আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন একদম শেষের দিকে চলে এসেছে। ইতোমধ্যে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় শেষও হয়ে গিয়েছে। অনেকের মতেই আমেরিকার ইতিহাসের সর্বকালের সবচেয়ে বিতর্কিত নির্বাচনটি হচ্ছে এবার। বিশেষ করে রিপাবলিকান দল থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নমিনেশান পাওয়াটাই এ নির্বাচনের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্য করে সবসময়ই খবরের শিরোনামে ছিলেন ট্রাম্প। হয়তো খুব দ্রুতই গোটা বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিটিও হতে চলেছেন তিনি। তাই চলুন আজ ডোনাল্ড ট্রাম্পের অস্বীকার করা কিছু বৈজ্ঞানিক সত্য সম্বন্ধে জেনে নেয়া যাক।
জলবায়ুর পরিবর্তন বা, গ্রীন হাউজ ইফেক্ট
রিপাবলিকানরা বরাবরই পরিবেশের বা, জলবায়ুর পরিবর্তন বিষয়টাকে অস্বীকার করে এসেছেন। এমনকি গ্রীন হাউজ ইফেক্ট বিষয়টাও সত্য নয় বলে তারা দাবি করে থাকেন। জীবাশ্ম জ্বালানীর উপড় ভিত্তি করে যাদের ব্যবসা দাঁড়িয়ে আছে মূলত তাদের টাকার জোড়েই রিপাবলিকানদের এই অবস্থান। তারা সর্বদাই মনে করে এই গ্রীন হাউস ইফেক্ট আর জলবায়ুর পরিবর্তন বিষয়টি বৈজ্ঞানিক এক চক্রান্ত যা কোনভাবেই সত্য নয়।
বর্তমান যুগে এ ধরণের ধ্যান ধারণা সত্যিই হাস্যকর। তবে ট্রাম্পও এ বিষয়টিকেই আলিঙ্গন করে নিয়েছেন। যখন তার নির্বাচনী প্রচার শুরুও হয়নি তারও অনেক আগে থেকেই ট্রাম্পের বক্তব্য এমনই ছিল। তিনি এটিকে চাইনিজদের তৈরি এক অতিরঞ্জিত গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি মনে করেন চাইনিজরা আমেরিকানদের শিল্প এবং ব্যবসা দখল করার ফন্দী হিসেবে এসব গুজব এবং বিভ্রান্তি চক্রান্ত করে ছড়িয়ে চলেছে।
পৃথিবীর উষ্ণতা যে বৃদ্ধি পাচ্ছে সেটিও মানেন না ট্রাম্প। এক টুইট বার্তায় তিনি জানিয়েছিলেন গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলে কিছু নেই, কারণ সেদিন নিউইয়র্ক সিটিতে বেশ ঠান্ডা পড়েছিল।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ের টুইট বার্তায় তিনি এ বিষয়ে নিজের হাস্যকর সব মন্তব্য জানিয়েছিলেন। মূলত বিভিন্ন সময়ের ঠান্ডা আবহাওয়া তার যুক্তির মূল অস্ত্র। এই গ্লোবাল ওয়ার্মিং নামক বৈজ্ঞানিক বিভ্রান্তি (ট্রাম্পের মতে) ছড়ানোকে ট্রাম্প অতিরিক্ত ট্যাক্স আদায়ের ধান্দা হিসেবেই দেখেন।
এমনকি আমেরিকার গবেষণা সংস্থা নাসাও কিন্তু আমাদের সবসময়ই মনুষ্য সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সতর্ক করে আসছে। তারা সবসময়ই বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত প্রকাশ করে থাকে যা থেকে আমরা দেখতে পাই গ্রীন হাউজ গ্যাস আর জলবায়ুর পরিবর্তন কিভাবে একে অপরের সাথে সম্পৃক্ত।
কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প আর রিপাবলিকানরা এত কিছুর পরও বিষয়টি মানতে একদমই নারাজ। এমনকি ট্রাম্পের হেয়ার স্প্রে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জানার পর ট্রাম্প বলেন, হেয়ার স্প্রে তো আমরা ঘরের মাঝে ব্যবহার করে থাকি। সুতরাং বাইরের পরিবেশের উপড় এর কোন ধরণের প্রভাব থাকা অসম্ভব।
তাকে যখন ফক্স নিউজের এক ইন্টারভিউয়ে জিজ্ঞেসা করা হয়েছিল যে, সরকারের টাকা বাঁচানোর জন্য সরকারের কোন শাখাটি তিনি প্রেসিডেন্ট হলে বাতিল করে দেবেন তখন ট্রাম্প বলেছিলেন, “ওহ! অবশ্যই পরিবেশ বিভাগ। পরিবেশগতভাবে এই শাখাটি আমাদের একরকম হত্যা করছে। এটা আমাদের ব্যবসাকে হত্যা করছে।“
অটিজমের জন্য ভ্যাক্সিন দায়ী
ডোনাল্ড ট্রাম্প খুব শক্তভাবে বিশ্বাস করেন যে, অটিজমের (এক ধরণের প্রতিবন্ধিতা) জন্য আসলে ভ্যাক্সিন দায়ী। এই ধারণাটি বিজ্ঞানীদের কাছে একদমই বাতিল এক ধারণা। ট্রাম্প গত সেপ্টেম্বরে এক বিতর্কে বলেন, “ মানুষ, যারা আমার হয়ে কাজ করে তাদের দুই বছর বয়সী সুন্দর সুন্দর বাচ্চাগুলো ভ্যাক্সিন নিতে যায় আর ফিরে আসে। কিন্তু এক সপ্তাহের মাঝে তারা অনেক অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং এখন তারা অটিস্টিক।” কিন্তু ভ্যাক্সিন আর অটিজমের এই সম্পর্ক আসলে পুরোপুরিই ভুয়া।
ঘুম
ট্রাম্প মাঝে মাঝেই গর্বের সাথে বলে থাকেন যে তার খুব বেশি ঘুমানোর প্রয়োজন হয় না। গত নভেম্বরে এ বিষয়ে বলেন, “আমি খুব বেশি ঘুম কাতুরে নই। আমি তিন থেকে চার ঘন্টা ঘুমিয়ে থাকি। আমি ঘুম থেকে উঠি আর কাজে লেগে যাই”। কিন্তু গবেষণা বলছে এত কম সময়ের ঘুম একজন মানুষের স্বাভাবিক এবং যুক্তিযুক্ত চিন্তা ধারাকে বাধাগ্রস্থ করে। তারা তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা এবং সৎ ও অসৎ নীতির মাঝেও তারা পার্থক্য করতে পারে না।
মহাকাশ
স্বস্তির বিষয় যে ডোনাল্ড ট্রাম্প পৃথিবী সমতল বা, চাঁদে মানুষ যায়নি এসব গুজবে বিশ্বাস করেন না। কিন্তু তাকে নাসার মহাকাশ বিষয়ক গবেষণায়ও খুব একটা আগ্রহী মনে হয় না। গত নভেম্বরে ১০ বছর বয়সী এক বাচ্চা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন যে তিনি নাসার বিষয়ে কি ভাবেন? জবাবে ট্রাম্প বলেন, “মহাশূন্য ভয়ঙ্কর, মহাশূন্য ভয়ঙ্কর!! বর্তমানে আমাদের আরো বড় বড় সমস্যা আছে। তুমি কি বুঝেছ? সেগুলোর সমাধান করতে হবে। আমাদের হাতে আসলে খুব বেশি টাকা নেই।“ কিন্তু আমেরিকার বর্তমান অর্থনীতির পেছনে নাসার অবদান অনেক বড়। নাসার পেছনে খরচ করা প্রতি ১ ডলারের বিবিময়ে আমেরিকার লাভ হয় ১০ ডলার করে।