Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ভুলে ভরা প্রাত্যহিক জীবন!

খেয়াল করে দেখুন, আপনার প্রাত্যহিক সময়গুলোতে সবকিছুই ঠিকঠাক নিয়ম মতোই করছেন। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা, নিয়মিতে জিমে যাওয়া এবং পর্যাপ্ত ঘুমানো- সবই ঠিক আছে। কিন্তু তারপরেও কেমন যেন অস্বস্তিভাব কাটছেই না কিংবা অসুস্থতার ছোবল থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারছেন না। কোথায় ভুল হচ্ছে আপনি নিজেও ধরতে পারছেন না। তবে হ্যাঁ, গণ্ডগোল তো একটা হচ্ছেই।

দুশ্চিন্তার কারণ নেই, বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়টিকে অনেকটা গুরুত্ব দিয়েই বলেছেন, সঠিক কাজটি সঠিক উপায়ে না করলে মাশুল গুনতে হবে। অর্থাৎ, আপনাকে পরিমিত স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। জিম সেশন নিয়মিত করতে হবে। তাহলেই ষোল আনা লাভ উসুল করতে পারবেন। তা না হলে উল্টো ষোল আনা আপনাকেই গুনতে হবে। বিশেজ্ঞরা আমাদের এমন কিছু প্রাত্যহিক কাজের কিছু উদাহরণ দিয়েছেন যা আপাতদৃষ্টিতে সঠিক মনে হলেও সেটা প্রকৃতবিচারে ভুল।

প্রতিবার খাবারের পর দাঁত ব্রাশ করা

Source: Depositphotos

খাবারের পর দাঁত ব্রাশ করার কথা সবাই বলে থাকেন। অনেকে অক্ষরে অক্ষরে তা পালনও করেন। তবে কপালে ভাঁজ পড়ার ব্যাপার হলো, খাওয়ার পরই ব্রাশ করা সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত না। মায়ো ক্লিনিকের পক্ষ থেকে বলা হয়, আপনি যদি এসিডিক কিছু খেয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনার অন্তত ৩০ মিনিট পরে ব্রাশ করা উচিত। লেবু, কমলা এবং আঙুরের মতো সাইট্রিক এসিড সমৃদ্ধ ফল খেলে দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যায়। পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়, যখন এসব ফল খেয়েই কেউ দাঁত ব্রাশ করে। এজন্য এসিডসমৃদ্ধ খাবার খেয়ে অন্তত ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে দাঁত ব্রাশ করার পরামর্শ দেয় মায়ো ক্লিনিক।

‘প্রলুদ্ধকর শব্দ’ দেখে পণ্য ক্রয়

Source: Brightside

বাজারে সাধারণত বিভিন্ন পণ্যের গায়ে ন্যাচারাল (প্রাকৃতিক), হেলদি ( স্বাস্থ্যকর) এবং লো-কার্ব (কম শর্করা) ইত্যাদি কথা লেখা থাকে। এসব লেখা দেখে বাছবিচার না করেই দ্রব্য কিনে ফেলে। এতে ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য পণ্য ক্রয়ের সময় প্রলুদ্ধকর শব্দের চেয়ে ওই পণ্যে কী কী উপাদান আছে সে তালিকায় চোখ রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অভ্যাসের চর্চা করলেই দিনশেষে স্বাস্থ্য ও মন দুটোই কক্ষপথে থাকবে।

সবসময় একইধরনের ব্যায়াম করা

Source: Shutterstock

একধরনের ব্যায়ামে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়াতেও ক্ষতি দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু কার্ডিওর (ব্যায়ামের ধরণ) উপর নির্ভরশীল হলে তাতে শারীরিক উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি দেখছেন তারা। এজন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যায়ামের মিশ্রণে প্রতিদিন শরীর চর্চা করতে পরামর্শ দেন তারা।

ছুটির দিনে অতিরিক্ত ঘুমানো

Source: depositphotos

সাধারণত আমরা ছুটির দিনগুলোতে বেশি ঘুমাই। একটা সময়ে এ অভ্যাস শরীরের জন্য অশুভ সংবাদ বয়ে আনতে পারে। জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল এন্ডোক্রাইনোলজি এন্ড মেটাবলিজমের একটি জরিপেই এ অপ্রিয় সত্যটি উঠে আসে। এজন্য সপ্তাহের সাতদিনই সুষমভাবে ঘুমানোর উপরই তাগাদা দেন তারা।

স্বাস্থ্যকর জীবন-যাপনের অপর নাম একাকিত্ব

Source: shutterstock

স্বাস্থ্যকর জীবনের ওপর গুরুত্ব দিতে গিয়ে অনেকেই বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে ঘুরাঘুরি ও খাওয়া-দাওয়া পর্যন্ত ত্যাগ করেন। এতে করে তারা একাও হয়ে পড়েন। সেক্ষেত্রে খাবারের তালিকাটা এমনভাবে করা উচিত যাতে সবদিক রক্ষা হয়।

ওজন কমাতে দুপুরের খাবার পরিত্যাগ করা

Source: Shutterstock

ওজন কমাতে খাবার পরিত্যাগ করাটা পরিচিত কৌশল। কিন্তু এ কৌশল কালেভদ্রে উপকার বয়ে আনে। মাঝেমধ্যে এ অভ্যাস হিতে-বিপরীত ফলও বয়ে আনতে পারে। ওয়েট কন্ট্রোল ইনফরমেশন নেটওয়ার্কের তথ্যমতে, দুপুরে খাবার না খাওয়ার অভ্যাস বেশি খাবার খাওয়ার চেয়েও আরো বেশি বিপর্যয় তৈরি করতে পারে। এজন্য অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণে হলেও দুপুরের খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেন তারা।

ওয়ার্ক-আউটের (ব্যায়াম) পর প্রোটিন শেক খাওয়া

Source: brightside

সাধারণত ব্যায়ামের পর অনেকে প্রোটিন শেক পান করতে পছন্দ করেন। এ প্রোটিন পেশি দৃঢ় করা এবং ক্ষয় পূরণে সাহায্য করলেও মাঝেমধ্যে বিপদও ডেকে আনতে পারে। বিশেষত যারা রাতে ব্যায়াম করে তারা যখন ওয়ার্ক-আউটের পর প্রোটিন শেক খায়, তাদের শরীরে প্রোটিন বেড়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায়। এতে কোমরে চর্বি জমে যাওয়ার সম্ভাবনাও নেহায়েৎ কম নয় বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য রাতে শরীরচর্চার পর প্রোটিন শেক পান করা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।

প্রতিদিন ওজন মাপা

Source: depositphotos

যারা ডায়েট করেন তাদের একটা অভ্যাস দাঁড়িয়ে যায়। সেটা হলো প্রত্যেকদিন ওজন মাপা। ডায়েটে ওজন কমে- এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য। কিন্তু তাই বলে প্রতিদিন ওজন মাপলে হতাশা বাড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। কারণ প্রতিদিন ওজন মাপার পর প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির ফারাক দেখা গেলে হতাশা বাড়বেই। এজন্য প্রতিদিন ওজন মাপার অভ্যাস থেকে সরে আসার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ওজন কমাতে বিশেজ্ঞরা যে পরামর্শটা সবসময় দেন সেটি হলো- ধীরে ধীরে খাবার খাওয়া। অর্থাৎ খাবার গ্রহণের সময় তাড়াহুড়া না করা। এতে করে পরিমিত খাবার খাওয়ার লক্ষ্যটা পূরণ হয় এবং ওজন বাড়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

ডায়েট কোক পান

Source: Shutterstock

ওজন কমানোকে ত্বরান্বিত করার অংশ হিসেবে কোমলপানীয় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কোকাকোলা ডায়েট কোক বাজারজাত করেছে। কিন্তু এ ডায়েট কোক ওজন কমায় না, বরং ওজন বাড়ায় বলে মন্তব্য করেন বিশেজ্ঞরা। ডায়েট কোকে ব্যবহৃত ‘ডায়েট সোডা’ চিনির চেয়ে কোনো অংশ কম ক্ষতিকর নয় বলেও তুলে ধরেন তারা।

রোদ পরিহার করা

Source: BeBeautiful

রোদে হাঁটলে ত্বক কালো হয়ে যাওয়ার বিষয়টা যেমন সত্য, ঠিক একইভাবে রোদে একেবারে না যাওয়াটাও স্বাস্থ্যকর নয়। রোদে কম গেলে শরীরে ভিটামিন ডি’র ঘাটতিও দেখা যায়। সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের পেলে লিন্ডকবিস্ট এবং তার কলিগরা বলেন, যেসব নারী নিয়মিত রোদে যান তাদের কার্ডিওভাস্কুলার রোগ (হার্ট এটাক এবং স্ট্রোক) ও ডায়াবেটিসসহ আরো কিছু রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। অন্যদিকে যারা যায় না,তাদের এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

অতিরিক্ত শরীরচর্চা

Source: depositphotos

সুস্থ জীবনযাপনের জন্য শরীরচর্চার বিকল্প নেই। কিন্তু কথায় আছে, অতিরিক্ত কোনো কিছু সবসময়ই খারাপ। অতিরিক্ত শরীরচর্চাও খারাপ। সুস্বাস্থ্য ধীরে ধীরে অর্জন করতে হবে। কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই একদম পুরোপুরি ফিট হতে চাওয়া বাড়াবাড়ি। এজন্য অতিরিক্ত শরীরচর্চাও স্বাস্থ্যের জন্য বিপদ ডেকে আনে। এতে করে ঘুমের সমস্যাসহ পেশিতেও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়।

মাইক্রোওয়েভ ওভেনে খাবার প্রস্তুত

Source: Brightside

 

মাইক্রোওয়েভ ওভেনে খাবার প্রস্তুত করা এখন প্রায় পরিচিত দৃশ্য। কিন্তু ওভেনে প্রস্তুতকৃত খাবারে পুষ্টিগুণ কমে যায় বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে ক্যালোরি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলেও জানান তারা।

বোতলের পানি পান

Source: Shutterstock

ন্যাচারাল রিসোর্সেস ডিফেন্স কাউন্সিলের মতে, বোতলজাত পানিতে ব্যাকটেরিয়া ও রাসায়নিক পদার্থ থাকে। হাজারের বেশি বিভিন্ন ব্রান্ডের পানির বোতল পরীক্ষা করে দেখার পরেই এ অপ্রিয় সত্যটি প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা। এতে করে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

উপর্যুক্ত এ কাজগুলো কম-বেশি অনেকেই করে। বলা যায়, আপাতদৃষ্টিতে সঠিক মনে হওয়াতে অনেকে তা নিয়ে তেমন একটা ভাবেন না। কিন্তু একটু মনোযোগ দিয়ে দেখলে বোঝা যায়, এসব কাজ কতটুকু স্বাস্থ্যকর এবং বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণে তা-ই বেরিয়ে এসেছে। তার মানে আপাতদৃষ্টিতে সঠিক মনে হলেই কোনো কাজ করা যাবে না। সুস্বাস্থ্যের জন্য কোনটি সঠিক এবং কোনটি ক্ষতিকর তা বুঝেই সিদ্ধান্তে যেতে হবে।

ফিচার ইমেজ: Brightside

Related Articles