আসেনি। তারা ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করে গেছে অসাধারণ সব গাড়ি তৈরির মাধ্যমে। ক্রেতা সন্তুষ্টির লক্ষ্যে একের পর এক বিলাসবহুল এবং অত্যাধুনিক গাড়ি বাজারে নিয়ে এসেছে তারা। এসবের মধ্যে ছিল ক্যালিফোর্নিয়া স্পাইডার, জিটিও এবং টেস্টারোসা মডেলের গাড়িগুলো। প্রতিটি মডেলই অসামান্য জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৬০ সালের মধ্যে ফেরারির গাড়িগুলো ট্র্যাক এবং ট্র্যাকের বাইরে রাজকীয়ভাবে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে।
১৯৬৩ সালের দিকে ফোর্ড কোম্পানির প্রধান দ্বিতীয় হেনরি ফোর্ড, ফেরারি কোম্পানি কিনে নেয়ার চেষ্টা করেন। তিনি এনজো ফেরারির কাছে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠান। কিন্তু এনজো সরাসরি তা নাকচ করে দেন।
ফেরারি কোম্পানি কিনতে ব্যর্থ হেনরি ফোর্ড অন্যভাবে এই ব্যর্থতার প্রতিশোধ নিতে চাইলেন। তিনি ‘Le Mans’ রেসে ফেরারিকে হারানোর ব্যাপারে মনস্থির করেন। ঐ সময় ‘Le Mans’ রেসে ফেরারি ছিল এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী নাম। ১৯৬০-১৯৬৫ সাল পর্যন্ত একটানা ছয়বার ফেরারি ঐ রেস জিতে আসছিল। ১৯৬৬ সালের মধ্যে ফেরারিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো গাড়ি ফোর্ডের হাতে চলে আসে। আর সেই গাড়িটি ছিল বিখ্যাত ‘Ford GT-40’।
১৯৬৬ সালের Le Mans রেসে GT-40 ফেরারির রাজত্বের অবসান ঘটায়। রেসের প্রথম তিনটি স্থানই দখল করে নেয় GT-40 এর তিনটি গাড়ি! ফেরারির অবস্থান ছিল ২৯ তম! পরবর্তী তিন বছর ফোর্ডের রাজত্ব অক্ষুণ্ণ ছিল। ১৯৬৬-১৯৬৯ সাল পর্যন্ত টানা চার বছর ঐ রেসের প্রথম স্থান অর্জন করে Ford GT-40।
১৯৬৯ সালের দিকে এনজো বুঝতে পারেন যে, ফেরারির সাফল্য পুনরুদ্ধার করতে হলে এবং ফোর্ডের সাথে প্রতিযোগিতায় কোম্পানিকে টিকিয়ে রাখতে হলে আরও বিনিয়োগ দরকার। ফলে ঐ বছর এনজো তার কোম্পানির ৫০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দেন ফিয়াটের কাছে। সেই ফিয়াট, যারা একসময় এনজোকে চাকরি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল!
ফিয়াটের কাছে শেয়ার বিক্রির পর কোম্পানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়। ফলে নতুন মডেলের গাড়ি তৈরির পথ সুগম হয়। এ সময় তারা তৈরি করে ‘Ferrari 312p’ মডেলের একটি রেসিং কার। কিন্তু ফেরারির দুর্ভাগ্যই বলতে হয়। কারণ ঐ বছর পোর্শে তাদের ‘Porsche 914’ মডেলের অসাধারণ একটি রেসিং কার তৈরি করে, যা ঐ বছরের ওয়ার্ল্ড স্পোর্টসকার চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নেয়। ফেরারিকে চতুর্থ স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। পরবর্তী তিন বছর রেসিং ট্র্যাকে রাজত্ব চলে পোর্শের।
অবশেষে ফেরারির সাফল্য ধরা দেয় সত্তরের দশকে। ১৯৭৫,১৯৭৭ এবং ১৯৭৯ সালে ফর্মুলা ওয়ান রেসিং সিজনের বেশ কিছু সার্কিটে প্রথম স্থান দখল করে নেয় ফেরারি।
আশির দশক ছিল ফেরারির জন্য একইসাথে আনন্দের এবং কষ্টের। ১৯৮৮ সালে ফেরারির প্রতিষ্ঠাতা এনজো ফেরারি ৯০ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। তবে মৃত্যুর আগে তিনি কোম্পানির ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি নতুন গাড়ি তৈরির অনুমোদন দিয়ে যান। আর সেই গাড়িটি ছিল ফেরারির ইতিহাসের অন্যতম সেরা গাড়ি F-40।
এনজো ফেরারির মৃত্যুর পর তার স্থলাভিষিক্ত হন কোম্পানির দীর্ঘদিনের নির্বাহী কর্মকর্তা লুকা মন্টেজেমোলো। তার সুদক্ষ নেতৃত্বে ফেরারি একটি বৈশ্বিক বিলাসবহুল গাড়ি নির্মাতা ব্র্যান্ডে পরিণত হয়। বর্তমানে ফেরারির একেকটি সুপারকার লক্ষ লক্ষ ডলারে বিক্রি হয়। আবুধাবিতে ফেরারির একটি নিজস্ব অ্যামিউজমেন্ট পার্কও রয়েছে!
রেসিং সার্কিটে ফেরারি এখনও রজত্ব করে চলেছে। এর মধ্যে ২০০০-২০০৪ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর ফেরারিকে নিয়ে মাইকেল শুমাখার ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিলেন। বর্তমানে ফেরারি গাড়ির যেসব মডেল বাজার কাঁপাচ্ছে তার মধ্যে Ferrari California, Ferrari 488 GTB, Ferrari 488 Spider, Ferrari 488 Pista, Ferrari 512 berlinetta উল্লেখযোগ্য।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ক্রেতাদের একের পর এক অসাধারণ গাড়ি উপহার দিয়ে চলেছে ফেরারি। প্রতিটি গাড়িই একেকটি বিস্ময় এবং আপন আপন বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। সর্বদা ক্রেতা সন্তুষ্টির প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া এই বিশ্বখ্যাত কোম্পানির কমার্শিয়াল এবং মার্কেটিং ডিরেক্টর এনরিকো গেলিয়েরার একটি বক্তব্য দিয়ে এই লেখাটি শেষ করা যায়। তিনি বলেছেন,
আমাদের কোম্পানির চেয়ারম্যান বাদে অন্য কারো, এমনকি শীর্ষস্থানীয় ম্যানেজার এবং নির্বাহী কর্মকর্তাদেরও একটি ফেরারি কেনার বা পাবার অধিকার নেই। কারণ একজন ক্রেতার একটি ফেরারি পেতে ১২-১৮ মাস অপেক্ষা করতে হয়। এতদিন অপেক্ষার পর তিনি যদি এসে দেখেন যে, যে গাড়ি পেতে তার এতদিন অপেক্ষা করতে হলো, সেই গাড়িই কোম্পানির কর্মকর্তারা সহজেই পেয়ে যাচ্ছে, তাহলে তার নিশ্চয়ই ভালো লাগবে না! তাই আমরা বছরে যতগুলো গাড়ি তৈরি করি, তার সবগুলো শুধুই ক্রেতাদের জন্য।