Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নরম কোমল ঠোঁট থাকুক সযত্নে

সবার আসল সৌন্দর্যই হলো হাসি! আর সেই হাসি যদি হয় সুন্দর ঠোঁটের, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। কিন্তু কোমল ঠোঁট সুন্দর রাখতে হলে যে এর যত্নও নিতে হবে অনেক খেয়াল করে। ঠোঁট ফেটে যাওয়া, কালচে হয়ে যাওয়া, শুষ্ক হয়ে চামড়া উঠে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলোতে ভোগেন অনেকেই। টাকা খরচ করে নামিদামি ব্রান্ডের প্রসাধনী ব্যবহার করেও খুব বেশি একটা লাভ হয় না। কিন্তু কিছু টিপস্‌ জানা থাকলে হাতের নাগালের সবকিছু দিয়ে খুব সহজেই যত্ন নেয়া যায় ঠোঁটের। আজকে তাহলে কথা হোক ঠোঁটের যাবতীয় বিষয় নিয়েই!

যেসব কারণে ঠোঁট ফাটে ও শুষ্ক হয়ে যায়

  • বার বার ঠোঁট কামড়ালে
  • শরীরে পানিশূন্যতা হলে
  • আবহাওয়ায় পরিবর্তন আসলে
  • ভালো মানের প্রসাধনী ব্যবহার না করলে
  • অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে
  • টক জাতীয় ফলে থাকা এসিডের কারণে
  • সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি
  • অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন-এ এর কারণে
  • সোডিয়াম লোরিল সালফেট (অনেক টুথপেস্টে এই কেমিক্যালটি ব্যবহৃত হয়)
  • ঠোঁটের সঠিক যত্ন না নিলে

ঠোঁটের সমস্যার কিছু লক্ষণ

  • ঠোঁট ফেটে যাওয়া
  • রক্ত পড়া
  • শুষ্ক হয়ে যাওয়া
  • ঘা হওয়া
  • ফুলে যাওয়া
  • চামড়া উঠে যাওয়া

ঘরোয়া পদ্ধতিতে ঠোঁটের যত্ন

ঠোঁট ফেটে যাওয়া ও শুষ্ক হওয়ার কারণ এবং সমস্যাগুলোর লক্ষণ তো জানলাম। এবার তাহলে জানা যাক ঘরোয়া উপায়ে সহজেই কীভাবে পেতে পারেন সুন্দর ঠোঁট।

চিনির পেস্ট

চিনি প্রাকৃতিকভাবে ঠোঁটকে নরম করে এবং ঠোঁটের মরা কোষগুলো উঠিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। এক চা-চামচ মধুর সাথে কিছুটা চিনি মিশিয়ে নিন। এরপর এই পেস্টটি ঠোঁটে লাগান। এরপর আঙুল দিয়ে পুরো ঠোঁটে আস্তে আস্তে ঘষা দিন। এভাবে ঠোঁটের সব মৃত কোষ উঠে যাবে। এভাবেই কয়েক সেকেন্ডের জন্য রেখে দিন। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

চিনি ঠোঁটের যত্নে ন্যাচারাল softener হিসেবে কাজ করে; Image Source: YouTube

মধু

শুষ্ক ও ফাটা ঠোঁটের জন্য মধু প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ, যা ঠোঁটকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও মধু কালচে ভাবকে হালকা করে দেয়। দিনে কয়েকবার শুধু মধু ঠোঁটে দিয়ে রাখুন। মধুর সাথে গ্লিসারিন মিশিয়েও ঠোঁটে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

গোলাপের পাঁপড়ি

Source: inhabitat.com

ঠোঁটের সুরক্ষায় গোলাপের পাঁপড়ির জুড়ি মেলা ভার! গোলাপের পাঁপড়ি ঠোঁটকে নরম রাখতে সাহায্য করে। এক মুঠো গোলাপের পাঁপড়ি পানি দিয়ে ধুয়ে দুধ অথবা গ্লিসারিনে কয়েক ঘণ্টার জন্য ভিজিয়ে রাখুন। এই মিশ্রণটি দিয়ে পাতলা এক ধরনের পেস্ট তৈরি করে ফেলুন। প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঠোঁটে দিয়ে নিন। ঘরোয়া এই সমাধানটি শুষ্ক ত্বকের যত্নে সবচাইতে উপকারী। এছাড়াও গোলাপের পাঁপড়ি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতেও সাহায্য করে।

নারিকেল তেল

ঠাণ্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়ার দিনে নারিকেল তেল সবচাইতে ভালো ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। দিনে কয়েকবার এমনিই ঠোঁটে ব্যবহার করতে পারেন নারিকেল তেল। এছাড়াও ব্যবহার করতে পারেন অলিভ অয়েল ও সরিষার তেল।

নারিকেল তেল সবচাইতে ভালো ময়েশ্চারাইজার, Image Source: aHealthyme.nl

ক্যাস্টর অয়েল

রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ক্যাস্টর অয়েলের সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ও গ্লিসারিন মিশিয়ে ঠোঁটে দিয়ে রাখুন। এরপর গরম পানিতে ভেজানো তুলা দিয়ে মুছে ফেলুন।

দুধের সর

অতিরিক্ত ফাটা ঠোঁটের জন্য দুধের সরের চেয়ে ভালো আর কিছুই হতে পারে না! চাইলে প্রতিদিনও ব্যবহার করতে পারেন এই ন্যাচারাল ময়েশ্চারাইজারটি। দুধের সর সরাসরি ঠোঁটে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।

অ্যালোভেরা জেল

Source: shop.mokshalifestyle.com

অ্যালোভেরা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতি থেকে রক্ষা করে জ্বালাপোড়া ভাব দূর করে। অ্যালোভেরার জেল অংশটুকু ঠোঁটে লাগিয়ে বেশ কিছুক্ষণ রেখে দিন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া ঠোঁটের কালচে ভাবও দূর করে।

শশা

শশাতে রয়েছে অ্যাবসোরবিক এসিড (ভিটামিন সি) যা কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে। কোলাজেন ঠোঁটকে সুগঠিত ও সুন্দর রাখে। শশার ৯০ শতাংশই পানি! তাই শশা ঠোঁটকে আর্দ্র রাখে। রাতে এক টুকরো শশা ঠোঁটে দিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিলে ঠোঁট নরম ও সুগঠিত হবে।

পেট্রোলিয়াম জেলি ও মধুর পেস্ট

প্রথমে ঠোঁটে মধু লাগিয়ে নিয়ে, এর উপর যেকোনো ভালো ব্র্যান্ডের পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে রাখুন। এই পেস্টটি সারা রাত রেখে দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে গরম পানিতে ভেজা তুলা দিয়ে ঠোঁট মুছে নিন। দ্রুত ফলাফলের জন্য দিনে দু’বার এই প্রক্রিয়াটি অবলম্বন করতে পারেন।

পানি

ত্বকের যত্নে পানির গুণাগুণ তো আর বলে শেষ করা সম্ভব না! সেই সাথে পানি ঠোঁটকেও একই রকমভাবে ভালো রাখতে সাহায্য করে। দিনে অন্তত ৮ গ্লাস পানি শরীরে পানি ব্যালেন্স ঠিক রাখবে। আর এতে করে ঠোঁটও থাকবে সুন্দর!

 

গ্লিসারিন

Source: beautyglimpse.com

নিয়মিত লিপস্টিক ব্যবহারে ঠোঁট কালো হয়ে যেতে পারে। এই সমস্যাটি এড়াতে লিপস্টিক দেয়ার আগে ঠোঁটে গ্লিসারিন দিয়ে নিন। মনে রাখবেন, ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় গ্লিসারিন বেশি ভালো কাজ করে। তাই রাতের বেলায় ঠোঁটে গ্লিসারিন দিয়ে রাখুন।

কুসুম গরম ঘি

শুষ্ক ও ফাটা ঠোঁটের জন্য ঘি হালকা গরম করে নিয়ে ঠোঁটে লাগাতে পারেন।

ব্রাউন সুগার

হাফ কাপ ব্রাউন সুগারে দুই টেবিল চামচ আমান্ড অয়েল বা অলিভ অয়েল মিশিয়ে শুষ্ক ঠোঁটে লাগিয়ে রাখুন। ঠোঁটের মৃত কোষগুলো উঠে যাবে এবং শুষ্ক ভাবও চলে যাবে।

লেবু

Source: medicalnewstoday.com

এক পিস লেবু নিয়ে তার উপর চিনি দিয়ে নিন। এরপর এটি হালকা করে ঠোঁটে ঘষা দিন। এতে করে ঠোঁটের মৃত কোষ উঠে যাবে। এছাড়াও লেবু কালচে ভাব হালকা করতে সাহায্য করে। এভাবে আপনি কয়েক সপ্তাহ প্রতিদিন এটি ব্যবহার করতে পারেন।

ডালিম

এক টেবিল চামচ ক্রাশ করে নেয়া ডালিমের বীচি নিন। এর সাথে কিছুটা দুধের সর ও গোলাপ জল মিশিয়ে নিন। এই পেস্টটি ঠোঁটে দিয়ে আলতো করে ঘোষে নিন। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন একবার করে এটি ব্যবহার করতে পারেন।

ক্যাফেইন জাতীয় খাবার কম খান

চা বা কফিতে যে ধরনের উপাদান আছে তাতে ঠোঁট কালো হয়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। তাই নিয়মিত চা বা কফি পান করলেও তা যেন পরিমিত পরিমাণে হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।

হেলদি ডায়েটের অভ্যাস করুন

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার প্রাকৃতিকভাবে ঠোঁটের ময়েশ্চারাইজারের কাজ করে এবং ঠোঁটের কালচে ভাবও দূর করে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ফলমূল ও শাক-সবজি খাওয়ার অভ্যাস করুন।

ঠোঁট ভালো রাখার জন্য কিছু করণীয় ও বর্জনীয়

  • সানস্ক্রিন (এস পি এফ-১৫) সমৃদ্ধ লিপ বাম ব্যবহার করুন যেন সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির কারণে ঠোঁট কালো না হয়ে যায়।
  • প্রচুর পরিমাণে পানি খান।
  • ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- টমেটো, গাজর ও গাঢ় সবুজ রঙের শাক-সবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন।
  • ঘুমানোর আগে লিপ বাম (কোকো বা শিয়া বাটার হলে ভালো হয়) দিয়ে ঘুমান।
  • কখনো ঠোঁট কামড়াবেন না।
  • ঠোঁটের চামড়া কখনো টেনে টেনে তুলবেন না। গরম পানিতে ভেজানো তুলা দিয়ে ঠোঁটে ঘষে উঠান।

আশা করা যায় এই টিপসগুলো দেখে আপনার নরম কোমল ঠোঁটের যত্ন নিতে পারবেন খুব সহজেই।

Related Articles