অসাধারণ ডিজাইন আর চাকচিক্যময় স্থাপনা যে কারো মন জয় করে নেয়। সকলেই চেষ্টা করে সবার চেয়ে আলাদা কিছু সৃষ্টি করতে। সেটি হতে পারে সাধারণ ভবনে রঙের ছোঁয়ায় বা ভিন্ন মাত্রার ডিজাইনের মাধ্যমে। ভাবুন তো, আপনার বাড়িটি এমন যে, বাইরে থেকে দেখলে মনে হচ্ছে একটি আস্ত আনারস, কিন্তু ভিতরে ঠিক সাধারণ বাড়ির মতোই, সব ঠিকঠাক। সকলে অবাক হয়ে দেখবে আপনার বিস্ময়কর স্থাপনা। হ্যাঁ, এমন নানা ভাবনা থেকে তৈরি হয়েছে বিশ্বের অদ্ভুত এবং মনকাড়া কিছু স্থাপনা। এর আগে বিশ্বের বিচিত্র কিছু ভবনের গল্প– এই লেখাটিতে তুলে ধরা হয়েছিল পৃথিবীর নানা প্রান্তের অদ্ভুত নকশার কিছু বাড়ির কথা। আজকেও চলুন জেনে নেওয়া যাক তেমন আরও কিছু বাড়ি সম্পর্কে।
১. দ্য ক্রুকড হাউজ
বেঁকে যাওয়া বা মুচড়ে যাওয়া আকৃতির এই চারতলা বাড়িটির নকশা আসলে এভাবেই করা হয়েছে। জোটিনজি এবং জালেস্কি নামক দুজন স্থপতি এই বাড়িটির এমন অদ্ভুত নকশা তৈরি করেছিলেন। ২০০৪ সালে নির্মিত এই বিল্ডিংটির নকশা এক রূপকথার আদলে করা হয়েছে। ৪০০ বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত পোল্যান্ডের এই বাড়িটি। এখানে আপনি শপিং করতে পারবেন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে খেতে যেতে পারবেন, এমনকি এখানে রয়েছে অফিসও।
২. ফরেস্ট স্পাইরাল
জার্মানির ডার্মস্ট্যাটের একটি আবাসিক ভবন এটি। ভেনাসের চিত্রশিল্পী হান্ডার্ট ওয়াসার এর ডিজাইন করলেও, একটি বাড়ি হিসেবে রূপদানের পরিকল্পনাকারী এবং কারিগর হলেন স্থপতি হেইঞ্জ স্প্রিংম্যান। ১২ তলা এই ভবনটিতে রয়েছে ১০৫টি অ্যাপার্টমেন্ট, দালানের মাঝের জায়গায় একটি উঠান, ছোটখাটো কৃত্রিম একটি লেক এবং বাচ্চাদের জন্য একটি খেলার মাঠ।
৩. ওয়ান্ডার ওয়ার্কস
ঝড়ে উল্টে পড়া বাড়িটি আসলে মাইকেল উসারের নকশা করা একটি জাদুঘর। যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচটি স্থানে রয়েছে এমন জাদুঘর। তবে এতে প্রদর্শনীগুলো রয়েছে একটু ভিন্ন মাত্রায়। এখানে যা কিছু দেখবেন, সবই এই বিল্ডিংয়ের মতোই উল্টো।
বৈজ্ঞানিক প্রদর্শনীর সাথে সাথে শিক্ষণীয় এমন অনেক কিছু এখানে রয়েছে, যা ছোট-বড় কাউকেই নিরাশ করবে না। সবমিলিয়ে একটি দারুণ অ্যাডভেঞ্চার উপভোগ করতে পারবেন সপরিবারে এই জাদুঘরে এলে।
৪. কিউবিক হাউজ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নেদারল্যান্ডের রোটারডামে অবস্থিত উডে হাভেন (Oude Haven) ধ্বংস হয়ে যায়। সেটিকে পুনঃনির্মাণের জন্য স্থপতি পিয়েট ব্লম কিউবিক ডিজাইন দেন। এই বাড়িতে মোট ১৩টি ষড়ভূজে পেন্সিল আকৃতির কাঠামোতে রয়েছে ২৭০টি বাসা। এছাড়া রয়েছে ১,০০০ বর্গ মিটারের পার্কিং সুবিধা।
এটি শুধুই একটি কিউবিক কাঠামো নয়, কিউবগুলো এক একটি গাছ নির্দেশ করে এবং সবগুলো কিউব একত্রে একটি বনের রূপ দেয়। এছাড়াও এই কিউবিক গঠনটি পথচারী চলাচলের ব্রিজ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এর নিচে গাড়ি যাবার জন্য টানেলও রয়েছে। সব মিলিয়ে মন ভরে দেখার মতো একটি স্থাপনা এটি।
৫. দ্য কেটলি হাউজ
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে এই অদ্ভুত কেতলি আকৃতির বাড়িটির ডিজাইনার কে, মালিক কে, কে বানিয়েছিলেন এসব নিয়ে রয়েছে প্রবল তর্ক-বিতর্ক। তার মাঝে বাস্তবতা হলো এই বাড়িটি নিজে। সম্পূর্ণ স্টিলের গঠন এই কেটলি হাউজের।
৬. মাম্মি’স কাবার্ড
যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপিতে অবস্থিত এই সুন্দর দালানটি একটি রেস্টুরেন্ট। ঐ এলাকায় গেলে এক বেলা খেয়ে আসতে পারেন এই মাম্মি’স কাবার্ড থেকে। তবে যেতে হবে মঙ্গলবার থেকে শনিবারের ভেতরে।
৭. পিকেল ব্যারেল হাউজ
গ্রীষ্মকালীন বাড়ি হিসেবে খ্যাত এই অদ্ভুত ডিজাইনের বাড়িটি ১৯২৬ সালে তৈরি। এর ডিজাইনার ছিলেন একজন কার্টুনিস্ট। ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত এই বাড়িটিতে একটি ড্রয়িং রুম, একটি বেডরুম, একটি বাথরুম এবং একটি রান্নাঘর ছিল। এরপর একে স্থানান্তরিত করা হয়। ২০০৩ সালে এটিকে জাদুঘরে রূপ দেয়া হয়। বাচ্চাদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় এই জাদুঘরটি। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে খোলা থাকে এই জাদুঘর।
৮. ফুজি টেলিভিশন বিল্ডিং
জাপানের টোকিওতে ১৯৯০ সালে ফুজি টেলিভিশন ভবনটি নির্মিত। কেঞ্জো ট্যাঙ্গে এর নকশা তৈরি করেন। এই বিল্ডিংয়ের আকৃতিতে যে গোলকটি রয়েছে, তা অবজারভেশন টাওয়ার হিসেবে সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া। এখানে চারটি ফুল-ফ্রেম স্টিলের পিলার রয়েছে, যেগুলো একটি আরেকটিকে সাপোর্ট দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আসলে চারটি পিলার এই বিল্ডিং বানানোতে কাজ করা চারটি কোম্পানির প্রতীক হিসেবে তৈরি।
৯. রিপ্লে’স বিল্ডিং
রিপ্লে’স ব্লিল্ডিং রয়েছে বিভিন্ন জায়গায়, হঠাৎ করে এগুলোকে দেখলে যেন মনে হবে অবিশ্বাস্য, চোখের ভুল। যেমন- একটি বিল্ডিংকে পুরোই ভেঙে যাওয়া একটি বাড়ি মনে হলেও, এটি আসলে ব্র্যানসনে অবস্থিত রিপ্লে’স মিউজিয়াম। ১৮১২ সালে মিশৌরিতে ৮ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত এনেছিল। সেই ভূমিকম্পের ভয়াবহতাই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে মিউজিয়ামের বাইরের গঠনে। মিউজিয়ামের ভেতরেও রয়েছে শিক্ষার ভাণ্ডার। খুব দ্রুত চোখ বুলিয়ে শেষ করতে চাইলেও, আপনার অন্তত এক ঘন্টা লাগবে এই মিউজিয়াম প্রদর্শন করতে।
কী অদ্ভুত! একটি কিংকং এতো বড় বিল্ডিংটিকে বাঁকিয়ে ফেলে দিল! আসলে এটি রিপ্লে’স মিউজিয়ামের আরেকটি বিল্ডিং, যেটি কানাডার অন্টারিওতে অবস্থিত। ১৯৬৪ সালে বানানো হয় রিপ্লে’র এই দ্বিতীয় জাদুঘরটি।
১০. পলিগন রিভিয়েরা
এই বিল্ডিংটি ঢাকার বসুন্ধরা সিটির মতোই একটি শপিং মল। ইউনিবেল রোডামকো এবং সকরি নামক দুই ব্যক্তি ফ্রান্সে প্রথম এই শপিং মল বানিয়েছিলেন। এখানে কেনাকাটা ছাড়াও মুভি দেখা, খাওয়া-দাওয়া, সুইমিং ইত্যাদির সুব্যবস্থাও রয়েছে। ৭,৫৩,০০০ বর্গ ফুট এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই শপিং কমপ্লেক্স নিঃসন্দেহে ইউরোপের ব্যতিক্রমী এক স্থাপনা।
১১. ক্যাপিটাল গেট
আবুধাবিতে অবস্থিত এই বিল্ডিংটি একটি হোটেল। এর পুরো নাম ‘দ্য হায়াত ক্যাপিটাল গেট’। এই হোটেলে রয়েছে বিলাসবহুল সব রুম, তিনটি রেস্টুরেন্ট এবং একটা স্পা রুম। স্পা-ঘরটি রয়েছে ২০ তলায়। হোটেল ঘর থেকে শহরের অপরূপ রূপ দেখার সৌভাগ্যও মিলবে। সব মিলিয়ে আবুধাবির এক অভিনব পাঁচ-তারা হোটেল এটি।
১২. শ্যু হাউজ
১৯৪৮ সালে পেনিসিলভানিয়ার এক জুতা বিক্রেতার শখ হয় একটি বাড়ি বানানোর। একজন স্থপতি জোগাড় করে ফেললেন তিনি, তার হাতে একটি জুতা দিয়ে বললেন, এরকম একটি বাড়ি তার চাই। সেই স্থপতিও ডিজাইন করে দিলেন এবং ধীরে ধীরে তৈরি হয়ে গেল তার সাধের বাড়ি। প্রথম প্রথম সকলে বাড়িটি দেখে হাসি তামাশা করলেও, বর্তমানে এটি একটি পর্যটক আকর্ষণ হয়ে উঠেছে।
পৃথিবীর নানা অংশে রয়েছে হরেক রকম নকশার আরও অনেক অত্যাশ্চর্য স্থাপনা, সেসবের কথা থাকবে আগামীর কোনো লেখায়। এমনও হতে পারে, সেই জুতা বিক্রেতার মতো শখ মেটাতে গিয়ে আপনিও বানিয়ে ফেলতে পারেন এমন অদ্ভুত সুন্দর কোনো বাড়ি, আর সেটি দেখবে সারা বিশ্বের মানুষ।