‘গজল’ বলতে সাধারণত আমরা বুঝে থাকি মুসলমানদের বিশেষ ধর্মীয় সঙ্গীতকে, অর্থাৎ হামদ বা নাত জাতীয় সঙ্গীত। বাস্তবে গজল অত্যন্ত বিস্তৃত একটি কাব্য ও সঙ্গীতের ধারা। গজলে যেমন রয়েছে খোদার প্রেমের স্তুতি, ঠিক তেমনই রয়েছে মানব-মানবীর প্রেমের স্তুতিও।
‘গজল’ মূলত আরবি শব্দ। ফার্সি ভাষায়ও শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে শব্দটির সঠিক উচ্চারণ লিপিবদ্ধ করা বেশ কঠিন। ‘গাযাল’, ‘গাজযাল’ বা ইংরেজিতে ‘Guzzle’ শব্দটি মূল উচ্চারণের কিছুটা কাছাকাছি। যদিও শব্দটি বাংলায় গজল হিসেবেই ব্যবহার হয়ে থেকে। শব্দটির আক্ষরিক অনুবাদ হচ্ছে, ‘প্রেমিকার সাথে কথোপকথন’, ‘প্রেমালাপ’ কিংবা ‘রমণীর সঙ্গে বাক্যালাপ’। এ বিবেচনায় গজলকে ‘প্রণয় সঙ্গীত’ হিসেবেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। তবে শব্দটির উৎপত্তিগত অর্থ অধিক তাৎপর্যপূর্ণ। উৎপত্তিগতভাবে গজল শব্দটির অন্যতম অর্থ হচ্ছে ‘সুদৃশ্য দ্রুতগামী মৃগবিশেষ’। অর্থাৎ গজলের আবেদনের সাথে মিল পাওয়া যায় হরিণের মায়াবী রূপের আবিষ্টতার। “আপনা মাংসে হরিণা বৈরী”– শিকারী বাঘ তাড়া করছে, ফলে হরিণ প্রাণভয়ে পালাচ্ছে। হঠাৎ তার বড় ঝাকড়া শিং আটকে গেলো বুনো ঝোপের কাঁটায়। আসন্ন মৃত্যু নিয়ে ভয়, নিজেকে মুক্ত করার যতই চেষ্টা করছে, ততই কাঁটায় জড়িয়ে যাচ্ছে হরিণ, আরও ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে তার দেহ। জোরে চিৎকার করতে পারছে না, তাহলে যদি পেছনে থাকা শিকারী বাঘ তাকে ধরে ফেলে! এমন পরিস্থিতির যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাওয়া হরিণের গুমরে ওঠা আর্তনাদের সাথে যেন মিলে যায় গজলের অভিব্যক্তি। গজলের ব্যাপ্তিকে তাই যেকোনো এক গণ্ডিতে বেঁধে ফেলা যায় না। প্রেম থেকে ভক্তি অথবা আর্তবেদনায়ও গজলের সুর বাজে।
শব্দটির আরেকটি উৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে, ‘কস্তুরী হরিণের আর্তচিৎকার’। কস্তুরী বা মৃগনাভী এমন একটি দুর্লভ জিনিস, যা শত শত বছর পরে হয়ত কোনো এক হরিণের ভাগ্যে আসে। যে হরিণ তার পেটে কস্তুরী ধারণ করে, তার শরীর থেকে তীব্র মাদকতাপূর্ণ ও আবেদনময়ী সুগন্ধি বের হতে থাকে। সারা বনে সেই আকর্ষণীয় সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ে। এই কস্তুরি ভক্ষণ করতে পারলে মানুষ পাবে অসীম যৌবন শক্তি। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে এই যে, ঐ কস্তুরী পেতে গেলে হরিণটিকে হত্যা করতে হয়, তবেই পেট চিরে তা পাওয়া যায়। তাই কস্তুরীর এই সুগন্ধ হরিণটির জন্য মৃত্যুর সমতুল্য। এ সুগন্ধি যেন হরিণটির আর্তচিৎকার হিসেবে চিত্রিত করা হয়। গজলও মানুষের হৃদয়ের এই হাহাকার হিসেবে প্রকাশ পায়।
যেমন মির্জা গালিব লিখেছেন,
রুটি যদি নাই জটে দুঃখ সেঁকে খাব
তৃষ্ণায় অসাড় জিহ্বা অশ্রুতে ভেজাব।
বন্ধুহীন সেও ভালো শত্রুকে নেবো না
মন্দকালই বাহাদুর ভুলেও ভেবো না
গালিব এখনও আছে ষোলআনা হুঁশে
কবিরাই জেগে থাকে ঘুমায় মানুষে।
(অনুবাদ: কবি সৈয়দ শামসুল হক)
কিংবা মীর তকি মীর লিখেছেন,
বলছ আমার ইচ্ছা স্বাধীন
কিন্তু তুমি যা চাও, তা-ই আমাকে দিয়ে করাও
অথচ মিছিমিছি দোষী কর আমাকেই।
গজলের ঐতিহ্য আনুমানিক প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো। প্রাচীন আরব্য কাব্যসাহিত্য থেকে তার উৎপত্তি। ইসলামপূর্ব সময়ে আরব কবিগণ সমাজে খুব প্রতিপত্তির অধিকারী ছিলেন। সে সময়ে মুখে মুখে কবিতা রচনা করা হতো, যা প্রধানত ‘কাসিদা’ হিসেবে অধিক পরিচিত। সেসব কাসিদায় যোদ্ধাদের বীরত্ব ও বংশীয় আভিজাত্য তুলে ধরা হতো। যে বংশে বা গোত্রে যত বড় কবি থাকত, সে বংশ তত বেশি অভিজাত বংশ হিসেবে বিবেচিত হত। পরবর্তীতে বিবর্তিত হয়ে কাসিদার একটি অংশ থেকে গজলের উৎপত্তি ঘটে এবং কাসিদা ও গজল স্বতন্ত্র ধারা হিসেবে বিবেচিত হয়।
প্রকৃতিগতভাবে আরবরা সর্বদা স্বাধীনচেতা, সংগ্রামী, সাহসী, দুর্ধর্ষ, অতিথিপরায়ণ, বিনয়ী ও উচ্চমনা ছিলো, যা সেই কবিদের কবিতায় বর্ণিত হতো। কোনো গোত্র গৃহযুদ্ধে কোনোপ্রকার সাহায্য করলে তা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করা হতো। যুদ্ধের ময়দানে কবিদের কবিতা যোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করে তুলতো। পাশাপাশি কবিরা ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারেন বলে মনে করা হতো। ফলে সমাজে তাদের প্রভাব ছিল অসীম।
তবে অনেক আত্মাভিমানী কবিগণ সামনা-সামনি ব্যক্তিস্তুতি, বিশেষত রাজা-বাদশাহদের স্তুতিকে ঘৃণ্য মনে করতেন। কবি যুহাইর ইবনে আবী সালমা সর্বপ্রথম যখন বাদশাহকে নিয়ে কবিতা লিখলেন, তখন বাদশাহ হরম ইবনে সিনান ঘোষণা করলেন যে যুহাইর যখন দরবারে এসে তাকে সালাম প্রদান করবেন, তখন তাকে পুরস্কৃত করা হবে। কিন্তু আত্মসম্মানী এই কবি এরপর থেকে যতবার দরবারে গেছেন, ততবারই বলতেন, “বাদশাহ ব্যতীত আর সবাইকে সালাম দিলাম”।
হযরত মুহাম্মদ (সা) এর জীবদ্দশায় এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে কাব্যচর্চায় মন্দাভাব দেখা দেয়। কারণ ইসলামপূর্ব কবিতায় অনৈতিক মনোবৃত্তি, যৌনতা ও বস্তুবাদের প্রভাব লক্ষ করা যায়, যা ইসলামের বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক। এ সময়ে মনস্তাত্ত্বিক দিক ছিলো এমন যে, ওহি থেকে প্রাপ্ত বাণীর সাথে কবির সৃজিত কবিতা মিশে যেতে পারে, যা পরে আলাদা করতে গিয়ে জটিলতা তৈরি করবে। কেননা কোরআন তখন একত্রে লিপিবদ্ধ আকারে ছিল না, ফলে তা কবিতার সাথে মিশে যাওয়ার ভয় ছিল। তবে এ সময়ে ইসলামে বিশ্বাসী কবিদের একটি নতুন ধারা তৈরি হয়। সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা, হাসসান বিন সাবিত, কা’ব ইবনে মালিক প্রমুখ এই কাব্যধারা তৈরি করেন। এই কবিতা ছিল প্রচলিত আরব্য কাব্যের যৌনতার ব্যবহার মুক্ত।
চার খলিফার পরে, উমাইয়া যুগে কবি ও কবিতার নতুন অধ্যায়ের শুরু হয়। এ সময়ে নিন্দার্থক কবিতা বা ‘হিজভ’ এবং প্রেমের কবিতা বা ‘গজল’ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। হিজভ প্রসার পায় সিরিয়া ও ইরাক অঞ্চলে, যা উমাইয়া শাসকগন তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতেন।
অন্যদিকে, প্রেমের কবিতা বা গজল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে উমাইয়া খেলাফতের অন্যান্য অঞ্চলে। এতে আবার দুটি ধারা দেখা যায়। প্রথমটি হচ্ছে ‘শহুরে গজল’, এটা মূলত বিনোদনধর্মী গজল। মক্কার উমর ইবনে আবি রাবীয়া এ ধারার শ্রেষ্ঠ কবি। আরেক প্রকার হচ্ছে ‘যাযাবর বেদুঈনদের গজল’। এই ধারার প্রধান কবি হচ্ছেন জামীল। বিশ্বব্যাপী সমাদৃত প্রেমের উপাখ্যান ‘লাইলি-মজনু’ তার হাতের অমর সৃষ্টি। পরবর্তীতে এই ধারাটিই গজলের শক্তিশালী ধারা হয়ে ওঠে।
উল্লেখ্য, গজল আর কাসিদার পার্থক্য বোঝার সহজ উপায় হচ্ছে, কাসিদা প্রধানত কারো প্রশংসা বা শোকগাথা। যেমন আমাদের দেশে প্রচলিত মার্সিয়া সংগীত। বিশেষত কারবালার ঘটনাকে স্মরণ করে আমাদের দেশে প্রতিবছর মার্সিয়া সংগীত ও মিছিলের আয়োজন করা হয়ে থাকে। অন্যদিকে গজল হচ্ছে প্রেমালাপ, যা স্রষ্টা, পরমাত্মা কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে ঘটে থাকে।
যেমন বিশিষ্ট গজল গবেষক জুলি স্কট মাইসামি (১৯৯৮) তার মেডিয়েভাল পারসিয়ান কোর্ট পোয়েট্রি গ্রন্থে বলেছেন,
গজল হচ্ছে ভালোবাসা বিষয়ক কবিতা; যা কাসিদা থেকে আলাদা এবং স্বাধীন সংক্ষিপ্ত কাব্য।
অথবা আরেক গবেষক আলেসান্দ্রা বোসানি (১৯৬৫) তার গজল ইন পারসিয়ান লিটারেচার গ্রন্থে লিখেছেন,
গজলের বিভিন্ন বিষয়বস্তু রয়েছে। যেমন, প্রেম, বসন্ত ঋতু, শরাব, খোদাতত্ত্ব ইত্যাদি।
উমাইয়া আমলে কবিগণ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। এ সময়ে গজল আলাদা কাব্যধারা হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি এই ধারণার জন্ম হয় যে গজলের বিষয়বস্তু হচ্ছে বিগত ভালোবাসার জন্য অনুভূতি, একাকিত্ব, নিঃসঙ্গতা ও শূন্যতা। এ ধারাটিতে বিষাদ প্রাধান্য পায় বেশি। সময়ের পরিক্রমায় গজল বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতিতে চর্চিত হলেও, এই বিষয়বস্তু যেন ওতপ্রোতভাবে নির্দিষ্ট হয়ে যায়। এই অনুভূতি, একাকিত্ব, নিঃসঙ্গতা ও শূন্যতার ভাবধারাটি কখনও রোমান্টিক, প্রেমমূলক, অতীন্দ্রিয়, স্বর্গীয় কিংবা খোদার সাথে সম্পর্কিত হয়ে ওঠে। আজকের দিনে গজল বলতে যে শুধুমাত্র মুসলমানদের ধর্মীয় সংঙ্গীতকে বিবেচনা করা হয়, তা মূলত এই ‘খোদার সাথে সম্পর্কিত’ প্রেমের ধারণার বিকাশ। এই প্রভাব বিশেষভাবে বাংলাদেশে লক্ষণীয়, যা গজলের পরিসীমাকে সংকুচিতভাবে প্রকাশ করে।
উমাইয়া আমলের কবিদের মধ্যে তুভাইস, সাইয়েদ ইবনে মিসজাহ আল গারীদ, ইবনে মুহারী, ইবনে মা’বাদ, জামিল বিন মামর, আব্দ-আল রহমান, উরওয়াহ বিন হিজাম, তাওবাহ বিন আল হুমাইর, উমর বিন আবি রাবি এবং মহিলা কবি জামিলাহ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
আব্বাসীয়দের আমলে কাসিদার চেয়ে গজল শক্তিশালী হয়ে ওঠে। গজল আরো বিকশিত হয়। ধীরে ধীরে গজল চর্চা পারস্য অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। একপর্যায়ে গজল পারস্য সাহিত্যের প্রধান সম্পদে পরিণত হয়।
‘পারস্য প্রতিভা’ গ্রন্থে মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ বলেছেন,
“পারস্য সাহিত্যের সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট অংশ গজল বা গীতি-কবিতা। ইউরোপের গীতি-কবিতা হইতে পারস্য গীতি-কবিতার বিশেষ পার্থক্য এই যে, ইহা একাধারে গীতি এবং কবিতা। পারস্যের গৌরবের দিনে এ সকল গজল ‘বরবত’ নামক বাদ্যযন্ত্র সহযোগে সভাস্থলে গীত হইত। বঙ্গদেশে এই জাতীয় গজল হিন্দু-মুসলমান সকলেরই নিকট সুপরিচিত। সময় সময় কবি এবং সাধকগণ এই সকল গজল গাহিয়া বা অন্যের দ্বারা গান করাইয়া উচ্ছ্বসিত পারমার্থিক প্রেমের মাদকতাময় অপূর্ব তরঙ্গ উপভোগ করিতেন। যেদিন নিশীথে চাঁদের আলোতে ভরিয়া যাইত, দক্ষিণ হাওয়ার বিবশ পরশে প্রাণ আবেশে ঢুলু ঢুলু করিত, সেই সকল রজনীতে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে বা উদ্যানবাটিকায় উচ্ছৃঙ্খল সাহিত্যিকদের সভা বসিত। আর, চন্দ্র যখন পশ্চিমাকাশে কৃষ্ণ নিবিড়তার ভিতর ঘুমাইয়া পড়িত, তখন পর্যন্ত তাহাদের সেই ‘গোলাবের ইতিহাস’, ‘বুলবুলের প্রণয়কথা’, ‘সুরার মহিমা’, ও ‘প্রেমের মাধুরী’ গীতাকারে চলিতে থাকিত।“
পারস্যে এ সময়ে বড় বড় কবি ও সাধকের আগমন ঘটে। তাদের হাত ধরে গজল শুধুমাত্র প্রভাবশালী ও শক্তিশালী সাহিত্যধারাই তৈরি করে না, বরং একটি আধ্যাত্মিক ধারারও সূত্রপাত ঘটায়। পারস্যে রুদাকি, ফেরদৌসী, আসাদি তুসি, ওমর খৈয়াম, ইমাম গাজ্জালি, হাকিম সানাই, ফরিদউদ্দীন আত্তার, শেখ সাদী সিরাজী, মাওলানা জালালউদ্দিন রুমি, হফিজ সিরাজির মতো বড় বড় কিংবদন্তির জন্ম হয়। তাদের হাত ধরে গজল কাব্য ও সঙ্গীত চূড়ান্ত মাত্রা লাভ করে।
পরবর্তীতে তাদের প্রভাবে সারা বিশ্বে এই আধ্যাত্মিক প্রেমের সঙ্গীত ছড়িয়ে পড়ে। আমির খসরুর হাত ধরে ভারতীয় উপমহাদেশেও গজলের আগমন ঘটে। এরপর মোহাম্মদ কুলি কুতুব শাহ্, মীর দার্দ, মীর তকি মীর, মির্জা গালিব, দাগ দেহলভী, আল্লামা ইকবাল, ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ প্রমুখ প্রভাবশালী কবি ও সাধকগণ গজল চর্চা করেন।
বাংলা ভাষায় কবি নজরুল ইসলাম অনেকগুলো গজল রচনা করলেও পরবর্তীকালের কবিদের মধ্যে এই প্রবণতা তেমন লক্ষ করা যায়নি। তবে বলে রাখা ভালো, এসব কবিরা যে শুধু গজলই চর্চা করেছেন, এমনটা নয়। একজন সাহিত্যিক যেমন বিভিন্ন ধারার সাহিত্য চর্চা করে থাকেন, এ গজল সম্রাটগণও তদ্রূপ তাদের অন্যান্য সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি গজল চর্চা করেছেন। তবে পারস্যের কবিগণ প্রধানত গজলই চর্চা করেছেন। গজলের উৎপত্তিকাল থেকেই গজল কাব্য ও সঙ্গীত হিসেবে কখনো স্বতন্ত্রভাবে, আবার কখনো গীতিকাব্য হিসেবে যুগপৎভাবে কবিতা ও সঙ্গীত আকারে চর্চিত হয়ে আসছে।
নিচে কিছু গজল তুলে ধরা হলো,
সৃষ্টির রহস্য জানো না তুমি, জানি না আমি
এ এমন এক জটিল কাব্য যা পড়তে পারো না তুমি, না আমি
পর্দার আড়ালে তোমার ও আমার মাঝে চলছে এ আলাপ
পর্দা যেদিন উঠে যাবে সেদিন থাকবো না তুমি ও আমি।
– ওমর খৈয়ামতোমার বিরহ ছাড়া অন্য কোন জ্বালা নাই আমার প্রাণে
তোমার সঙ্গসুখ যদি পাই
অন্য কিছুই পারে না আমাকে দুঃখ দিতে।
– ইমাম গাজ্জালিলোভী ব্যক্তির চক্ষু-পেয়ালা কখনও পূর্ণ হয় না
অল্পে তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত ঝিনুক মুক্তাপূর্ণ হয় না।
– মাওলানা রুমিএই মাঠেঘাটে ঘোরা আর কত দিন, কতদিন এই ছন্নছাড়া দশা?
এমনভাবে বেঁচে থেকে কী হবে, মরলেই পারো।
– মীর তকি মীরভালোবাসাই, গালিব, নিষ্কর্মা করে দিল
নয়ত আমিও কাজের লোকই ছিলাম।
– মির্জা গালিব
ফিচার ইমেজ: entitymag.com
তথ্যসূত্র:
১। সোহেল ইমাম খান, গজল কথা, প্রথম প্রকাশ ২০১৬
২। আবু সয়ীদ আইয়ুব, গালিবের গজল থেকে, প্রথম প্রকাশ ১৯৭৬
৩। মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ, পারস্য প্রতিভা, প্রথম প্রকাশ ১৯৮৭