Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

৬টি উপায়ে পড়ালেখা স্মৃতিতে স্থায়ী করে রাখুন

অনেকেরই একটি প্রশ্ন আছে। এত সময় দিয়ে পড়ি, সারাদিন পড়ার টেবিলে বসে থাকি, তবুও পরীক্ষার আগে পড়া ঠিকমতো মনে থাকে না কেন?

আসলে আপনি কীভাবে পড়ছেন, সেটার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। অনেকেই আপনার চেয়ে কম সময় ধরে পড়ালেখা করে পরীক্ষায় ভালো উত্তর দিয়ে আসে। তার মানে আপনি বেশি সময় ধরে পড়লেই যে পরীক্ষায় ভালো করবেন- এমন ধারণা ভুল।

আবার যারা আপনার চেয়ে ভালো করছে, তারা যে আপনার চেয়ে খুব বেশি মেধাবী এমন কথাও পুরোপুরি সত্য নয়। আসলে আপনি পরীক্ষায় কেমন করবেন অথবা পড়া কীভাবে ভালো মনে রাখবেন, সেটা পুরোপুরি নির্ভর করছে আপনি কীভাবে পড়ছেন তার ওপর।

আপনার পড়ার ধরণের উপর নির্ভর করে আপনার অগ্রগতি; Image source: how-to-study.com

এরজন্য আপনার গতানুগতিক পড়ার ধরন খানিকটা বদলে ফেলতে হবে। একটানা পড়ার অভ্যাস বাদ দিয়ে অভ্যস্ত হতে হবে একটু ভিন্ন কিন্তু মজার ধরনের পড়াশোনায়। এই লেখায় সেসব বিষয় নিয়েই আমরা আলোচনা করবো।

. খাতায় লেকচার নোট টুকে নেয়া

শুরুটা করি ক্লাসের লেকচার নোট উঠানো দিয়েই। অনেকেই আছেন ক্লাসে শিক্ষক বোর্ডে যা লিখেন, হুবহু খাতায় তুলে নিয়ে যান। শিক্ষকের বলার কিংবা বোঝানোর দিকে নজর কম দেন। এর ফলে যা হয়, সেই লেকচার নোট পরবর্তীতে আবার দেখার সময় গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো মনে পড়ে না। আপনি অনেক মনোযোগ দিয়ে খাতায় নোট নিলেও গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো মন দিয়ে না শোনার জন্য পরবর্তীতে পড়া বুঝতে সমস্যায় পড়ে যান।

লেকচার নোট নেয়ার সময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কেবল লিখে নেয়া উচিৎ; Image source: Oxbridge Essays

এজন্য একটি ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে পারেন। ক্লাসের পুরো কথা লিখে নেয়ার বদলে লেকচারের চুম্বক অংশ খাতায় লিখে নিতে পারেন। ছোট ছোট কি-ওয়ার্ড লিখে নিলে পরবর্তীতে সেগুলো মনে রাখতেও সুবিধা হয়। ক্লাসের নোট নেয়ার ধরন বদলে ফেলুন এবং শিক্ষকের লেকচারের দিকে বেশি মনোযোগী হোন।

. বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ দাগিয়ে পড়া

নতুন কোনো অধ্যায় পড়ার সময় অনেকেই যে তথ্যগুলো গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, সেগুলো রঙিন কালি দিয়ে দাগিয়ে রাখেন। এতে পরীক্ষার আগে কিংবা অন্যান্য সময়ে সহজেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো চোখে পড়ে।

কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা যেই ভুলটি করি তা হলো, প্রথমবার পড়ার সময়ই যা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, তা দাগিয়ে ফেলি। এতে দেখা যায় পড়ার পর এতো বেশি তথ্য আমরা দাগিয়ে ফেলি যে, এর মধ্যে অধিকাংশ তথ্যই থাকে অদরকারি। যার ফলে সত্যিকারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো ঢাকা পড়ে যায়। আর অত্যাধিক তথ্য দাগানোর ফলে দরকারের সময় কোনটি সত্যিকারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, তা খুঁজে পাওয়া যায় না।

পুরো বিষয় একবার পড়ে, দ্বিতীয়বার দাগিয়ে পড়া উচিৎ; Image source: Lucy Macken

এই সমস্যা এড়ানোর জন্য সবচেয়ে সুন্দর পরামর্শটি হলো, প্রথমবার পুরো অধ্যায়টি কোনো দাগানো ছাড়াই পড়ে নেয়া। একবার পড়ে অধ্যায়টির ব্যাপারে প্রাথমিক ধারণা নেয়ার পর দ্বিতীয়বার পড়া এবং তখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো দাগিয়ে নেয়া। এতে যে সুবিধা হবে, অদরকারি বিষয়গুলো দাগানো হবে না এবং দুইবার করে পড়ার ফলে অধ্যায়টির ব্যাপারে ধারণা বৃদ্ধি পাবে।

. পড়ার বিষয়বস্তু কল্পনা রাখা

কোনো একটি বিষয় পুরোপুরি মুখস্ত বর্ণনা রাখা সহজ, নাকি কোনো চিত্র দেখে সেটির বর্ণনা দেয়া সহজ? ধরুন আপনি উদ্ভিদ কোষের প্লাস্টিড অংশের বর্ণনা দিচ্ছেন। এখন আপনি প্লাস্টিডের গঠন বর্ণনা করতে গিয়ে সরাসরি মুখস্ত বললে যতটুকু শুদ্ধ বলতে পারবেন বা মনে রাখতে পারবেন, প্লাস্টিডের চিত্র দেখে বললে সেখানে শুদ্ধ হওয়ার বা সঠিক তথ্য মনে রাখতে পারার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

মুখস্ত না করে চিত্র মনে রাখুন; Image source: KulLabs

এরজন্য আপনাকে কেবল প্লাস্টিডের চিত্রটি মনে রাখতে হবে। চিত্র দেখেই আপনি প্লাস্টিডের বহিঃত্বক, অন্তঃত্বক, গ্রানাম চাকতির বর্ণনা সব বলতে পারবেন। অন্যান্য ক্ষেত্রেও চিত্র দেখে বর্ণনা করা, মুখস্ত বর্ণনা করার থেকে সহজ।

. লোকি তত্ত্ব

শার্লক হোমস দেখেছেন নিশ্চয়ই। না দেখে থাকলেও সমস্যা নেই। শার্লক হোমসকে আমরা পড়ার টেবিলে বসিয়ে দিচ্ছি না। বরং তার চিন্তার ধরন নিয়ে আলোচনা করবো। যারা শার্লক ভক্ত, তারা নিশ্চই ‘মাইন্ড প্যালেস’ কথাটির সাথে পরিচিত হয়ে থাকবেন।

কোনো বস্তু বা ব্যাক্তিকে দেখার সাথে সাথেই তাকে নিয়ে শার্লকের মাথায় নানা চিন্তা চলতে থাকে। ব্যাক্তি বা বস্তুটিকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন তিনি। সেই সাথে তার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে সেটিও ভাবতে থাকেন। শার্লকের চিন্তার এই জগতকেই বলা হয় ‘মাইন্ড প্যালেস’।

শার্লকের মাইন্ড প্যালেস; Image source: Medium

তবে বাস্তবে এর আরেকটি নাম আছে। সেটি হলো ‘লোকি তত্ত্ব’। এই তত্ত্বের বিষয়বস্তু হলো, আপনি যখন কোনো বিষয় পড়তে থাকবেন, তখন আপনার কল্পনা শক্তিকেও কাজে লাগান।

ধরুন, আপনি কোনো উপন্যাস বা গদ্য পড়ছেন। তখন সেই পাঠ্যের বিষয়বস্তুর সাথে আপনার কল্পনার জগতকেও সম্পৃক্ত করে ফেলুন। পাঠ্যের বিষয়বস্তুকে একটি ছবি হিসেবে স্মৃতিতে ধারণ করে রাখতে পারলে, তা সহজেই মনে রাখা যায় এবং ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনাও অনেক কম থাকে। এজন্য স্মৃতি স্থায়ী করার জন্য এই লোকি তত্ত্বের বিশেষ কদর রয়েছে।

. সাংকেতিক ছন্দের সাহায্যে মনে রাখা

ছোটবেলায় পরিমাপের একক শেখার সময় অনেকেই এই ছন্দের সাথে পরিচিত হয়েছিলাম। ‘কিলাইয়া হাঁকাইয়া ডাকাত মারিলে দেশের শান্তি মিলিবে’। এর মানে হলো ‘কিলো হেক্টো ডেকা মিটার ডেসি সেন্টি মিলি’। পরিমাপের এককগুলোর পর্যায়ক্রমিক ধারা মনে রাখার জন্য ছিল এই ছন্দের ব্যবহার। একইভাবে মুঘল সম্রাটদের ধারা মনে রাখারও একটি ছন্দ আছে। ‘বাবার হইলো একবার জ্বর, সারিলো ঔষধে’। অর্থাৎ ‘বাবর, হুমায়ূন, আকবর, জাহাঙ্গীর, শাহজাহান, আওরঙ্গজেব’। পর্যায় সারণির মৌলগুলোর ধারা মনে রাখার জন্যও এরকম ছন্দ ব্যবহার করা হয়।

এরকম ছন্দ ব্যবহারের সুবিধা হলো এতে একদিকে যেমন পড়ার মাঝে আনন্দ পাওয়া যায়, অন্যদিকে পড়াটি স্মৃতিতে স্থায়ী হয় অনেক বেশি।

. একই বিষয় বারবার পড়া

খুব সম্ভবত এই উপদেশটি সবজায়গায় দেয়া হয় স্মৃতিতে পড়া স্থায়ী করানোর জন্য। বারবার পড়া বলতে এটা বোঝানো হচ্ছে না যে, যা পড়েছেন সেটি একই বসায় আরও কয়েকবার পড়ুন এবং এরপর ভুলে যান। বারবার পড়া বলতে বোঝানো হচ্ছে, নতুন কোনো বিষয় বা অধ্যায় শুরু করার আগে পূর্বের বিষয় বা অধ্যায়ে কী ছিল- তা একবার দেখে নেয়া।

কোন বিষয় একবার পড়ে তা পরীক্ষার জন্য ফেলে রাখা যাবে না; Image source: ThoughtCo

কোনো কিছু পড়ার পর দীর্ঘ সময় বিরতি থাকলে তা ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেকেই কোনো একটি অধ্যায় একবার পড়ার পর পরীক্ষার আগ পর্যন্ত সেটি নিয়ে আর চিন্তা করেন না। এর ফলে পরীক্ষার আগে সেই অধ্যায় ভুলে যাওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা থাকে।

তাই পরামর্শ হলো, নতুন কোনো অধ্যায় শুরু করার আগে আগের অধ্যায়টি একবার চোখ বুলিয়ে নেয়া। এর ফলে আগের পড়া একবার হলেও নতুন করে মাথায় গেঁথে যায়, যা স্মৃতিতে অধিক স্থায়ী হয়।

সময়ের ভিত্তিতে আমাদের মস্তিষ্কে দুই ধরনের স্মৃতি কাজ করে। একটি হলো ক্ষণস্থায়ী এবং অপরটি হলো দীর্ঘস্থায়ী। ক্ষণস্থায়ী স্মৃতি কয়েক সেকেন্ড থেকে আপনার কাজ করা বা পড়া পড়তে থাকার সময় পর্যন্ত স্থায়ী হয়। আর দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি কয়েকদিন থেকে আপনার জীবনকাল ব্যাপীও স্থায়ী হতে পারে। ওপরের ৬টি পরামর্শের মূল উদ্দেশ্য হলো আপনার পড়াকে ক্ষণস্থায়ী স্মৃতি থেকে দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে রূপান্তর করা। এর ফলে আপনার পড়া ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে অনেক কম।

This is a Bengali article introducing some study hacks.

All the references are hyperlinked.

Feature image: Leverage Edu

Related Articles