Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ট্রেনের রাজা ‘দি সেভেন স্টারস ইন কিউশু’: বিলাসি যাত্রার এক অনন্য নাম

ট্রেন বা রেলগাড়ির কথা আসলেই মনে আসে “কু … ঝিক্ ঝিক্”, “কু … ঝিক্ ঝিক্” এর ছন্দে এঁকে বেঁকে হালকা দুলুনিতে আশ-পাশের শোভা দেখতে দেখতে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পার হওয়া। সেই হালকা দুলুনিতে সামান্য ঘোর লাগে। তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখে বাইরের চারপাশ দেখার আকুলতা এক ধরনের রোমাঞ্চের সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ট্রেনের এমন অভিজ্ঞতা অনেকটাই আকাশ-কুসুম মনে হতে পারে। তবে দেশের বাইরের প্রেক্ষাপটে এমন ব্যাপার কোন অংশেই অতিমাত্রায় অলংকৃত নয়।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ট্রেনে ভ্রমণ খুব ব্যয়বহুল এবং খুব আরামদায়ক। অনেক সময় ধরে ভ্রমণ করতে হয় বলে ট্রেনের ভেতরেই থাকে অনেক আধুনিক সুব্যবস্থা। বেশির ভাগ ট্রেনেই থাকে ঘুমানোর ব্যবস্থা কারণ দিন রাতের হিসেবে ভ্রমণের দূরত্ব অনেক বেশিই বলা চলে। এই ধরণের ট্রেনগুলোর রয়েছে আবার বেশ পর্যটন গুরুত্ব। ট্রেন তৈরির দুনিয়ায় জাপান আর চায়নাকে বিশেষভাবে এগিয়ে রাখা যায়। পৃথিবীর অনেক ব্যয়বহুল এবং শৌখিন ট্রেন এই দুটি দেশ থেকে পাওয়া যায়। আজ আমরা যে ট্রেনের কথা বলতে যাচ্ছি সেটা হল জাপানের তৈরি “দি সেভেন স্টারস ইন কিউশু”। এই ট্রেনটি বর্তমানে জাপানের তৈরি সব চাইতে বিলাসবহুল ট্রেন।

‘দি সেভেন স্টারস ইন কিউশু এর বাইরের দিক’

দি সেভেন স্টারস ইন কিউশু

পুর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র হল জাপান। ‘কিউশু’ হল জাপানের তৃতীয় বৃহত্তম দ্বীপ। ‘কিউশু’ শব্দের আভিধানিক অর্থ নয়টি রাজ্য। কিন্তু ‘কিউশু’ রাজ্যটি মুলত ফুকুওকা, সাগা, নাগাসাকি, ওইটি, মিয়াজাকি, কুমামট এবং কাগশিমা এই সাতটি  গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল নিয়ে গঠিত। আর এই সাতটি রাজ্যের কথা মাথায় রেখেই ট্রেনটির নামকরণ করা হয়েছে “দি সেভেন স্টারস ইন কিউশু”।

নয়টি অঙ্গ রাজ্য নিয়ে গঠিত জাপানের কিউশু অঞ্চল

নয়টি অঙ্গ রাজ্য নিয়ে গঠিত জাপানের কিউশু অঞ্চল

বেশ আড়ম্বর করেই ট্রেনটির যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সালের ১৫ই অক্টোবর। ফুকাওকা এর হাকাতা ষ্টেশন থেকে শুরু হয়ে আবার একই ষ্টেশনে ফিরে আসে ট্রেনটি। এর রয়েছে সাতটি কামরা বা বগি যার মধ্যে পাঁচটি স্লিপিং বগি, একটি লাউঞ্জ এবং আরেকটি ডাইনিং। ট্রেনটির পেছনের দিকে রয়েছে খোলা জানালা যার ভেতর দিয়ে প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করা যায়। ট্রেনটিতে মোট ২৮ জনের স্বচ্ছন্দ ভ্রমণের ব্যবস্থা আছে। প্রত্যেকটি কামরার আছে নিজস্ব বাথরুম। আর বাথরুমগুলোতে রয়েছে আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা। রয়েছে খবরের কাগজ, টিভি আর ইন্টারনেট সুবিধা।

ট্রেনটির যাত্রা নিয়ে শুরুতেই ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায়। মিঃ এইজি মিটুক ও তার আর্কিটেক্ট দলের এক অনবদ্য ডিজাইনের ছোঁয়ায় এটি এক অন্যমাত্রা পেয়েছে। বেশ ঘটা করেই ট্রেনটির প্রথম যাত্রার দিন ঘোষণা করা হয়। দেশ বিদেশের খবরের চ্যানেলগুলোতে ‘লাইভ’ ট্রেন এর যাত্রা দেখানো হয়। দেশি বিদেশি অনেক কূটনীতিকদের আয়োজনে এই দিন ‘দি সেভেন স্টারস ইন কিউশু’ যাত্রা শুরু করে।

হাকাতা ষ্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার প্রথম দিন’

হাকাতা ষ্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার প্রথম দিন

এই ট্রেনে করে কিউশু দ্বীপের সাতটি অঞ্চল খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করা যায়। আর এই ভ্রমণ পরিক্রমায় রয়েছে দুই ধরনের যাত্রা পরিকল্পনা। একটি হচ্ছে চার দিন তিন রাত্রিকালীন যাত্রা যার মাধ্যমে কিউশু এর প্রত্যেকটি অঞ্চল খুব ভালোভাবে ঘুরে আসা যায়। হাতে সময় এবং পুরো কিউশু ঘোরার পরিকল্পনা যাদের রয়েছে তাদের জন্য এই ব্যবস্থা।

আরেকটি ভ্রমণ পরিকল্পনা এই ট্রেনটির রয়েছে, সেটি হল দুই দিন এক রাতের যাত্রা। এই যাত্রার পরিকল্পনা অনুযায়ী কিউশুর উত্তর অঞ্চল ঘুরে আসা যাবে। প্রকৃতির মনোরম পরিবেশ, নজরকাড়া দিগদিগন্ত, পাহাড় পর্বতের রাশি, ঝর্ণা, নদী আরও কত মনোমুগ্ধকর দৃশ্য যে চোখে পড়ে এই পথ চলায় তার কোন ইয়ত্তা নেই। যাত্রীরা তাদের পছন্দমত ভ্রমণ পরিকল্পনা করে তাদের যাত্রার দিন নির্বাচন করতে পারেন। এই প্রসঙ্গে বলতেই হয়, বাইরের পরিবেশ যতই এর যাত্রীদের আকর্ষণ করুক না কেন ট্রেনের মধ্যকার বিলাসী ব্যবস্থা আরও বেশি উপভোগ্য হয়ে উঠতে পারে।

বিভিন্ন দেশের পরিব্রাজকদের কথা চিন্তা করেই এই ট্রেনে সকল আধুনিক সুবিধার আয়োজন করা হয়েছে। এখানে রয়েছে বিভিন্ন স্বাদের খাওয়ার ব্যবস্থা। বিভিন্ন ফাই-ফরমায়েশ পালন করার জন্য বেয়ারা। সবকিছু মিলিয়ে এ যেন অন্য এক জগত। প্রকৃতির কাছাকাছি কিন্তু সকল সুবিধায় পরিপূর্ণ।

ট্রেনএর ভেতর বসার জমকালো আয়োজন’

ট্রেনএর ভেতর বসার জমকালো আয়োজন

ট্রেনটি মূলত তৈরি করা হয়েছে বিলাসবহুল যাত্রার কথা চিন্তা করে। আধুনিক সুযোগ সুবিধার সকল ব্যবস্থা এখানে নিশ্চিত করা হয়েছে। তাই খুব একটা সাধারণ মানুষের ভিড় এই ট্রেনে আছে সে কথা বলা যায় না। বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ ভিড় করে জাপানে এই ট্রেনের অভিজ্ঞতা নেয়ার বাসনায়। তাই ট্রেনটির এক ধরনের পর্যটন কদর রয়েছে তা বলাই বাহুল্য।

ট্রেন এর ভেতরে পর্যটনের উদ্দেশ্যে আসা বিদেশি

ট্রেন এর ভেতরে পর্যটনের উদ্দেশ্যে আসা বিদেশি

এবার আসা যাক ট্রেনটির যাত্রার গতিপথ এর ব্যাপারে। কেউ যদি মনে করে থাকেন ট্রেনটি জাপানের বুলেট ট্রেনগুলোর মত অনেক উচ্চগতি সম্পন্ন তাহলে নিশ্চিতভাবে তিনি ভুল ভাবছেন। ঘন্টায় ১০০ কি.মি. বেগে এটি চলাচল করে। ট্রেনটির ইঞ্জিন এবং বগি দুটোই তৈরি করা হয়েছে একটু পুরনো ধাঁচের করে। এর মাধ্যমে এটিতে একটু রাজকীয় ভাব আনার চেষ্টা করা হয়েছে। আর হবেই বা না কেন? রাজার মতই তো এর পুরো অবয়ব। এর জানালাগুলো অন্যান্য যে কোন ট্রেনের জানালা থেকে অনেক বড় যাতে করে যাত্রীরা খুব আরাম করে প্রকৃতির শোভা দেখতে পারে।

ট্রেনের জানালা থেকে বাইরের দৃশ্য’

ট্রেনের জানালা থেকে বাইরের দৃশ্য

ট্রেনটির মূল শোভা এর জানালার সজ্জায়। জানালার পাশে বসে আশেপাশের প্রকৃতি দেখার অভিজ্ঞতা এর যাত্রীদের ভ্রমণের আনন্দকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। আর রাতের বেলা যখন জ্যোৎস্না এসে পড়ে পুরো কামরা জুড়ে তখন জ্যোৎস্নার আলোয় গা ভাসিয়ে মন ভরে যায় এক অনাবিল আনন্দে। এই ধরণের অভিজ্ঞতা নেয়ার সুযোগ ঘতে এই ট্রেনের যাত্রীদের। ট্রেনটিতে রয়েছে ‘লাইভ’ পিয়ানো বাদক। যাত্রীরা চাইলেই চলমান ট্রেনে বসে শুনতে পারেন পছন্দের যেকোন সুর। এ যেন শুধু যাত্রা নয়, ভ্রমণের পিপাসার সাথে সাথে অন্য রকম যাত্রা পথের অভিজ্ঞতা।

ট্রেনের মধ্যে আয়োজিত সুরের মুর্ছনা

ট্রেনের মধ্যে আয়োজিত সুরের মূর্ছনা

এই ট্রেন কিন্তু নিয়মিতভাবে চলে না। দু-চার মাসে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে এটি চলাচল করে থাকে। বিলাসবহুল এই ট্রেনটির আসন সংখ্যাও কিন্তু খুব সীমিত। সিট পেতে হলে অনেক আগে থেকেই টিকেট বুকিং করে রাখতে হয়। খরচের দিক দিয়েও যে খুব মোটা অঙ্কের টাকা খসাতে হবে তা তো বলাই বাহুল্য। জনপ্রতি একটি রুমের জন্য আপনাকে খরচ করতে হবে কমপক্ষে আট থেকে নয় হাজার ডলার। আর স্বামী-স্ত্রী দুইজনের একটি রুমের জন্য কমপক্ষে  ছয় থেকে সাত হাজার ডলার। যদি কোন কারণে টিকেট পাওয়া না যায় সেক্ষেত্রে অনেক সময় ‘রেল পাস’ পাওয়া যায় যা দ্বারা তুলনামূলক কম খরচে এই ট্রেনে চড়ার অভিজ্ঞতা অর্জন সম্ভব হয়।

 

This article is in Bangla language. It's about the luxurious train 'Seven Stars' of Kyushu Railway Company Japan.

References:

https://www.japan-rail-pass.com/japan-by-rail/travel-tips/seven-stars-kyushu
http://edition.cnn.com/2015/12/07/travel/luxury-train-travel/
http://www.cruisetrain-sevenstars.com/
http://www.cruisetrain-sevenstars.com/journey-prices/

Featured Image: tentsouko.com

Related Articles