সাবধানী কয়েকজন মানুষ, সতর্ক আচরণমাখা আবহের মাঝে ত্রস্তপায়ে পায়চারী করে যাচ্ছেন দলনেতা। এক, দুই, তিনদিন হতে চললো তবু দেখা নেই আর্টিলারি বাহিনীর। সামনে দুটো পথ খোলা- সাহায্য ছাড়া নিজেরাই যুদ্ধ করে শত্রুমুক্তকরণ অথবা পিছু হটে আসা। দৃপ্তপায়ে সাহসী রাস্তাকেই বেছে নিয়েছিলেন বাংলার সূর্যসন্তান……।
বাংলার এই অসীম সাহসী যোদ্ধা আর কেউ নন, স্বয়ং বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। আজকের লেখাটি তার জীবন ও অসামান্য বীরত্বকে ঘিরেই সাজানো।
বাংলদেশের বীর সন্তান শহীদ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর এর জন্ম ১৯৪৯ সালের ৭ই মার্চ বরিশাল জেলার, বাবুগঞ্জ উপজেলার রহিমগঞ্জ গ্রামে। মাওলানা আবদুল মোতালিব হাওলাদার ও সাফিয়া খাতুনের জ্যেষ্ঠপুত্র ছিলেন জাহাঙ্গীর। তার দাদা আবদুর রহিম হাওলাদার গ্রামের অত্যন্ত গণ্যমান্য ব্যক্তি ও জমিদার ছিলেন এবং এলাকার উন্নয়নে অবদানস্বরূপ তার নামানুসারেই গ্রামের নাম দেয়া হয়েছিল রহিমগঞ্জ।
শিশু বয়সেই তার মানসিক দৃঢ়তার পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল। টানাটানির সংসারেও তিনি বাবা মার কাছে পরম স্নেহে লালিত হচ্ছিলেন কিন্তু তার বাবা বুঝতে পারেন যে, ছেলের যথার্থ শিক্ষার জন্য কোন ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা সুযোগ সেখানে নেই। এছাড়া তাদের আর্থিক অবস্থাও ছিলো অসচ্ছল। তাই মাত্র ৪ বছর ৬ মাস বয়সে তাকে চলে আসতে হয় মুলাদি থানায় মামার কাছে। তার মামা ফজলুর রহমান ছিলেন সেখানে কর্মরত একজন প্রকৌশলী। জাহাঙ্গীর তার প্রাথমিক শিক্ষা মামাবাড়িতে থেকেই সম্পন্ন করেন। অসমসাহসী এই যোদ্ধা কিন্তু ছাত্র হিসেবেও অত্যন্ত উজ্বল ছিলেন। পাতারচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মুলাদি মাহমুদজান হাইস্কুল থেকে যথাক্রমে ৫ম ও ৮ম শ্রেণীতে তিনি ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান। এসএসসিতেও তিনি গণিতসহ কয়েকটি বিষয়ে লেটার মার্কস সহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজে ভর্তি হন যেখানে খেলাধূলার জন্য তার নামডাক ছিলো।
কলেজে খেলাধুলার পাশাপাশি তিনি ছিলেন রাজনীতি সচেতন এবং এ সময়েই তিনি পড়ে ফেলেন লেনিন, মাও-সেতুং, চে গুয়েভারা এর মতো ব্যক্তিবর্গের সংগ্রামী জীবনের গল্প ও রাজনৈতিক দর্শন- যা তাকে নিপীড়িত মানুষ ও শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিল। এছাড়াও তিনি মাষ্টার দা সূর্যসেনের জীবনীগ্রন্থ, ক্ষুদীরামের ফাঁসি, তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা, চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুণ্ঠন এবং প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের জীবনীসহ বহু গ্রন্থ নিয়মিত পড়তেন। ১৯৬৬ সালে তিনি বরিশাল বি.এম (ব্রজমোহন) কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। আর্থিক সমস্যার কারণে তাকে প্রকৌশলী হবার স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হয়। এরপর তিনি বিমান বাহিনীতেও চেষ্টা করেন কিন্তু চোখের সমস্যার দরুণ তাকে বাদ পড়তে হয়। অতঃপর ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তি হন। এ সময় তিনি টিউশনি করে খরচ চালাতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বেশিদিন ছিলেন না কারণ তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করার সিদ্ধান্ত নেন।
অবশেষে ১৯৬৭ সালের ৫ই অক্টোবর তিনি তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের মিলিটারী একাডেমিতে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন এবং ওয়ার কোর্স এ নাম লেখান। পরবর্তী বছরের ২রা জুন ইঞ্জিনিয়ার কোরে কমিশন পেয়ে তিনি মুলতানের মেলিশি সেনানিবাসের ১৭৩ নং ইঞ্জিনিয়ার্স ব্যাটালিয়নে নিযুক্ত হন। তিনি রিসালপুরের মিলিটারি কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে চমৎকারভাবে অফিসার বেসিক কোর্স-২৯, অতঃপর বম্ব ডিসপোজাল কোর্স এবং ইনফ্যান্ট্রি স্কুল অব ট্যাকটিকস থেকে অফিসার উইপন কোর্স সম্পন্ন করেন। সেনাবাহিনীতে তার নম্বর ছিল পিএসএস-১০৪৩৯। ১৯৭০ সালের ৩০ শে আগস্ট তিনি ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত হন।
১৯৭১ সালে তিনি তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের গিলগিট এলাকার কারাকোরামে কারাকোরাম হাইওয়ে (পাকিস্তান-চীন সংযোগকারী সড়ক) নির্মাণকাজে ডেমোলিশন এক্সপার্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) তখন বেজে উঠেছে যুদ্ধের দামামা। তার এবং পশ্চিম পাকিস্তানের জনতার অজ্ঞাতসারে ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে ২৫ শে মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের নামে শুরু হয় হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের রক্তাক্ত অধ্যায়। ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর এই হত্যাকান্ড সম্পর্কে জানতে পারেন এর প্রত্যক্ষদর্শী পশ্চিম পাকিস্তানে ফেরত আসা বাঙালি অফিসারদের কাছ থেকে। এই ভয়াবহ ঘটনা শুনে তিনি মর্মাহত হন। কী করে একটি দেশের সামরিক জান্তা নিরস্ত্র নিরীহ মানুষকে হত্যা করতে পারে এটার কোন সদুত্তর তিনি পেলেন না। দেশপ্রেমে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠলেন এই সাহসী যোদ্ধা এবং মাতৃভূমির প্রতি ভালবাসায় সিক্ত বীর সিদ্ধান্ত নেন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার।
তিনি অন্যান্য সহকর্মী তরুণ বাঙালি অফিসারদের সাথে গোপনে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পালিয়ে যাবার জন্য বৈঠক করতেন। এভাবেই এক বন্ধুর মাধ্যমে তার পরিচয় হয় ক্যাপ্টেন খায়রুল আনাম, ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন মুমতাজ এবং ক্যাপ্টেন সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান এর সাথে। ১০ জুন তিনি ছুটি নিয়ে রিসালপুর যান। পরদিন তারা পাঞ্জাব মিলিশিয়ার ন্যায় ধূসর রঙের আওয়ামী পোশাক পরিধান করেন এবং শিয়ালকোটের দরগাহ পরিদর্শনের ভাণ করে তারা ইন্দো-পাক বর্ডারের দিকে অগ্রসর হন। সেদিন আবহাওয়া খুব রুক্ষ থাকায় সেটা তাদের পক্ষে কাজ করেছিলো এবং বিনা বাধায় সীমানা রক্ষীদের ফাঁকি দিয়ে তারা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করেন। এ সময় ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরের কাছে একটিমাত্র পিস্তল ছিল। ভারতে এসেই তারা নিকটস্থ বিএসএফ (ভারতীয় সীমান্তরক্ষী) ক্যাম্পে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে তারা দিল্লী হয়ে কলকাতা পৌঁছান।
চারজন বাঙালি সামরিক অফিসার পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসেছে শুনে মুক্তিসেনা, শরণার্থী ও সাধারণ বাঙালির মধ্যে বিপুল উৎসাহ জাগে। অন্য তিনজন অফিসার সহ ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর এরপর সেখান থেকে চলে যান এবং ৩রা জুলাই পশ্চিমবঙ্গের মালদহের মেহেদীপুরে সেক্টর ৭ এর সাব সেক্টর কমান্ডার হিসেবে যোগ দেন। সেক্টর কমান্ডার নাজমুল হকের অধীনে যুদ্ধ করার সময় তিনি অপরিসীম দক্ষতা ও সাহসিকতার পরিচয় দেন। তাদের আক্রমণ এতই ভয়াল ও ত্রাস সৃষ্টিকারী ছিল যে আক্রমণের কথা শুনে একবার সহস্রাধিক শত্রুসেনার প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেঙ্গে ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যাবার ঘটনা ঘটেছিল। তার নির্ভীক দক্ষতায় কানসাট, আরগরারহাট, শাহপুর সহ একাধিক স্থানে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সফল অপারেশন গুলোয় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তিনি। রণাঙ্গনে অনন্যসাধারণ কৃতিত্বস্বরূপ তাকে রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ দখলের দায়িত্বে নিযুক্ত করা হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহানন্দার দক্ষিণ তীরে অবস্থিত এবং এর পশ্চিমভাগের কাছাকাছি দিয়ে গঙ্গানদী এসে পদ্মায় রূপান্তরিত হয়েছে। ভৌগলিক এই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের জন্য মিত্রবাহিনীর অগ্রসরতা ঠেকাতে ব্রিগেডিয়ার এম. এ. নাঈমের নেতৃত্বে পাকিস্তানি ৩৪ ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেড কে নওগাঁ-রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী অঞ্চলে নিযুক্ত করা হয়। এছাড়াও মহানন্দার তীরে ২৫ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট এবং ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সেস (এপকাফ) ও মোতায়েন ছিলো। তারা সেখানে ৫ ফুট গভীর যোগাযোগ খাত এবং শক্তিশালী উর্ধ্বপ্রতিরক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল। তাদের অবস্থান ছিলো সুসংগঠিত এবং গানফায়ার থেকে সুরক্ষিত।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী এ. এন. এম. নুরুজ্জামান চাঁপাই নবাবগঞ্জ শত্রুমুক্তকরণের অপারেশনের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের মোট তিনটি গ্রুপে ভাগ করেন। প্রথম গ্রুপের দলনেতা ছিলেন মেজর গিয়াসউদ্দিন, যাদের কাজ ছিলো রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়ক বন্ধ করে চাঁপাইকে রাজশাহী থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া। সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট বাজিউর রশীদ এবং রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় দলের দায়িত্ব ছিলো রোহনপুর-নাচোল-আম্মুরা এলাকায় থাকা এবং চাঁপাই দখলের সময় বিচ্ছিন্ন দল হিসেবে সহায়তা করা। তৃতীয় এবং যুক্তিসঙ্গতভাবেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দলটি ছিল ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের অধীনে। তাদের কাজ ছিল সোনা মসজিদ-শিবগঞ্জ অঞ্চল দিয়ে এগিয়ে চাঁপাই নবাবগঞ্জ দখল করা। সেক্টর ৭ এর মিত্রবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার হিসেবে নিযুক্ত হন ব্রিগেডিয়ার প্রেম সিং এবং ভারতীয় ১৬৫ মাউন্টেন ব্রিগেডকেও রাজশাহীর দিকে অগ্রসর হবার নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারতীয় আর্টিলারি বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে মিলে পাকিস্তানি সেনা শিবিরে আক্রমণ করার কথা ছিল। আর্টিলারি বাহিনীর গোলাবর্ষণে শত্রুপক্ষ দূর্বল ও ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে তখন ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর তার দলবলসহ আক্রমণ করবেন এমনটিই ধার্য হয়েছিল। সে অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর, লেফটেন্যান্ট কাইয়ুম, লেফটেন্যান্ট আউয়াল চৌধুরী সহ ৫০ জনের মতন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পশ্চিমে বারঘরিয়ায় অবস্থান গ্রহণ করেন। ১১ তারিখ আর্টিলারি বাহিনীর আসার কথা থাকলেও যখন শত্রুপক্ষের ওপর কোন গোলাবর্ষণ হলো না। ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর তখন বারংবার ওয়্যারলেসে আর্টিলারি (গোলন্দাজ) বাহিনীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চালাতে থাকেন। ১২, ১৩ ডিসেম্বরও যখন ভারতীয় গোলন্দাজবাহিনী এসে পৌঁছালো না এবং তিনি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েও যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হলেন। পিছু না হটে গোলন্দাজবাহিনীর সাহায্য ছাড়াই সামনে এগোনোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
১৪ই ডিসেম্বর লেফটেন্যান্ট রহিমের নেতৃত্বে একটি দল মহানন্দা অতিক্রম করে গোমস্তাপুর থানার রোহনপুরের দিকে রওয়ানা দেন। দ্বিতীয় দল মহানন্দা অতিক্রম করে চাঁপাই নবাবগঞ্জের দিকে এবং ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বাধীন প্রায় ২০ জনের তৃতীয় দলটি আকন্দবাড়িয়ার কাছ দিয়ে ৩/৪ টি দেশি নৌকায় মহানন্দা পার হয়ে ভোরে রেহাইচর এ আসেন। তার পরিকল্পনা এরূপ ছিল যে, উত্তর দিক থেকে ধীরে ধীরে একটি একটি করে এলাকার দখল নেবেন যাতে দক্ষিণপ্রান্তের হানাদার সেনা তা টের না পায়।
অত্যন্ত দক্ষতার সাথে একের পর এক এলাকা দখল করতে থাকার সময় বিজয় যখন প্রায় সুনিশ্চিত তখনই হঠাৎ বাঁধের উপর থেকে ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সের ৮/১০ জন সৈনিক দৌড়ে চর এলাকায় এসে যোগ দেয় এবং পাকিস্তানি বাহিনীর অবিরাম গুলিবৃষ্টি শুরু হয়। শত্রুসেনারা নবাবগঞ্জে পিছিয়ে গিয়ে বিল্ডিংয়ে লাইট মেশিনগান স্থাপন করে অবিশ্রান্ত গুলিবর্ষণে মুক্তিবাহিনীর সামনে অগ্রসর হওয়া ঠেকিয়ে দিতে থাকে। ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর জীবনের পরোয়া না করে মেশিনগান ধ্বংস করার জন্য বাম হাতে এসমজি এবং ডান হাতে গ্রেনেড নিয়ে ক্রল করে সামনে এগিয়ে যান। তার ছোঁড়া গ্রেনেডে মেশিনগান পয়েন্ট চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায় কিন্তু অন্য একটি দোতলা দালান থেকে স্নাইপারের ছোঁড়া বুলেট তার কপালে এসে লাগে। এই বুলেটের আঘাতেই শহীদ হন ২২ বছর বয়সী ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলার গৌরব সন্তান। ১৫ই ডিসেম্বর দুপুর ১২ টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শত্রুমুক্ত হয়। ১৫ই ডিসেম্বর তার মরদেহ সহযোদ্ধারা উদ্ধার করেন এবং শিবগঞ্জ থানার ছোট সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে তাকে সমাহিত করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক পদক “বীরশ্রেষ্ঠ” খেতাব দেয়া হয় মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীরকে। পরিবার ও গ্রামবাসীর ইচ্ছানুসারে তার ইউনিয়নের নাম ‘আগরপুর’ থেকে পরিবর্তন করে ‘মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর’ ইউনিয়ন করা হয়েছে৷ সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে বরিশাল জেলা পরিষদ ৪৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তার পরিবারের দান করা ৪০ শতাংশ জায়গার ওপর ২০০৮ সালে নির্মাণ করেছে বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার৷ তার নামানুসারে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ জাহাঙ্গীর গেট (ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট), মহানন্দা নদীর উপর সেতু এবং স্বরূপনগরে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর কলেজ সহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের অনেক প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের অন্যতম সাহসী, বীর ও অনন্য যোদ্ধা ছিলেন ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। বাংলাদেশের লাল সবুজ আর সার্বভৌমত্ব যতদিন থাকবে- আকণ্ঠ শ্রদ্ধা ও পরম সম্মানের সাথে স্মরণ করা হবে তার নাম।