আমাদের জীবন স্বল্প সময়ের। এই স্বল্প সময়ের জীবনকে আরো গতিশীল করে তুলতে আমাদের বেশ কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি। অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো বাদ দিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু বিষয় মেনে চলুন। এতে আপনার জীবনযাত্রার মান উন্নত ও সুন্দর হয়ে উঠবে। নিচের বিষয়গুলো মেনে চলতে পারলে আপনার জীবনযাত্রা আরও গতিশীল ও ফলপ্রসু হয়ে উঠবে।
সময়ের সঠিক ব্যবহার করুন
গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী কাজগুলো আপনার ভবিষ্যৎ জীবন গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। সেজন্য সময় ব্যবস্থাপনার সময় জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সবার আগে অগ্রাধিকার দেবেন। আর যে কাজগুলো জরুরিও নয়, আবার গুরুত্বপূর্ণও নয়, এবং যে কাজগুলো না করলে আপনার লক্ষ্য পূরণে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াবে না, সেই কাজগুলো করা থেকে বিরত থাকবেন। সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে আপনার কাজগুলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ২০ ভাগ কাজকে আলাদা করুন। এই কাজগুলোই আপনার বাকি ৮০ ভাগ কাজের সমান ফলাফল বয়ে আনবে।
বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হোন
একটি প্রচলিত কথা আছে, “বিপদে পড়লে প্রকৃত বন্ধুকে চেনা যায়”। বিপদে পড়লে আপনার প্রকৃত বন্ধুই আপনাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে। সুসময়ের বন্ধু দূরে পালাবে। ছোট-বড় যেকোনো সমস্যায় পাশে থেকে প্রকৃত বন্ধু আপনাকে সমর্থন দিয়ে যাবে। শেখ সাদী (রহ.) বলেছেন, “সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ”। মানুষ তার বন্ধুদের দ্বারা অনেকটাই প্রভাবিত হয়। বন্ধুদের সাথে আড্ডায় আপনার সময় উৎপাদনশীল কাজে ব্যয় হতে পারে, আবার মূল্যবান সময়গুলো নষ্টও হতে পারে। তাই বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক থাকতে হবে।
আত্মোন্নয়নমূলক বই পড়ুন
আত্মোন্নয়নমূলক বইগুলো আপনার মনের খোরাক জোগাবে। চিন্তার জগত সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে দেবে। চিন্তা-ভাবনাতে এক অন্যরকম পরিবর্তনের ছোঁয়া অনুভব করতে পারবেন। আপনার দৈনন্দিন কাজগুলো অতি অল্প সময়, শ্রম ও ব্যয়ে সম্পন্ন করতে পারবেন। ওমর খৈয়ামের ভাষায়, “রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বইখানা অনন্ত যৌবনা- যদি তেমন বই হয়।” বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। বই হলো আমাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। বইতে অন্যের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান রয়েছে, যা আহরণে আপনি আরো সমৃদ্ধ হয়ে উঠবেন।
প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করুন
প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন আপনার জীবনকে সুন্দর করে তুলবে, তেমনি বিষিয়েও তুলতে পারে। প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন কাজকে সহজ করে তুলেছে। কিন্তু প্রযুক্তির ব্যবহার করতে করতে মানুষ এখন প্রযুক্তির দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। যেমন- সকালে ঘুম থেকে উঠতে এলার্মের ব্যবহার করছেন যা আপনাকে কখন ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলতে হবে তা কোনো প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ করছে। কোনো কল বা মেসেজ আসলে তখন আপনাকে স্মার্টফোনটি ব্যবহার করতে বাধ্য করছে। এককথায়, অবচেতন মনে আপনি প্রযুক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছেন। সচেতনভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার করুন, নিয়ন্ত্রিত হতে যাবেন না। রুটিন কাজগুলোও এলেমেলো করে দিতে পারে যদি আপনি প্রযুক্তিতে আসক্ত বা নিয়ন্ত্রিত হন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আসক্তি কাটিয়ে উঠুন
একটু পরপরই ফেসবুক, টুইটার ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ভিজিট করছেন যেন, এই বুঝি নতুন কোনো মেসেজ বা নোটিফিকেশন আসলো। ল্যাপটপ বা মোবাইল একটু সময়ের জন্যেও চোখের আড়াল করতে মন সাঁয় দেয় না। ঘন্টার পর ঘন্টা এই ওয়েবসাইটগুলো ব্যবহার করছেন, কিন্তু শরীরে কোনো ক্লান্তি অনুভব করছেন না। হ্যাঁ আপনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর এই ওয়েবসাইটগুলোর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছেন। আসক্তি থেকে আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করুন, প্রয়োজন ব্যতিরেকে এই ওয়েবসাইটগুলো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন। আসক্তি থেকে বেরিয়ে না আসলে জীবনের নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও লক্ষ্য পূরণে আপনি ব্যর্থ হবার সম্ভাবনা থাকে।
ঘুম থেকে উঠেই ৫ মিনিট ব্যায়াম করুন
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল- কথাটা যথার্থই। শরীর তরতাজা রাখতে ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ না হয়েই পাঁচ মিনিট খালি হাতে ব্যায়াম করুন। এতে আপনার শরীর ও মন দুটোই সজীব ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে। শরীর অনেক হালকা লাগবে এবং সারাদিন আপনি থাকবেন কর্মচঞ্চল। নিজের কাছে ও অন্যদের চোখে আপনাকে বেশ আত্মবিশ্বাসী মনে হবে।
লিখিত আকারে কাজের তালিকা করুন
যেকোনো লিখিত কাজ সম্পন্ন হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অথবা সকালে ফ্রেশ হয়েই লিখিত একটি কাজের তালিকা তৈরি করুন। গুরুত্ব ও কাজের সুবিধা অনুসারে লিখিত কাজগুলো আবার সুন্দর করে সাজান। এভাবে তালিকা করে কাজ করলে কোনো কিছু বাদ পড়ার সম্ভাবনা থাকে না। যে কাজগুলো অসম্পূর্ণ থাকবে তা পরবর্তী দিনের তালিকার সাথে সামঞ্জস্য করে নিন। দেখবেন- কিছু কিছু কাজ খুবই জরুরি, সেদিনই করতে হবে- এমন কাজগুলো প্রথমে রাখবেন। যে কাজটি হয়ে যাবে তার পাশে টিক চিহ্ন দিন অথবা কেটে দিন। যে কাজগুলো অসম্পূর্ণ থাকবে সেই কাজগুলো কেন অসম্পূর্ণ রয়েছে তার যথার্থ কারণ খুঁজে বের করে সমস্যার সমাধান করুন।
পরিকল্পনার চেয়ে বাস্তবায়নের দিকে মনোযোগ দিন
পরিকল্পনার তালিকা বানানো হলে তা লিখে শেষ করা যায় না। কিন্তু সেই তুলনায় খুব কম কাজই সুসম্পন্ন হয়। অযথা পরিকল্পনার স্তুপ সাজানোর চেয়ে শুধুমাত্র বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা করুন। পরিকল্পনা আপনার কাজের অর্ধেক সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার সমান গুরুত্ব বহন করে। আর শুধু পরিকল্পনা করে রাখলেই হবে না, সেগুলো বাস্তবায়নের দিকে মনযোগ দিতে হবে।
সুযোগ পেলেই যেকোনো বিষয়ে দক্ষতা গড়ে তুলুন
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে হরেক রকমের সমস্যা সৃষ্টি হয়। সেগুলো যদি আপনি নিজেই সমাধান করতে পারেন তাহলে সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচবে। দক্ষতা মানুষকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলে। আপনার মোবাইল বা ল্যাপটপ বা বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশের কোনো ত্রুটি দেখা দিলো। ত্রুটি মেরামতের মতো টুকটাক দক্ষতা যদি আপনার মাঝে থাকে তাহলে কিছু হলেই আর মেকানিকের দ্বারস্থ হতে হবে না।
নিজের সমালোচনা করুন
প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাবার আগে কয়েক মিনিট নিজেকে নিয়ে ভাবুন। নিজের সমালোচনা করুন। সারাদিন যেসব কার্য সম্পাদন করলেন তার মাঝে কী কী ভুল ত্রুটি রয়েছে বা আরো ভালো কীভাবে করা যেত, কেন কার্য সম্পন্ন হলো না, আরো ভালোভাবে কাজগুলো কীভাবে সম্পন্ন করা যেত, আগামীকাল কোন বিষয়গুলোতে বেশি জোর দেয়া লাগবে, আজকের দিনের সময়টুকু কতটা ফলপ্রসুভাবে কাটিয়েছেন, নতুন কী কী শিখলেন ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমে নিজের সমালোচনা করুন। এভাবে সমালোচনা করলে আপনি আজকের দিনের চেয়ে আগামীকাল আরো বেশি ভালোভাবে কার্য সম্পাদন করতে পারবেন। এভাবে নিজেই হয়ে উঠুন নিজের সমালোচনাকারী। কেউ ভুল ধরিয়ে দেবার আগে নিজের ভুল নিজে খুঁজে বের করুন এবং তা শুধরে নিন।
উপরের বিষয়গুলো মেনে চললে আপনার মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন চলে আসতে বাধ্য। বদভ্যাস বা আসক্তি কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসার পথে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সময়ানুবর্তিতা, বই পড়া, ব্যায়াম, প্রযুক্তি, কার্যতালিকা প্রণয়ন, সমালোচনা এবং বন্ধু নির্বাচনসহ যে ১০টি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো সঠিকভাবে মেনে চললে অবশ্যই আপনার জীবন আলোকিত ও ব্যক্তিজীবন আরো সাফল্যমন্ডিত করে তুলবে।