Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ব্যস্ততা কমিয়ে সফলতায় পৌঁছানোর কৌশল

একটি গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। একবার এক ব্যক্তি ঘোড়ায় করে যাচ্ছিল। রাস্তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল তার এক বন্ধু। বন্ধুটি তার কাছে জানতে চাইলো সে কোথায় যাচ্ছে। লোকটি উত্তর দিল, “আমি জানি না, ঘোড়াকে জিজ্ঞেস কর।

ঘরে এবং বাইরে জীবনের গতি এবং আতিশয্যের মধ্যে অনেকেই নিজেদেরকে এই ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়ানো লোকটির সাথে নিজেদের মিল পেয়ে থাকবেন। শুধুই ছুটে চলা, কেন ছুটছি, গন্তব্য কী- সবই যেন নিজেদের কাছে অজানা। এই অবিশ্রান্ত ব্যস্ততায় অনেক কাজ, কিন্তু সময়ের বড্ড অভাব। ব্যাপারটি এমন যেন কাজের চাপ এবং কত বেশি করছি তার উপরেই বাঁচা-মরা নির্ভর করছে। কিন্তু বেশি করলেই কী ফল লাভ করা যায়? কম করে বা সময়ের সঠিক ব্যবহার করে কি সফলতা পাওয়া যায় না?  অবশ্য তা সবাই পারে না।

শুনতে যতটা সহজ, ব্যাপারটি ঠিক ততটাই কঠিন। কারণ অনেকেই মনে করে ‘কম করা’ মানে অলস বসে থাকা। কিন্তু আসলে তার ঠিক উল্টো। কম করা মানে হলো যতটুকু করবেন ততটুকু অর্জনই নিশ্চিত করা। এতে করে সফলতা এবং মানসিক প্রশান্তি দুই-ই পাওয়া যায়।

ব্যস্ততার মাঝে প্রতি মুহূর্তে ছুটে চলেছে সকলে, অর্জন কতটুকু সেদিকে হয়তো খেয়ালই নেই কারও; source: linkedin.com

একটি নামকরা প্রতিষ্ঠানের সিইও, মার্ক লিজার এর মতে, পাঁচটি বিষয় রয়েছে যেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে খুব সহজেই আপনি কম করে বেশি অর্জনে সক্ষম হবেন, কেননা এগুলো আপনার প্রয়োজনীয় সময়কে নষ্ট করে। সময় লাগবে নিজের ভেতরে পরিবর্তন দেখতে। কিন্তু একবার পরিবর্তন এসে পড়লে নিজের জীবনের উন্নতি নিজেই উপলব্ধি করতে পারবেন। তবে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এ বিষয়গুলোকে বাধা মনে করা হয়, বাধাগুলোকেই এ যুগে সফলতার দুয়ার করে নেয়া সম্ভব। এই পাঁচটি বিষয় হলো- ভয়, ধারণা, বিক্ষেপ, বাধা এবং ব্যস্ততা।

চলুন জেনে নেয়া যাক বিস্তারিত।

১) ভয়

ভয় আমাদের ব্যস্ততাকে অকারণেই বাড়িয়ে দেয়; source: randalldsmith.com

ভয় হতে পারে এক প্রয়োজনীয় বন্ধু। ভয় লক্ষ্য স্থির করে, নিরাপদ রাখে এবং অনেক সময় ভয় বাঁচিয়েও রাখে। অসুস্থ হবার ভয় আপনাকে ধূমপান থেকে দূরে রাখবে, ভালো খেতে উৎসাহিত করবে। এ যুগে ভয় আপনাকে সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখতে, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা বজায় রাখতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। মাঝেমাঝে আবার ‘ভয় পেয়েছি’ না বুঝতে পারলেও সিদ্ধান্তগুলো ভয়ের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।

যখন ভয় পাওয়া হয় তখন উত্তেজনা দেহকে আড়ষ্ট আর চিন্তা-চেতনাকে স্থবির করে ফেলে। নতুন কিছু গ্রহণ করা, অর্জন করা তখন অসম্ভব হয়ে পড়ে।

তাহলে করণীয় কী?

চায়ের কাপে চেনা

স্থির হয়ে বসে প্রথমে পাঁচটি কাগজের টুকরা নিন। প্রতিটি টুকরোতে আপনার পাঁচটি ভয়ের নাম লিখুন। যদি চান প্রতিটি ভয়ের জন্য এক কাপ চা রাখুন এবং আড্ডা দেবার ছলে নিজের ভয়গুলোকে বোঝার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার ভয়গুলোর প্রভাব কমে যাবে এবং আপনি সজাগ থাকতে পারবেন।

চৈতন্য বৃদ্ধিতে কিছু সময় ব্যয়

প্রতিদিনের ছুটে চলার মাঝে কিছুটা সময় রাখুন মেডিটেশন এবং মাইন্ডফুলনেস অনুশীলনে বা খোলা মাঠে হাঁটার জন্য। এই অভ্যাসগুলো আমাদের সময় স্বল্পতা নিয়ে ভয়ের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।

২) ধারণা

ধারণা থেকে হতে পারে ভুল পদক্ষেপ; source: medium.com

প্রত্যেকটি বিষয় ধারণা করা এবং ভবিষ্যদ্বাণী করা যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে সকলের। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় ধরেই নিই পরবর্তী ধাপ নিশ্চয়ই রয়েছে। আবার গাড়িতে চলার সময় গাড়ির বিভিন্ন কার্যপ্রণালী এবং ড্রাইভার সম্পর্কেও অনেক ধারণা করে ফেলি। এভাবেই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ধারাণা করেই ছুটে চলেছে সকলে। আসলে এটির প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। কিন্তু কখনো কখনো এই ধারণা ভুলও হতে পারে। ভুলের মাত্রা এমন পর্যায়েও চলে যেতে পারে যেখানে ধ্বংস অনিবার্য।

তাহলে কী করবেন?

প্রতিক্রিয়া জানতে চান

কোনোকিছু করে প্রিয় কাউকে বা অভিজ্ঞ কাউকে জিজ্ঞেস করুন কেমন হয়েছে বা কীভাবে আরো ভাল করা যায়। বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া নিজে নিজে বিশ্লেষণ করুন এবং পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

প্রভাব এবং প্রেরণাকে আলাদা করুন

প্রেরণা আসে নিজের ভিতর থেকে, অন্যের কাছ থেকে আসে প্রভাব। অনেকেই বুঝতে পারেন না নিজের প্রেরণা কোনগুলো আর নিজের উপর অন্যদের প্রভাবগুলোই বা কী। নিজের অনুভূতি এবং আবেগ সম্পর্কে সচেতন হতে পারলে ধারণা করার প্রবণতা কমে যাবে এবং আপনি লক্ষ্যহীন গতিতে শুধুই ছুটে না চলে কম করেও অর্জনে সক্ষম হবেন।

৩) বিক্ষেপ বা ব্যাঘাত

আধুনিক জীবনে বিক্ষেপ সৃষ্টিকারী মাধ্যমের ছড়াছড়ি, যা অকারণেই ব্যস্ত রাখে সকলকে; source: embibe.com

বিক্ষেপ এবং ব্যাঘাত যেন আধুনিক জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার ফলে কোনো কাজই মনোযোগ দিয়ে করা যায় না। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, যোগাযোগের মাঝে এই ব্যাঘাতের ফলেই একটি বিষয়ের উপর দীর্ঘক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা মস্তিষ্কের কমতে থাকে। আধুনিক যুগে স্মার্টফোন আর ইন্টারনেটের বদৌলতে বিক্ষেপ সৃষ্টির মাধ্যমের শেষ নেই। আর এই সকল বিক্ষেপণই আমাদের একই সাথে অনেক কাজে যুক্ত করে ফেলে। ফলাফলে কোনোটির সুফলই পাওয়া সম্ভব হয় না।

তাহলে কী করবেন?

পরবর্তী ধাপ সম্পর্কে নিশ্চিত হোন

একটি দৈনন্দিনে কাজের রুটিন তৈরি করুন যেখানে প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে ক্রম নির্ধারণ করা থাকবে। অর্থাৎ নিজের কাছে নিজের পরবর্তী কাজ সম্পর্কে সজাগ থাকা। রুটিন তৈরির পর এবার সেটিকে সুবিধাজনক উপায়ে ভাগ করে নিন কখন কতটুকু সময়ে কোন কাজটি করবেন। এতে করে ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী মাধ্যমগুলো সুযোগ কম পাবে এবং আপনি সারাটি দিন গুছিয়ে চলতে পারবেন।

সময়কে উপলব্ধি করতে শিখুন

ভাবুন তো, আপনি জীবনের একেবারে শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন। এমন সময় আপনাকে একটি সুযোগ দেয়া হলো কিছু করে দেখানোর। কী করবেন? আমাদের জীবনের পরিসর কিন্তু এমনই ক্ষুদ্র। তাই সময়কে উপলব্ধি করতে শিখুন। স্বল্প সময়েই বড় কিছু করে দেখানোর সুযোগ এখনও রয়েছে।

৪) বাধা

বাধা উপেক্ষা করেই সামনে এগুতে হবে; source: medium.com

জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তার ঠিক পরের মুহূর্তেই পরিবর্তিত হচ্ছে, এমনকি দেহের কোষগুলো পর্যন্ত বদলে যাচ্ছে! এতো পরিবর্তনের মাঝে আপনার অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে সেটি ভাবা বোকামি। কখনো অনেক ভালোর মাঝে দিন চলবে, আবার কখনো বা দুঃখের  মাঝে। অনেক সময় দেখা যায় দুঃখকে গ্রহণ করতে পারেন না অনেকেই। অনেকেই আবার নিজেকে গন্ডির মধ্যে আটকে রাখেন। এসব কিছুই একেকটি বাধা, যা আমাদের সফলতা অর্জনে পথের কাঁটা। এই কাঁটা উপড়ে না ফেলে সামনে যেতে পারবেন না।

তাহলে কী করবেন?

নিজের সংকীর্ণ বিশ্বাসগুলোকে আবিষ্কার করুন এবং সেগুলোকে মুক্তমনের বিশ্বাসে পরিবর্তনের চেষ্টা করুন।

নিজের সংকীর্ণ বিশ্বাসগুলোকে খুঁজে বের করুন। যেমন ধরুন, “আমার পর্যাপ্ত সময়ের অভাব”, “আমার অভিজ্ঞতা নেই” ইত্যাদি। এগুলোকে এভাবে না ভেবে ভাষায় কিছুটা পরিবর্তন আনতে পারেন। যেমন- “আমি জানি কীসে আমাকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং কীভাবে করতে হবে”, “আমি জানি আমার যোগ্যতা এবং শক্তি কতটুকু এবং আমার আরো শেখার প্রয়োজন”। এ ধরনের সামান্য ভাষায় পরিবর্তন আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে সফলতার সোপানে।

৫) ব্যস্ততা

জীবন যেন ব্যস্ততার অন্য নাম; source: livinglead.com

জীবন খুব দ্রুত চলে। আর জীবনের গতির সাথে তাল মিলাতে ছুটে চলা প্রতিটি মুহূর্ত। ঘরে বা বাইরে প্রতিটি মুহূর্তে ব্যস্ততা যেন পিছু ছাড়ে না। কিন্তু এত কিছু না করেও কিন্তু সক্রিয়ভাবে নিযুক্ত থাকা যায়। এর জন্য প্রয়োজন আত্মোপলব্ধি, প্রয়োজন প্রতিটি ক্ষেত্রে ধৈর্য্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো।

তাহলে কী করবেন?

সহজভাবে নিতে শিখুন

অপ্রয়োজনীয় ব্যস্ততা থেকে নিজেকে আড়াল করতে কী কী কাজ আপনি অতিরিক্ত করছেন তা সম্পর্কে নিজেকে প্রশ্ন করুন। একাগ্রতা বা মাইন্ডফুলনেস অধ্যয়ন করুন- কী করছেন, কী খাচ্ছেন ইত্যাদি সবকিছুর দিকে মনোযোগ দিন। দিনে প্রতি দু ঘন্টা পরপর দীর্ঘশ্বাস নিন এবং ধীরে ধীরে ছাড়ুন (ডীপ ব্রেদিং)। দেখবেন অনেকটাই নিজের ভেতরে নিজেকে আবিষ্কার করতে পারছেন। ফলে অকারণেই ঘিরে থাকা ব্যস্ততাগুলোও আপনার উপর চাপ প্রয়োগ করতে পারবে না।

ফিচার ইমেজ- mashable.com

Related Articles