ভালোবাসা দিবসের আর খুব বেশিদিন বাকি নেই। কী ভাবছেন? কী করবেন এবারের ভালোবাসা দিবস ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে? সঙ্গী আছে এমন কেউ হলে অবশ্য আলাদা করে কোনো পরিকল্পনা করার মানেই হয় না। কারণ, ঘুরতে যাওয়া, দুজন মিলে মুভি দেখা, উপহার কিনে দেওয়া আর একসাথে খাবার খাওয়ার ব্যাপারগুলো চিরাচরিত নিয়মেই ঘটবে আপনার ক্ষেত্রে ভালোবাসার দিনটিতে। তবে আপনি যদি একা হন, আপাতত কারো সাথেই আপনার কোনোরকম ভালোবাসার সম্পর্ক না থাকে তাহলে এই ভালোবাসার দিনটিতে আপনি নিজের জন্য, নিজের মতো করে পরিকল্পনা করতে পারেন।
হ্যাঁ, হয়তো অনেক বেশি আলাদা হবে সেটা অন্যদের চাইতে, হয়তো বন্ধুরা যখন তাদের ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন সব খবর জানাবে আর ছবি পোস্ট করবে তখন সেটা আপনাকে একটু হলেও হতাশ করে তুলবে। তবে বিশ্বাস করুন, একলা ভালোবাসা দিবস কাটানোর আনন্দ হয়তো আপনি ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে অন্য সবার মতো ভালোবাসা দিবস কাটিয়েও উপভোগ করতে পারবেন না। তাহলে? চলুন, চট করে এই ভালোবাসা দিবসে আপনার সারাদিনের কার্যক্রম সাজিয়ে নেওয়া যাক!
অতিরিক্ত ঘুমোবেন না
আপনি শিক্ষার্থী হন কিংবা চাকুরীজীবী, ১৪ই ফেব্রুয়ারি ঘুম থেকে হয়তো আপনার উঠতে ইচ্ছে না করতে পারে। ব্যাপারটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। মনে মনে হয়তো ভাববেন- উঠে কী হবে? কিন্তু আপনার এই অতিরিক্ত সময় বিছানায় শুয়ে কাটানোটাও কিন্তু দিনের শেষে আপনাকে হতাশ করে তুলতে পারে। ঘুম থেকে দেরী করে উঠলেও আপনি নিশ্চয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একবার হলেও ঢুঁ মারবেন। আর তখন অন্যদের সারাদিনের আনন্দ উদযাপনকে দেখে স্বাভাবিক নিয়মেই মন খারাপ হবে আপনার। তাই ঠিক সময়ে ঘুম থেকে উঠুন। অফিস থাকলে অফিসে চলে যান। সারাদিন আনন্দের সাথে কাজ করুন। ক্লাস থাকলে ক্লাসেও ঘুরে আসুন। আপনার ভালোবাসার মানুষ নেই কিংবা দূরে চলে গিয়েছে বলে নিজেকে আরো একা বানিয়ে দেওয়ার কোনো মানেই হয় না।
মুভি দেখে নিন
হাতে কোনো কাজ না থাকলে, কিংবা অফিসের পরে মুভি দেখে আসুন। এমন কোনো মুভি কি আছে যেটি অনেকদিন ধরে দেখবেন ভেবে রেখেছেন, অথচ দেখা হয়নি? তাহলে এই সুযোগ কাজে লাগান। হলে কিংবা বাসায়- পছন্দের মুভি নিয়ে বসে পড়ুন। সময় ভালো কাটবেই!
বই পড়ুন
বই পড়তে পছন্দ করেন? তাহলে ভালোবাসা দিবস কিংবা অন্যকোনো দিন- যেটাই হোক না কেন, নিজের পছন্দের বইটি পড়তে শুরু করুন। আজকালের ব্যস্ততার ভীড়ে হয়তো বই পড়ার অভ্যাসই চলে যেতে শুরু করেছে। অনেকদিন ধরেই হয়তো বই পড়তে আর সময় কিংবা মানসিক শক্তি পান না আপনি। সারাদিন বন্ধু, আড্ডা আর অন্তর্জালের দুনিয়ায় ঘুরে, অফিসের ঝামেলা কাঁধে নিয়ে কার ইচ্ছে করে বইয়ের পাতায় খানিকটা সময় চোখ বুলাতে? ভালোবাসার দিনে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন বইয়ের মাঝে। এতে করে বহুদিনের বন্ধু বইকে পাশে পাবেন আপনি, নতুন করে খানিকটা সময় কাটানো হবে বইয়ের সাথে, সেইসাথে সময়টাও ভালো কাটবে।
পছন্দের খাবারটি উপভোগ করুন
অনেকদিন হলো বাইরে কোথাও খেতে যাওয়া হয় না? ১৪ই ফেব্রুয়ারি চারপাশে ভীড় থাকবে অনেক। তবে এই ভীড়ের মাঝেও নিজেকে পছন্দের খাবার স্থানে নিয়ে যান আর উপহার দিন চমৎকার কোনো খাবার। পেট যখন খুশি থাকে, মনও তখন খুশি থাকতে বাধ্য হয়। আর কথাটি আপনার ক্ষেত্রেও কিন্তু খুব একটা ভুল কিছু নয়। তাই নিজেকে নিজের সবচাইতে পছন্দের খাবারটি উপহার দিন।
পছন্দের কাজটি করুন
মানুষের শখ নানা রকমের হয়। কেউ ভালোবাসে কয়েন জমাতে, কেউ বাগান তৈরি করতে, কেউ আবার রান্না করতে। তবে আপনার শখ যেটাই হোক না কেন সেটাকে কিন্তু সময় দেওয়াটা খুব দরকার। হতে পারে, আপনি আপনার পোষা প্রাণীটির সাথে সময় কাটাতে ভালোবাসেন। কিন্তু খুব বেশি সময় তাকে দিতে পারেন না। ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস। দিনটি কেবল যে প্রেমিক-প্রেমিকার প্রতি ভালোবাসার তা কিন্তু নয়। এই দিনে আপনি আপনার বাগানের গাছ, পোষা প্রাণী কিংবা নিজের প্রতিও ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারেন। এতে করে আপনি ভালো বোধ করবেন।
পরিবারের সাথে সময় কাটান
এমন না যে আপনি আপনার পরিবারের সাথে সময় কাটান না। হয়তো প্রায় সময়েই কথা হয়ে থাকে সবার সাথে। কিন্তু বর্তমান যুগে এক পরিবারে, এক বাসায় থাকা সত্ত্বেও খুব কম সময় পরিবারের সদস্যরা একে অন্যের সাথে কথা বলার সময় পান। খুব না দেখতে পারার মতো একটি দেয়াল যেন না চাইতেও তৈরি হয়ে যায় সবার মধ্যে। ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসুন নিজের পরিবারকেও। বাবা-মা, ভাই-বোন, বয়স্ক সদস্য- সবার সাথে কথা বলুন। ইচ্ছে হলে তাদের জন্য কিছু উপহার কিনে নিতে পারেন। একসাথে খানিকটা সময় কাটানোর জন্য সবার সাথে মুভি দেখতে যেতে পারেন। নিজেকে খুব ভালো রাখার জন্য পরিবারের সান্নিধ্য ছাড়া আর কোনো কিছুই সবচাইতে সেরা হতে পারে না।
নিজেকে উপহার দিন
ভালোবাসা দিবসে সবাই একে অন্যকে উপহার কিনে দিচ্ছে। দেখে মন খারাপ হতেই পারে আপনার। কিন্তু একবার ভেবে দেখুন তো, ভালোবাসা দিবসে কেন অন্য কেউ আপনাকে উপহার কিনে দেবে? আপনি নিজেই কি নিজের জন্য যথেষ্ট নন? আপনি কি নিজেকে কোনো অংশে কম ভালোবাসেন? নিশ্চয় না। আর তাই নিজের প্রতি এই ভালোবাসা থেকেই নিজেকে উপহার দিন। হতে পারে সেটা কোনো বই, হতে পারে নতুন একটি জামা। আর কিছু না হলে নিজেকেই একটি গোলাপ ফুল উপহার দিয়ে দেখুন। তবে যেটাই হোক, দেখবেন, আপনার মন ঠিক ভালো হয়ে গিয়েছে। উপহার- সেটা অন্য কেউ দিক কিংবা আপনি নিজে, ভালো তো লাগবেই, তাই না?
প্রাক্তনের সাথে কথা বলুন
খুব সাহসী কাজ এটি। তবে অনেক এবশি কার্যকরও। হতেই পারে যে, আপনার প্রাক্তনের সাথে খুব বাজেভাবে আপনার সম্পর্ক ভেঙ্গে গিয়েছে, হয়তো খুব বেশি সময় হয়নি, হয়তো আপনি চান না তার সাথে কথা বলতে। তবে যেটাই হয়ে থাকুক না কেন, ভালোবাসার দিনে নিজের প্রাক্তনকে ফোন দিন। অন্তত একটি বার্তা তো পাঠানোই যায় ফোনে। তাকে শুভেচ্ছা জানান। যদি দুজনের মধ্যেও ইগো সংক্রান্ত সমস্যা থেকে থাকে হয়তো আপনার এই একটি পদক্ষেপই সেই সমস্যাটিকে দূর করে দিতে সক্ষম হবে। আর যদি আপনার প্রাক্তন তার নতুন জীবন আর নতুন সম্পর্ক নিয়ে খুশি থাকে তাহলে তার সাথে কথা বলে পুরনো সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে অনেক বেশি সহজ হবে আপনার পক্ষে।
বন্ধুদের সাথে সময় কাটান
আর এই সবকিছুর পরেও যদি কোনো কাজ না হয় তাহলে বন্ধুরা তো আছেই। এমন তো নয় যে আপনার সমস্ত বন্ধুই কারো না কারো সাথে ভালোবাসার সম্পর্কে আবদ্ধ। আরো অনেকেই নিশ্চয় আছে যাদের ১৪ই ফেব্রুয়ারি কাটছে আপনার মতো করে। তাদেরকে ডাকুন আর নিজেদের মতো করে দিনটিকে উপভোগ করুন। আর বন্ধুর চাইতে বড় কোনো আনন্দ তো হতেই পারে না!
ফিচার ইমেজ; happy life… – Blogspot