বাসায় প্রতিদিনের খাবার খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে রাস্তার পাশের ভাতের হোটেল থেকে শুরু করে পাঁচ তারকা রেস্টুরেন্ট- নিজ নিজ সাধ্য অনুযায়ী সবারই কমবেশি যাওয়া হয় বাইরে খেতে। ঢাকা শহরের চানখারপুলের ছোট-বড় রেস্টুরেন্টগুলো প্রায় চব্বিশ ঘন্টাই মুখরিত থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কিংবা বুয়েটের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে। বন্ধের দিনে কিংবা কোনো উপলক্ষ পেলেই অনেকেই বন্ধুবান্ধব নিয়ে খেতে যায় রেস্টুরেন্টে। কোথাও খেতে গেলে বেশিরভাগ সময়ই প্রথমে দেখা হয় সেখানে খাবারের দাম সাধ্যের মধ্যে পড়ে কিনা। এমন কিছু রেস্টুরেন্ট আছে, যেগুলোতে একবেলা খাবার জন্য আপনাকে যে পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হবে তাতে আপনি একাধিক আইফোন কিনতে পারবেন! চলুন জেনে নেয়া যাক পৃথিবীর সবচেয়ে দামি কিছু রেস্টুরেন্ট সম্পর্কে।
সাবলিমোশন, স্পেন
বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি রেস্টুরেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া রেস্টুরেন্ট এটি। স্পেনের ইবিজা দ্বীপের হার্ড রক হোটেলের ভেতরে রয়েছে মাত্র ১২ সিটের এই রেস্টুরেন্টটি। অর্থাৎ একসাথে সর্বোচ্চ ১২ জন অতিথি খেতে পারে এই রেস্টুরেন্টে। ২০১৪ সালে স্থাপিত এই রেস্টুরেন্টে একবেলা খেতে প্রতিজনের ব্যয় করতে হয় অন্তত দুই হাজার ডলার, প্রায় এক লক্ষ ষাট হাজার টাকারও বেশি!
মেশিলিন স্টারপ্রাপ্ত শেফদের তৈরি করা ১৫ থেকে ২০ ধরনের খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় অতিথিদের। মেশিলিন স্টার রেস্টুরেন্ট এর মান যাচাই করার একটি পদ্ধতি। ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠান একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট যাচাই করে তাদের নতুন স্টার দেয় কিংবা পূর্বের স্টার ছিনিয়ে নেয়। তিনটি স্টার পাওয়া রেস্টুরেন্ট এবং এর শেফরা সবচেয়ে সেরা হিসেবে বিবেচিত হয়।
এই রেস্টুরেন্টের প্রধান শেফ প্যাকো রেনচেরো তিন তারকা পাওয়া একজন শেফ। ব্যয়বহুল এই রেস্টুরেন্টে শুধু খাবারই পাবেন না, সাথে পাবেন অত্যাধুনিক সব গ্যাজেট, সুন্দর শিল্পকলা এবং মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। প্রতিটি খাবার পরিবেশনের সাথে সাথে ঘরের পরিবেশও পরিবর্তন হয়ে যায় খাবারের ধরনের উপর নির্ভর করে। ফলে মুখরোচক খাবারের সাথে রোমাঞ্চকর এক অভিজ্ঞতাও হবে এই রেস্টুরেন্টে গেলে।
ইথা আন্ডারসি রেস্টুরেন্ট, মালদ্বীপ
সবচেয়ে খরুচে রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে একমাত্র মালদ্বীপের সমুদ্রের নিচের ইথা রেস্টুরেন্টই রয়েছে। ২০১৪ সালে নিউ ইয়র্ক ডেইলি নিউজ এই রেস্টুরেন্টকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর রেস্টুরেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ভারত মহাসাগরে অবস্থিত এই রেস্টুরেন্টটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ মিটার গভীরে অবস্থিত। একসাথে মাত্র ১৪ জন অতিথিকে আপ্যায়ন করতে পারে এই রেস্টুরেন্টটি। তাই এখানে খেতে চাইলে আপনাকে বেশ আগেই বুকিং দিয়ে রাখতে হবে।
এই রেস্টুরেন্টে বসে খেতে খেতে দেখতে পাবেন পানির নিচের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। ২০০৪ সালে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে নকশা এবং তৈরি করার পর টানেলের মতো এই রেস্টুরেন্টটিকে মালদ্বীপে নিয়ে যাওয়া হয়। পরের বছর অর্থাৎ ২০০৫ সালে চালু করা হয় রেস্টুরেন্টটি। এই রেস্টুরেন্টে প্রতিদিন দুপুরে এবং রাতে যথাক্রমে চার এবং ছয় ধরনের খাবার পরিবেশন করা হয়। এখানকার খাবার এশিয়ান এবং ইউরোপিয়ান খাবার মিশ্রণে তৈরি করা হয়। মূলত বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের প্রাধান্য থাকে খাদ্য তালিকায়। একবেলা খেতে আপনাকে খরচ করতে হবে অন্তত ৩২০ ডলার অর্থাৎ প্রায় ২৭ হাজার টাকা।
রেস্টুরেন্ট গর্ডন রামসে, যুক্তরাজ্য
যারা মাস্টারশেফ দেখেন তাদের কাছে গর্ডন রামসে বেশ পরিচিত একটি নাম। হলিউড তারকাদের মতোই বিখ্যাত এই শেফ। ১৯৯৮ সালে তিনি এই রেস্টুরেন্ট চালু করেন লন্ডনের চেলসিতে। এখানে একবেলা খেতে চাইলে আপনাকে খসাতে হবে প্রায় সাড়ে তিনশ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় রূপান্তর করলে হয় প্রায় ঊনত্রিশ হাজার টাকা। তবে এখানকার সবচেয়ে দামি খাবার হচ্ছে একটি রেড ওয়াইন, যার এক বোতলের মূল্য সাড়ে আঠারো হাজার ডলার!
এই রেস্টুরেন্টে আপনি খেতে পাবেন বিভিন্ন স্বাদের ফ্রেঞ্চ খাবার। এছাড়াও বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ এবং ভেড়ার মাংসের খাবারও পাওয়া যায় এখানে। বলা বাহুল্য, প্রতিটি খাবারই অত্যন্ত চড়া দামে কিনতে হবে আপনাকে। একবেলা এখানে খেলে বাকি মাস হয়তো বা আপনাকে মুড়ি কিংবা নুডলস খেয়ে কাটাতে হবে!
আরাগাওয়া, জাপান
২০০৬ সালে ফোর্বসের তৈরি করা সবচেয়ে দামি রেস্টুরেন্টের তালিকায় শীর্ষে ছিল জাপানের টোকিওতে অবস্থিত এই রেস্টুরেন্টটি। সময়ের সাথে জৌলুশ কিছুটা হারালেও এখনও সবচেয়ে দামি রেস্টুরেন্টগুলোর কথা বলতে গেলে আরাগাওয়াকে বাদ দেয়া যায় না। একটি অফিস বিল্ডিংয়ের বেজমেন্টের হলওয়ের শেষ প্রান্তে অবস্থিত ছোট্ট এই রেস্টুরেন্টটি। একসাথে মাত্র ২২ জন অতিথি খেতে পারেন এই রেস্টুরেন্টে।
কোবে বিফ (জাপানের বিশেষ ধরনের রান্না করা গরুর মাংস) এর জন্য এই রেস্টুরেন্ট সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত। এর বাইরেও চারকোলে ভাজা স্যান্ডা বিফ স্টেক (স্যান্ডা হচ্ছে জাপানের গরুর একটি প্রজাতি), স্টিম করা পুরো একটি স্যালমনের জন্যও প্রসিদ্ধ এই রেস্টুরেন্ট। তবে স্বাদ যত ভালোই হোক না কেন, পকেট থেকে বেশ বড় অংকের অর্থ বের করে নিবে ঠিকই। একবেলা খেতে গেলে আপনাকে অন্তত ৩৪১ ডলার অর্থাৎ প্রায় আটাশ হাজার টাকা খরচ করতে হবে।
মাসা, যুক্তরাষ্ট্র
তিন তারকা পাওয়া জাপানি শেফ মাসা তাকাইয়ামার হাত ধরে চলে নিউ ইয়র্কের টাইম ওয়ার্নার সেন্টারে অবস্থিত এই রেস্টুরেন্টটি। জাপানি রেস্টুরেন্টে জাপানি খাবারের অন্যরকম স্বাদ পাওয়া যায়। তবে খাবার অন্তত তিন ঘন্টা আগে জানাতে হয়, যাতে খাবার সুন্দরভাবে পরিবেশন করা যায়!
এই রেস্টুরেন্টে কোনো নির্দিষ্ট খাদ্য তালিকা নেই। অতিথিরা বসার পর একের পর এক তরতাজা খাবার পরিবেশন করা হয়। কোনো প্রকার পানীয় কিংবা খাবার শেষে টিপস দেয়া ছাড়াই আপনার পকেট থেকে প্রায় ৩৫০ ডলার বা ঊনত্রিশ হাজার টাকা খসিয়ে নেবে এই রেস্টুরেন্ট। এমনকি আপনি যদি আপনার বুকিং বাতিল করতে চান, তাহলেও ২০০ ডলার খরচ করতে হবে!
মেশন পিক, ফ্রান্স
১৮৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই রেস্টুরেন্টটি শুরু থেকেই পিক পরিবারের হাত ধরে চলে আসছে। চার প্রজন্ম ধরে চলে আসা রেস্টুরেন্টটির বর্তমান প্রধান শেফ অ্যানে সোফি পিক। ২০০৭ সালে তিনি ফ্রান্সের প্রথম এবং ইতিহাসের মাত্র চতুর্থ নারী হিসেবে মেশিলিন তিন তারকা পান সোফি। এর আগে তার বাবা এবং দাদাও তিন তারকা পেয়েছিলেন।
আধুনিক এবং ক্ল্যাসিকাল খাবারের মিশ্রণে খাবার পরিবেশন করেন সোফি পিক। একবিংশ শতাব্দীতে বসে বিংশ শতাব্দীর রন্ধনশৈলীর খোঁজ মেলে এই রেস্টুরেন্টে। তবে অন্তত ৪৪৫ ডলার বা ছত্রিশ হাজার টাকা খরচ করতে হবে সেই খাবারের স্বাদ পেতে হলে।
রেস্টুরেন্ট লে ম্যুরাইস, ফ্রান্স
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থিত এই রেস্টুরেন্টটি একটি বেশ পুরনো পাঁচ তারকা হোটেলের অংশবিশেষ। ব্রোঞ্জ ও মার্বেল পাথরের মেঝে আর দেয়ালে তৈরি এই রেস্টুরেন্টটি সাজানো হয়েছে। কোনো প্রকার পানীয় ছাড়াই একবেলার খাবার খেতে গেলে আপনাকে খরচ করতে হবে অন্তত ৫২৪ ডলার অর্থাৎ প্রায় ৪৩ হাজার টাকা!
হোটেল ডে ভিলি, সুইজারল্যান্ড
সুইজারল্যান্ডের এক দম্পতি প্রায় ৪০ বছর ধরে এই রেস্টুরেন্ট এর মালিক। তিন তারকা পাওয়া শেফদের দিয়ে পরিচালিত এই রেস্টুরেন্টটি সবার কাছে বেশ জনপ্রিয়। স্থানীয় বিভিন্ন বিখ্যাত খাবার পরিবেশনা করে রেস্টুরেন্টটি। এখানে খেতে চাইলে একবারে ৩১৮ ডলার বা প্রায় ছাব্বিশ হাজার টাকা খরচ করতে হবে একবেলায়।