উৎসব মানেই আনন্দ, হৈ হুল্লোড় আর ফুর্তিতে সব মাতোয়ারা! আর সেই উৎসব যদি হয় খাবার নিয়ে উদ্ভট সব আয়োজন দিয়ে সাজানো তাহলে ঠিক কেমন হয় ব্যাপারটা?
ট অব দ্য র্যাডিশেস
স্থান: ওয়াহাকা, মেক্সিকো
সময়: ২৩ ডিসেম্বর
মেক্সিকোর উৎসবগুলোর মধ্যে এটি সর্বাধিক প্রত্যাশিত। প্রতি বছর ডিসেম্বরের ২৩ তারিখে মূলাগুলো জটিল সব ভাস্কর্যের আকারে খোদাই করা হয়। সেসব ভাস্কর্যের মধ্যে থাকে পশু-পাখি, নাচিয়ে, ঋষি বা সাধু, বিজয়ী, রাজা এবং কল্পনাযোগ্য বিভিন্ন চরিত্র। এই উৎসবটি মূলত কবে শুরু হয়েছিলো তা কেউই সঠিকভাবে বলতে পারে না। তবে ১৮৯৭ সালে তৎকালীন নগরপাল এই র্যাডিশ আর্ট বা মূলার চিত্রকলা শুরু করে। বিগত শতাব্দীতে বড়দিনের উৎসবের প্রাক্কালে বাজারগুলোতে মধ্যরাতে কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতাদের কাছে শুটকি ও শাকসবজি বিক্রি করা হতো। এই শুটকি আর শাকসবজিগুলোতে ভিন্নতা আনার জন্য বিক্রেতারা মূলাগুলো দিয়ে ছোট ছোট ভাস্কর্য তৈরি করতো। কোনো কোনো সময় এগুলো সাজানোর জন্য আবার এর সাথে অন্যান্য সবজি, যেমন- লেটুস পাতা, পিঁয়াজ ব্যবহার করা হতো। সে সময়ে গৃহকর্ত্রীদের মাঝে এই ভাস্কর্যগুলো বেশ জনপ্রিয় ছিলো। কারণ এগুলো বড়দিনের আয়োজনে তাদের ঘরের সাজসজ্জার অনুষঙ্গের সাথে শোভা পেতো। এই কারুকার্যের শিল্পীরা র্যাডিশ ফেস্টিভ্যালের তিনদিন আগে থেকে মূলার ওপর খোদাই করার কাজ শুরু করে। এরপর ২৩শে ডিসেম্বর যোকালো নামের বিস্তীর্ণ একটি জায়গায় সকাল থেকে বাচ্চাদের এই শিল্পকলা শেখানো হয় এবং বিকেল থেকে শিল্পীরা তাদের কাজগুলো নিয়ে প্রদর্শনীর জন্য জড়ো হতে থাকে। এরপর সেরা কাজগুলোকে দেয়া হয় আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
রোডকিল কুক-অফ
স্থান: পশ্চিম ভার্জিনিয়া, যুক্তরাষ্ট্র
সময়: ২৮-২৯ সেপ্টেম্বর
দুঃসাহসিক মাংসাশীদের জন্য পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় আয়োজিত বার্ষিক এই অনুষ্ঠানটি বেশ রোমাঞ্চকর বলা চলে। মারলিনটন এর ছোট্ট একটি শহরে মানুষজন ভিড় করে পেশাদার ও অপেশাদার রন্ধনশিল্পীরা পসরা বসান উদ্ভট সব খাবারের আইটেমের। আইটেমগুলো অনেকটা এরকম- টেরিয়ার্কি সস দিয়ে মাখানো ভাল্লুকের মাংস, র্যাকনের (উত্তর আমেরিকায় বসবাসকারী এই স্তন্যপায়ী প্রাণীটি দেখতে কুকুরের মতো) মাংস দিয়ে বানানো এক রনের খাবার ও কাঠবিড়ালির ঝোল তরকারি। এই আয়োজনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে বিজয়ীকে পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয় নগদ অর্থ। কিন্তু সব অংশগ্রহণকারীকে যে নিয়মটি অবশ্যই পালন করতে হয় তা হলো, খাবারের মেন্যুতে থাকতে হবে সাধারণত রাস্তায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যেকোনো প্রাণী। রান্নার আয়োজন শেষ হওয়ার পর শুরু হয় স্কয়ার ড্যান্স, সুন্দর প্রতিযোগিতা ও কুকুরদের প্রদর্শনী।
মাঙ্কি বাফে ফেস্টিভ্যাল
স্থান: লোবেরি, থাইল্যান্ড
সময়: নভেম্বর
প্রতি বছর নভেম্বর মাসে খেমের যুগের (যে সময়ে রাজা দ্বিতীয় জয়বর্মন নিজেকে চক্রভার্তিন বা পৃথিবীর রাজা ও রাজাদের রাজা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন) প্রা প্রাং সাম ইয়ত মন্দির কর্তৃপক্ষ লোপবুরি (থাইল্যন্ডের লোপবুরি রাজ্যের রাজধানী) ম্যাকাকদের (লম্বা লেজ বিশিষ্ট পৃথিবীর আদিকালের বানর বিশেষ) জন্য অসামান্য এক ভোজের আয়োজন করে। সম্মানিত ও পূজনীয় এসব বানরেরা তাদের নিয়মিত অদ্ভুত হাবভাব থেকে বেরিয়ে সুন্দর করে সজানো শত শত কেজি ফলমূল গ্রাস করায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। রঙ-বেরঙের পিরামিডের উপর এই বানরদের ওঠা দেখে পর্যটকদের যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। আনারস, ড্রাগন ফল ও তরমুজ দিয়ে সেসব পিরামিড বানানো হয়। এছাড়াও সেখানে বাটিতে করে রাখা কলা, আঙ্গুর খায় এই বানরগুলো এবং মাঝে মাঝে কোমল পানীয়র বোতলগুলো থেকে এক চুমুক নেয়ার জন্য কিছু সময়ের জন্য বিরতি নেয়।
ফিল্সমের ফ্রগ লেগ ফেস্টিভ্যাল
স্থান: ফিল্সমের, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র
সময়: ১৮-২১ জানুয়ারি
এই উৎসবটি জায়গা করে নিয়েছে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা প্রদেশের ফিলস্মের শহরে ১৯৯০ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে উদ্ভট এই আয়োজনটি। চারদিন ব্যাপী আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অতিথিরা ভিড় জমায় ব্যাঙের মল এবং কুমিরের লেজ দিয়ে তৈরি আইটেম খাওয়ার জন্য। মূলত শহরের শিশুদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্যে তহবিল সংগ্রহের জন্য এই আয়োজনটি শুরু করা হয়েছিলো। এরপর এই আয়োজনটি এতোটাই জনপ্রিয় হয় যে, প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কুমিরের লেজ ও ব্যাঙের মল ও পায়ের বিভিন্ন আইটেম খেতে এই আয়োজনে জড়ো হয়। এছাড়াও তারা সেখানে উপভোগ করতে পারেন বিভিন্ন ধরনের রাইড ও ভিন্ন সব আঙ্গিকের স্টল।
অমলেট জিনতে দ্য ব্যাসিয়াস
স্থান: ব্যাসিয়াস, ফ্রান্স
সময়: ইস্টার মানডে
এক কিংবদন্তি অনুসারে, নেপোলিয়ন এবং তার সেনাবাহিনী যখন ফ্রান্সের দক্ষিণে ভ্রমণ করছিলো, তখন তারা ব্যাসিয়াস শহরের কাছাকাছি একটি গ্রামে রাত্রি যাপনের জন্য বিশ্রাম করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। রাতের ভোজে নেপোলিয়ানকে স্থানীয় আমন্ত্রণকারী তাকে অমলেট খেতে দেন। সেই অমলেট নেপোলিয়ানের কাছে এতোটাই সুস্বাদু মনে হয় যে, তিনি সেই গ্রামের লোকদের সেখানকার সব ডিম সংগ্রহ করে পরের দিন তার সেনাবাহিনীর জন্য একটি বিশাল অ্যামলেট প্রস্তুত করার আদেশ দেন। তখন থেকেই ইস্টারের সময় সেই গ্রামের গরীব দুস্থ মানুষদের অমলেট খাওয়ানোর বিষয়টি চালু হয়। শুধু তা-ই নয়, এখন এটি বিশ্বব্যাপী ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্ব, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিনিময়ের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। বিশালাকারের এই অমলেট বানাতে ব্যবহার করা হয় মোট ৫,০০০ ডিম।
বাহামাজ পাইনঅ্যাপেল ফেস্টিভ্যাল
স্থান: এলুথেরা দ্য বাহামাজ
সময়: ৩১ মে – ৩ জুন
বাহামার বার্ষিক উদযাপন হিসেবে এলুথেরা দ্বীপে চলে খোঁটাযুক্ত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল আনারসের উৎসবমুখর চাষের আয়োজন। শ্রম দিবসে সেখানে থাকে ছুটির দিন আর সেই দিনের মূল আকর্ষণই থাকে আনারস দিয়ে বিভিন্ন ধরনের আইটেম রান্না করে সেগুলো খাওয়া। এছাড়াও আয়োজন করা হয় বিভিন্ন রকম অনুষ্ঠানের, সেগুলোর থাকে সৃজনশীল নামও। যেমন- পাইনঅ্যাপেলমেন ট্রায়াথলন, লিটল মিস পাইনঅ্যাপেল প্রিন্সেস প্যাজেন্ট ইত্যাদি।
মাশরুম ফেস্টিভ্যাল
স্থান: পেনসিলভানিয়া, যুক্তরাষ্ট্র
সময়: ৯-১০ সেপ্টেম্বর
সারা দেশের মাশরুম প্রেমিক লোকজন শ্রমিক দিবসের ছুটির দিনে ঐতিহাসিক কেনট স্কয়ারে জড়ো হন। তারা সেখানে মাশরুম হিসেবে পরিচিত ছত্রাক নিয়ে নানা আয়োজন উদযাপন করতে আসে। এই অনুষ্ঠানটি চলে টানা দুই দিন ধরে। গত বছর উদযাপন করা হয় ৩২ তম মাশরুম ফেস্টিভ্যাল যেখানে হাজির হয় প্রায় ১,০০,০০০ মাশরুম ভক্ত। আয়োজনটির মূল আকর্ষণ ছিলো ন্যাশনাল ফ্রাইড মাশরুম ইটিং চ্যাম্পিয়ানশিপ, অ্যান্টিক এন্ড ক্ল্যাসিক কার শো, ২ মাইল পর্যন্ত স্থানীয় মাশরুম খামারগুলো হেঁটে হেঁটে ঘুরে দেখা, অনভিজ্ঞ রাঁধুনির যেকোনো ধরনের মাশরুমের আইটেম তৈরি করা ইত্যাদি। সেপ্টেম্বরের ৯ তারিখে সকাল ৬টা থেকে কেন্ট স্কয়ার মাশরুম ফেস্টিভ্যাল থেকে শুরু হয় একটি কমিউনিটি প্যারেড। এই কমিউনিটি প্যারেডটি ঘুরে বেড়ায় পেনসিলভানিয়ার বিভিন্ন রাস্তায়। প্যারেডের সাথে সাথে এই আয়োজনে রাস্তায় রাস্তায় চলে সরাসরি গানের আসর, খাবার-দাবার ও নাচ।
চিনচিলা মেলন ফেস্টিভ্যাল
স্থান: চিনচিলা, অস্ট্রেলিয়া
সময়: ১৪ -১৭ ফেব্রুয়ারি
চিনচিলা হলো অস্ট্রেলিয়ার একটি মফস্বল শহর যা ব্রিসবেন থেকে ৫ ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত। এই মফস্বল শহরটিকে অস্ট্রেলিয়ার ‘মেলন ক্যাপিটাল’-ও বলা হয়ে থাকে। অস্ট্রেলিয়ায় জন্মানো মোট তরমুজের ২৫ শতাংশই আসে চিনচিলা থেকে। তাই প্রতি ২ বছরে একবার এখানে আয়োজন করা হয় এই উৎসবের, যাতে অংশ নেয় অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন যায়গা থেকে আগত পর্যটকেরা। এই উৎসবে থাকে নানা ধরনের মজার খেলা, যেমন- মেলন বাঞ্জি, মেলন স্কিয়িং, পিপ স্পিটিং মেলন টসিং, মেলন বুলজ্ আই, মেলন আয়রন ম্যান ইত্যাদি। এছাড়াও আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা উপভোগ করতে পারে কনসার্ট, প্যারেড এবং মজার সব খাবার।
ফিচার ইমেজ: Condé Nast Traveler