Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

চলুন ঘুরে আসি অদ্ভুত এক বোতলদ্বীপ হতে

“Give Your Trash to me
For my Floating Island”

মনের সুখে আপন মনে গাওয়া দুটো লাইনের অংশ যা কোনো এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে গেয়ে উঠেছিলেন রিচার্ট সোয়া ওরফে রিশি। তিনি কোনো বিখ্যাত ব্যক্তি নন বটে, তবে তিনি যা করেছেন তা কিন্তু রবার্ট ব্রুসের অধ্যবসায় নিয়ে মাকড়শার গল্পকেও হার মানায়।রিশি জীবনের অর্থ খুঁজতে গিয়ে হঠাৎ মনের খেয়ালেই তৈরি করে বসেন আশ্চর্য এক বোতলদ্বীপ। নামটা শুনেই অদ্ভুত লাগছে নিশ্চয়ই?

শুরুটা বলতে গেলে বড়ই অদ্ভুত! ১৯৭৭ সালের দিকে রিশির ঘরের বেলকনিতে টাঙিয়ে রাখা একটি ছবি হয়তবা তাকে কিছুটা হলেও মনের কোণায় টোকা দিয়ে যেতো। কিন্তু সংসার, স্ত্রী, সন্তান ইত্যাদি সামাজিক চাপে তা আর উৎসরিত হওয়ার সুযোগ পায়নি।

ইউএফও আঁকা প্রতীকী ছবি যা রিশির বেলকনিতে টাঙ্গানো ছিল। ছবি সূত্রঃ greentravelife.com

যা-ই হোক, রিশি কারপেন্টার হিসেবে একটি কোম্পানির কাজের উদেশ্যে ইংল্যান্ড থেকে জার্মানিতে পরিবার সমেত পাড়ি জমান। কয়েক বছর পর থেকেই তার সে কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে শুরু করেন। তখন থেকেই ডুবে থাকতেন বিভিন্ন প্রকৃতির সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা আঁকাআঁকিতে। ক্রমে তিনি আগের চাকুরি ছেড়ে বিভিন্ন কাস্টমারদের ছবি এঁকে দেওয়ার কাজ শুরু করেন। অথচ তিনি কিন্তু প্রফেশনাল আর্টিস্ট ছিলেন না। তার এ মতিভ্রম দেখে তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে সন্তানদের নিয়ে আবার ইংল্যান্ডের পথে পাড়ি জমান।  তিনি হয়ে পড়েন একা। জীবনসঙ্গীহীন সময় তার খুব একটা ভালো কাটেনি। তখন থেকেই খুঁজে বেড়াতে শুরু করেন তিনি জীবনের অর্থ।

তার জন্ম ইংল্যান্ডে। রবিনসন ক্রুসোর মতো নির্জন একটি দ্বীপের মালিক হওয়ার স্বপ্নের জাল বুনতেন তিনিও। সেই স্বপ্নের আশায় ইংল্যান্ড ছেড়ে মেক্সিকোতে জীবন তরী ভিড়ান তিনি। তার স্ত্রী-সন্তান তাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে তিনি শুরু করেন তার ভবঘুরে জীবন। কখনও পোট্রেট এঁকে, কখনো বা ইউরোপের রাস্তায় গানের দলগুলোর সাথে গান করে কোনো রকম কিছু টাকা জমাতেন।

ইউরোপের রাস্তায় গানের দলের সাথে রিশির জীবন ছবি। ছবি সূত্রঃ greentravelife.com

ইউরোপের এদিক-সেদিক ঘুরে অবশেষে ১৯৯৬ সালে রিশি চলে আসেন একেবারে আমেরিকার মেক্সিকোতে। সান পেদ্রোতে অবস্থিত জিপোলাট সমুদ্র উপকূলে বেশ কিছু পরিত্যক্ত খালি প্লাস্টিকের বোতল জালে বন্দী করে জলের উপর ভাসিয়ে দিয়ে তৈরি করেন বোতলদ্বীপ।

রিচার্ট সোয়া তার স্বপ্নের দ্বীপ তৈরির জন্যে বোতল সংগ্রহে ব্যাস্ত। ছবি সূত্রঃ greentravelife.com

সেই দ্বীপে বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্যে সৌরশক্তিকে সঞ্চয় করে রাখার একটি গামলাও বসিয়েছিলেন তিনি। সৌর প্যানেল থেকে সংগ্রহ করা শক্তি পুড়িয়ে খাবারদাবার রান্নার মাধ্যমে সকলের মাঝে পরিবেশ সচেতনতা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন রিশি। কিন্তু সেখানকার লোকজন তা ভালো চোখে দেখেনি। কারণ সেখানে কোনো দ্বীপের দখল তিনি পেতে পারেন না। তাই অচিরেই সে জায়গা তাকে ছেড়ে দিতে হয়। তবে সেদিনের সেই ঘটনা তার প্রাণ বাঁচিয়েছিল বলা চলে। কারণ সেখান থেকে তিনি বিতাড়িত হওয়ার তিন দিনের মাথায় হারিকেন ‘পাউলাইনে’র আঘাতে সেখানকার গ্রামটিও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

রিশির প্রেরণার বোতল দ্বীপ। ছবি সূত্রঃ mirror.co.uk

১৯৯৮ সালের দিকে আবারও তিনি শুরু করেন তার স্বপ্নের জাল বোনার চেষ্টা। এবার দ্বিতীয়বারের মতো মেক্সিকোর ক্যারিবিয়ান উপকূলের পুয়ের্ত অ্যাভেনচুরাসে গড়ে তোলেন ৬৬ ফুট লম্বা এবং ৫৪ ফুট চওড়ার বোতলদ্বীপ। এবার তিনি এলাকাবাসীর কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই তবে দ্বীপের কাজে হাত দেন। দ্বীপটি তৈরিতে লেগেছিল প্রায় আড়াই লক্ষ প্লাস্টিকের খালি বোতল। কিন্তু বছরখানেক পর দ্বীপটি সামুদ্রিক ঝড়ে লন্ড ভন্ড হয়ে যায় আবারও।

রিশি ও তার ভাসমান দ্বীপ। ছবি সূত্রঃ moment.photoshelter.com

অনেক ভেবে ভেবে রিশি তখন বৈজ্ঞানিক উপায়ে দ্বীপটিকে নতুন রূপ দেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলেন। প্রাণীদেহের ডিএনএ-সহ পৃথিবীর অধিকাংশ জিনিসের গঠনে যেমন একটা প্যাঁচানো ভাব, ঠিক তেমনই দ্বীপের ভেতরটা মজবুত করতে এরকম কিছুর কথাই মাথায় এলো তার। দ্বীপের গাঁথুনি যাতে পাকাপোক্ত হয়, সেজন্যে তিনি কিছুটা প্যাঁচানো বোতল সংগ্রহ করতে শুরু করলেন। ফের আড়াই লক্ষ বোতল জোগাড় করে জলের স্রোতে নষ্ট হয় না এমন একটা জালে বেঁধে জলে ভাসিয়ে দিলেন।

আবহাওয়া ঠাণ্ডা রাখতে সমুদ্রতীরের উপযোগী গাছপালাও লাগিয়ে দিলেন রিশি। গাছগুলোর কোনো কোনোটি লম্বায় ১৫ ফুট বেড়ে উঠছিল। এছাড়া সবজি ও ফুলের বাগান ও গড়ে তুলেছিলেন তিনি। দ্বীপে একটি দোতলা বাড়ি এবং সৌরশক্তি সম্পন্ন উনুনও ছিল। স্নানের জন্যে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থাও ছিল স্নানাগারে। টয়লেট ছিল কম্পোস্টিং করা। অর্থাৎ এমন কোনো ব্যবস্থা তিনি তৈরি করেননি যাতে পরিবেশের বিন্দুমাত্র ক্ষতি হতে পারে।

রিশির তৈরি স্পাইরাল আইল্যান্ড। ছবি সূত্রঃ moment.photoshelter.com

কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো ২০০৫ সালের জুলাই মাসে এমিলি হ্যারিকেনের পর দ্বীপটির অনেক বেশি ক্ষতি হয়। কোনোরকম প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন রিশি ও তার প্রিয় কুকুর বনগো। এইবার রিশি একেবারেই সর্বহারা হলেন।

এতো প্রতিকূলতার পরেও রিশি কিন্তু থেমে থাকেননি। সর্বশেষ আশার আলো ফিরে পান লোকাল ইকোলজিক্যাল পার্ক লিডারের কাছ থেকে। তিনি রিশির এমন ভাসমান পরিবেশ বান্ধব কার্যধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে তাকে ২০,০০০ ডলার সাহায্য দেন।

রিশির ব্যস্তময় কিছূ মুহূর্ত। ছবি সূত্রঃ mirror.co.uk

রিশির ব্যস্তময় কিছূ মুহূর্ত। ছবি সূত্রঃ mirror.co.uk

পরবর্তীতে রিশি মোট ৪০,০০০ ডলার জমিয়ে পুনরায় নতুন ভাবে আইল্যান্ডের কাজ শুরু করেন। এবার তিনি ক্যানকুনের কাছে আইলা মুজেরেসে তার বোতলদ্বীপটি গড়ে তোলেন। রিশির ভাসমান জয়ক্সি আইল্যান্ডটি গড়ে উঠে ১ লক্ষ স্পাইরাল বোতল দিয়ে যেটি ৮২ফুট ব্যাস সম্পন্ন। এই দ্বীপটিতে ৩টি বীচ রয়েছে। তার স্বপ্ন এখানেই শেষ নয়। দ্বীপটি তৈরিতে যে বোতলগুলি তিনি ব্যবহার করেছেন, তার উপর মাটি ফেলে রীতিমত চাষের উপযোগী জমিও তৈরি করে নিলেন কয়েক দিনের মধ্যেই। নানা জাতের গাছ লাগিয়ে ভরিয়ে তুললেন দ্বীপটিকে।  রিশি থাকার জন্য সুন্দর বাড়ি গড়ে নিয়েছেন যা কাঠ আর শুকনো পাতার তৈরি। তার লাগানো ফল ও সবজি খেয়েই দিব্যি আরামেই কেটে যায় তার দিন। বৃষ্টির জল ধরে রাখতে তৈরি করে নিয়েছেন দুটি জলাশয়। এমনকি পুকুর তৈরি করে বসিয়েছেন সৌর প্যানেল। সাথে আছে সৌর শক্তি সম্পন্ন জলপ্রপাত ও নদী।

রিশির শয়নকক্ষ। ছবি সূত্রঃ moment.photoshelter.com

এখন ঝড় ঝাপটা খুব একটা বেশি মুশকিলে তাকে ফেলতেই পারে না বললেই চলে। আটটি বিড়াল ও একটি কুকুর নিয়েই তার দিন কেটে যায়। সন্ধ্যেবেলায় বসেন গিটার নিয়ে, কখনোবা হাতে আঁচড় কাটেন রং-তুলিতে।

বোতলদ্বীপে হাসি খুশিময় রিশির জীবন। ছবি সূত্রঃ mirror.co.uk

মেক্সিকো সরকারের পক্ষ হতে জয়ক্সি আইল্যান্ডকে ইকোলজিক্যাল বোট নামকরণ করা হয়েছে। রিশিকে এখন তাই তার দ্বীপে বোটে চড়ে যাওয়া আসা করতে লাইফ জ্যাকেট, ফায়ার এক্সটিঙ্গুইজার এবং ফার্স্ট এইড সাথে রাখতে হয়। ২০০৮ সালের আগস্ট মাস থেকেই তার এই বোতল দ্বীপ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে জনসাধারণের জন্য। জাপানি ও কোরিয়ান টিভি এই দ্বীপ নিয়ে তৈরি করেছেন তথ্য চিত্র। রিশি নিজেই একটা বই লিখেছেন দ্বীপটি নিয়ে। বইয়ের নাম দিয়েছেন ‘স্পাইরালজিক্যালি স্পিকিং’। কোনো কিছুই অভাব নেই এখন তার জীবনে। অভাব কেবল একজন জীবন সঙ্গিনীর।

রিশি ও জাপানি মডেল বাউলিন। ছবি সূত্রঃ mirror.co.uk

রিশি তার বোতল প্রাসাদে জাপানি মডেল জোডি বাউলিন কে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তারা সেখানে সুন্দর কিছু সময় কাটিয়েছিলেন বলেই জানান। বাউলিন এ কথাও জানান যে সুন্দর একটি জীবন কাটাতে যা যা দরকার তার কোনোকিছুরই কমতি নেই রিশির এই বোতলদ্বীপে।

 

This article is in Bangla language. It's about an island of plstic bottles.

References:

১) greentravelife.com/richart-sowa-a-green-island-made-of-plasti-bottles/

২) environment-ecology.com/habitat-world/55-spiral-islands-island-mujeres.html

৩) mayanmajix.com/art_video_951.html

৪) dailymail.co.uk/news/article-2825071/British-DIY-Robinson-Crusoe-builds-floating-paradise-150-000-recycled-bottles.html

৫) mirror.co.uk/news/uk-news/meet-british-robinson-crusoe-who-4586845

Featured Image: theadventourist.com

Related Articles