Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বাংলাদেশের আদিবাসী – মারমা, জৈন্তিয়া, সাঁওতালদের কথা

ভিন্ন জীবনধারা, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি আর অনন্য শিল্পশৈলীর অফুরান মিশ্রণে ঘেরা আদিবাসী ও আদিবাসী সম্প্রদায়। এই লেখনীর আবেষ্টনীও এই আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোকে ঘিরেই।

মারমা

মারমা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নৃগোষ্ঠী। তারা জাতিগতভাবে বর্মী বা বার্মিজদের উত্তরসূরি এবং মারমা লেখক ক্যে শাই প্রো এর মতে, মারমা নামটির উৎপত্তি ‘ম্রাইমা’ থেকে যা কিনা মায়ানমারের জাতীয়তাবাদ থেকে আগত। মারমাদের ভাষা বার্মিজ থেকে আগত একটি উপভাষা এবং তাদের বর্ণমালা কে ‘মারমাজা’ বা ‘মারিমাচা’ বলে। মারমা পুরুষরা কোমর থেকে হাঁটু অবধি লম্বা ‘দেয়াহ’ পড়ে। কেউ কেউ ‘খিয়ক’ নামক কোমর থেকে গোড়ালি অবধি লম্বা কাপড় পড়ে। উপরিভাগে ‘বারিস্তা’ নামক পোশাক এবং মাথায় ‘খবং’ নামক পাগড়ি পরিধান করে। মহিলাদের পরিধেয় হিসেবে প্রচলন রয়েছে উপরিভাগে ‘বেদাই উঙ্গি’ এবং নিম্নভাগে ‘থবিং’ কিংবা ‘থামি’র। এছাড়াও পুরুষ এবং মহিলা উভয়েরই লুঙ্গি পড়ার চল আছে। তাদের সমাজব্যাবস্থাও পিতৃতান্ত্রিক এবং পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারে ছেলে ও মেয়ের অংশীদারিত্ব সমান।

মারমাদের তৈরি ঘর

মারমাদের তৈরি ঘর

মারমারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং তাদের ধর্মগ্রন্থ হলো ‘খাদুত্তিয়াং’। তাদের ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- সাংগ্রিয়া, বৌদ্ধ পূর্ণিমা, কঠিন চীবর দান, ওয়াহগ্যই, ওয়াছো পোয়ে, পইংজ্রা পোয়ে ইত্যাদি। মারমা রা ভাত, সবজি, মাছ-মাংস, ফল-মূল, কন্দ খেয়ে থাকে। তোহজা, নাপি/আওয়াংপি ইত্যাদি তাদের বিশেষ খাবার। মারমারা জুম চাষ, দিনমজুরি, ঝুড়ি বানানো, হাতে কাপড় বোনার কাজ করে। মারমারাও ধীরে ধীরে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠছে।

মারমা নৃগোষ্ঠী

মারমা নৃগোষ্ঠী

জৈন্তিয়া

সিনতেং (Synteng) গোত্রের অন্তর্ভুক্ত এ গোষ্ঠীর দৈহিক গড়ন মঙ্গোলয়েড। তাদের কিছু অংশ সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় বসবাস করে। তাদের নিজস্ব ভাষা থাকলেও বর্ণমালা নেই। জৈন্তিয়াদের স্বাক্ষরতার হার শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ যা বৃহত্তর সিলেটের সকল আদিবাসীর মধ্যে সর্বোচ্চ। জৈন্তিয়া নারীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পড়ে এবং মাথায় খাসিয়াদের অনুরূপ কাপড় বাঁধে। তারা মূলত কৃষিকাজ করে, পান, সুপারি প্রভৃতি উৎপাদন করে। শূকরের মাংস তাদের অন্যতম প্রিয় খাবার। এছাড়াও তারা ভাত, সবজি, মাছ, খাসির মাংস, মুরগী, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, চা প্রভৃতি খেতে পছন্দ করে। ‘হকতই’ তাদের অন্যতম উৎসব যা দুইদিনব্যাপী পালিত হয়। ‘যত নৃত্য, তত ফলন’ – এই প্রবাদে বিশ্বাসী এই নৃগোষ্ঠী বিভিন্ন উৎসবে নিজস্ব ভঙ্গিমায় নৃত্য পরিবেশন করে।

সাঁওতাল

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বসবাসকারী অন্যতম প্রাচীন এবং বৃহৎ নৃগোষ্ঠী সাঁওতাল। তারা উত্তরের জেলাসমূহ যেমন- দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড়ের এলাকায় তাদের বসতি। তেভাগা ও স্বদেশী আন্দোলন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পাশাপাশি নানান ঐতিহাসিক ঘটনায় রয়েছে সাঁওতালদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। সাঁওতালরা তাদের পরিচয় দেয় ‘হড়’—অর্থাত্ মানুষ হিসেবে। মাটির তৈরি প্রায় জানালাবিহীন নিচু দরজাবিশিষ্ট ছোট ছোট ঘরে এই নৃগোষ্ঠী থাকে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা তাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সাঁওতাল মহিলারা বালা, হাঁসুলি, মল ইত্যাদি অলংকারাদি পরতে এবং খোঁপায় ফুল গুঁজতে পছন্দ করে। সাঁওতালদের পোশাক ‘পাঁচি’, ‘পাঁচাতাত’ ও ‘মথা’। তবে পুরুষরা থান কাপড়ের ধুতি, লুঙ্গি, গেঞ্জি, গামছা এবং নারীরা হাতেবোনা শাড়িও পড়ে।

সাঁওতাল আদিবাসী সম্প্রদায়

সাঁওতাল আদিবাসী সম্প্রদায়

সাঁওতালদের মধ্যে ছয় রকম বিবাহপ্রথা চালু আছে এবং শুধুমাত্র বহিঃগোত্র বিবাহের চল আছে। অভিভাবকের পছন্দানুসারে বিয়েকে সাঁওতালি ভাষায় ‘ডাঙুয়াবাপলা’ বলে। সাঁওতালরা মূলত কৃষিকাজ করে, কৃষিকাজের যন্ত্রপাতি তারা নিজেরাই তৈরি করে এবং এগুলোতে শ্রদ্ধাবশত সিঁদুরের ফোঁটা দেয়। তারা নবান্ন, হোলি , সোহরাই, দাসাই, বাহা প্রভৃতি উৎসব পালন করে। তাদের রয়েছে নিজস্ব গান, সংস্কৃতি এবং নৃত্যভঙ্গিমা। মাদল, দমা ও বাঁশি তাদের প্রধান বাদ্যযন্ত্র। তাদের প্রধান খাদ্য ভাত, এর পাশাপাশি মাছ, মুরগী, ইঁদুর, বেজী, খরগোশ, গুঁইসাপ, সবজি, শূকর, কাঁকরা প্রভৃতি খায়। সাঁওতালী ভাষায় দেবতাকে বলে ‘বোংগা’। তাদের প্রধান দেবতা সূর্য। পাহাড়ের দেবতা হলো ‘মারাংমুরো’ এবং গৃহদেবতার নাম ‘বোঞ্চার’। শবদাহ করার নিয়ম থাকলেও বর্তমানে অর্থাভাবে তারা মৃতদেহ কবর দেয়।

গারো

গারোরা নিজেদের পরিচয় দেয় ‘মান্দি’ যার অর্থ মানুষ। তারা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ ও সিলেট এর আদিবাসী সম্প্রদায়। গারোরা শক্তশালী মাঝারি দেহাবয়ব, চ্যাপ্টা নাক ও ছোট চোখ বিশিষ্ট হয়। গারোদের আদি ধর্মের নাম সাংসারেক। তবে বর্তমানে শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ। গারোদের প্রধান দেবতার নাম তাতারা রাবুগা। গারোদের ভাষা হলো মান্দি ভাষা।

বাংলাদেশের গারো নৃগোষ্ঠী

বাংলাদেশের গারো নৃগোষ্ঠী

গারোরা মুরগী, হাঁস, গরু, ছাগল, শূকর প্রভৃতি খায়, তারা গরুর দুধ খায়না। বিড়াল গারোদের টোটেম হওয়ায় বিড়ালও খায় না। পুটি মাছের শুটকি দিয়ে তৈরি ‘নাখাম কারি’ তাদের খুব প্রিয় খাবার। মদ তাদের অন্যতম প্রিয় পানীয়। গারোদের মধ্যে গোত্রবিবাহ নিষিদ্ধ। গারোরা মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় বিশ্বাসী। সমাজে ছেলেরা অবহেলিত এবং মাতার মৃত্যুর পর পিতার প্রতি কন্যার কোন দায়িত্ব থাকেনা। তাদের আদি পেশা জুমচাষ হলেও বর্তমানে তারা আধুনিক কৃষিকাজের পাশাপাশি আরও নানান পেশায় জড়িত হয়েছে।

ত্রিপুরা

ত্রিপুরারা চট্টগ্রাম অঞ্চলে বাস করে। তারা ককবরক বা হিলাম ভাষায় কথা বলে। তাদের কোন নিজস্ব বর্ণমালা নেই। পুরুষেরা খবং, ধুতি এবং মেয়েরা থামি, রিং-নাই, খাদি পড়ে। পুরুষ এবং মহিলাদের জাতীয় পোশাক যথাক্রমে রিমতাই, কুবাই এবং রিনাই, রিসা। মহিলারা ভিন্নধর্মী গহনাও পরে। তাদের নিজস্ব দেবতার পাশাপাশি অনেকে হিন্দু ধর্মের কিছু দেবতারও আরাধনা করে। তারা চাষের পাশাপাশি অন্য পেশায়ও নিয়োজিত।

মণিপুরী

তারা বাংলাদেশের সিলেট ও ভারতের মণিপুরের অধিবাসী। তাদের ভাষা মেইতেই লন এবং তারা বিষ্ণুপ্রিয়া, মৈতৈ ও পাঙন নামক শ্রেণীতে বিভক্ত। তাদের সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী যার মধ্যে মূখ্য হচ্ছে তাদের গীত ও অপূর্ব নৃত্য। মণিপুরীরা অপোকপা এবং চৈতন্য ধারার সনাতনী ধর্মমতে বিশ্বাস

নৃত্যরত মণিপুরী নারী

নৃত্যরত মণিপুরী নারী

তারা দোল পূর্ণিমায় মুক্তমাঠে নৃত্য করে। তাদের অন্যতম উৎসব রাসপূর্ণিমা। হাতে বোনা কাপড় ও হস্তশিল্পে মণিপুরীরা অত্যন্ত দক্ষ।

মুরং

মুরং শব্দটির একবচন ‘ম্রো’ যার অর্থ মানুষ। ম্রো ভাষায় তারা নিজেদের মারুচা বলে থাকে। মেয়েরা ‘ওয়াংকাই’ এবং পুরুষেরা ‘ডং’ পরে। ছেলেরা মাথায় চিরুনী এবং মেয়েরা ফুল গুঁজে রাখে। একই গোত্রে বিবাহ মুরং সমাজে নিষিদ্ধ। মুরংরা শরীরে রংয়ের প্রলেপ ব্যবহার করে। তারা প্রকৃতি পূজারী এবং শুধুমাত্র ইহকালে বিশ্বাসী। তাদের নিজস্ব নাচ এবং ক্লং নামক বাশির ব্যবহার রয়েছে।

এছাড়াও বাংলাদেশে আরো অসংখ্য আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে যাদের জীবনাচার এবং প্রকৃতির স্বরূপ এ দেশের আলো-মাটির সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। তাদের জীবিকা, দক্ষতা, হাজার বছরের সংস্কৃতি এবং লোকসাহিত্য যুগে যুগে বাংলার কৃষ্টি ও ইতিহাসের পাশাপাশি অর্থনীতিকেও করেছে সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের এইসব আদিবাসী জনগোষ্ঠীর পরতে পরতে যেন লুকিয়ে আছে নতুন রঙের ছটা!

 

This article is in Bangla language. It's about the culture and lifestyle of the people of Jainta, Santal and Marma and some other tribes of Bangladesh

 

References:

১) http://www.ebbd.info/indigenous-communities.html

২) বাংলাদেশের নৃ-গোষ্ঠী নাট্য - ড. আফসার আহমদ

৩) http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2010-10-23/news/103414

৪) http://www.thedailystar.net/news-detail-46025

৫) http://mirrorofbd2012.blogspot.com/2012/04/tribal-of-bangladesh-chakma.html#.WEL5RX2IVKE

৬) http://nijhoom.com/tribal-people-bangladesh/

৭) https://wonderfulbangladesh.net/2012/10/05/

৮) http://bn.banglapedia.org/index.php?title=%E0%A6%89%E0%A6%AA%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%80%E0%A6%AF%E0%A6%BC_%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A6%BF

৯) https://wonderfulbangladesh.net/2013/06/22

Featured Image: chtbdland.blogspot.com 

Related Articles