Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আপেল, স্বাস্থ্য আর কিছু কথা

An apple a day keep the doctor away” অর্থাৎ ‘দিনে একটি আপেল ডাক্তারকে আপনার কাছে থেকে দূরে রাখতে সম্ভব’ কথাটি ছোটবেলায় আপনারা সবাইই একবার না একবার শুনেছেনই। কিন্তু আসলেই কি তাই? হয়ত সম্ভব যদি আপনি সে আপেলটি ডাক্তারের দিকে ছুড়ে দিন। পৃথিবীতে এখনও এমন কোনো মহৌষধ পাওয়া যায়নি যার মধ্যে সকল প্রয়োজনীয় উপাদান উপস্থিত। তবে আপেলে এমন অনেক রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতি রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

Source: washingtonpost.com

ইতিহাসের পাতায় আপেল

আপেলের মূল উৎপত্তি এবং প্রচার কিভাবে হয়েছে সেটা নিয়ে আজও চলছে আলোচনা। এমনকি একসময়ে ইংরেজি আপেল শব্দটি দিয়ে গাছে ধরে এমন যেকোনো গোল ফলকেই বোঝানো হত। তবে ধারণা করা হয় কাজাখস্তানের পর্বতে বর্তমান আপেলের উত্তরসূরি জাত বুনো পরিবেশে জন্মাতো। বনের কিছু জায়গায় এমন কিছু জাতের আপেল গাছ ছিল, যা প্রায় ৬০ ফুট লম্বা হত। এই আপেলগুলো মার্বেল থেকে শুরু করে ক্রিকেট বলের সমান হত এবং হলুদ, সবুজ, লাল, বেগুনী হরেক রকমের রঙের হয়ে থাকত।

বিভিধ রকমের আপেল; Source: lululuvsmakeup.com

বিখ্যাত সিল্ক রোডে যাতায়াতকালে এই বনের মধ্যে দিয়ে যাওয়া লাগত। তখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ভ্রমণকারীরা এই ফল পশ্চিমে নিয়ে যান। এই যাত্রাপথে বিভিন্ন সংকরায়ণ হলেও তখনও এই ফল খাওয়ার উপযোগী ছিল না; সাইডার উৎপন্ন করার জন্যই ব্যবহার করা হয়ে থাকত।

আপেল থেকে প্রস্তুত করা সাইডার; Source: sensualappealblog.com

চাইনিজদের গাছ ‘কলম করার’ হাত ধরে আপেল মানুষের খাবারের তালিকায় নিজের অবস্থান খুঁজে পায়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে গ্রিক এবং রোমান সভ্যতায়ও আপেল তার জায়গা করে নেয়। রোমান দার্শনিক প্লিনির মতে, রোমানরা প্রায় ২৩ জাতের আপেল চাষ করেন এবং কিছু তাদের সাথে ইংল্যান্ড নিয়ে যান। ধারণা করা হয় “লেডি অ্যাপেল” নামে একটি জাতের আপেল আজও পাওয়া যায়। এরকম সংকরায়নের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে এশিয়া, ইউরোপ হয়ে বিশ্বের অনেকাংশেই ছড়িয়ে গিয়েছে।

লেডি আপেল; Source: melissas.com

An apple a day এর সূচনা

শুনতে অনেক পুরানো একটি কথা বলে মনে হলেও এই কথাটির সর্বপ্রথম হদিস পাওয়া ১৮৬৬ সালে “Notes and Queries” নামক  ওয়েলসের একটি ম্যাগাজিনে। তাদের ফেব্রুয়ারি ১৮৬৬ সালের সংস্করণে উল্লেখ করা হয়- “Eat an apple going to bed and you will keep a doctor from earning his bread”। বিংশ শতাব্দীতে এই বিবৃতির বেশ কয়েকটি ভিন্ন সংস্করণ পাওয়া গেলেও বর্তমানে আমরা যে সংস্করণ ব্যবহার করি তা শোনা যায় এলিজাবেথ রাইটের একটি রেকর্ডিং থেকে। প্রায় ১৫০ বছর পরেও এই কথাটি প্রায়শ শুনতে পাওয়া যায়। কিন্তু এ কথায় কিছুটা সত্যতা না থাকলে নিশ্চয় এরকম আলোচ্য হত না, তাই না? তাহলে চলুন দেখা যাক আপেলের কিছু উপাদান এবং তাদের আমাদের স্বাস্থ্যের উপরে এর প্রভাব।

পেক্টিন: পেক্টিন একধরনের দ্রবণীয় খাদ্যআঁশ, যা রক্তচাপ এবং গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। তাছাড়া এটি LDL বা শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমায়।

বোরন: আপেলে থাকা প্রচুর পরিমাণে থাকা এমন একটি পুষ্টি উপাদান যা শক্তিশালী হাড় এবং সুস্থ মস্তিষ্কের জন্য সহায়ক।

কুয়ারসেটিন: ফ্ল্যাভনয়েড জাতীয় এই উপাদান বিভিন্ন রকমের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর (বিশেষ করে স্তন এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের) ক্ষেত্রে সফল হবার সম্ভাব্যতা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া এই উপাদান আলঝেইমার জাতীয় রোগের চিকিৎসায় সহায়তা করে বলে গবেষণায় জানা গিয়েছে।

ভিটামিন সি: ভিটামিন সি দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সহায়তা করে, যা আমাদের সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক।

ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট: আপেলে ভিটামিন এ এবং ই এর মতো বিভিন্ন ধরনের ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট থাকে, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এর মধ্যে অন্যতম হল হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং এজমার ঝুঁকি কমানো।

এসবের ভিত্তিতে বলা যায়, নিয়মিত আপেল খাওয়ার মধ্য দিয়ে আপনার দেহের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং বিভিন্ন রকমের ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পাচ্ছে। কিন্তু এই একটি ফলই কি হতে পারে জীবন বাঁচানো মহৌষধ? হয়ত না। বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে দেখানো হয়েছে স্বাস্থ্যের উন্নতি সম্ভব যদি কেউ সপ্তাহে তিন থেকে পাঁচবার আপেল খান। তবে সকল অসুখের প্রতিরোধ এই একটি ফল দিয়ে হয়ত সম্ভব হয়ে উঠবে না। আর এমনটাও না যে একমাত্র আপেলের মধ্যেই এই সকল উপাদান রয়েছে। ভাল স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপাদান অন্যান্য ফলের মধ্যেও খুঁজে পাওয়া যায়। কলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে যা সুস্থ হৃদযন্ত্র এবং যথাযথ পেশীর সঞ্চালনের জন্য প্রয়োজনীয়। জামে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যআঁশ থাকে এবং স্ট্রবেরিতে ভিটামিন সি ও খাদ্যআঁশ থাকে।

যদি সকল ফলেই কম বেশি স্বাস্থ্যসহায়ক পুষ্টি উপাদান থাকে, তাহলে কেন শুধুমাত্র আপেল জায়গা পেল প্রবাদের মধ্যে? এর উত্তর হয়ত এই যে, যখন প্রবাদটির সূচনা হয় তখন এই ফল উৎপাদন করা তুলনামূলক সোজা (বর্তমানেও সোজা) ছিল। একবার উৎপাদন করা হলে এই ফল প্রায় এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণাগারে রেখে দেয়া যায়। সাম্প্রতিকে গবেষণায় জানা যায়, অনেক ফল এবং সবজির ব্যতিক্রম হয়ে আপেল সংগ্রহের প্রায় ২০০ দিন পর্যন্ত তার পুষ্টি গুণ ধরে রাখতে সক্ষম। তবে পুষ্টিবিদগণ শুধুমাত্র আপেলের চাইতে বিভিন্ন ধরনের ফল সেবন করতে উৎসাহী করেছেন যাতে অন্যান্য উপাদানও শরীরের মধ্যে প্রাকৃতিক মাধ্যমের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করতে পারে।

কিন্তু প্রবাদটি অক্ষরে অক্ষরে গ্রহণ করা ঠিক হবে না বলে ধারণা করছেন একদল গবেষক। JAMA Internal Medicine নামক মেডিকেল জার্নালে এই প্রবাদের সত্যতা নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে সকল অংশগ্রহণকারীদের (৮,৩৯৯ জন) দুই ভাগে বিভক্ত করে একদলকে প্রতিদিন আপেল খাওয়ানো হয়। পরবর্তীতে দেখা যায়, দুই দলের মধ্যে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার হার প্রায় সমানই ছিল, তবে প্রতিদিন যারা আপেল খেয়েছিলেন তাদের প্রয়োজনীয় ওষুধের পরিমাণ তুলনামূলক কম ছিল। এই গবেষণার মাধ্যমে তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, এই প্রবাদটি খুব একটা কার্যকরী নয়। তাদের মতে, এখন প্রবাদটি অনেকটা এরকম হওয়া উচিত- An apple a day keeps the pharmacist away!

স্যান ডিয়েগোর পুষ্টিবিদ লাউরা ফ্লোরেসের মতে, “অধিক পরিমাণে আপেল খেলে তা আপনার স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে না, তবে তা আপনার ওজন বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।” তাছাড়া আপেল কিছুটা অম্লধর্মী। যার কারণে আপনার এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ ব্যাপারে লন্ডনের কিংস কলেজের প্রফেসর ড্যাভিড বার্লেট বলেন, দিনে একটি আপেল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভাল, কিন্তু তা খেতে সারাদিন লাগিয়ে দিলে তা সমস্যার কারণ হিসেবে দেখা দিতে পারে। এজন্য দন্তচিকিৎসকেরা আপেল খাওয়ার ক্ষেত্রে কেটে খেতে এবং পিছনের দিকের দাঁত দিয়ে খেতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাছাড়া তারা এই পরামর্শও দিয়ে থাকেন, আপেল খাওয়া শেষ হলে মুখ ধুয়ে নিতে, যাতে দাঁতের সাথে লেগে থাকা এসিড ও চিনি ধুয়ে যেতে পারে এবং দাঁতের কোনো ক্ষতি না হয়।

ফিচার ইমেজ: snorgtees.com

Related Articles